গল্পঃ এ উইজার্ড। লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।পর্ব - ৮


গল্পঃ এ উইজার্ড
লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।
রাতুল এরকম চোখ দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে যায়।
চোখদুটোর এত উজ্জ্বলতা ছিল যে, চোখের পলক ফেলা গুলো ও রাতুল ঠিকঠাক ভাবে দেখতে পাচ্ছিল।হঠাৎ একটা উজ্জ্বল আলো এসে চোখে পরে রাতুলের।খুব শক্তিশালী টর্চ লাইটের আলো। রাতুল এতক্ষন ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছিল। হঠাৎ তীব্র আলো এসে চোখে লাগায় চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।কয়েকসেকেন্ড পর ই আলোটা নীভে যায়। রাতুল চোখ মেলে তাকাতেই দেখেবাবার সেই নীল চোখ।একটু পর ই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়। ওপাশ থেকে সিটকিনি লাগানোর আওয়াজ শুনতে পায় রাতুল। অবাক হয় কিছুটা, রাতুল তো বাঁধা অবস্থায় ই আছে। আবার সিটকিনি লাগানোর দরকার টা কি।তাও মনে মনে শান্তি লাগে তার। অন্তত নীল চোখের ভুত টা আড়াল হলো কিছুক্ষনের জন্য।
.
.
.
একটা ঝোলে ডোবানো মাংসের টুকরায় কামড় দিয়ে পুলিশ অফিসারটা তৃপ্তি সহকারে বলে, এটা নিশ্চয়ই শাফায়ত ছেলেটার রানের মাংস তাই না?
অফিসারের বৌ জবাব দেয়, হ্যাঁ। বুঝলে কিভাবে??
- এ পর্যন্ত মোট ২১ জন মানুষকে খেলাম! আর বুঝতে পারব না?? কি যে বলো!!
.
- কিন্তু এবার যে দুজনের অনেক দাম নিলো!!
.
- এদিকে আর মানুষ আসতে চায় না।কত দুর্গম পথ পারি দিতে হয়!!ফারাহ তো অনেক বুদ্ধি খরচ করে এ দুজনকে কে আমাদের বাসায় পাঠিয়েছে।
....
.......
খেতে খেতেই নিজেরদের ভিতর আলাপ আলোচনা করছিলো পরিবারের সদস্যবৃন্দরা। হঠাৎ ই তাদের কানে একটা আওয়াজ এসে লাগে,
টক টক টক টক,
ছুড়ির ধারালো মাথা দিয়ে কাঠের টেবিলের উপর নক করলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন।চমকে উঠে চার জন-ই। তারা ছাড়া আর কেউ নেই এ বাড়িতে।
তাহলে শব্দ আসছে কোথা থেকে!? তারা ভালো ভাবেই জানে, রাতুলের যে অবস্থা তাতে রাতুল উঠেই বসতে পারবে না। তবে!! কোন জীব জানোয়ার ঢুকে পরলো নাকি!! মরুভূমি তে যে কোন জীবজন্তু থাকে না তেমন কিন্তু না, র‍্যাটল স্নেক, গিরগিটি, এমন কি মালিক এবং পথ হারিয়ে উট ও ঢুকে যেতে পারে বাসায়। কিন্ত নির্দিষ্ট সময় পর পর এমন শব্দ করা অনেকটা অদ্ভুত কাজ ই বলা যায়।
পেট্রোল পাম্প এ কাজ করা ছোট ভাইটি হাতে একটা ধারালো চায়নিজ অ্যাক্স নিয়ে শব্দের উৎসের দিকে আগায়, টক টক করা শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয় ক্রমেই। গায়ের লোম গুলও নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে যায় তার। বড় ভাই তাড়া দেয়, কিরে? কিছু পেলি? শব্দ আসছে কোথা থেকে?ছোট ভাই উত্তর না দিয়ে শব্দের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে দ্রুত।
পাশের একটা রুম থেকেই শব্দ আসছে। দেয়ালে থাকা সুইচ টিপে সে সৌর বিদ্যুৎ চালিত লাইট জ্বালিয়ে সামনে আগায়।
হঠাৎ-ই সে অনুভব করে কোন একটা চিকন সুতা তার পায়ে লেগে যেন ছিড়ে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহূর্তের ভিতর উপর থেকে একটা দড়ির ফাঁস এসে তার গলায় লেগে যায় এবং হ্যাঁচকা টানে তার দেহ ফ্লোর থেকে দু তিন হাত উপরে উঠিয়ে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় হাত থেকে চায়নিজ অ্যাক্সটি পরে যায় ছেলেটির। লাইলনের দড়ি গলার নরম মাংস ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যায় তার। হাত থেকে ঝং করে মেঝেতে অ্যাক্স পরে যাওয়ার শব্দে পুলিশ অফিসার, বৃদ্ধ এবং মেয়েটি দৌড়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। আপন ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহটি থেকে টপ টপ করে রক্ত পরতে দেখে দেখে পাগলের মত চিৎকার করে উঠে পুলিশ অফিসারটি।এখনো পা দুটো যেন তির-তির করে নড়ছে।
দৌড়ে গিয়ে মেঝে থেকে ধারালো অস্ত্রটা তুলে নিয়ে এক কোপে দড়িটি কেটে দেয় সে। ঝুপ করে বডিটি মেঝেতে আছড়ে পরে। ঘাড় কাত হয়ে জিহ্বা বের করে আছে লাশটি। লাইলনের দড়ি গলার চামড়া ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাওয়ায় সেখান থেকেই রক্ত বের হয়ে পা বেয়ে নিচের ফ্লোরে পরছিল। আফ্রিকান ওয়ার্থ হগ ক্যাচিং ট্রাপ!! পুলিশ অফিসারটি চিনতে পারে। আফ্রিকায় বুনো শুকর শিকারের জন্য এ ধরণের ফাঁদ পাতা হয়। একবার এ ফাঁদে যা ফেঁসে যায়, তা আর বের হতে পারে না। আফ্রিকান ওয়ার্থহগ ক্যাচিং ট্রাপ টা একটু মোটিভেট করে গলার ফাঁস হিসেবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখানে কে বানাতে পারে এই ট্রাপ!!পকেট থেকে রিভালবার বের করে লোড করে অফিসারটি। শব্দ ভেসে আসা রুমটার দিকে এগিয়ে যায় সে।
অন্ধকার রুমটার দরজা খোলাই ছিল। কাছে যেতেই দেখতে পায় রুমের ভিতর দুটি নীল চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সে অপেক্ষা না করেই সেদিকে রিভালবার তাক করে ঠাশ ঠাশ করে তিন চারটি গুলি চালিয়ে দেয়। মুহূর্তেই পাশের একটা ডেস্কের আড়ালে বিবর্ণ হয়ে যায় চোখ দুটি।
.
.
.
যাক প্লান মত তবে কাজ হচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটা প্রায় অচল। মেয়েটা পিশাচ হলেও গায়ে জোড় কম। পুলিশ অফিসারটা ই যত প্যারা এখন। হাতে আবার রিভালবার ও আছে। ইশ! আমার হাতে যদি আজ একটা রিভালবার থাকত!! দেখিয়ে দিতাম কে কত ডিগ্রী এংগেলে ঘুরিয়ে গুলি করতে পারে! কথাগুল ভাবতে ভাবতেই জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে ফাহাদ।
ফাহাদের একটা বড় জিনিস তখনো অজানা।সে অন্ধকারে লুকাতে পারবে না।
তার চোখ দুটো উজ্জ্বল নীল বর্ণ ধারণ করেছে সেটা সম্পর্কে তার কোন ধারনা ই নেই এখন পর্যন্ত। তবে জামার ভিতরের লকেট টার ভাইব্রেশন হচ্ছে তা খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে সে।
এদিকে টর্চ নিয়ে বাসার আনাচে কানাচে পুলিশ অফিসারটি পাগলের মত খুঁজে চলেছে, কে তাদের বাসায় ঢুকে এমন একটি অঘটন ঘটালো তা ভেবে পাচ্ছেনা সে। নিশ্চুপ রাতে একটা পিঁপড়া হাঁটলেও যেন এখানে শব্দ পাওয়া যায়। বৃদ্ধ লোকটি বিছানায় বসে আছে। বয়সের ভাড়ে তার এখন কোন পদক্ষেপ নেওয়ার- ই সুযোগ নেই। পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, তার হাজবেন্ড কে সঙ্গ দিচ্ছেন লাইট নিয়ে।
হঠাৎ অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছে।
ওদিকে রাতুল যন্ত্রনায় মাঝে মাঝেই কাতরে উঠছে। সব মিলিয়ে চারদিকে একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলা যায়।
পুলিশ অফিসার ও তার স্ত্রী অন্যদিকে ফাহাদকে খুঁজতে গেলে, ফাহাদ ডেথ স্পটে এসে চায়নিজ অ্যাক্স টি কুড়িয়ে নেয়। এতক্ষনে একটা কাজের কাজ হলো। এবার যেন জমবে বাঘ সিংহ খেলা। যে আগে আক্রমণ করতে পারবে সে ই জিতবে।
পিছন থেকে অ্যাক্স ছুড়ে তেমন সুবিধা করা যাবে না। সামনে থেকে নির্ভুল ভাবে বুকের মাঝে ছুড়তে হবে। তবেই কেবল সফল হওয়ার চান্স রয়েছে। ওদিকে রাতুলকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখেছে বদমাশ গুলি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে রাতুলকে বাঁচানো যাবে না। অন্তত পক্ষে রাতুলকে বাঁচানোটা ফাহাদের কাছে খুব জরুরী হয়ে উঠেছে। কারণ ফাহাদ সুবাতার কাছ থেকে জানতে পেরেছে রাতুল এবং শায়েলা মিলে খুন করেছে তিং মাং কে। রাতুল ছিল প্রধাণ হোতা।শায়েলা সংগ দিয়েছে শুধু। এজন্য শায়লাকে বেশি কষ্ট না দিয়েই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তেমন কঠিন করে মারা হয়নি। যাস্ট হাত পা বেঁধে মাথাটা মাইক্রো-ওভেনে ঢুকিয়ে ফুল পাওয়ারে অন করে রাখা হয়েছিল কিছুক্ষন। ৫/১০ মিনিট অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করার পর মুক্তি পায় শায়লা হঠাৎ বিকট শব্দে ব্লাস্ট হয়ে যায় ওভেন টি।
কিন্তু রাতুলকে তো বাঁচাতে হবে। একটা গুলি খেয়ে রক্তক্ষরণ হতে হতে মারা গেলে সেটা বেশ শান্তির মৃত্যু হয়ে যাবে।
ইদফো শহর থেকে খুঁজে মহিলাদের আশ্রয় স্থল বের করেছিলো ফাহাদ।
সেখানে গিয়ে খুঁজতেই সহজেই সুবাতাকে পেয়ে যায় সে।
ফাহাদ ভেবেছিল সুবাতা ফাহাদকে দেখে পালাবে। কিন্তু সুবাতা পালায় নি। অনেক কথা ছিলো সুবাতার কাউকে একজনকে বলার। ফাহাদকে ই সুবাতা সেই নির্ভরযোগ্য মানুষ ভেবেছে, যার কাছে সবটুকু ঘটনা খুলে বলা যায়।
সব কিছু শোনার পরে ফাহাদ কিছুক্ষন বাকরুদ্ধ হয়ে ছিল। সুবাতাকে সে ক্ষমা করে। সুবাতার কাছ থেকেই ফাহাদ জানতে পারে রাতুলের একমাত্র বন্ধু শাফায়ত।
শাফায়তের খোঁজ নিতে গিয়ে ফাহাদকে আবার কায়রো যেতে হয়। সুবাতাকে সাথে নিয়ে যায় সে। ফাহাদের নিজস্ব রুমে সুবাতাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাত পা বেঁধে সেখানে বন্দী করে সুবাতাকে।শুধুমাত্র সেফটির জন্য। কথা দিয়ে এসেছে রাতুলকে নিয়ে ফিরে সুবাতাকে মুক্তি করবে।এরপর গ্রিক হাসপাতাল। সেখানে গিয়ে শুনতে পারে শাফায়তের মায়ের কথা। ফাহাদ শাফায়তের হয়ে পুরো টাকাটা পরিশোধ করে। হাসপাতালের ম্যানেজারের কাছে জানতে পারে একটা ঠিকানা দেখিয়ে জানতে চেয়েছিলো ওরা-দুজন, কিভাবে যেতে হয়, ঠিকানা নিয়ে অতপর ফাহাদ চলে যায় ফারাহ এর বাসায়। ব্যাটাকে দেখলে যতটা শক্ত মনে হয় ততটাই ভীতু। গায়ে হাত দিতে হয় নি। থ্রেটেই কাজ হয়েছে। তারপর বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে আবার আসওয়ান আসা। সেখান থেকে রাতুলের বাসায় যাওয়া। শায়লা দরজা খুলতেই - সেদিনের সেই তলপেট লাথির প্রতিশোধটা প্রথম নিয়েছিল ফাহাদ। এরপর ফাহাদের ভিতর মা-খুন করার প্রতিশোধের নেশা উঠে। মাইক্রো-ওভেনে ব্লাস্টের সাথে সাথে শায়লার মাথাটাও বেলুনের মত ফেটে চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর আবার ফাহাদ ফারাহ এর ম্যাপ দেখে বাইক নিয়ে রওনা দেয় রাতুলকে ধরার জন্য। দীর্ঘ কয়েকদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে অবশেষে রাতুল হাতের মুঠোয়। এত সহজে দুর্গম মরুভূমিতে বসবাসকারী, টাকা দিয়ে কিনে মানুষের গোশত খাওয়া একটা সাইকো পরিবারের কাছে এসে হেরে যেতে পারে না ফাহাদ।
এত কষ্ট করে এতদূর পৌঁছে সব প্লান ভেস্তে দিতে পারে না সে। লকেট টা যেন আরো বেশি করে কাঁপছে ফাহাদের।
চায়নিজ অ্যাক্স টা হাতে নিয়ে আবারো অন্ধকারে নীল চোখ নিয়ে বিবর্ণ যায় রিভার্স ডক্টর।
এদিকে পুলিশ অফিসার ও তার স্ত্রী টর্চ নিয়ে সতর্ক ভাবে খুঁজতে থাকে ফাহাদ কে। বাড়িটা লোকালয় থেকে ৮০০ কি.মি দূরে এবং জায়গাটা পৃথিবীর মানুষের কাছেও অনেকটা অপরিচিত ।সাধারণত দরজা জানালা খোলা ই থাকত বাড়িটায়। বাসা যেখানেই হোক, দরজা খোলা থাকলে বিপদ আসবেই। কারণ একজন মানুষের পক্ষে যে- জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব, অন্য মানুষের কাছেও সেটা অসম্ভব নয়। নিজেদের ভুলটা বুঝতে তাদের একটু বেশি ই সময় লেগে গিয়েছে। তারা বাসার ভেতরে তন্ন তন্ন করে খুঁজে কাউকে না পেয়ে শেষমেস দরজা জানালা ভালোভাবে লাগিয়ে দেয়। নিচতলায় প্রত্যেকটা রুম ও জিনিসপত্র আনাচে কানাচে খুঁজে এবার উপরের তলায় খোঁজার জন্য সাবধানে পা টিপে টিপে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে ।উপরের তলায় ছিলো পেট্রোলের বড় বড় কন্টেইনার।
থাকার কারণ ও আছে।মোটামুটি একটা টয়োটা সর্বোচ্চ ৫৫ লিটার তেল ধারণ করতে পারে।
মাইলেজ ১৬ কিমি / লিটার হলে, মোট অতিক্রম করতে পারবে ৮৮০ কি.মি। তার উপর বালুর মরুভূমি।
সুতরাং আসা যাওয়া করার জন্য অতিরিক্ত পেট্রোল ব্যাবহার করতে হত।তাই স্বাভাবিক ভাবেই দোতলায় অতিরিক্ত পেট্রোলের মজুদ ছিলো।ফাহাদ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আগেই উপরে উঠে সেই পেট্রোলের ড্রামগুলোর আড়ালে লুকিয়ে সুযোগের অপেক্ষা খুঁজছিলো।
এদিকে ওরাও খুঁজতে খুঁজতে উপরের তলায় চলে আসে।
আস্তে আস্তে উপরের তলার সবগুলো লাইট জ্বালানো হয়। আশেপাশে শুধু পেট্রোলের ড্রাম। কোন কামড়া নেই। রিভালবার টা লক করে পকেটে পুরে ফেলে পুলিশ অফিসারটি। কারণ আর যা-ই হোক, কিংবা না হোক কেন এখানে কাউকে গুলি করা যাবে না। একটুখানি আগুনের ফুলকি থেকেও যে কোন বড় ধরণের বিষ্ফোরণের সুচনা ঘটতে পারে। আর তাতে এ বাড়িটা মরুভূমির বুকে আতশবাজির মত ফেটে গিয়ে ছাই-কয়লা-ধুলোয় পরিণত হয়ে যাবে। হাতে ৪ ফুটের এক মাথা চোখা রড নিয়ে দু জন দু দিক দিয়ে খুঁজতে শুরু করে। ফাহাদ পরে ভয়ানক বিপদে। কারণ লুকিয়ে থাকার কারণে সে দেখতেও পারে নি যে রিভালবার লক করে রেখে দেয়া হয়েছে। এটা কোন মুভি না যে নায়ক একটা কুঠার দিয়ে রিভালবার হাতে থাকা একটা মানুষের সাথে যুদ্ধ করবে। মাথা, গলা, বুকে কিংবা পেটে একটা বুলেট ঢুকতে সময় লাগবে এক সেকেন্ডের ও কম। ফাহাদ ওদের পায়ের শব্দ শুনে বুঝতে পারছে ওরা এখন অপর প্রান্তে,ওদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য ড্রামগুলোর আড়াল থেকে মাথা উঁচু করে উঁকি দেয় সে। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।
পুলিশ অফিসার আর তার বৌ অপর প্রান্তে থাকলেও এ প্রান্তের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ তারা দুজনই দেখলো দুটো নীল চোখ ঐপাশ থেকে উঁকি দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠান্ডা, নীল চোখের সে চাহনী তাদের ভিতরের আত্মাকে যেন অল্প একটু কাঁপিয়ে দেয়।।
হাতের রড শক্ত করে ধরে তারা দুজনেই সেদিকে দৌড় দেয়। সাথে সাথে পানিতে ডুব দেয়ার মত ফাহাদও সেখান থেকে ডুব দিয়ে যেন হারিয়ে যায়।দ্রুত দৌড়ে গিয়েও কাউকেই দেখতে পায়না তারা। এতক্ষন মাথায় না থাকলেও হঠাৎ তাদের মাথায় ভুতের চিন্তা চেপে বসে। মহিলাটি কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বলে!! কোন এলিয়েন না তো!!
পুলিশ অফিসারটা সায় দেয়, "হতেও পারে। দেখো নি!! চোখদুটো কেমন নীল হয়ে জ্বলছিল!!"
-" এলিয়েন নাকি রোবট বলো তো!!"
- রোবট হলে তো আর ফাঁদ বানাতে পারত না!!
"একটু দূর থেকেই ওদের কথা বার্তা শুনে ভয়ানক রকমের আশ্চর্য হয় ফাহাদ। " ওদের চোখের আড়ালে একটা ব্যারেলের সাথে মাকড়সার মত সেঁটে ছিলো সে।
এটা কি শুনল নিজের কানে!!
তার চোখ নীল বর্ণের!! ফাহাদ
খুবই ধীরে ধীরে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে নিজের চোখের সামনে ধরে ।
মোবাইলের কাচের স্কিনে তাকিয়ে তার নিজের নীল বর্ণের অশরীরী চোখ দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
নীজের কাছে নিজেকে কেমন যেন উইজার্ডের মত লাগে। তবে চোখের মাঝে এ নীল রঙ টার সাথে সে খুব ভালোভাবে-ই পরিচিত।তার গলার লকেট টা থেকেও মাঝে মাঝে এমন বর্ণ বের হয়। লকেটের সাথে তাহলে শরীরের একটা যোগসংযোগ রয়েছে!! শুধুমাত্র লকেট বিক্রি করে টাকা পাওয়ার নেশায় তাহলে তিং মাং কে খুন করা হয় নি!! এই রকেটের আরো কিছু রহস্য আছে,যা রাতুল জানে। ফাহাদ আপাতত চোখের নীল রঙ টা সরানোর জন্য গলা থেকে লকেট টা খুলে ফেলে।হাতে ধরা অবস্থায় ও তার চোখ নীল ছিলো। কিন্তু যখনই পকেটের ভিতরে লকেট টা ঢুকিয়ে রাখে, সাথে সাথেই তার হাত থেকে কুঠার টা নিচে কাত হয়ে পরে যায়। ঝং করে একটা শব্দ হয়। ফাহাদ সে কুঠারের উপরেই লুটিয়ে পরে।পানির তৃষ্ণা, ক্ষুধা, ক্লান্তিতে সে যেন জর্জরিত হয়ে গিয়েছে। এখনই মারা যাবে যেন। শব্দ করে নিশ্বাস নিতে নিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর্যায়ে চলে যায় একদম। টের পেয়ে যায় ওরা দুঁজন। ওদের পাশেই লুকিয়ে ছিল ফাহাদ। সুতরাং ফাহাদের বডির কাছে পৌঁছাতে কয়েক সেকেন্ড লাগে ওদের।গিয়ে দেখতে পায় একজন মামুলি ছেলে মানুষ ফ্লোরে পরে কাতরাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা লাথি দিয়েই মেরে ফেলা যাবে। পুলিশ অফিসারটি মুখে এক চিলতে হাসির রেখা টেনে ফাহাদের গলার উপর পা চেপে ধরে। শেষ নিশ্বাস ফেলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ফাহাদ। ফাহাদের মস্তিষ্কে তখন শূন্যতা বিরাজ করছে।কোন রকমে কাঁপা কাঁপা হাতটা আস্তে আস্তে পকেটের ভিতর ঢুকাতে চেস্টা করে সে। কিন্তু সামান্য হাতটাকেও আজ ভীষন ভারী মনে হচ্ছে। এই বুঝি বেরিয়ে গেল শেষ নিশ্বাস টা। হঠাৎ ফাহাদ যেন তার মস্তিষ্কের ভিতর ঢুকে যায়। সেখানে তিং মাং ও ছোট ফাহাদকে সাইকেল চালানো অবস্থায় দেখতে পায় সে।আচমকা ই দৃশ্যপট বদলে যায়। দেখতে পায় রাতুল কিভাবে তিং মাং কে হত্যা করছে!! এরপর সব কিছু সাদা।
হঠাৎ তিং মাং চলে আসে ফাহাদের সামনে,চলে আসে ওর বাবা ও। উমরের মাথা থেকে ঘিলু যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। তিং মাং ফাহাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, "ওঠ বাবা"। ওর বাবা ফেটে যাওয়া মাথাটা উপর নিচ নাড়িয়ে যেন কথাটাকে আরো অর্থবহ করে তুলে।
তারপর আবার সাদা হয়ে যায় চারদিক। ফাহাদ বাস্তব জগতে ফিরে আসে। ঘটনাটা চোখের পলকেই ঘটে গিয়েছ যেন।শেষ চেস্টায় একটু শক্তি সঞ্চয় করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে লকেট টা মুঠো করে ধরে ফেলে ফাহাদ।
এরপরই ঘটে এক অলৌকিকতা। নীল আলো ছড়িয়ে যায় ফাহাদের দেহের চারদিকে। ফাহাদের চোখটাও আস্তে আস্তে খুলে যায়। নীল আভা যেন ঠিকরে বের হচ্ছে দু চোখ দিয়ে। ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে!!যে পুলিশ অফিসার আর তার বউ প্রথম কয়েকসেকেন্ড হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।হাতের রড টা ফাহাদের মাথা বরাবর চালিয়ে দেয় মহিলাটি। ফাহাদ সেটা এক হাতে ধরে ফেলে এবং এক ঝটকায় অনেক দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। রডে কাজ হবেনা বুঝতে পারা
মাত্রই রিভালবার বের করতে উদ্যত হয় পুলিশ অফিসারটি। ব্লাংক পয়েন্ট থেকে গুলি করলে তেমন কোন ঝুঁকি নেই। রিভালবার বের করার জন্য গান কভারের উপর হাত দিতেই
দ্রুত নিজের পিঠের নিচে হাত নিয়ে যায় ফাহাদ।পিঠের নিচ থেকে কুঠার টা একটা হ্যাচকা টানে বের করে নিয়েই পুলিশ অফিসারের হাঁটু বরাবর সজোরে চালিয়ে দেয় সে। চোখের পলক ফেলার আগেই একটা শশার মাঝ বরাবর ছুড়ি চালালে যত সহজে কেটে যায় পা টাও যেন ততটাই সহজে কেটে গেল লোকটার।
এটা কুঠারের ধার, নাকি ফাহাদের প্রয়োগকৃত শক্তির প্রভাব সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যায় ফাহাদ নিজেই। কয়েক সেকেন্ড সবকিছু চুপচাপ, ঝুম ঝুম নিরবতা, পায়ের নিচের অংশ কাত হয়ে পরে যাওয়ার পরে পুলিশ অফিসারটি বুঝতে পারে তার সাথে কি হয়েছে।এর পর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠে। ঝর্না থেকে পানি ঝরার মত করে রক্ত ঝরতে থাকে পা দিয়ে।
ফাহাদের নাকমুখ পুরো ভিজে যায় তাজা রক্তে। লোকটি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে আছে। এরকম রক্ত ঝরতে থাকলে থাকলে ১০ মিনিট ও লাগবে না মারা যেতে।
একটু আগে ফাহাদ যেমন লুকিয়ে ছিল, মহিলাটি গিয়ে সেরকমভাবে একটা কন্টেইনারের আড়ালে লুকিয়ে গিয়েছে।
মানুষের জীবনে " সময় "-ই সবথেকে বড় বেঈমানি টা করে। লোকটার গান-কভার থেকে রিভালবার টা বের করে নিজের কাছে নিয়ে নেয় ফাহাদ। নিজেকে এখন যেন সিংহ মনে হতে থাকে তার। সোজাসুজি সামনে কোন বাঁধা থাকলেও বুলেট কয়েকডিগ্রী এংগেল এ ঘুরিয়ে লক্ষ্যভেদ কিরার মত স্কিল ফাহাদের আছে। ধীরে ধীরে ফাহাদের গায়ের নীল আভা কমে আসতে থাকে।
মেয়েটাকে মারতে ইচ্ছে করছে না ফাহাদের। তবে ঝামেলা করতে পারে ভেবে হাত পা বেঁধে রেখে দেয় উপরের তলায় ই।
বুড়োলোকটা যে রুমে ছিল,সে রুমের দিকে আগায় ফাহাদ। গিয়ে দেখতে পায় চিৎকার চেঁচামিচি শুনে বেচারা ভয়ে খাটের নিচে নেমে হাঁটু গুঁজে বসে আছে। বুড়োটাকে ভিতরে রেখে ফাহাদ বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয়।
দীর্ঘ দু দিন সে পানি তো দূরের কথা তেমন কোন খাবার ও খায় নি। তার উপর মরুভূমির মাঝ দিয়ে কোয়াড চালিয়ে আসতে আসতে বডি রিহাইড্রেড হয়ে গিয়েছিল আগেই। হয়ত লকেটের স্পেশাল কোন পাওয়ারের জন্যই এখনো বেঁচে আছে সে। কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর ই পানির কলসি পেয়ে ঢক ঢক করে সে বেশ কিছু পানি খেয়ে নেয় ।এরপর আবার ঘরের বাইরে এসে কোয়াডের কাছে চলে আসে। কোয়াডে রাখা ব্যাগ থেকে ছুড়ি,চিমটা ব্যান্ডেজ নিয়ে
রাতুলের কামরার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় ফাহাদ।চোখে তারায় আগের মত নীল আভা নেই। সিংহ শিকার করার সময় যতটা হিংস্র হয়ে উঠে, শিকার বাগে পেলে ঠিক ততটাই খুশি হয় এরপর মাথা ঠান্ডা করে পেট পুরে খায়। এবার ফাহাদও শিকার বাগে পেয়েছে। ফাহাদেরও সময় হয়েছে রাতুলের সাথে মন ভরে খেলার।
রাতুল ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে ঘুমিয়ে পরেছে। পা টা দেয়ালে তুলে নিজের মাথা ও অন্যান্য অঙ্গ থেকে উপরে উঠিয়ে রেখেছে রক্ত বন্ধ করার জন্য। এতে রক্তক্ষরণ পুরোপুরিভাবে বন্ধ না হলেও অনেকটাই কম হয়েছিল। বেঁচে থাকার জন্য ধন্যবাদ রাতুল। বলেই ফাহাদ ক্লোরোফর্ম ভেজানো রুমালটা রাতুলের নাকে চেপে ধরে। মুহূর্তের ভিতরে ই রাতুল অজ্ঞান হয়ে যায়।
কাইনেটিক বুলেট পুলারটা থাকলে এত কষ্ট করতে হত না। চাকু ও চিমটা দিয়ে বুলেট বের করতে করতে মনে মনে বলে সে।
বুলেট বের করার পরে ব্যান্ডেজ করে দেয় ফাহাদ। বেশ গভীর ক্ষত হয়েছে।
রাতুলের অচেতন বডিটা বাইরে নিয়ে এসে কোয়াডের উপর বসায় সে।
চিন্তা করতে থাকে গাড়িতে যাবে নাকি কোয়াড ব্যাবহার করবে!
গাড়িতে গেলে সময় বেশি লাগবে। তাছাড়া পেট্রোল ঢুকাতে হবে আবার। তারচেয়ে গ্যাসোলিন আর অকটেনে চলা চার চাকার বাইক কোয়াড ই ভালো।সি বিচে অনেকে শখ করে কোয়াড চালায়। তবে মজবুত বাহন ও বালির ভিতর দ্রুত চলতে কোয়াডের কোন বিকল্প নেই।
সব প্লানমাফিক হওয়ার পর ও সমস্যা ছিল এবং গুরুতর সমস্যা ছিলো রাতুলকে নিয়ে।
ইদফো শহরের সেই ছোট্ট গ্রামটা থেকে সুবাতা উধাও হয়ে যাওয়ার পর, সেখানের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন থানায় ডায়েরী করে। আবার এদিকে শায়েলার খুন হওয়া!! দুটো মানুষের সাথে জড়িত একজন ব্যক্তি পলাতক আসামী -"রাতুল"। ওকে চিরুনি অভিজান দিয়ে খুঁজছে প্রশাসনের লোকজন। একে নিয়ে আসওয়ানের ভেতর থেকে কায়রো কিভাবে যাবে সেটাই হলো সমস্যা।রাতুল জেগে গেলে আবার চিৎকার চেঁচামেচি করবে। অজ্ঞান করে বেঁধে নিয়ে গেলে নাসের লেক পৌছালেই পুলিশ ধরে ফেলবে।
তাহলে রাতুলকে নিয়ে কি উপায়ে কায়রো পৌঁছানো যায়!! চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরে ফাহাদ.

Post a Comment

أحدث أقدم