গল্প : ভাই বোনের পবিত্র ভালোবাসা
গল্পটা লিখতে আমি নিজেই কেদে ফেলছি।
প্লিজ পড়বেন,, পড়লে হয়তো চোখ বেয়ে
কয়েক
ফোটা পানি গড়িয়ে পড়বে।
*
রাত্রি -:ভাইয়া, ও সোনা ভাইয়া।
রানা-:(ঘুম জড়িত কন্ঠে) কিরে কি হইছে?
রাত্রি-: ও ভাইয়া কলেজে যাবেনা? আম্মু
বকতেছে।
রানা-:হ্যা রে যাবো।
রাত্রি-:তাহলে ওঠোনা কেন? মহিষের মতো
পরে পরে ঘুমালে হবে? ওঠো।
রানা-:ওরে আমার পিচ্চি বুড়ি এত শাসন?
রাত্রি-: হুম, এই বাদড় তোকে উঠতে বলছিনা।
রানা-:উঠতেছি পিচ্চি বুড়ি,উম্মম্মাহহ।
"""""""""""
খুব দ্রত উঠে রানা রাত্রিকে একটা পাপ্পি
দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
রানা বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর রাত্রি
হল তার একমাত্র আদরের ছোট বোন।
সারাদিন দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসায় কাটে এদের
দিন।
রানা ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো।
রানা-:মা রাত্রি কি নাস্তা করেছে?
মা-:না, তোর পাগলি বোন কি তোকে ছাড়া
খায়?
রানা-: হুম।রাত্রিকে ডাকো।
"""""""""""""
রাত্রি-: ও ভাইয়া আমাকে ডেকেছো?
রানা-:হুম, এই পিচ্চি বুড়ি তুই খাসনি কেন?
রাত্রি-:গাধা টা আমি কি তোকে ছাড়া
কখনো একা খাই?
রানা-:বুঝেছি পাকা বুড়ি, এখন বস নাস্তা
করবি।
রাত্রি-:ঠিক আছে।
""""""""""
রানা-:কিরে কিছুই তো খাচ্ছিসনা।
রাত্রি-:খাবো কিভাবে?
রানা-:কেন তোর হাত আছেনা?
রাত্রি-: আছে, কিন্তু,,,,।
রানা-:কিন্তু কি? বল।
রাত্রি-:আমার হাত তো......।
রানা-:দেখি কি হয়েছে তোর হাতে।
রাত্রি-:কই কিছুনাতো।
রানা-:আল্লাহরে, এটা কিভাবে হলো? তোর
হাত এতখানি পুড়লো কিভাবে?
রাত্রি-:ধুর গাধা এইটুকু কিচ্ছু হবেনা।
রানা-:আজকে আর কলেজে যাবোনা। মা, ওমা
এদিকে আসো তাড়াতাড়ি।
মা-:কি হয়েছে?
রানা-:রাত্রির হাত পুড়ে গেল কিভাবে?
মা-:এইতো আমাকে বললো, মা আমি আজকে
ভাইয়ার জন্য রুটি বানাবো।আমি বললাম তুই
পারবিনা কিন্তু জানিস তো তোর বোন কত
জেদী মেয়ে কিচ্ছু শোনেনা।তারপর আমি
ওকে রান্না ঘড়ে রেখে রুমে এসেছিলাম।
তারপর ও গ্যাস চালু করে কিভাবে যেন পুড়ে
ফেলে।
রানা-:এই পাগলি তুই রুটি বানাতে গেছিলি
কেন?
রাত্রি-:বা রে আমার ভাইটার জন্য বুঝি আমি
রুটি বানাতে পারবোনা।
রানা-:হুম শিখেছিস তো বড় বড় কথা তাহলে
হাত পুড়ে গেল কেন।
রাত্রি-:ধুরর এইটুকু কিচ্ছু হবেনা।
""""""""""
রাত্রিকে এসব বলছিলো আর রাকিবের দুচোখ
বেয়ে পানি পরতেছিল।
আর ভাবছিল এত ভালবাসে তাকে এই পিচ্চি
বুড়িটা, এইটুকু বয়সে সে এতকিছু করতে চায়
তার জন্য।
"""""""
রাত্রি-:ও ভাইয়া তুমি কাদো কেন?
রানা-:তুই জানিস না তুই আমার কলিজা।তোর
কিছু হলে আমি বাচবো কি করে।
অনেকটা পুড়ে গেছে রাত্রির হাত তবু যেন
সেদিকে তার খেয়াল নেই।
ভাইয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে সে তার মাকে
বলে,,
রাত্রি-:ও মা তুমি তো বলছিলা ভাইয়াটা
পচা। তুমি পচা,, দেখো ভাইয়া কত ভাল,,ভাইয়া
বলেছে আমি তার কলিজা।
রানা-: আর কোনদিন রুটি বানাতে যাবিনা।
রাত্রি-:আচ্ছা। আমার লক্ষী
ভাইয়া আর কাদবেনা।
রানা-:আর মা তুমি আমাকে বললেনা কেন
একথা।
মা-:তোকে বলিনি কারন,তুই আবার
চিল্লাচিল্লি, কান্না শুরু করে দিবি।
রানা-:এই বুড়ি চল ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যাবো তোকে।
রাত্রি-:এই গাধা আমি বুড়ি না।তুই বুড়া।
"""""""""
তারপর রানা রাত্রিকে নিয়ে
ডাক্তারের কাছে যায়।
রানা অনেক ভালবাসতো তার এই ছোট
বোনকে।রাত্রির সামান্য কিছু হলেই রানা
কাদতো।
এভাবে চলতো তাদের ভাইবোনের পবিত্র
ভালবাসা।
"""""""""
একদিন কিছু একটা নিয়ে মা বাবার সাথে
ঝগড়া হয় রানার।
সেদিন রানা সারাদিন বাসায় ফেরেনি।
বাসায় না ফেরার কারনে রাত্রিকে অনেক
চেষ্টা করেও একটিবারেও খাওয়াতে পারেনি
কেউ। আরা প্রচন্ড কান্না করতেছিল সে।
রাত্রি-: তোমরা সবাই পচা, তোমাদের জন্য
আমার সোনা ভাইয়াটা চলে গেছে, তোমরা
যাও আমার কাছ থেকে কেউ আসবা না।
"""""""
তারপর অনেকটা রাত হয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে
শুধু এই পাগলিটা ছাড়া।
সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও ভাইয়ের আশায় জেগে
থাকে ছোট্ট মেয়েটি।
অনেক রাতে রানা বাসায় ফিরে আসলো আর
না খেয়েই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
রানা যে এসেছে এটা রাত্রি ঠিক বুঝতে
পারলো কারন সে তখনো জেগে ছিল আর
কাদছিল।
রাত্রি তখন দ্রুত টেবিল থেকে এক প্লেট ভাত
নিয়ে রানার রুমে গেল।
রাত্রি-:ভাইয়া, ও সোনা ভাইয়া।
রানা-:(ঘুম জড়িত কন্ঠে) কিরে বুড়ি কিছু
বলবি।
রাত্রি-:(কাদে আর বলে) ও ভাইয়া তুমি
কোথায় ছিলে সারাদিন?
রাত্রির কান্নার শব্দ শুনেই বিছানা থেকে
লাফ দিয়ে উঠে যায় রানা।
রানা-:এই পাগলি তুই কাদছিস কেন আর তোর
হাতে ভাতের প্লেট কেন?
রাত্রি-:আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো।
আর সারাদিন তো মনে হয় কিছু খাওনি কারন
তুমি তো আমাকে না খাইয়ে দিয়ে আগে কিছু
খাওনা।
"""""""""
এরপর রানা রাত্রির হাত থেকে ভাতের প্লেট
নিয়ে টেবিলে রেখেই রাত্রিকে জড়িয়ে ধরে
কাদতে থাকে আর সাথে রাত্রিও।
রানা-: আমি এই পিচ্চি বুড়িটাকে রেখে
কোথাও যাবোনা।আমি জানি তুইও সারাদিন
না খেয়ে আছিস কারন তুইও তো আমাকে
ছাড়া খাসনা।
"""""""""
এরপর রানা নিজের হাতে রাত্রিকে খাইয়ে
দেয় আর নিজেও খায়।
সকালে মা রাত্রিকে বিছানায় না পেয়ে
খুজতে খুজতে রানার রুমে চলে যায়।
তিনি দেখতে পান পিচ্চি বুড়িটা তার
ভাইয়ের বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে আর পাশের
টেবিলে প্লেট।
এটে দেখে তিনি সব বুঝতে পারলেন।নিজের
চোখের পানিকে আর আটকাতে পারলেন না,
কেদে ফেললেন পাগল পাগলির ভালবাসা
দেখে।
"""""""""""
কে জানতো এমন একটা ভালবাসার মধ্যেও
কালবৈশাখী ঝড় প্রবেশ করে ভাইবোনের এই
পবিত্র ভালবাসার ইতি টানবে।
"""""
কিছুদিন পর রানার বাবা মা তাদের গ্রামের
বাড়িতে যেতে চাইলো রাত্রিকে নিয়ে।
কিন্তু রাত্রি রানাকে ছেড়ে যেতে চাইল না,
আর রানাও যেতে দিতে চাইল না।
বাবা মা অনেক বুঝিয়ে রানা আর রাত্রিকে
রাজি করালো।
এরপর তারা রাত্রিকে নিয়ে গ্রামে চলে গেল
আর রানা একা থেকে গেল বাসায় কারন তার
কলেজ ছিল তাই সে যায়নি।
""""""""
এরপর প্রতিদিন বারবার ছোট্ট বুড়িটা ফোন
দিয়ে রানার খোজ নিত,,,,খেয়েছে কিনা, তার
জন্য যেন না কাদে আরো অনেক কিছু।
এরপর ঘটলো এক ভয়ানক দূর্ঘটনা যা সব শেষ
করে দিল।
রাত্রিকে সহ তার বাবা মা শহরের উদ্দেশ্য
রওনা দিলো।
অনেকটা পথ এসেই ঘটলো দূর্ঘটনা। তাদের সেই
বাসটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পরে যায় বিশাল
একটা খাদে।তারপর সব শেষ।
তার বাবা মা যখন জ্ঞান ফিরে পেল তখন
তারা রাত্রিকে খুজতে লাগল সেই
হাসপাতালে।
ডাক্তাররা জানায় বাসের সবাইকে এই
হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তারা খুজকে খুজতে মর্গে চলে গেল যেখানে
লাশ রাখা ছিল।
একটা একটা করে লাশ দেখতে হঠাৎ চিৎকার
করে উঠলেন রানার মা। বুঝতে আর বাকি
রইলনা যে, পৃথিবী ত্যাগ করে না ফেরার
দেশে চলে গেছে পিচ্চি বুড়ি রাত্রি।
রাত্রির বডিটা একদম বিভৎস্য হয়ে গেছে, মনে
হয় উল্টে যাওয়া বাসের নিচে পরে গেছিল।
এটা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়
তার মা।
রানাকে ফোন করলো তার বাবা।
রানা পাগলের মতো ছুটে এলো হাসপাতালে।
এরমধ্যে তার মায়ের জ্ঞান ফিরেছে।
রানা এসেই চিৎকার করতে থাকে,কোথায়
রাত্রি।
এরপর রাত্রির লাশের কাছে তাকে নিয়ে
যাওয়া হল।
রাত্রিকে দেখেই হতভম্ব হয়ে যায় রানা।
অনেকক্ষন কোন কথা বলেনা রাকিব। সবাই
ভাবলো এ আবার পাগল হল নাকি।
হঠাৎ চিৎকার শুরু করে দিল রানা আর তার
বাবা মাকে বলতে লাগল,,,
রানা-:(চিৎকার করে) তোমরা খুনি,তোমরাই
মেরে ফেলেছো আমার পিচ্চি বুড়িটাকে,
তোমাদের
কতো করে বললাম ওকে নিয়ে যেওনা,
পাগলীটা থাকতে পারবেনা আমাকে ছাড়া
তবুও তোমরা নিয়ে গেলে আর মেরে
ফেললে,
ফিরিয়ে দাও আমার পিচ্চি বুড়িকে।
"""""""
রানার চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পুরো
হাসপাতাল।
রানা-:(কেদে কেদে) কিরে পাগলী তুই নাকি
আমাকে ছাড়া থাকতে পারিসনা,তুই তো
আমাকে না দেখলে কেদে ফেলিস তাহলে
এখন ঘুমিয়ে আছিস কেন? কেন একা রেখে
গেলি আমাকে সার্থপরের মতো? ওঠনা পাগলি
আর কখনো তোকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা,
ও
বাবা ও মা আমার পিচ্চি বুড়িটা কথা বলেনা
কেন, ও কি আর ঘুম থেকে উঠবেনা?
এসব বলে আর চিৎকার করে কাদে রানা।
ওর কান্না দেখে সবাই কেদে ফেলে।
""""""""""""
তারপর সেই ছোট্ট পরীটাকে ছোট্ট সাদা
কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হলো অন্ধকার কবরে।
এরপর প্রতিরাতেই রানাকে চিৎকার করে
কাদতে শোনা যায়।বেশিরভাগ সে যখন খেতে
বসতো আর পিচ্চি বুড়িটাকে দেখতো
পেতোনা খাবার টেবিলে তখন।
মাঝে মাঝে রানাকে কবরের পাশে দেখা
যেত।সে বলতো, কিরে বুড়ি কিভাবে আছিস
আমাকে ছেড়ে এই ছোট্ট মাটির ঘরে।তোর কি
ভয় করেনা??
""""""""""
আদরের বোনকে হারিয়ে এভাবেই কাটছে
রানার দিন।
""সমাপ্ত ""
গল্পটা যদি এতোটুকু ভালো লেগে থাকে......
তাহলে আমাদের গ্রুপে Join plz
গল্পটা লিখতে আমি নিজেই কেদে ফেলছি।
প্লিজ পড়বেন,, পড়লে হয়তো চোখ বেয়ে
কয়েক
ফোটা পানি গড়িয়ে পড়বে।
*
রাত্রি -:ভাইয়া, ও সোনা ভাইয়া।
রানা-:(ঘুম জড়িত কন্ঠে) কিরে কি হইছে?
রাত্রি-: ও ভাইয়া কলেজে যাবেনা? আম্মু
বকতেছে।
রানা-:হ্যা রে যাবো।
রাত্রি-:তাহলে ওঠোনা কেন? মহিষের মতো
পরে পরে ঘুমালে হবে? ওঠো।
রানা-:ওরে আমার পিচ্চি বুড়ি এত শাসন?
রাত্রি-: হুম, এই বাদড় তোকে উঠতে বলছিনা।
রানা-:উঠতেছি পিচ্চি বুড়ি,উম্মম্মাহহ।
"""""""""""
খুব দ্রত উঠে রানা রাত্রিকে একটা পাপ্পি
দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
রানা বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর রাত্রি
হল তার একমাত্র আদরের ছোট বোন।
সারাদিন দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসায় কাটে এদের
দিন।
রানা ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো।
রানা-:মা রাত্রি কি নাস্তা করেছে?
মা-:না, তোর পাগলি বোন কি তোকে ছাড়া
খায়?
রানা-: হুম।রাত্রিকে ডাকো।
"""""""""""""
রাত্রি-: ও ভাইয়া আমাকে ডেকেছো?
রানা-:হুম, এই পিচ্চি বুড়ি তুই খাসনি কেন?
রাত্রি-:গাধা টা আমি কি তোকে ছাড়া
কখনো একা খাই?
রানা-:বুঝেছি পাকা বুড়ি, এখন বস নাস্তা
করবি।
রাত্রি-:ঠিক আছে।
""""""""""
রানা-:কিরে কিছুই তো খাচ্ছিসনা।
রাত্রি-:খাবো কিভাবে?
রানা-:কেন তোর হাত আছেনা?
রাত্রি-: আছে, কিন্তু,,,,।
রানা-:কিন্তু কি? বল।
রাত্রি-:আমার হাত তো......।
রানা-:দেখি কি হয়েছে তোর হাতে।
রাত্রি-:কই কিছুনাতো।
রানা-:আল্লাহরে, এটা কিভাবে হলো? তোর
হাত এতখানি পুড়লো কিভাবে?
রাত্রি-:ধুর গাধা এইটুকু কিচ্ছু হবেনা।
রানা-:আজকে আর কলেজে যাবোনা। মা, ওমা
এদিকে আসো তাড়াতাড়ি।
মা-:কি হয়েছে?
রানা-:রাত্রির হাত পুড়ে গেল কিভাবে?
মা-:এইতো আমাকে বললো, মা আমি আজকে
ভাইয়ার জন্য রুটি বানাবো।আমি বললাম তুই
পারবিনা কিন্তু জানিস তো তোর বোন কত
জেদী মেয়ে কিচ্ছু শোনেনা।তারপর আমি
ওকে রান্না ঘড়ে রেখে রুমে এসেছিলাম।
তারপর ও গ্যাস চালু করে কিভাবে যেন পুড়ে
ফেলে।
রানা-:এই পাগলি তুই রুটি বানাতে গেছিলি
কেন?
রাত্রি-:বা রে আমার ভাইটার জন্য বুঝি আমি
রুটি বানাতে পারবোনা।
রানা-:হুম শিখেছিস তো বড় বড় কথা তাহলে
হাত পুড়ে গেল কেন।
রাত্রি-:ধুরর এইটুকু কিচ্ছু হবেনা।
""""""""""
রাত্রিকে এসব বলছিলো আর রাকিবের দুচোখ
বেয়ে পানি পরতেছিল।
আর ভাবছিল এত ভালবাসে তাকে এই পিচ্চি
বুড়িটা, এইটুকু বয়সে সে এতকিছু করতে চায়
তার জন্য।
"""""""
রাত্রি-:ও ভাইয়া তুমি কাদো কেন?
রানা-:তুই জানিস না তুই আমার কলিজা।তোর
কিছু হলে আমি বাচবো কি করে।
অনেকটা পুড়ে গেছে রাত্রির হাত তবু যেন
সেদিকে তার খেয়াল নেই।
ভাইয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে সে তার মাকে
বলে,,
রাত্রি-:ও মা তুমি তো বলছিলা ভাইয়াটা
পচা। তুমি পচা,, দেখো ভাইয়া কত ভাল,,ভাইয়া
বলেছে আমি তার কলিজা।
রানা-: আর কোনদিন রুটি বানাতে যাবিনা।
রাত্রি-:আচ্ছা। আমার লক্ষী
ভাইয়া আর কাদবেনা।
রানা-:আর মা তুমি আমাকে বললেনা কেন
একথা।
মা-:তোকে বলিনি কারন,তুই আবার
চিল্লাচিল্লি, কান্না শুরু করে দিবি।
রানা-:এই বুড়ি চল ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যাবো তোকে।
রাত্রি-:এই গাধা আমি বুড়ি না।তুই বুড়া।
"""""""""
তারপর রানা রাত্রিকে নিয়ে
ডাক্তারের কাছে যায়।
রানা অনেক ভালবাসতো তার এই ছোট
বোনকে।রাত্রির সামান্য কিছু হলেই রানা
কাদতো।
এভাবে চলতো তাদের ভাইবোনের পবিত্র
ভালবাসা।
"""""""""
একদিন কিছু একটা নিয়ে মা বাবার সাথে
ঝগড়া হয় রানার।
সেদিন রানা সারাদিন বাসায় ফেরেনি।
বাসায় না ফেরার কারনে রাত্রিকে অনেক
চেষ্টা করেও একটিবারেও খাওয়াতে পারেনি
কেউ। আরা প্রচন্ড কান্না করতেছিল সে।
রাত্রি-: তোমরা সবাই পচা, তোমাদের জন্য
আমার সোনা ভাইয়াটা চলে গেছে, তোমরা
যাও আমার কাছ থেকে কেউ আসবা না।
"""""""
তারপর অনেকটা রাত হয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে
শুধু এই পাগলিটা ছাড়া।
সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও ভাইয়ের আশায় জেগে
থাকে ছোট্ট মেয়েটি।
অনেক রাতে রানা বাসায় ফিরে আসলো আর
না খেয়েই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
রানা যে এসেছে এটা রাত্রি ঠিক বুঝতে
পারলো কারন সে তখনো জেগে ছিল আর
কাদছিল।
রাত্রি তখন দ্রুত টেবিল থেকে এক প্লেট ভাত
নিয়ে রানার রুমে গেল।
রাত্রি-:ভাইয়া, ও সোনা ভাইয়া।
রানা-:(ঘুম জড়িত কন্ঠে) কিরে বুড়ি কিছু
বলবি।
রাত্রি-:(কাদে আর বলে) ও ভাইয়া তুমি
কোথায় ছিলে সারাদিন?
রাত্রির কান্নার শব্দ শুনেই বিছানা থেকে
লাফ দিয়ে উঠে যায় রানা।
রানা-:এই পাগলি তুই কাদছিস কেন আর তোর
হাতে ভাতের প্লেট কেন?
রাত্রি-:আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো।
আর সারাদিন তো মনে হয় কিছু খাওনি কারন
তুমি তো আমাকে না খাইয়ে দিয়ে আগে কিছু
খাওনা।
"""""""""
এরপর রানা রাত্রির হাত থেকে ভাতের প্লেট
নিয়ে টেবিলে রেখেই রাত্রিকে জড়িয়ে ধরে
কাদতে থাকে আর সাথে রাত্রিও।
রানা-: আমি এই পিচ্চি বুড়িটাকে রেখে
কোথাও যাবোনা।আমি জানি তুইও সারাদিন
না খেয়ে আছিস কারন তুইও তো আমাকে
ছাড়া খাসনা।
"""""""""
এরপর রানা নিজের হাতে রাত্রিকে খাইয়ে
দেয় আর নিজেও খায়।
সকালে মা রাত্রিকে বিছানায় না পেয়ে
খুজতে খুজতে রানার রুমে চলে যায়।
তিনি দেখতে পান পিচ্চি বুড়িটা তার
ভাইয়ের বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে আর পাশের
টেবিলে প্লেট।
এটে দেখে তিনি সব বুঝতে পারলেন।নিজের
চোখের পানিকে আর আটকাতে পারলেন না,
কেদে ফেললেন পাগল পাগলির ভালবাসা
দেখে।
"""""""""""
কে জানতো এমন একটা ভালবাসার মধ্যেও
কালবৈশাখী ঝড় প্রবেশ করে ভাইবোনের এই
পবিত্র ভালবাসার ইতি টানবে।
"""""
কিছুদিন পর রানার বাবা মা তাদের গ্রামের
বাড়িতে যেতে চাইলো রাত্রিকে নিয়ে।
কিন্তু রাত্রি রানাকে ছেড়ে যেতে চাইল না,
আর রানাও যেতে দিতে চাইল না।
বাবা মা অনেক বুঝিয়ে রানা আর রাত্রিকে
রাজি করালো।
এরপর তারা রাত্রিকে নিয়ে গ্রামে চলে গেল
আর রানা একা থেকে গেল বাসায় কারন তার
কলেজ ছিল তাই সে যায়নি।
""""""""
এরপর প্রতিদিন বারবার ছোট্ট বুড়িটা ফোন
দিয়ে রানার খোজ নিত,,,,খেয়েছে কিনা, তার
জন্য যেন না কাদে আরো অনেক কিছু।
এরপর ঘটলো এক ভয়ানক দূর্ঘটনা যা সব শেষ
করে দিল।
রাত্রিকে সহ তার বাবা মা শহরের উদ্দেশ্য
রওনা দিলো।
অনেকটা পথ এসেই ঘটলো দূর্ঘটনা। তাদের সেই
বাসটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পরে যায় বিশাল
একটা খাদে।তারপর সব শেষ।
তার বাবা মা যখন জ্ঞান ফিরে পেল তখন
তারা রাত্রিকে খুজতে লাগল সেই
হাসপাতালে।
ডাক্তাররা জানায় বাসের সবাইকে এই
হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তারা খুজকে খুজতে মর্গে চলে গেল যেখানে
লাশ রাখা ছিল।
একটা একটা করে লাশ দেখতে হঠাৎ চিৎকার
করে উঠলেন রানার মা। বুঝতে আর বাকি
রইলনা যে, পৃথিবী ত্যাগ করে না ফেরার
দেশে চলে গেছে পিচ্চি বুড়ি রাত্রি।
রাত্রির বডিটা একদম বিভৎস্য হয়ে গেছে, মনে
হয় উল্টে যাওয়া বাসের নিচে পরে গেছিল।
এটা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়
তার মা।
রানাকে ফোন করলো তার বাবা।
রানা পাগলের মতো ছুটে এলো হাসপাতালে।
এরমধ্যে তার মায়ের জ্ঞান ফিরেছে।
রানা এসেই চিৎকার করতে থাকে,কোথায়
রাত্রি।
এরপর রাত্রির লাশের কাছে তাকে নিয়ে
যাওয়া হল।
রাত্রিকে দেখেই হতভম্ব হয়ে যায় রানা।
অনেকক্ষন কোন কথা বলেনা রাকিব। সবাই
ভাবলো এ আবার পাগল হল নাকি।
হঠাৎ চিৎকার শুরু করে দিল রানা আর তার
বাবা মাকে বলতে লাগল,,,
রানা-:(চিৎকার করে) তোমরা খুনি,তোমরাই
মেরে ফেলেছো আমার পিচ্চি বুড়িটাকে,
তোমাদের
কতো করে বললাম ওকে নিয়ে যেওনা,
পাগলীটা থাকতে পারবেনা আমাকে ছাড়া
তবুও তোমরা নিয়ে গেলে আর মেরে
ফেললে,
ফিরিয়ে দাও আমার পিচ্চি বুড়িকে।
"""""""
রানার চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে যায় পুরো
হাসপাতাল।
রানা-:(কেদে কেদে) কিরে পাগলী তুই নাকি
আমাকে ছাড়া থাকতে পারিসনা,তুই তো
আমাকে না দেখলে কেদে ফেলিস তাহলে
এখন ঘুমিয়ে আছিস কেন? কেন একা রেখে
গেলি আমাকে সার্থপরের মতো? ওঠনা পাগলি
আর কখনো তোকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা,
ও
বাবা ও মা আমার পিচ্চি বুড়িটা কথা বলেনা
কেন, ও কি আর ঘুম থেকে উঠবেনা?
এসব বলে আর চিৎকার করে কাদে রানা।
ওর কান্না দেখে সবাই কেদে ফেলে।
""""""""""""
তারপর সেই ছোট্ট পরীটাকে ছোট্ট সাদা
কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হলো অন্ধকার কবরে।
এরপর প্রতিরাতেই রানাকে চিৎকার করে
কাদতে শোনা যায়।বেশিরভাগ সে যখন খেতে
বসতো আর পিচ্চি বুড়িটাকে দেখতো
পেতোনা খাবার টেবিলে তখন।
মাঝে মাঝে রানাকে কবরের পাশে দেখা
যেত।সে বলতো, কিরে বুড়ি কিভাবে আছিস
আমাকে ছেড়ে এই ছোট্ট মাটির ঘরে।তোর কি
ভয় করেনা??
""""""""""
আদরের বোনকে হারিয়ে এভাবেই কাটছে
রানার দিন।
""সমাপ্ত ""
গল্পটা যদি এতোটুকু ভালো লেগে থাকে......
তাহলে আমাদের গ্রুপে Join plz

إرسال تعليق