#তোমার_শহরে_আমি
#প্রথম_পর্ব
•
•
আজকে চার দিন হল রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় এসেছি।আগে রাজশাহীতে থাকতাম কিন্তু চাকরির ট্রান্সফার হওয়ায় ঢাকায় চলে আসতে হল।ঢাকায় আগে আমি খুব কমেই এসেছি।তাই এখানের সবকিছু আমি সে ভাবে চিনি না।আর অফিসের ব্যস্ততা থাকায় কোথাও বের হতেও পারি নি।অফিসে এতই ব্যস্ততা ছিল যে আমি আমার নতুন বাসার বারান্দায় যাওয়ার সময় টুকু পাই নি।
#প্রথম_পর্ব
•
•
আজকে চার দিন হল রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় এসেছি।আগে রাজশাহীতে থাকতাম কিন্তু চাকরির ট্রান্সফার হওয়ায় ঢাকায় চলে আসতে হল।ঢাকায় আগে আমি খুব কমেই এসেছি।তাই এখানের সবকিছু আমি সে ভাবে চিনি না।আর অফিসের ব্যস্ততা থাকায় কোথাও বের হতেও পারি নি।অফিসে এতই ব্যস্ততা ছিল যে আমি আমার নতুন বাসার বারান্দায় যাওয়ার সময় টুকু পাই নি।
আজকে শুক্রবার হওয়ায় আজকে আর কোন ব্যস্ততা নেই আমার,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে বাসাটা একটু গুছিয়ে চলে গেলাম বারান্দায়।বারা ন্দায় গিয়ে আশে পাশের সব কিছুই দেখতে ছিলাম হটাৎ চোখ চলে গেল পাশের বারান্দায়।সেখা নে একটা মেয়ে বারান্দায় হাঁটতেছে আর বই পড়তেছে।মেয়েটার চুল গুলো খোলা ছিল তাই বাইরে থেকে আসা মৃদু বাতাসে চুলগুলো উড়ছিল।আর আমি দারিয়ে দারিয়ে সেই দৃশ্যটা দেখতে ছিলাম।
বাসায় নতুন উঠেছি এখনো রান্নার বুয়া ঠিক করা হয় নি।তাই নিজের রান্না নিজেকেই করতে হচ্ছে।আমি এখনো আমার মনের মত কাউকে পাইনি তাই বিয়েটাও এখনো করা হয় নি।বাসা থেকে অনেক গুলি মেয়ে দেখছে কিন্তু ওদের মধ্যে কাউকেই আমার পছন্দ হয় নি।এত গুলি মেয়ের মধ্যে একটা মেয়েকেও পছন্দ না হওয়াতে এখন আর ওরা কোন মেয়ে দেখে না।রাড়ি থেকে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে তারা আমার জন্য আর কোন মেয়ে দেখতে পারবে না।আমি যেন আমার বিয়েটা করে নেই।
অফিস বন্ধ থাকলে দুপুরে খাওয়ার পর আমার কাজ হচ্ছে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া।আর এটা যদি ঠিক ঠাক মত না দিতে পারি তাহলে কিছুই ভাল লাগে না।
আজকেও তার ব্যতিক্রম হল না।খাওয়ার পর বিছানায় গিয়ে শুয়েছি ঘুমাবো বলে ঠিক তখনেই বাইরে থেকে প্রচন্ড হৈচৈ এর শব্দ এলো কানে।বাসার সামনের মাঠে অনেক পোলাপানের সমাগম হয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য।
পোলাপানের হৈচৈ এর জন্য আজকে আর ঘুমাতে পারলাম না।তাই বারান্দায় বসে ওদের খেলা দেখতেছি...
কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম পাশের ফ্ল্যাটের সকালে দেখা মেয়েটা হাতে একটা একটা বই নিয়ে বারান্দায় এসেছে পড়তে।
মেয়েটাকে দেখে মনে হল মেয়েটা হৈচৈ এর শব্দে পড়ায় মন দিতে পারছে না।তাই বইটা বন্ধ করে রেখে বারান্দার গ্রিল ধরে বাহিরে তাকিয়ে খেলা দেখতেছে।আমি খেলা দেখার পাশাপাশি মাঝে মাঝে মেয়েটাকেও দেখতেছি।কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে একবারো তাকাল না...
একা বাসায় থাকলে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়া যে কি কষ্টের যে থেকেছে সেই বুঝেছে।একটা দিন ঠিক টাইমে অফিসে যেতে পারি না।প্রায় প্রতিদিনেই পাঁচ-দশ মিনিট দেরি হয়ে যায় অফিসে যেতে।
আজকেও অফিসে যেতে দশ মিনিট দেরি হল।অফিসে যেতেই কামাল ভাই বলল কি মিয়া এখনো তো বিয়ে করেন নি তাও প্রতিদিন দেরি করে অফিসে আসেন।আমি বললাম ভাই সমস্যাটা তো এখানেই বউ থাকলে ঠিকি সময় মত অফিসে আসতাম।বউ নেই বলেই প্রতিদিন অফিসে আসতে দেরি হয়।
আমার কথা শুনে কামাল ভাই বলল,ভালো টাকা মাইনে পান এবার বিয়ে করে নিলেই পারেন।
ভাই ভাল টাকা মাইনে পেলে কি হবে ভাল একটা মেয়ে তো পাইনা।
অফিস ছুটি হল সাতটায়,অফিস থেকে বের হয়ে রাতের খাবার খেয়ে তারপর বাসায় আসলাম।রাতের খাবার খেয়ে না আসলে আমাকে আবার রান্না করতে হত।সারাদিন অফিস করে বাসায় এসে রাতে রান্না করতে ইচ্ছা হয় না।তাই রাতের খাবারটা বাইরে থেকে খেয়ে আসলাম।
ঘরিতে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বাজে।চলে গেলাম বারান্দায়।বারা ন্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট আমি তেমন একটা খাই না।কিন্তু প্রতিদিন রাতে একটা সিগারেট খাওয়া আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে।একটা সিগারেট আমাকে প্রতিদিন রাতে খেতেই হবে।
মনের সুখে সিগারেট টানতেছি আর ধোঁয়া ছাড়তেছি।ঠিক তখনেই আমার কানে একটা শব্দ এলো...
আমারো পরানো যাহা চায়,,,,
তুমি তাই,,,,তুমি তাই,,,,গো,,,,
আমারো পরানো যাহা চায়,,,,
তুমি তাই,,,,তুমি তাই,,,,গো,,,,
আমারো পরানো যাহা চায়,,,,
এটা তো রবীন্দ্র সংগীত।এত রাতে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেছে কে।পাশের ফ্ল্যাটে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা গাইতেছে....
আমি এর আগে আর কখনো এত সুন্দর কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ শুনি নি।এতই গভীর ধ্যানে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিলাম কখন যে আমার সিগারেট হাতেই শেষ হয়ে গেল খুঁজি পেলাম না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বাজে।তার মানে আজকে আমি ঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারবো।শুয়া থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম।বারান্দায ় গিয়ে দেখি মেয়েটা গাছে পানি দিচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাচ্ছে।আমি মেয়েটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটা গাছে পানি দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে।এই প্রথম আজকে মেয়েটা আমার দিকে তাকাল।মেয়েটার তাকানোর মাঝে একটা গভীরতা ছিল যা আমি অন্য কোন মেয়ের মাঝে পাইনি।
আজকে অফিসে গিয়ে কোন কাজেই মন বসাতে পারছি না।বার বার শুধু মেয়েটার তাকানোটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
অফিস ছুটি হতেই বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসেই ছুটে গেলাম বারান্দায়।বারা ন্দায় গিয়ে দেখি বারান্দাটা ফাঁকা মেয়েটা বারান্দায় নেই।
আজকের চাঁদটা খুব বড় দেখাচ্ছে।আজকে কি পূর্ণিমা,,,,,হব ে হয়তো।একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট টানতেছি আর চাঁদ দেখিতেছি।
হটাৎ পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় তাকাতেই দেখি মেয়েটাও চাঁদ দেখতেছে।কিন্তু মেয়েটা এখানে কখন আসলো আমি তো খেয়ালি করি নি।
মেয়েটা চলে যেতেই আমিও রুমে চলে যেতেই আমিও আর বারান্দায় দারিয়ে থাকি নি।রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি 'মা' ফোন দিয়েছিল।
মা'কে ফোন দিতেই....
-কোথায় ছিলি বাজান তোরে ফোন দিছিলাম ফোনটা তো ধরলি না।
-আমি বারান্দায় ছিলাম মা,,,,
তোমরা কেমন আছ 'মা' ?
-আমরা ভালই আছি বাজান তুই কেমন আছিস ?
-আমিও ভালই আছি মা।বাবা কেমন আছে ?
-তো বাবাও ভাল আছে।
নতুন জায়গায় গেছিস তোর কি সেখানে থাকতে কি কোন অসুবিধা হয় ?
-না মা এখানে থাকতে আমার কোন সমস্যা হয় না।এখানে আমি একটা বাসা নিয়েছি।
-হম ভাল করেছিস বাজান।
কিন্তু তুই বাড়িতে আসবি কবে ?
-এই অফিসে নতুন এসেছি মা,আর কয়েকটা দিন যাক তারপর অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবো।
-আমি বারান্দায় ছিলাম মা,,,,
তোমরা কেমন আছ 'মা' ?
-আমরা ভালই আছি বাজান তুই কেমন আছিস ?
-আমিও ভালই আছি মা।বাবা কেমন আছে ?
-তো বাবাও ভাল আছে।
নতুন জায়গায় গেছিস তোর কি সেখানে থাকতে কি কোন অসুবিধা হয় ?
-না মা এখানে থাকতে আমার কোন সমস্যা হয় না।এখানে আমি একটা বাসা নিয়েছি।
-হম ভাল করেছিস বাজান।
কিন্তু তুই বাড়িতে আসবি কবে ?
-এই অফিসে নতুন এসেছি মা,আর কয়েকটা দিন যাক তারপর অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবো।
গতকাল রাত থেকে শরীরে জ্বর এসেছে তাই আজকে আর অফিসে যেতে পারি নি।মাথায় প্রচন্ড ব্যথা উঠে ঠিকমত দারাতে পারছি না।তাও কেন যানি বারান্দায় যেতে খুব ইচ্ছে হল।
বারান্দায় গিয়ে দেখি মেয়েটি দারিয়ে আকাশ দেখতেছে।আমি যেতেই মেয়েটি আমাকে দেখে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটি আমাকে দেখে কোন ভাবে হয়তো বুঝে গেছে আমি অসুস্থ আর তাই হয়তো এভাবে আছে
•
•
•
চলবে
•
•
•
চলবে

Post a Comment