গল্পঃ ব্লাক-ক্যাফেটেরিয়া | লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ ☕ পর্ব ৬

গল্পঃ ব্লাক-ক্যাফেটেরিয়া  পর্ব ৬


লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ


.

হেলেন ছেলেটির দিক থেকে চোখ না সরিয়েই নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
আপনার নাম কি?
- ইন্সপেক্টর রোমান।
এখানেই থাকেন!
- নোপ!
এ অঞ্চলের পুলিশ অফিসাররা একেকটা অকর্মার ঢেঁকি হয়ে উঠেছে।
বেশ কিছু কেইস সলভ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার এ অঞ্চলে আসা।
- আচ্ছা,বুঝতে পেরেছি। পরিচিত হয়ে নেই। আমার নাম হেলেন। আমার বাবার নাম এরিক!
- ওহ আচ্ছা আচ্ছা, আপনি এরিক সাহেবের মেয়ে! তো মুখোশ পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?
আপনার তো এখানে থাকার কথা নয়! বেড়াতে এসেছেন বুঝি?
- সেরকম ই বলা চলে। এমনিতেও একটু এদিক সেদিক ঘুরতে আমার অনেক ভালো লাগে।
চুল গুলো বা হাত দিয়ে বার কয়েক উপরের দিকে ঠেলে রোমান। হেলেনের দিকে তাকিয়ে বলে,
- আমিও এখানে একদম ই নতুন। তবে সত্যি বলতে মফস্বল টা ভালো লেগেছে। বলার পরেই হেলেনের দিক থেকে ক্রুইফের দিকে
ঘাড় ঘুরায় রোমান, জিজ্ঞেস করে,
"আপনার ওহমা কখন আসে? "
সাতটা ত্রিশের দিকে।
ঠিক আছে আমি তখন আসব।
উঠে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বিল পরিশোধ করে রোমান।
হেলেন জিজ্ঞেস করে,
আপনি আবার আসবেন?
- হুঁ।
- আচ্ছা আজ আবার তবে দেখা হচ্ছে আপনার সাথে।
ভ্রু কুঁচিকে হেলেনের দিকে তাকায় রোমান।
জিজ্ঞেস করে, দেখা হওয়ার বিশেষ কোন প্রয়োজন কি রয়েছে?
- না তা নেই।
- তবে এভাবে বললেন যে!
- আপনাকে দেখতে ভালো লাগে তাই বললাম।
হেলেনের কাছ থেকে সরাসরি এমন একটা কথা শুনে একটু লজ্জা পায় রোমান। ফর্সা গাল দুটোয় হালকা লাল আভা ফুটে উঠে। দু হাত দিয়ে জ্যাকেট টা হালকা একটু খুলে আবার ভালোভাবে গায়ে চাপিয়ে ঠিক ঠাক করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। যাওয়ার পথে হেলেন ইচ্ছে করেই গা দিয়ে হালকা একটু ধাক্কা দেয় রোমানকে।
আবার নিজেই হিহি করে দুষ্টু হাসি দিয়ে করজোরে দুঃখিত বলে মাফ চেয়ে নিতে ভুল করে না। কিছু না বলেই রোমান হনহন করে হেঁটে বেঁড়িয়ে যায় ।
পুরোনো আমলের সরকারি একটি জিপে উঠে স্টার্ট দিয়ে চলে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত হেলেন জানালা দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
ক্রুইফ সাহেব ভারাক্রান্ত মনে বলেন, কি যে হচ্ছে আজকাল কিছুই বুঝছি না।
হেলেন ক্রুইফের কাঁধে হাত দিয়ে বলে, কিচ্ছু হবেনা। চিন্তার কারণ নেই। আমার জন্য কফি পাঠান। আমি ওহমার সাথে কথা বলার জন্য এখানেই অপেক্ষা করব।
হেলেন কিছু কাগজপত্র নিয়ে মাঝের দিকের একটা বেঞ্চিতে বসে পরে।
কয়েকটা নথিপত্র খুলে মনোযোগ দিয়ে চোখ বুলাতে থাকে।
পিচ্চি ছেলেটা হেলেনের জন্য কাঁপা কাঁপা হাতে কফির কাপ নিয়ে এগিয়ে আসে।
হেলেনকে ও এখন প্রচন্ড ভয় পায়।
দুপুরের দিকে যখন নেকড়ে নেকড়ে বলে সবাই দোকান ছেড়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলো, ছেলেটাও ভয়ে তখন দৌড়ে ভেগে যায়। বাসায় গিয়ে ক্রুইফের স্ত্রীকে চেচামেচি করে বলতে থাকে ইয়া বড় একটা নেকড়ে এসে ঢুকেছে ক্যাফেটেরিয়ায়, বড় বড় দাঁত, সাদা লোম নীল চোখ।
কথাগুলি গিয়ে হেলেনেরও কান পর্যন্ত পৌঁছায়। বর্ণনা শুনেই হেলেন বুঝতে পারে আলফার কথা বলা হচ্ছে!!
নিশ্চয় ই হেলেনের গায়ের ঘ্রাণ শুঁকে চলে এসেছে। হেলেন তার পোশাক চাপিয়ে ছুটে বের হয়ে চলে আসে ক্যাফেটেরিয়ায়। হেলেনকে দেখা মাত্রই আলফা হেলেনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে গা ঘষা শুরু করে দেয়। কুঁই কুঁই শব্দ তুলে কান্না করতে থাকে। হেলেন আলফাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, সে ভালো আছে এখন।
আলফার পিঠে পায়ে মারাত্মক রকমের জখমের চিহ্ন রয়ে গিয়েছে এখনো। ডিকয় গাছের পাতা আলফা কে অসম শক্তি দিলেও ক্ষত তো আর সারিয়ে তুলতে পারে নি। ক্রুইফ কে আলফার ব্যপারে সব কিছু খুলে বলে হেলেন।
এরপর ক্রুইফের বাসায়ই আলফাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষতস্থান ভালোভাবে ধুয়ে সেখানে জীবানুনাশক লাগিয়ে দেয় ক্রুইফের স্ত্রী। এরপর আলফাকে ক্রুইফের বাসাতেই বিশ্রামে রেখে পুনরায় ক্যাফেটেরিয়াতে আসে হেলেন। এসেই দেখা পায় রাজপুত্রের মত সুন্দর একটা ছেলের।
প্রথম দৃষ্টিতেই ছেলেটিকে মনে ধরে যায় হেলেনের। আঠেরো বছরের জীবনে ভালোবাসা বলতে শুধু বাবা-মায়ের, রিও আলফা,বিলওয়াল সিস্টার মেরীর স্নেহ মাখা ভালোবাসাকেই বুঝেছিলো সে। কিন্তু রোমান কে দেখার পরে মনের ভিতরে অন্যরকম একটা ঝড় বইতে শুরু করে।
.
.

এদিকে ঠিক ভাবে গাড়ি চালাতে পারছিল না রোমান।
বার বার হেলেনের হরিনীর মত চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকা, মিষ্টি ভাষায় কথা বলা,উচ্ছাস সহ সব কিছু কেমন একটা মোহের ভিতরে টেনে নিচ্ছিলো রোমানকে। সবথেকে বেশি যে ব্যপারটি রোমানের মস্তিষ্ককে নাড়া দিচ্ছিল সেটা হলো একটা মিষ্টি ঘ্রাণ। হেলেন তার গায়ের যে অংশে ধাক্কা খেয়েছিলো, সেখান থেকে মিষ্টি কাঁঠালচাপা ফুলের ঘ্রাণ বের হয়ে রোমানকে প্রায় মাতাল করে তুলেছে। মোহে ডুবে
জিপ নিয়ে নিজ অফিসের কাছাকাছি পৌঁছাতেই একটা শকিং খবর এলো তার কানে। হাসপাতালের মর্গ থেকে উধাও সেই মৃত পাঁচজন ব্যক্তির লাশ।
" নিশ্চয়ই এখানে কোন কারচুপি আছে!" মেজাজ গরম হয়ে ওঠে রোমানের। রাগে তার ঠোঁটগুলো কাঁপতে থাকে। এই ব্যাটা ওহমার হাত নিশ্চয়ই অপরাধ জগতে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
লাশ যে গায়েব হয়েছে এটা ওহমাকে বলা যাবেনা। এমন একটা ভাব করতে হবে, যেন ওহমা বুঝতে না পারে লাশ গায়েব হয়েছে, তাহলে আর ওকে জেরা করা যাবে না।
কিছু জরুরী কাজ সেরে নেয়ার জন্য নিজ অফিসে বসে পড়ে রোমান।
কিন্তু জরুরী কাজগুলোতে কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছিলো না। ওহমা আর হেলেনের চিন্তা কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো তার মাথা।
সন্ধ্যার আযান হওয়ার পরে হালকা মেঘ জমতে শুরু করে। সাথে প্রচন্ড বাতাস।
দেরী না করে জিপ নিয়ে বের হয়ে পরে রোমান। তবে সিভিল ড্রেসে। কালো একটা শার্ট জিন্সের প্যান্টের সাথে ইন করে পরে, কোমড়ে রিভালবার ঝুলিয়ে বুট পায়ে বেড় হয় রোমান।
কালো চশমাটা চোখে না রাখায় ধূসর রং এর চোখ গুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তার।
নির্জন রাস্তায় দ্রুত জিপ চালিয়ে গিয়ে উপস্তিত হয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে। হালকা আলোয় একটা মোম জ্বালিয়ে কিছু কাগজপত্র ঘেটে দেখছিল হেলেন। জিপের শব্দ পেয়ে সেগুলো ভাজ করে নিজের কাছে রেখে দেয় সে।নিজেই হেঁটে ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে আসে। ততক্ষনে জিপ থেকে নেমে গিয়েছে রোমান।
গাড়ির সামনের অংশে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় সে।ক্যাফে থেকে আসা অতি ক্ষুদ্র আলোয়
হেলেনের চোখ এবার আরো ভালোভাবে গেঁথে যায় রোমানের উপরে। ছেলেদের এত সুন্দর চেহারা হতে পারে তা ধারণার বাইরে ছিল তার। রোমানের ধূসর চোখের মায়ার সমুদ্রে হেলেন যেন কোথাও একটা হারিয়ে যায়। ধীর পায়ে রোমানের দিকে এগোয় সে। রোমানের খুব কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায় । আবেগজড়িত ভাংগা ভাংগা কন্ঠে বলে,
" আপনার জন্য ই এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম। "
রোমানের মনেও হঠাৎ কি যেন একটা গোলমাল বাঁধে। একটু অধিকার খাটিয়েই সে হেলেনের গালে হাত দেয়৷ নকশা করা মুখোশ আলতো টানে খুলে ফেলে।
অন্ধকার আর মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশের মাঝেও হেলেনের চেহারা ঝকমক করে ওঠে। অপূর্ব সুন্দর মুখমণ্ডলের গড়নে সৃষ্টি হয়েছে হেলেন। বেশিক্ষন তার রূপের আঁচ সহ্য করতে পারে না রোমান। ঢেকে দেয় হেলেনের চেহারা।
অদ্ভুত কোন একটা কারণে হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে সে হেলেনকে বুকে জড়িয়ে ধরে ।
হেলেন ও চুপ করে চোখ বুজে রোমানের বুকে কান পেতে রাখে।
অন্ধকারের ভিতরে এভাবেই কেটে যায় কয়েক মিনিট।
আচমকা চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে।
জোড়ে জোড়ে বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। মেঘ গুলো ও একটু বেশি জোড়ে ছুটোছুটি করতে থাকে।
হেলেন রোমানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। দুজনের দৃষ্টি ই তখন সামনের দিকের অন্ধকারে।
কেউ একজন হেঁটে আসছে।
হঠাৎ একটা মেঘের চাক সরে যায় চাঁদের সামনে থেকে। কিছু মুহূর্তের জন্য হেলেন এবং রোমান দুজনের দেখতে পায় একটা ভীষন অন্ধকার ছায়ার মত চাদরে ঢাকা মানুষের অবয়ব। ঝড়ো বাতাসের তান্ডবে লোকটির
চাদর ও হালকা লম্বা চুলগুলো ও জোড়ে জোড়ে একদিকে উড়ছিলো ।
অস্ফুট স্বরে হেলেন মুখ থেকে বেরিয়ে আসে- ওহমা...
হেঁটে হেঁটে এসে ক্যাফেটেরিয়ার দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। লোকটির কালো পোশাক যেন ক্যাফেটেরিয়ার ভিতরের অন্ধকারকে আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। কোমড় থেকে রিভালবার বের করে লোড করে নেয় রোমান। লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকছেনা বেশি। বাম হাতে রিভালবার নিয়ে ডান হাত দিয়ে পাতলা সিল্কি চুলগুলো উপরের দিকে ঠেলে দেয় রোমান।
হেলেন রোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
" তোমার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তুমি তাকে নিজের শত্রু ভাবছো!! "
- "অপরাধী ও অপরাধের গন্ধ এসে আমার নাকে লাগে। আমি বুঝতে পারি, কে কেমন! এই লোকটার ভিতরে সমস্যা আছে।"
" চলো তার সাথে কথা বলি, সে আমার কাছে একটা ধন্যবাদ পায়। দিতে হবে।"
- ধন্যবাদ?? কেনো??
- সেটা পরে বলছি। আগে চলো।

হেলেন রোমানের ডান বাহুর ভিতরে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে যায় ক্যাফেটেরিয়ার দিকে। রোমান একটু তাড়াহুড়ো করছিলো কেমন যেন!
রিভালবার হাতে নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে ওহমার বসা টেবিলটির দিকে।
তখন ই ঘটে এক অঘটন। টেবিলের কোনায় পা লেগে হোচট খায় রোমান। আছড়ে পরে মেঝের উপরে। হাত থেকে রিভালবার টা ছিটকে গিয়ে ওহমার পায়ের পাশে পরে থাকে। হেলেন দৌড়ে এসে রোমানকে ধরে। কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে রোমানের।হেলেনের চিৎকারে সার্ভিসে থাকা ছেলেটি একটা কাপড় এনে হেলেনের হাতে দেয়।হেলেন ক্ষতস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে কোন রকমে রক্ত বন্ধ করে। এদিকে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওহমা নিরিবিলি বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে, বেশ ধীরস্থির ভাবে চা শেষ করার পরে ওহমা আরো কিছুক্ষন বসে। ততক্ষনে মেঝে থেকে উঠিয়ে সামনের দিকের একটা বেঞ্চিতে বসানো হয়েছে রোমান কে।
নির্দিষ্ট সময় পর ওহমা উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।
হেলেন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, আপনি ওহমা তকিতা?
কোন কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যায় ওহমা।
হেলেনের মেজাজ একটু বিগড়ে যায়। পিছন থেকে জিজ্ঞেস করে, কি আজব! আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না?? ওহমা নির্বিকার ভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। পিছনে তাকে ফলো করে হেলেন।
পিছনে হাঁটতে হাঁটতে চেঁচিয়ে বলতে থাকে আপনি আসলে একজন অভদ্র মানুষ। ওহমা ততক্ষনে বাইরে চলে এসেছে।
পিছনে পিছনে চলে এসেছে হেলেন ও।হুট করে
একবারের জন্য ওহমা ঘুরে পেছনে তাকায়।
হেলেন খুব হালকা আলোতে ওহমার চেহারার খুব অল্প একটু অংশ দেখতে পারে। আর তাতেই চমকে ওঠে। এতটাই বিদঘুটে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কেউ এসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে চেহারা। একটু ভয় পেয়ে যায় হেলেন। ওহমা খুব মিষ্টি একটা সুরে চিকন করে শিশ বাজায়।
এমন আচরণে হেলেন অবাক না হয়ে পারে না । হঠাৎ হেলেনের কানে ভেসে আসে অনেক দূর থেকে ঘোড়ার খুড়ের টগবগ টগবগ শব্দ। কিছুক্ষন যেতে না যেতেই অন্ধকার ও বাতাসের বুক চিড়ে ছুটে আসে একটি দূরন্ত শক্তিশালী ঘোড়া। এসেই ওহমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে।
চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায় হেলেনের। এটা তো তারই ঘোড়া।
রিও....
ওহমার হাতের ইশারায় রিও নিরবে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় হেলেনের পাশে।ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে
হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারের ভিতরে মিলিয়ে যায় ওহমা তকিতা...
.
.

চলবে...
.


Post a Comment

أحدث أقدم