--অবলম্বন (১ম পর্ব
ইদানিং প্রতি রাতে দেখি মা গুনগুনিয়ে গান করে,একা একা নিজের সাথে কথা বলে। ঘুম থেকে উঠে আলমারির লকার থেকে একটা বক্স বের করে আর সেই বক্স খুলে কি যেন বের করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।কতোগুলো কাগজ নিয়ে নাড়াচড়া করে।কয়দিন থেকেই লক্ষ্য করছি মায়ের এই অস্বাভাবিক আচরন।কিন্তু দিনের বেলা স্বাভাবিক আচরন আগের মতোই।
এই পৃথিবীতে মায়ের একমাত্র অবলম্বন আমি আর আমার একমাত্র অবলম্বনও মা।খুব ছোটবেলায় যখন রাস্তার পাশে অনাথ এতিমের মতো পড়ে ছিলাম তখন মায়ের মনে আমার জন্য মায়া পড়ে। আর সেই থেকে মায়ের জীবনের হাসি-কান্নার একমাএ অবলম্বন হয়ে আছি।
খুব বড়ো বাড়ির বউ মা।কিন্তু বাড়িতে মা, আমি, তুলি খালা আর একজন কাজের লোক ছাড়া কেউ থাকে না। আমি কোনোদিন কাউকে এই বাড়িতে আসতে দেখেনি আবার মাও কখনো তেমন কোথাও যায় না। স্কুলে, নাচ-গানের ক্লাসে সব সময় তুলি খালাই আমাকে নিয়ে গেছে।মা বাসায় থেকে মাঝে মাঝেই পায়ে ঘুঙুর বেধেঁ গানের তালে তালে নাচে। সারা অঙ্গ গয়নাতে সাজিয়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে চোখের পলক না ফেলে।আমার কাছে মায়ের এমন আচরণ স্বাভাবিক মনে হতো।
কিন্তু ধীরে ধীরে স্কুলে, রাস্তার মানুষদের কাছ থেকে নানারকম কথা শুনতে পেতাম।মায়ের স্বামী নাকি মাকে তেরো বছর বয়সে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে আসে আর জোর করে বিয়ে করে।মায়ের দুধে-আলতা গায়ের বরন আর চেহারা একদম স্বর্গের পরীদের মতো তাই দেখে নাকি লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছিলো।মাকে বিয়ের পর প্রতি রাতে নাকি মায়ের চিৎকার শোনা যেতো এই বাড়ির ভিতর থেকে বাহির পর্যন্ত।সেই চিৎকারে মায়ের বাঁচার আর্তনাদ থাকতো লোকটার ভয়ংকর থাবা থেকে।এলাকার সবাই লোকটাকে খুব ভয় পেতো তাই কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না।
আগে নাকি এই বাড়িতে মানুষের আনাগোনা থাকতো সব সময়।রোজ রাতে ঘুঙুরের আওয়াজ শোনা যেতো,একেক দিন একেক নারীর চিৎকার বিভৎস আওয়াজ আসতো বাড়ির ভিতর থেকে।কিন্তু হঠাৎই একদিন সব নিস্তব্ধতা গ্রাস করলো বাড়িটিতে।ওই দিন বাড়ির কর্তা মায়ের স্বামী আর তার বন্ধু-বান্ধব এক সাথে মারা গেলো।সবাই ভাবলেন হয়তো মা তার স্বামী ও তার বন্ধুদের বিষ খাইয়ে মারেন। রোজ রোজ তার উপর আর অন্য নারীদের উপর অত্যাচার থেকে বাচাঁর জন্যই নাকি মা এমনটি করেছিলেন। পুলিশ কেসও নাকি হয়েছিল কিন্তু এলাকার মানুষ মাকে গ্রেফতার করতে দেননি কারন তারা ওই ভয়ংকর লোকটা মারা যাওয়াতে স্বস্তি পেয়েছিলো।
মাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি কখনো, কোনো আবদার করিনি কোনোদিন কিন্তু মা আমার কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি।মা উপর থেকে খুব কঠিন কিন্তু ভিতরে খুব নরম যেন কোনো ভালোবাসার ছোয়ার পরশে গলে যাবে।
মা সব সময় গলা বন্ধ বড়ো হাতার ব্লাউজ পরতো আর শাড়ি দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতো। হঠাৎ একদিন মাকে শাড়ি পাল্টানোর সময় তার পিঠের দিকে আমার চোখ গেলে আমি আৎকে উঠি পিঠের ওই দগদগে দাগ গুলো দেখে।কোমড়ে, হাতের বাহুতে, গলায় যেন কোন জন্তুুর কামড় আর নখের আছড়ের চিহ্ন। যেন দাগগুলো জীবন্ত হয়ে আছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এগুলো মায়ের উপর তার স্বামীর জানোয়ারের মতো পুরুষত্বের ভয়ংকর থাবার চিহ্ন।
দুইদিন থেকে কলেজে যাবার পথে এক সুদর্শন, মধ্য বয়সী এক পুরুষকে বাসার সামনে দেখতে পাই।শুধু পায়চারি করে আর একটু পর পর বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করে আমি কে?আমি আমার পরিচয় দেই আশালতার মেয়ে হিসাবে।শুনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কিছু না বলে আবার চলে যায় তার গন্তব্যে।
ইদানীং কেন জানি চুল পড়ে যাচ্ছে আমার।আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি চোখের নিচের
কালিতে আমাকে অনেক বয়সী এক নারী মনে হয়।কিন্তু মাকে কিছুই জানাইনি শুধু শুধু চিন্তা করবে।কিন্তু মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়।তাই মা আমাকে তুলি খালাকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে বলে।
কালিতে আমাকে অনেক বয়সী এক নারী মনে হয়।কিন্তু মাকে কিছুই জানাইনি শুধু শুধু চিন্তা করবে।কিন্তু মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়।তাই মা আমাকে তুলি খালাকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে বলে।
এলাকায় নাকি নতুন এক ডাক্তার এসেছে যে অনেক বছর বিদেশে ছিলো।তুলি খালা আমাকে সেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে আমি দেখি সেই সুদর্শন লোকটা যাকে কিনা আমি বাসার সামনে দেখেছি কয়েক বার।আমাকে আর তুলি খালাকে দেখে লোকটি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।তুলি খালাও হয়তো তাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।তারপর ডাক্তার নিজেকে সামলে নিয়ে তুলি খালা কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেন।আর মায়ের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করে আশালতা কেমন আছে,,,?এখনো কি আগের মতো গুনগুনিয়ে গান গায় কিনা জানতে চায়।আমি অবাক হয়ে গেছি যে কিভাবে মায়ের কথা জানে সে,,,!তুলি খালা কিছু না বলে আমাকে দেখিয়ে বলে যে, ওর সমস্যা হচ্ছে কয়েকদিন থেকে তাই আমাকে যেনো ভালো করে একটু দেখে ওষুধ দেয় যেন তাড়াতাড়ি আমি সুস্থ হয়ে যাই।
আমার মুখ থেকে আমার সমস্যা শুনে ডাক্তার আশিক কিছু ওষুধ লিখে দেন আর কয়েকটা টেষ্ট দেন।আর বলে দেন যে টেষ্টের রিপোর্ট নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি তার সাথে দেখা করি।
আসার সময় তুলি খালা যেন আমার কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম। তাই কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ওই ডাক্তার সম্পর্কে।
বাসায় যেয়ে দেখি মা গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর ঘুঙুর পড়ে নাচছে।মাকে দেখে মনে মনে ভাবছি আজ রাতে মা কি করে তা দেখবো লুকিয়ে লুকিয়ে। ওই বক্সের মধ্যে এমন কি আছে যা মা বের করে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখে আর নেড়েচেড়ে দেখে,,,,
Post a Comment