রোমান্টিক গল্পঃ মিথ্যে অভিনয় লেখা : আব্দুল্লাহ শিশির


--ফাহিম,কেমন আছো?
পিছন থেকে কে যেন ডাক
দিলো অনেক
পরিচিত কন্ঠ
শুনে ফিরে তাকালো ।অবাক
হলো এই যে নিধি ।
কেমন আছো?
-- ভালই
--জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন
আছি ?
--সবকিছু জিজ্ঞেস করতে নেই ।
বুঝে নিলেই হয় ।
--অনেক বদলে গেছো তুমি ।
--হয়ত ।
--এখনো সিগেরেট হাতে এটা বুঝি ছাড়তে পারলে না আর ?
--এটা ছাড়া এত জরুরী না ।
--
আমাকে একা ফেলে চলে যাওয়া টা কি
তাহলে জরুরী ছিলো ?
--কিছু কিছু সম্পর্ক আছে তা চাইলে ও
ধরে রাখা যায় না ।
প্রকৃতি ধরে রাখতে দেই না ।
--প্রকৃতির কোনো দোষ ছিলো না ।
তুমিই আমাকে ধরো রাখো নাই
আমাকে ছেড়ে চলে গেছো ।
--কিছু বললো না ফাহিম ।কিছু কষ্ট
কেন জানি গ্রাস করছে তাকে ।
--আমি তো তোমার
সাথে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম
তাহলে কেনো তখন তা করলে না ?
--সব কিছুরই একটা সময় আছে ।তখন
হয়ত ঠিকঠাক সময় ছিল
তাই হয়ত ।
--তুমি কি এখনো আগের মত
অগোছালো ?
--জানি না ।
--তোমার শয়তান বন্ধু
গুলা কি এখনো আছে ?
--থাকবে না কেনো ওরা তো আর
চুইংগাম না যে মজা শেষ
ফেলে দেবো ।
--তাহলে কি আমি চুইংগাম ছিলাম ?
--আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি ।ভাল
থেকো ।
ভালো থেকো কথাটি আজ খুব সহজেই
বলে ফেললো ফাহিম।
সেদিনও বলেছিলো । কিন্তু নিজের
অজান্তেই চোঁখের কোঁণে এসেছিল
একফোঁটা অশ্রু।সময়ের সাথে সাথেই
পৃথিবীর সবই
বদলে যায় ।অনেক আপনজন
চলে যায় বহুদূর। শুধু ফাহিম এ
হয়তো বদলানোর মিথ্যে অভিনয়
করে যাচ্ছে। আজ এতদিন
পর নিধির সাথে দেখা হবে বুঝতেই
পারেনাই।সবার কাছ থেকে অনেক
লুকিয়ে বেড়িয়েছে সবসময় ।তবে কেন
আজ লুকিয়ে থাকতে পারলো না আর ।
হয়ত সময়ই চায়নি ও আর
লুকিয়ে থাকোক । কেন যেন অতীতের
স্মৃতিগুলো আজ ফাহিমের মনের
মধ্যে এসে ভীড় করছে।
ফাহিমের কাছেই অবাক
লাগে আজ ঐদিনের সেই
ভাললাগা কি ভালবাসা ছিলো নাকি শুধুই
রূপকথার মধ্যে বসবাস ছিলো । সবার
জীবনেই
নাকি প্রেম আসে,ফাহিমের জীবনে ও
প্রেম এসেছিল একবার।
তাই হয়ত সবার মত ফাহিম ও স্বপ্ন
দেখেছিলো।কিন্তু স্বপ্ন আর
বাস্তবতার মধ্যে যে হাজার গুন তফাত্
তা হয়ত বাস্তবতার
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে না থাকলে বুঝতেই
পারতো না ।মন চাইলেই ও ঐদিন
না হারানো ছাড়া কোনো পথ
ছিলো না ফাহিমের ।
নিধিকে একা ফেলে চলে যাওয়া তার
কাছ
থেকে পালিয়ে বেড়ানো তার
কারনগুলো আজ ও হয়ত অজনা নিধির
কাছে ।তিন বছর ধরেই
একটা রোগে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো ফাহিম
কে ।ফাহিম একজন
লিপোফোমা পেসেন্ট
।যা এখন শেষ স্টেজে। যখন এ রঙীন
স্বপ্নে ভাসতে শুরু করলো তখন এ
ধরা পড়লো রোগটা ।এর পর থেকেই
নিজেকে আস্তে আস্তে গুঁটিয়ে নিতে শুরু
করলো ।
শ্রাবনের এক
বৃষ্টিভেজা বিকালে নিধির
সাথে পরিচয় ফাহিমের।ঝুম বৃষ্টিতে খুব
খুশি মনে ভিজতেছিলো ফাহিম ।হঠাত্
ছাউনিতে উঠে এসে নিধি কে বললো
ভিজবেন ।নিধি ইতস্তত বোধ
করলো চেনা নেই জানা নেই এমন
একটা মানুষ কিভাবে অচেনা একজন
মানুষের সাথে কথা বলে ।
নিধি অনেকক্ষন যাবত
দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির কারনে যেতে ও
পারছে না ।এইদিকে ফাহিমের
পাগলামো গুলা আঁড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে
দেখছে । বৃষ্টি কমার
সাথে সাথে ফাহিম
ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে ।
--নিধি পিছন থেকে ডাক দিলো এই
যে শুনছেন ।
--ফাহিম না শুনার ভান করে হেঁটেই
যাচ্ছে ।
--নিধি এবার দৌড়ে গিয়ে ফাহিমের
সামনে এসে বললো বয়রা নাকি কানে
শুনেন না ?
--শুনা টা কি জরুরী ছিলো ?
--আপনি তো বড়ই অদ্ভুদ মানুষ ।
পাগলের মত ভিজতেছেন কেনো ?
--বৃষ্টিতে ভিজতে হতে হলে কি পাগল
হতে হয় ?
--না কেউ এমন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ?
অসুস্থ হয়ে পড়বে তো ।
--ফাহিম বলে উঠলো চা খাবেন ?
--না ।
সেদিনের মত বিদায়
নিয়ে চলে গেলো নিধি ।
পরদিন ও আকাশের একই
অবস্থা বৃষ্টি লেগেই আছে ।আজ ও
নিধি ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে ।আজ
ও ফাহিম মনের সুখে ভিজতেছে ।নিধির
খুব অবাক
লাগলো লোকটা সত্যি সত্যি পাগল
না তো ।
প্রতিদিন প্রায় একই জায়গায় একই
ভাবে ভিজতে আসে লোকটা ।
নিধি ব্যাপারগুলা খুব
উপলব্ধি করতে লাগলো ।
আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু
করলো ফাহিম কে ।
আজ চার দিন টানা বৃষ্টি নিধি এই চার
দিনে একবার ও ফাহিম কে দেখলো না ।
খুব খারাপ লাগছে নিধির ওর
কোনো অসুখ হলো না তো আবার ।
বাসায়
ও মন বসছে না নিধির বারবার
খালি ফাহিমের কথা মনে পড়ছে ।
পরদিন আবার
অপেক্ষা করতে থাকলো ।হঠাত্ কোথায়
থেকে যেনো ফাহিম এসে ভিজতে শুরু
করলো নিধি দেখেই
ছাউনি থেকে বের
হয়ে ফাহিমের
সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ।এই
চারদিন কই ছিলেন আপনি ?
--কেনো
--এই চারদিন আপনাকে আমি কত
খুঁজেছি জানেন ?
--না ।আপনি ভিজতেছেন কেনো ?
--আপনি যদি ভিজতে পারেন ।
আমি ভিজলে দোষের কি ?
আস্তে আস্তে ফাহিমের
পাগলাটে চলাফেরা সবকিছুই ভাল
লাগতে থাকে নিধির ।খুব
ভালবেসে ফেলে ফাহিম কে ।ফাহিম ও
ভালবাসতে শুরু করে ।
মাঝে মাঝে স্বপ্নেই
হারিয়ে যেতো দুজন।
পাশাপাশি পথ চলার কত স্বপ্ন
দেখতে লাগলো ।যখনই স্বপ্ন
গুলো সত্যি সত্যি রূপ নিবে ঠিক তখনই
সবকিছু তছনছ হয়ে যায় ।রঙিন স্বপ্ন
গুলো ঘোলাটে হয়ে যায়
আস্তে আস্তে ।
মানুষের সব আশা নাকি পূরণ হয়না ।তাই
হয়ত এমন । ফাহিমের বেলায় তা বড়ই
নির্মম ।পুরুনো স্মৃতি গুলো আজ ও
তাড়া করে বেড়ায় ফাহিম কে ।
ফাহিম স্বপ্ন দেখে আর তার স্বপ্ন
গুলো ভাংগে আর স্মৃতি গুলো রয়ে যায়
স্মৃতিপটে।
কিছু স্মৃতি থাকে যা মানুষ
সযত্নে রাখে তার হৃদয়ের গভীরে ।
ফাহিমের আজ ও
ইচ্ছে করে নিধিকে নিয়ে শ্রাবনের ঝুম
বৃষ্টিতে ভিজতে ।একসাথে হাত
ধরে নদীর তীরে হাঁটতে ।কিছু স্বপ্ন শুধু
স্বপ্নই থেকে যায় ।বাস্তবে রূপ
নেওয়া তা আর হয়ে উঠে না।
,
লেখা : আব্দুল্লাহ শিশির

Post a Comment

Previous Post Next Post