হাসতে হাসতে মাথা নস্ট হয়ে যাবে,অসাধারন রম্য গল্পঃ- ২০৬৮ সাল Written by: Tawhid Iqbal

রম্য গল্প:-২০৬৮ সাল
.
রম্য_ফিকশন



.
গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বললো,আজকে তোমার সাথে মিট করা পসিবল না,বিকালে আরিফের সাথে ডেট আছে।
আমার যথেস্ট মেজাজ খারাপ হইলো।আমাদের এই প্রোগ্রাম অন্তত দশ দিন আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।তাছাড়া আমার যে চাকরী তাতে ডেইলি ডেইলি ছুটি পাওয়াও বেশ কঠিন।গার্লফ্রেন্ড আমাকে সান্তনা দিলো,দেখ রাগ কইরো না,আরিফের সাথে আমার প্রেম একদম নতুন।এই সময় ওকে একটু বেশি প্রায়োরিটি দেয়া উচিত।তুমি তো সবই বুঝো!
.
কি আর করা!আমি মন খারাপ করে ফেসবুকে রুমকিরে নক দিলাম,হ্যালো বাবু,তুমি সন্ধ্যায় ফ্রি আছো?চলো দুজনে একসাথে কিছু সুন্দর সময় কাটাই।
আমি বাদে রুমকির আরো চারটা বয়ফ্রেন্ড।ইদানিং ও ভীষন ব্যাস্ত থাকে।তারপরো বললো আজকে ফ্রি আছে।যাক বাবা,বাচা গেল;আমি মনে মনে ইশ্বরকে থ্যাংকস জানালাম।
.
সন্ধ্যার একটু আগে আগে আমি রেডি হচ্ছিলাম।ব্লু জিন্সের সাথে কলিন্সের একটা চেক শার্ট পরলাম।তারপর বডি স্প্রে লাগিয়ে শার্টটা প্রায় অর্ধেক ভিজিয়ে ফেলে বের হতে যাব এমন সময় আম্মু রুমের দরজায় এসে দাড়ালো।আজকাল এই মহিলা আমার বিয়ে দেয়ার জন্য প্রায় খেঁপে উঠেছে।আজকেও আমতা আমতা করে মেবি একই কথা বলতে যাচ্ছিলো বাট আমি সেই সুযোগ দিলাম না।ঠান্ডা গলায় বললাম,দেখ আম্মু আমি আগেও বলেছি,আবার আজকেও বলতেছি।আমার এতোগুলা ছোট ছোট অবিবাহীত গার্লফ্রেন্ড।এদের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করলে লোকে কি বলবে?আগে এদের বিয়ে দিই তারপর নিজের কথা ভাববো।এখন ডেটিংএ যাচ্ছি দোয়া কইরো,বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
.
সিএনজির পেছনে সবুজ কালিতে লেখা,
'তিনটা প্রেমের বেশি নয়,
দুইটা হলে ভালো হয়।'
লেখাটা পড়ে আমার ভীষন হাসি পেল।আজকাল এইসব আর কেউ পড়েও দেখে না,মেনে চলা তো অনেক দুরের ব্যাপার।আমার এক ফ্রেন্ড আছে জনি নাম,যার মোট এগারোটা গার্লফ্রেন্ড।মজা করে আমরা ওকে মহিলা ফুটবল দলের কোচ ডাকি।
আমি ট্যাক্সিওয়ালাকে ডাক দিয়ে বললাম,বসুন্ধরা লিটনের ফ্লাটে চলুন!
.
বর্তমানে ঢাকা শহরে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের চেয়েও লিটনের ফ্লাটের সংখ্যা ঢের বেশি।মিরপুরে আমাদের বাসার পাশেই সরকারী লিটনের ফ্লাট,তারপরও আমি সবসময় বসুন্ধরাতেই আসি।ক্লাস বলে একটা ব্যাপার আছে তো!
বসুন্ধরায় তের,চৌদ্দ-এই দুই ফ্লোর জুড়ে লাক্সারিয়াস লিটনের ফ্লাট।আমি গিয়ে দেখি চৌদ্দ তলায় ছয় নাম্বার কেবিনের সামনে রুমকি চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে!আমাকে দেখে এগিয়ে আসলো,
'দেখ এই মুহুর্তে তোমার সাথে ডেট করা আমার পক্ষে পসিবল না।'
'মানে কি?আমি আকাশ থেকে পড়লাম।কি বলো এইসব!'
'যা বলছি ঠিকই শুনছো,রুমকি ব্যাখ্যা করলো।আমি একটু আগে এক ছেলের উপ্রে সেইরকম ক্রাশ খাইছি।সে জিএফ নিয়ে ঐ সাত নাম্বার কেবিনে ঢুকছে আধাঘন্টা হইছে।আমি এখানে ওয়েট করবো,ঐ ছেলে বেরোলেই যাতে প্রপোজ করতে পারি।তুমি যেখানে খুশি যাও বাট আমাকে প্লিজ ডিস্টার্ব কইরো না।'
.
ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমার ওকে কিছুই বলা সম্ভব না।বর্তমানে দেশের সব মানুষের ক্রাশ খাওয়ার অধিকার সংবিধান কতৃক সংরক্ষিত।সংবিধানের ৬৯ এর (চ) অনুচ্ছেদ অনুসারে,ক্রাশ প্রত্যেক নাগরীকের মোলিক অধিকার।এক্ষেত্রে কাউকে বাধা প্রদান বা নিরুত্‍সাহিত করার প্রচেস্টা দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।আমি মন খারাপ করে আটতলার ফুডকোর্টে গিয়ে বসলাম।আমি প্রায় শিওর যে আজকেই ঐ ছেলের সাথে রুমকির প্রেম হয়ে যাবে।দেশে এখন প্রপোজ আইনও বেশ কড়া।যথোপযুক্ত কারন দর্শানো ব্যাতিত কেউ কারো প্রপোজাল রিজেক্ট করলে সে তার বিরুদ্ধে প্রেমাধিকার আইনে কেস পর্যন্ত করতে পারে!তাছাড়া রুমকি যথেস্ট হট;এমনিতেই যে কেউ তার সাথে প্রেম করতে চাইবে।
আমি যারপরনাই হতাশ হয়ে যখন ভাবতেছি আটতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবো নাকি সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে যাবো; এমন সময় আমার কাধে একটা মেয়েলি হাত স্পর্শ করলো!
.
আমরা পেছন শাড়ি পড়া শ্যামলা মতো যে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে তার চেহারা অসম্ভব মিস্টি।মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো.'হাই আমি শ্রাবনী,আপনি কি কোন কারনে আপসেট?'
'উমমম...এতোক্ষন ছিলাম বাট তোমার মতো এত্তো কিউট মেয়েরে দেখার পর কি আর আপসেট থাকা যায়!' আমি ফ্লার্টিং করলাম।মাধ্যমিকে আমাদের ফ্লার্টিং সাবজেক্টের উপরে দুইশো মার্ক ছিলো।আমি অলওয়েজ হায়েস্ট পেতাম!মেয়েটা আমার দিকে চেয়ে আরেকটা মিস্টি হাসি দিয়ে সামনের চেয়ারে বসলো।
'আচ্ছা আমাকে দেখে আপনি অবাক হননি একটুও?'
'হুম সে আর বলতে!সেই ছোটবেলায় দাদীকে দেখেছিলাম শাড়ি পরতে আর আজ এতোদিন পর তোমাকে দেখলাম।তা এইখানে কেন,ডেটে অসছো?'
'উহু,যাস্ট ঘুরতে অসছি।আমার তো বিএফ নাই।'
'ও বুঝেছি,এইবার আমি শিওর হলাম।তুমি নিশ্চয় এলিয়েন,রাইট?কোন গ্রহ থেকে আসছো,কেপলার ফোর থ্রি সি না রাইসান?'
'উহু,শ্রাবনী বললো।আমি কোন এলিয়েন না।আমার বাসা বনানীতে।আর আমি আপনাদের এই লাইফস্টাইলটা যাস্ট নিতে পারি না।এলিয়েনদের মতোই ব্যাকডেটেড বলতে পারেন।ঠিক করেছি বিয়ের পরে শুধুমাত্র বরের সাথেই প্রেম করবো,বাট ইউ নো কোন ছেলেরই রাজি হওয়ার কথা না।হচ্ছেও না!'
'ইয়াপ,আমি ব্যাপারটা জানি।দেশে বিয়ের হার দ্রুতই কমে যাচ্ছে।'
'আচ্ছা থাকেন তাইলে,আমি যাই।আমার আবার প্রেয়ারের টাইম হয়ে যাচ্ছে।মানে,নামাজ বলে যেটাকে!'
.
শ্রাবনী নামের মেয়েটা উঠে যেতেই আমি ওয়েটারকে ডেকে একটা বিয়ারের অর্ডার দিলাম।এমন সময় দেখি লিফটে করে রুমকি আর ঐ ছেলে নামতেছে।লিফটের স্বচ্ছ কাঁচের মধ্য দিয়ে দুজনের কিসিং অবস্থা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সেদিকে তাকিয়ে আমার যেন হঠ্যাত করেই কি একটা হয়ে গেল।আমি এতোদিনের সংস্কার,শিক্ষা,সভ্যতা সব ভুলে গিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালাম।অদ্ভূত একটা ঘোরের মধ্যে এক দৌড়ে শ্রাবনীর সামনে গিয়ে কাপা কাপা গলায় বললাম,উইল ইউ ম্যারি মি,প্লিইইজ!'
.
পরদিন রাতে আমরা বিয়ে করলাম।তার ঠিক দেড় বছর পর বাংলাদেশে বিয়ের হার পুরোপুরি শূন্যের কোঠায় এসে দাড়ালো।
.
চল্লিশ বছর পর।৩০০৮ সাল।
.
বেশ কয়েক বছর আগে রুমকি লাইফের প্রতি চুড়ান্ত হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করছে।আমার ফ্রেন্ড জনি এখন ওল্ডহোমে একা একা দিন কাটায়।
আর এখনো প্রতি পূর্ণিমার রাতে আমি আর শ্রাবনী ছাদে গিয়ে বসি।ওর কাধে মাথা রেখে চাদের দিকে তাকালে আমার এখনো মনে হয় আমি যেন ঠিক গতকাল বিয়ে করেছি! 
Written by: Tawhid Iqbal

Post a Comment

Previous Post Next Post