গল্প- ওঁ আসবেই, লেখা:- Masud_Rana।(পর্ব-১)



৮ বছরের বাচ্চা মেয়েটির চেকাপ করার পর যখন ডাক্তার, আরিফ সাহেবকে বললেন, "ওহ মাই গড! আপনার মেয়েতো প্রেগনেন্ট।" কথাটা শুনে আরিফ সাহেব রিতীমত হতভম্ব হয়ে গেলেন। এটা কী করে হলো! একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এই কাজ কে করবেন! তার বাড়িতে তিনি ছাড়া আর কোনো পুরুষ নেই। ডাক্তার সাহেব নিজেও বেশ চমকে গিয়েছেন রিপোর্টটা দেখে। তার এই পুরো জীবনে এত অল্প বয়সের কোনো মেয়েকে তিনি প্রেগনেন্ট হতে দেখেননি। এছাড়া মেয়েটার বয়সঃন্ধী শুরুর বয়সই হয়নি এখনও। কিন্তু চেকাপে তার পেটে স্পষ্ট একটা বাচ্চার ভ্রূণ দেখা যাচ্ছে। যার বয়স কম করে হলেও ৫-৬ মাস। ভ্রূনটির মানব আকৃতির মতোই হয়ে গেছে। অথচ বাচ্চা মেয়েটির পেট দেখে কিছুই টের পাওয়া যায় না বাইরে থেকে। এই পেটে এই ভ্রূণের অস্থিত্ব থাকা অসম্ভব। কিন্তু রিপোর্ট এটাকেই প্রমাণ করতে চাইছে। তাই ডাক্তার আরও কয়েকবার চেকাপ করলেন। না, তার কোনো ভূল হয়নি। আসলেই মেয়েটির গর্ভে একটি সন্তান রয়েছে।
সন্তান না হলেও কিছুতো একটা মানব আকৃতির আছেই তার গর্ভে।
.
মেয়েটার নাম মাইশি। মাইশির বাবা আরিফ সাহেব ডাক্তারের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন। মাইশি ৩-৪দিন ধরে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কোনো খাবার মুখে দিচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই আরিফ সাহেব তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন। যদিও সমস্যাটা অনেক বছর ধরেই মাইশির সাথে ঘটছে। আর ডাক্তার কী আজব কথা বলছে! তাই আরিফ সাহেব বেশ উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে বলতে লাগলেন, আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন ডাক্তার? এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে সম্পর্কে এমন অদ্ভুত কথা বলতে আপনার মুখে বাজল না! এর চেহারা দেখে আপনার কী মনে হয় এর গর্ভে এতবড় একটা সন্তান থাকবে? আর থাকলে তা শরীরের বাহিরের অংশ জানান দিবে না?
.
ডাক্তার সাহেব মুখ গোমড়া করে রইলেন। এর উত্তর তার কাছেও নেই। এমন অদ্ভুত ব্যাপার তিনি এর আগে কখনই দেখেন নি বা শুনেননি। সন্তান ধারণের ক্ষমতার জন্য মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে। সেটা ১২ এর উপরে। কিন্তু মেয়েটার বয়স মাত্র ৮। তিনি নির্বাক। আরিফ সাহেবও বেশ রেগে উত্তেজিত হয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করলেন। বাড়িতে ফিরে এসে মাইশিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চুপচাপ তার মাথার পাশে বসে রইলেন তিনি। মাইশির অসুস্থতা আগের মতই আছে। কিছুই খেতে চাচ্ছে না। কিছুদিন ধরেই প্রচন্ড জ্বর মেয়েটার। সামান্য জ্বর থেকে রোগটা বড় হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে একটা সুস্থ মস্তিষ্কের ডাক্তার এমন অদ্ভুত কথা কী করে বলতে পারেন! আরিফ সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইমরান হোসেন। খুব বড় ডাক্তার তিনি। পরিবার নিয়ে গেছেন বিদেশে বেড়াতে। আজই তার দেশে ফেরার কথা। তাকে এই বিষয়ে জানানো দরকার। আরিফ সাহেব ইমরান হোসেনকে কল করে জানতে পারেন তিনি গতকালের ফ্লাইটেই দেশে ফিরেছেন। মাইশির অসুস্থতার কথা শুনেই তিনি বলেন এখনই তিনি আসবেন।
.
আধা ঘন্টার মধ্যেই ইমরান তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আরিফ সাহেবের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। মাইশি বিছানায় শুয়ে আছে। ইমরান কিছুক্ষণ মাইশিকে পরীক্ষা করে বলেন,তেমন কিছুইতো হয়নি। সামান্য জ্বর আর শরীরটা দুর্বল। কয়েকটা ভিটামিন খাওয়াতে হবে। এছাড়া ভালো কিছু খাবার খাওয়ালেই সে সুস্থ হয়ে যাবে। আরিফ সাহেব ডাক্তার ইমরানকে নিয়ে মাইশির ঘর থেকে বের হলেন। ইমরানকে চেকাপ করার পর সেই ডাক্তারের বলা সব কথা খুলে বললেন। ইমরান কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে বড় বড় চোখ করে আরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বেশ রেগেই বললেন, কোন ছাগল এমনটা বলেছে! একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে এই ধরণের রসিকতার কোনো মানে হয়! আরিফ সাহেব ডাক্তারের নাম বলতেই ইমরান বেশ অবাক হয়। এই ডাক্তারকে ইমরান চেনে। সে ইমরানের চেয়েও সিনিয়র ডাক্তার। এবং শহরে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। তিনি অকারণে এইরকম অদ্ভুত একটা কথা কখনও বলবেন না।
.
ইমরান আরিফ সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলেন ডাক্তার ইলিয়াসের চেম্বারে। যেখানে মাইশিকে চেকাপ করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে মাইশি সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাইলেন ইমরান। ডাক্তার ইলিয়াস তাকে মাইশির সমস্ত রিপোর্ট দেখালেন। ইমরান রিপোর্টটা দেখে পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। রিপোর্টে মাইশির গর্ভে স্পষ্ট একটা ভ্রুণের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। সাধারণত মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বয়স ২৪-২৬ সপ্তাহ হলে ভ্রূণ এমন আকৃতি হয়।
ইমরান বিস্ময়ভরা কন্ঠে ইলিয়াসকে বলল:
-ওহ মাই গড! একটা ৮ বছরের বাচ্চা মেয়ের গর্ভে এত বড় একটা ভ্রূণের অস্তিত্ব কী করে থাকতে পারে? এছাড়া মেয়েটাকে আমি মাত্র পরীক্ষা করে এলাম। তার শরীর দেখতে একেবারে স্বাভাবিক।
-আমিও কিছুই বুঝতে পারছি না। এইরকম বিরল কেস আমি এর আগে কখনও দেখিনি।
-এইটা কী টিউমার হতে পারে না?
-এতবড় একটা টিউমার হলে শরীরের বাহিরে তা জানান দিত অবশ্যই।
-মেয়েটাকে বাহির থেকে দেখতে তো স্বাভাবিক লাগে। তার কোনো বড় ধরণের রোগ থাকলেও বোঝার উপায় নেই। কিন্তু আপনি হঠাৎ এতকিছু বাদ দিয়ে মেয়েটার পেট চেক আপ করতে গেলেন কেন? আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আপনার কেন মনে হলো মেয়েটের পেটে কোনো রোগ থাকতে পারে?
-আসলে আমি মেয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবেই চেক আপ করছিলাম। মেয়েটা প্রচন্ড জ্বরে একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। হঠাৎ সে ঘোরের মধ্যেই বলতে শুরু করল তার পেটের ভেতর থেকে নাকি অনেকদিন ধরেই কিছু একটা প্রচন্ড আঘাত করে, তাকে খুচায়। আমি বেশ অবাক হলাম। কৌতুহল বসতই চেকাপ করলাম। আর এইরকম অদ্ভুত একটা জিনিস দেখলাম।
.
ডাক্তার ইলিয়াস এবং ডাক্তার ইমরান বেশ কিছুক্ষণ নীরব ভাবে বসে রইলেন। এরপর ডাক্তার ইলিয়াস ইমরানের কাছে মাইশির পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। এবং তিনি কী করে আরিফ সাহেবকে চেনেন তাও জানতে চাইলেন। ইমরান এবার বেশ উত্তেজনার সাথেই বলতে আরম্ভ করলেন।
.
আরিফ আমার কলেজ বন্ধু। সেখান থেকেই তার সাথে আমার গভীর বন্ধুত্ব। আরিফ ২২ বছর বয়সেই শম্মী নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের বিয়ের পরের ৮ বছর কোনো সন্তান হয় না। শম্মী বা আরিফ যে কেউ হয়তো বন্ধা ছিল। তবে এবিষয়ে আরিফ আমাকে কিছুই বলেনি। একটা বাচ্চা সন্তানের জন্য যে তাদের মধ্যে হাহাকার ছিল তা বেশ বুঝতে পারতাম। আমি কয়েক বার বললাম চেকাপ করাতে। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। কিন্তু আরিফ আমাকে এড়িয়ে যেত। সে যে অন্য কোথাও আমাকে না জানিয়ে চেকাপ করাতো তা আমি টের পেয়েছিলাম। তাই আর এই বিষয়ে তাকে বেশি ঘাটাতাম না। বিয়ের ৯ বছরের মাথায় মাইশির জন্ম হয়। তারপরে তাদের সংসার বেশ আনন্দের সাথেই কাঁটতে থাকে। মাইশির বয়স যখন ৩ তখন শম্মীর গর্ভে আরও একটি সন্তান আসে। কিন্তু সেই সন্তান আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি। ভ্রুণের বয়স যখন ৬ মাস তখন হঠাৎ একদিন শম্মী আত্মহত্যা করে।
.
আত্মহত্যার কথাশুনে ডাক্তার ইলিয়াস বেশ চমকে উঠেন। বিস্মীত কন্ঠে বললেন, গর্ভাবস্থায় আত্মহত্যা করলেন কেন তিনি? ইমরান কিছুটা শান্তস্বরে উত্তর দিল, সেটা আমি জানি না।
এই বিষয়ে আমি আরিফকে কিছুই কখনও জিজ্ঞেস করিনি। সেও কিছু বলেনি কখনও। শম্মী কোনো আত্মহত্যার নোট রেখে যায়নি। তার লাশটা সিলিংএ ঝুলে ছিল। পুলিশ সন্দেহ করে আরিফ তাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে। আরিফকে তারা ধরেও নিয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ পরে এমনিতেই ছেড়ে দেয় তাকে। আরিফের স্ত্রীর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে ঘাটাতে থাকে। তাই তাদের সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সে। একমাত্র আমিই এবিষয়ে তার কাছে কিছুই জানতে চাইতাম না। তাই এখনও তার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে।
.
ডাক্তার ইলিয়াস বেশ মনোযোগ দিয়েই ইমরানের কথা শুনলেন। ইমরান সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে ইলিয়াসকে বিদায় জানিয়ে তার চেম্বার ত্যাগ করেন। এবিষয়ে যেকোনো সহায়তা লাগলে ডাক্তার ইলিয়াস তাকে সহায়তা করবেন, এই বিষয়েও ইমরানকে তিনি আশ্বস্ত করেন।
.
ডাক্তার ইমরান তার চেম্বারে ফিরে আসেন। একটা আট বছরের বাচ্চা মেয়ের এই অবস্থা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। তার উপর মেয়েটা তার খুব পরিচিত। রিপোর্টগুলো বেশ ভালো করে দেখলেন ইমরান।দেখার পর আরিফ সাহেবকে কল করে মাইশিকে নিয়ে একবার তার চেম্বারে আসতে বললেন।
.
আরিফ সাহেব এবং মাইশি ডাক্তার ইমরানের চেম্বারে আসলেন। ইমরান, আরিফকে বসিয়ে রেখে মাইশিকে
নিয়ে গেলেন চেকাপের জন্য। মাইশিকে চেকাপ রুমে গিয়ে তার কাছ হতে জানতে চান, আচ্ছা মা মাইশি, তোমার পেটে কী কোনোরকম যন্ত্রনা হয়? মাইশি শান্ত স্বরে উত্তর দিল, মাঝেমধ্যে খুব যন্ত্রণা হয়। মনে হয় কেউ পেটের ভেতর থেকে খোচাচ্ছে। আবার মনে হয় পেটের ভেতর কিছু একটা নড়ছে।
.
ডাক্তার ইমরান মেয়েটার চেকাপ করালেন। চেকাপ করার পর রিপোর্ট দেখে আবার একবার বিষম খেলেন। ডাক্তার ইলিয়াসের রিপোর্ট ভূল না। ইমরানের রিপোর্টেও স্পষ্ট ৬ মাস বয়সের একটা ভ্রুণের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটাতো অসম্ভব। এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে। ইমরানের মাথায় কিছুই আসছেনা।
.
তিনি মাইশিকে রুমে বসিয়েই আরিফ সাহেবের কাছে যান। আর সব কিছু গুছিয়ে বলেন। বলেন তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। দুটো জায়গায় একই ভূল কিছুতেই হতে পারে না। নিশ্চই মাইশির পেটে কোনো গন্ডগল রয়েছে। এখন অপারেশন করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। আগামীকালই তিনি ডাক্তার ইলিয়াসকে সাথে নিয়ে অপারেশন করতে চান। আরিফ সাহেব বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। ডাক্তার ইমরান তাকে আশ্বস্ত করেন, তার কোনো ভয় নেই। মাইশির কিছুই হবে না। আরিফ সাহেব মাইশিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
.
মাইশি বিছানায় ঘুমাচ্ছে। তার ঘুমন্ত চেহারা দেখে মনে হবে এই পৃথিবীতে
তার চেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ নেই। আরিফ সাহেব মুগ্ধ দৃষ্টিতে মাইশির মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। মেয়েটার মুখটা হয়েছে মায়ের মতোই। হঠাৎ শম্মীর কথা মনে হতেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। এটা কান্নার পুর্বলক্ষণ। তার অশ্রুজল যেন শম্মীকে নিয়ে তার সমস্ত স্মৃতিগুলোকে একত্রিত করছিল। তাদের সংসারের কত কষ্টের পর মাইশি এল তাদের জীবনে। কত আনন্দেই না কাটছিল তাদের সেই দিনগুলো। মাইশির যখন ৩ বছর বয়স তখন তাদের জীবনে আরও একটি আনন্দের সংবাদ এল। শম্মী আবার মা হতে চলেছে। আরিফ সাহেবের আনন্দ দেখে কে! কিন্তু এই সংবাদের পর থেকেই যেন তাদের সংসারে অন্ধকার নেমে এল। শম্মী কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। হঠাৎ হঠাৎ মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে চেচিয়ে উঠত। হঠাৎ একদিন আরিফ সাহেবকে শম্মী বলেছিল, চলোনা আমাদের একটা মেয়েতো আছেই। আর সন্তানের কী প্রয়োজন। গর্ভে যে আছে তাকে গর্ভপাত করে ফেলি। কথাটা শুনে আরিফ চমকে উঠেছিল। শম্মীর কাছ থেকে এমন কোনো কথা তিনি আসাই করেননি। শম্মীকে বেশ বকলেন তিনি। গর্ভের সন্তানকে নিয়ে শম্মীর দুঃশ্চিন্তা যেন বেড়েই চলেছিল। আরিফ এটা আঁচ করতে পারছিল। কিন্তু এর কারণ বুঝতে পারছিল না। বুঝতে চাইছিলও না। শম্মীর এই ইচ্ছাগুলোকেই অনেক হালকা ভাবে নিলেন তিনি। এতেই ঘটল
অঘটন। একদিন অফিস হতে বাড়িতে ফিরতেই দেখলেন বাড়ির বড় গেটটা খোলা। তিনি বাড়িতে ঢুকতেই মাইশির কান্নার শব্দ পেলেন ঘরের ভেতর থেকে। দ্রুত ঘরে ঢুকতেই দেখলেন মাইশি মেঝেতে বসে বসে কাঁদছে। সিলিংএ শম্মীর ঝুলন্ত লাশ। জিহ্বা বেরিয়ে রয়েছে। বড় বড় চোখ গুলো যেন তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। এই মৃত্যুর কারণ আর আরিফ সাহেবের জানা হয় নি। এরপর থেকেই তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। মাইশি বড় হলো। কিন্তু তাকে ঘিড়ে অনেকগুলো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে গেছে। মাইশি এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হতে পারেননি। শম্মী মারা যাওয়ার পর এই বাড়ির সব কাজের লোক ভয়ে পালিয়ে যায়। চলে যাওয়ার পেছনে তাদের অদ্ভুত কথাশুনে আরিফ বেশ অবাক হয়। কাজের লোকেরা বলে তারা নাকি রোজ রাতে অনেকগুলো কালো ছায়া দেখে। সবগুলো ছায়াই শম্মীর গলায় তাদের সাথে কথা বলে। তাদের নাকি চলে যেতে বলে এই বাড়ি ছেড়ে। আরিফের এই কথা বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। শম্মী যদি মৃত্যুর জগৎ থেকে ফিরেও আসে। তবুও সে প্রথমে দেখা করবে তার সাথে বা মাইশির সাথে। এদেরকে ভয় দেখানোর কোনো মানেই হয়না। নতুন যেসকল কাজের লোক রাখা হয় তারাও এই একই কথা বলে। তারাতো আর শম্মীকে চিনত না। তাই বলতো, অনেকগুলো কালো ছায়া একটাই মেয়ের কন্ঠে তাদের বলত, চলে যাও এই বাড়ি ছেড়ে। আর কোনো উপায় না পেয়ে কাজের লোক এই
বাড়িতে নিষিদ্ধ হলো। আরিফ সাহেব নিজের অফিস ছাড়লেন। যেহেতু নিজের বাড়ি এবং ব্যাংকে বেশ মোটা অংকের টাকা রয়েছে তাই তাকে আর তেমন কষ্ট করতে হয়নি। একটা ব্যবসা দাড় করান এবং নিজেই মাইশিকে বড় করে তুলেন। তবে ছোটবেলা হতেই মাইশি হঠাৎ হঠাৎ এমন অসুস্থ হয়ে যায়। টানা অনেকদিন জ্বর থাকে, মাইশি কিছু খেতে পারে না। শরীর দুর্বল হতে থাকে। একাই ঠিক হয়ে যায় বিধায় এই বিষয়ে তেমন মাথা ঘামায় না আরিফ সাহেব। তবে এই প্রথম এর জন্য ডাক্তারের চেম্বারে মাইশিকে নিয়ে গেলেন তিনি। আর তার বন্ধু ডাক্তার সহ আরেক ডাক্তার কী অদ্ভুত তথ্য দিলেন তাকে। কাল নাকি মাইশির অপারেশন হবে। আরিফ সাহেব বেশ চিন্তায় রয়েছেন। মাইশিকে এবিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। একটা বাচ্চা মেয়ে বুঝবেই বা আর কী!
.
.
পরেরদিন বিকালে শহরের একটা বড় হাসপাতালে নেওয়া হলো মাইশিকে। এই হাসপাতালে ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াস উভয়েই অপারেশনের কাজ করে থাকেন। মাইশিকে অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আরিফ সাহেব চিন্তিত মুখ নিয়ে অ.টির বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলেন। ঘন্টা খানেক পর ডাক্তার ইমরান এবং ইলিয়াস গম্ভীর মুখে অ.টি থেকে বের হলেন। আরিফ সাহেব দ্রুত তাদের কাছে গেলে ইমরান বলেন, চিন্তা করো না বন্ধু। মাইশির কিছু হয়নি। আমরা পরীক্ষা করে কিছুই খুঁজে পেলাম না। তবে এর শেষ দেখে ছাড়ব আমরা। তোমার মেয়ের কিছুই হবে না। সে অচেতন হয়ে আছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তার জ্ঞান ফিরবে। এখনই তাকে বের করা হবে। কালকেই তুমি নিয়ে যেতে পারবে তাকে।
.
ইমরান এবং ইলিয়াস দুজনের মুখেই মাক্স পড়া। তাদের চোখ ভয়ংকর রকমের লাল। এই চোখ আর ইমরানের অদ্ভুত চাঁপা কন্ঠের কথা শুনে বেশ চমকে যান আরিফ সাহেব। তারা যেন একটা ঘরের মধ্যে রয়েছে। আর অপারেশনের পরের দিন পেশেনকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে এটা শুনেও তিনি বেশ অবাক হলেন। ইমরান এবং ইলিয়াস তাকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। অচেতন মাইশিকে বেডে স্থানান্তর করা হলো। সারারাত সে চোখ খুলেনি। আরিফ সাহেব সারারাত তার বেডের পাশেই জেগে ছিলেন। শেষরাতে চোখ লেগে যায় তার। সকালে মাইশির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। বাবা, পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। কেউ যেন ভেতর থেকে খোচাচ্ছে। আরিফ সাহেব চমকে ঘুম থেকে উঠেন। মাইশির অপারেশনের কাপড় সড়িয়ে পেট দেখে তিনি বেশ অবাক হন। পুরো পেটে অপারেশনের কোনো চিহ্ন নেই। এরইমধ্যে হাসপাতালের একজন নার্স এসে ভয়ংকর একটা সংবাদ শুনালেন। যা শুনে আরিফ সাহেবের হৃদপিন্ড যেন থেমে যেতে চাইছে। পায়ের নিচ হতে মাটি সড়ে যাচ্ছে। তার বন্ধু ডাক্তার ইমরান এবং ডাক্তার ইলিয়াস দুজনেই নাকি গতরাতে আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছেন। ..............................
............................................
.
.
. . . . . . . চলবে ..........
.
.
# ওঁ_আসবেই
.
লেখা:- # Masud_Rana

Post a Comment

Previous Post Next Post