রম্য গল্প-ফুচকাপ্রেমী
লিখিকা-প্রিয়ন্তি মুনা
সকাল সকাল আম্মুর চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গলো।আম্মু আমার কাছে এসেই বললো জানিস অন্তি, আজ সিটি মহল চাইনিজে আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ানো হবে তাও আবার ফ্রিতে!আম্মুর কথা শুনেই তার দুই গালে দুইটা চুমু দিলাম কারন এতো ভালো খবর শুনে আমার মনটাই ভালো হয়ে গেলো।ভাবলাম আজ সারাদিন খুবই ভালো যাবে আমার।আম্মু বললো অন্তি তুই আজ মিষ্টি রঙের শাড়ি পড়ে যাবি ওখানে।মিষ্টি রঙের শাড়িতে খুব ভালো মানায় তোকে। আমি বললাম ঠিক আছে।
আমি হলাম ফুচকাপ্রেমী বাঙালি।ভাতের বদলে তিন বেলা ফুচকা দিলেও আমার খেতে কোনো আপত্তি নেই।তাই যেখানেই কেউ ফুচকা খাওয়ানোর কথা বলে সেখানেই চলে যাই যখন তখন।এই এক জায়গাতেই আমি ভীষণ দূর্বল।কোন বান্ধবী ডেটিং এ যাবে ওর বাসায় ম্যানেজ করতে হবে সেখানেই আমার ডাক আর পারিশ্রমিক হলো আনলিমিটেড ফুচকা।কারো কোনো কথা গোপন করতে হবে সেখানেও আমার পারিশ্রমিক ওই ফুচকা।এমনকি আম্মুর কোনো গোপনীয় বিষয় আব্বুকে না বলা আর আব্বুর কোনো গোপনীয় বিষয় আম্মুকে না বলার জন্যও অতি ভদ্রতার সহিত তাদের কাছ থেকে ফুচকা খাওয়ার জন্য টাকা নেই।
ফুচকা খাওয়ার কথা শুনে মন ভালো হলেও আম্মুর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলো।ফুচকা খাওয়ার জন্য শাড়ি পরে যেতে হবে কেন বুঝলাম না। আর আম্মুর অতি উৎসাহী মনোভাব দেখে বুঝলাম, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
কলেজের জন্য বাসা থেকে বের হবার আগেই আম্মু বললো আজ যেন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি। বিকালে শাড়ি পরে ফুচকা খেতে যাই আর যতো ইচ্ছে ফুচকা খাই।আমি বললাম আজ স্যারের বাসায় ফিন্যান্সের একটা এক্সাম আছে তাই আসতে দেরি হবে।আম্মু বললো শাড়ি পড়ে না গেলে তো ফুচকা খেতে পারবি না।আমি বললাম এক্সাম আর ফুচকা কোনটাই মিস দিতে পারবো না। তাহলে শাড়িটা ব্যাগে করে নিয়ে যাই।আসার সময় শান্তার বাসা থেকে রেডি হয়ে ফুচকা খেয়ে বাসায় আসবো।আম্মু বললো ঠিক আছে আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিক ভাবে সুন্দরভাবে কথা বলবি।
কলেজ শেষ করে শান্তার বাসায় যেয়ে রেডি হয়ে আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ার উদ্দেশ্য বের হলাম। আম্মু ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো মিষ্টি রঙের শাড়িটা পড়েছি কিনা?আমি বললাম হ্যাঁ,তবে আম্মুকে না জানিয়ে সাথে কিছু বান্ধবীদেরকেও নিলাম। চাইনিজের গেট দিয়ে ঢুকতেই ফুল দিয়ে আমাদের স্বাগতম জানানো হলো।ঢুকেই দেখি এলাহি কান্ড!ফুচকার আনলিমিটেড আয়োজন। চার-পাঁচ জন মধ্য বয়স্ক নারী পুরুষ,দুইটা বাচ্চা আর তিনজন হ্যান্ডসাম ছেলে আমাদের অপেক্ষা করছে।দশজন মেয়েকে মিষ্টি রঙের শাড়িতে আর একই ধরনের সাজ দেখে পুরোই থ হয়ে আছে।
নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো, আপনাদের মধ্যে অন্তি কে?আমরা সবাই একসাথে হাত উঁচু করে বললাম আমাদের সবার নামই অন্তি!জবাব শুনে বেচারা কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না।একজন মহিলা কাছে এসে আমাদের চেহেরার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর বলছে, অন্তির ঠোঁটের নিচে, নাকের নিচে তিল আছে। আমি মনে মনে হাসছি আর ওনার অসহায় চেহারা দেখছি কারন সবার ঠোঁটের নিচে আর নাকের নিচে নকল তিল লাগিয়ে দিয়েছি। আম্মুর আচরণ দেখে তখনই সন্দেহ হয়েছিল যে, কোনো ছেলেপক্ষকে আমাকে দেখাবে যাতে আমি না বুঝতে পারি।আমিও আম্মুর মেয়ে,,, আম্মু চলে ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়!
এক ছেলে বলে উঠলো আচ্ছা আপনারা তো ফুচকা খেতে পছন্দ করেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলে তিন বেলাই ফুচকা খেতে পারবেন আনলিমিটেড। শান্তা যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি দিলাম ওর হাতে একটা চিমটি।বেচারি চিমটি খেয়ে চুপ করে রইলো আর বাকি বান্ধবীদেরও আগে থেকেই সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলাম। তাই ওরাও চুপ।আমাদের নীরবতা দেখে সেই মহিলা বললো ঠিক আছে ফুচকা খেতে এসেছো, ফুচকা খাও আর চাইলে চাইনিজও অর্ডার দিতে পারো।সাথে সাথে আমিও বলে উঠলাম তার আর দরকার হবে না।সবাই চলে আসতে চাইলাম কিন্তু তারা ফুচকা না খেয়ে আসতে দিবে না আমাদেরকে। অতপর কি আর করা!আনলিমিটেড ফুচকা খেয়ে যে যার বাসায় চলে আসলাম।
তবে তিন বেলা আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ার চান্স মিস করে একটু আফসোস করতে লাগলাম।
Post a Comment