--অবলম্বন (২য় পর্ব)
মা আমাকে রাতে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন।তারপর ডাক্তারের দেয়া ওষুধ গুলো খেয়ে নিলাম। মা পরম যত্নে আমার চুলে তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম গভীর রাতের জন্য যখন মা আলমারির লকার থেকে ওই বক্স বের করবেন আর গুনগুনিয়ে গান করবেন।
আমি মায়ের পাশে ঘুমের ভান করে পড়ে রইলাম। আস্তে আস্তে ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠতেই দেখি সকাল হয়ে গেছে। আমি তো অবাক কেন আমি কিছুই টের পাইনি ? মাকে দেখলাম তুলি খালার সাথে কথা বলছে।তুলি খালার সাথে কথা বলার সময় দেখলাম মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি দূর থেকে মায়ের বোবাকান্না দেখছি আর আমার মনটাও যেন মায়ের কষ্টে কেঁদে উঠলো।
একটু পরেই দেখি মা গয়না পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর গুনগুন করছে।আমি বুঝতে পারলাম যে, মায়ের এই আচরনগুলো সত্যিই অস্বাভাবিক।
একটু পরেই দেখি মা গয়না পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর গুনগুন করছে।আমি বুঝতে পারলাম যে, মায়ের এই আচরনগুলো সত্যিই অস্বাভাবিক।
আমি ভাবতে লাগলাম যে মাকে এই একাকিত্ব থেকে বের করতেই হবে যে কোন উপায়ে।বেঁচে থাকার জন্য শুধু আমিই না অন্য আরো অবলম্বন দরকার মায়ের জন্য। সেদিনের মতে কলেজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতেই দেখি ডাক্তার আশিক দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো আমি এখন কেমন আছি?আর কথা বলার মাঝে মাঝে সে বাড়ির দিকে তাকাচ্ছিলো বার বার।আমি তাকে বললাম, আমি ভালো আছি। আমার কথা শুনেই কিছু না বলে তিনি চলে গেলেন।
কলেজে যেয়ে শুনি কয়দিন পরে একটা অনুষ্ঠান হবে যেখানে আমাকে নাচের পারফর্ম করতে হবে।আমি মনে মনে খুশিই হলাম যে মাকে এই উছিলায় বাসা থেকে বের করার একটা বুদ্ধি পেয়েছি।বিকালে বাসায় যেয়ে দেখি মা শুয়ে আছে।আমি অবাক হলাম যে, এই অসময়ে মা তো কখনে শুয়ে থাকে না।মাকে জিজ্ঞেস করতেই মা বললো কিছু হয়নি।আমি মাকে কলেজে নাচের অনুষ্ঠানের কথা বললে মা খুশি হলো যে আমি সেখানে পারফর্ম করবো।আমি মাকে বললাম তুমি তো ভালো নাচ পারো তাই আমার সাথে যারা পারফর্ম করবে ওদেরকেও শিখাতে হবে।মা এই কথা শুনে চুপ করে থাকলো। আমি মায়ের কাছে আমার কথা রাখার আবদার করলাম। মা আবারো চুপ করে থাকলেন।
রাতে আবারও মায়ের সেই গোপন রহস্য জানার অপেক্ষায় থাকলাম। কি আছে ওই বাক্সে যা মা এতো যত্ন করে আগলে রাখে। রাতে আবারও ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম যে কিছুই টের পেলাম না।সকালে ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ঘুঙুরের আওয়াজে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন দুইদিন থেকে আমি ঘুমিয়ে পড়ছি।হয়তো ওষুধের কারনে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম আসে।ঠিক করলাম আজ আর ওষুধ খাবো না রাতে।
কলেজে যাবার সময় মা আমাকে বললেন যে, যারা নাচ শিখবে তাদেরকে আজ যেনো আমি সাথে করে নিয়ে আসি।মায়ের এই কথা শুনে আমার সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছিলো।বাসা থেকে বের হতেই আবার ডাক্তার আশিকের সাথে দেখা হলো। আজও তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি কেমন আছি?আমি বলি যে আমি ভালো আছি আর মাও ভালো আছে।আমার মুখ থেকে মায়ের কথা কথা শুনে তিনি চমকে গেলেন। বলতে লাগলেন, আজ তো তোমার রিপোর্ট আসবে। বিকালে চেম্বারে চলে এসো রিপোর্টগুলো নিয়ে।আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, জ্বি আসবো।তারপরে তিনি চলে গেলেন।আমি মনে মনে ভাবছি হয়তো তিনি মাকে চিনেন।
কলেজ থেকে আসার সময় আমার সাথে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করা মেয়েগুলোকে নিয়ে আসলাম। এই বাড়িতে এই প্রথম এতোগুলা মানুষের কথায় মুখরিত হয়ে গেল।আবার সেই ঘুঙুরের আওয়াজ শোনা গেলো। তবে এই ঘুঙুরের আওয়াজের সাথে কোন আর্তনাদ ছিলো না। ছিলো না কোন পুরুষের ভয়ংকর থাবা থেকে বেঁচে থাকার আকুলতা। মাকে দেখলাম আজ মন ভরে হাসতে।মেয়েগুলোকে আদর করতে।আজ আমার মনে হলো যেনো মায়ের জন্য কিছু করতে পেরেছি।
সন্ধ্যার পরে তুলি খালাকে নিয়ে ডাক্তার আশিকের চেম্বারে গেলাম রিপোর্ট দেখাতে।রিপোর্ট দেখেই ডাক্তার আশিকের মুখটা কালো হয়ে গেলো। তিনি চুপ করে রইলেন। তুলি খালা জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।আমি বুঝতে পারলাম হয়তো খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমার জীবনে।আমি বললাম, চুপ করে থাকবেন না। যা হয়েছে খুলে বলেন আর আমি সব কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত আছি।আমার দৃঢ় কন্ঠে এসব শোনার পর তিনি বললেন, তোমার নাম কি?আমি বললাম, অন্তি।
তিনি বললেন অন্তি, তুমি খুবই সাহসী মেয়ে আমি জানি।আমি যদি বলি যে তুমি আর বেশিদিন বাঁচবে না তাহলে কি করবে?আমি এতোটুকুও না ভেবে দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিলাম,মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে দিয়ে যাবো।মায়ের হাসি-খুশি থাকার কারন বের করে
মায়ের জন্য রেখে যাবো।আমার কথা শুনে তুলি খালা কাঁদছে।আর ডাক্তার আশিক এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার ডাক্তার আশিক বললেন, অন্তি তবে তুমি তোমার মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজতে থাকো হয়তো তোমার হাতে বেশি সময় নেই। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না।তুলি খালা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।আমি খালাকে মায়ের কসম দিয়ে বললাম, মা যেন কোনোভাবেই এই কথা না জানতে পারে তাহলে মানুষটার বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছাটা থাকবে না।
মায়ের জন্য রেখে যাবো।আমার কথা শুনে তুলি খালা কাঁদছে।আর ডাক্তার আশিক এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার ডাক্তার আশিক বললেন, অন্তি তবে তুমি তোমার মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজতে থাকো হয়তো তোমার হাতে বেশি সময় নেই। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না।তুলি খালা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।আমি খালাকে মায়ের কসম দিয়ে বললাম, মা যেন কোনোভাবেই এই কথা না জানতে পারে তাহলে মানুষটার বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছাটা থাকবে না।
বাসায় আসলে মা দৌড়ে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে রিপোর্টে কি আসছে।আমি নরমাল ভাবেই বললাম তেমন কিছুই হয়নি।ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবো।মা আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। তুলি খালাকেও জিজ্ঞেস করলেন আমি সত্যি বলছি কিনা। তুলি খালা সত্যি বলতে যাবে তখনই আমি তার হাত চেপে ধরলে কথা ঘুরিয়ে ফেলে।বলে ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। মা তুলি খালার কথা বিশ্বাস করলেন।
রাতে আজও মা নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন গান শুনিয়ে। আমি তখন মনে মনে ভাবছি ওই বক্সের কথা। হয়তো ওই বক্স রহস্য জানতে পারলেই আমি মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবো।আর মায়ের অস্বাভাবিক আচরণের কারন খুঁজে পাবো।
রাতে আজ আর ওষুধ খেলাম না।চুপ করে মায়ের পাশে ঘুমের ভান করে পড়ে রইলাম। রাত যখন দুইটা তখন মা চুপ করে বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারির কাছে যেয়ে আলমারটা খুললেন নিঃশব্দে। তারপর সেখান থেকে বক্সটা বের করলেন।বক্সটা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলেন।আমিও চুপিচুপি মায়ের পেছনে গেলাম।মা বক্সের ভিতর থেকে কতগুলো কাগজ বের করলেন।তারপর সেগুলো নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকলেন।আমি দূর থেকেই সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম।তারপরে দেখলাম কাগজগুলো পড়ছে আর কাঁদছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে ওগুলো বিশেষ কারোর চিঠি। মা সবগুলো চিঠি পড়ে জোরে জোরে আশিক আশিক বলতে লাগলো।আমার যা বুঝার আমি বুঝে গেলাম।
মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়তো আমি খুঁজে পেয়েছি,,,,,,,
Post a Comment