গল্পঃ এ উইজার্ড।লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।পর্ব - ১৩ / শেষ পর্ব


গল্পঃ এ উইজার্ড।।পর্ব - ১৩ শেষ পর্ব
লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
মূলত উক্ত কফিনটি ছিলো তৎকালীন ফারাও রাজা খুপুর সময়ের সেনাপ্রধান জাসাস এর।
খুফুর খুবই বিশ্বস্ত একজন মানুষ ছিল এ বিশালদেহী সেনাপতি। জীবদ্দশায় সে ছিল পরাক্রমশালী একজন বীর। বৃহদাকার দেহের সাথে সাথে শক্তিও ছিলো তার অসম।রাজা তার উপর খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন এবং সে চাইছিলেন মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও তাকে সেনাপ্রধাণ বানিয়ে রাখতে। খুফু মারা যাওয়ার অনেক আগেই জাসাস কে তার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলো। জাসাস খুব স্বাচ্ছন্দে রাজি হয়ে যায়। এবং ঠিক করে সে আত্মাদের হাত থেকে লাল পাথরটি সুরক্ষিত রাখার জন্য পাহারার কাজে নিয়োজিত থাকবে। খুফুকে সমাধিস্থ করার সকল কাজ এবং লাল পাথর দিয়ে হাজার হাজার কৃতদাস ও যুবতী-যৌনদাসীদের হত্যা করার পর তাদের মমি বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখার কাজ জাসাস নিজ দায়িত্ব নিয়ে সম্পন্ন করে।
সব শেষে পাথরটির চেম্বারের চারদিকে একটি সুরক্ষা বলয় তৈরী করে, যার মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র রক্ত মাংসের মানুষরা ই যাতায়াত করতে পারবে। কাজ শেষ হওয়ার পর জাসাস তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয় তার কপালে লাল পাথর ছুঁইয়ে তাকে হত্যা করতে।এবং অক্ষত অবস্থায় তার দেহকে বলয় এর এ পাশে মমি করে রাখতে। এর ফলে বলয় ভেদ করে জাসাস এর আত্মা বাইরে বের যেতে পারবে না। বরং কখনো কোন ভাবে সুরক্ষা বলয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোন আত্মা যদি মুক্তি পাওয়ার আশায় লাল পাথর উদ্ধার করতে চলে আসে তবে তাকে আচ্ছা করে শায়েস্তা করা যাবে। অর্থাৎ আলিসা কোনভাবে বলয় ভেদ করে চলে আসতে পারলেও এতক্ষনে জাসাস এর হাতে মারা পরত। জাসাসের আত্মা বলয়ের ভিতরে থাকা সত্ত্বেও ফাহাদের নীল লকেটের কারণে কাছে ঘেষতে পারছিল না।কিন্তু সমস্যাটা তখন ই হয়, যখন লাশটাকে বাইরে বের করে আনার জন্য ফাহাদ ওর দেহের উপর ঝুঁকে কাঁধে হাত দিয়ে টানা হেঁচড়া করছিল, ঠিক তখন ফাহাদের লকেট ঝুলে গিয়ে জাসাসের বুকের সাথে লাগে। জাসাস যেহেতু কোন জামাকাপড় পরিধান করা ছিল না, সেহেতু লকেট সরাসরি ওর দেহের সংস্পর্শে আসে। জাসাসের আত্মা চেম্বারের আশে পাশেই ঘুরছিল হঠাৎ নীল লকেটের ছোঁয়ায় ওর দেহের ভিতরে সাথে সাথে আত্মাটি ঢুকে পরে এবং জাসাস জীবন্ত হয়ে ওঠে। ফাহাদকে এক হাত দিয়ে বুকের সাথে পিষে লকেটটিকে নিজের গায়ের সাথেই জড়িয়ে রাখে জাসাস। তৎকালীন ফারাওদের কাছে লকেট দিয়ে হত্যা করে আত্মাকে বন্দি করে রাখার ক্ষমতা থাকলেও দেহের ভিতরে আত্মাকে পুনরায় স্থাপন করানোর মত কোন ক্ষমতা তাদের ছিল না।
.
.
.
.
ফাহাদকে বুকের সাথে শক্ত করে পিষে ধরে জাসাস। এতক্ষন আত্মা রূপে থাকা অবস্থায় ফাহাদের কাছেও ঘেষতে পারে নি সে।যতবার কাছে যেতে চেয়েছে ততবার ই তার শক্তি শেষ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে। নীল লকেটের ক্ষমতা সম্পর্কে তখন ই বুঝতে পেরেছিল জাসাস। আর এখন সেই নীল লকেট তার হাতের মুঠোয়। শুধু ফাহাদের গলা থেকে বের করে নিতে পারলেই হয়। অপরদিকে এক হাত না থাকায় এবং পাইন গাছের চিটচিটে পিচ্ছিল পদার্থ দিয়ে সম্পূর্ন শরীর মাখানো থাকায় বার বার পিছলে বেরিয়ে যেতে চেস্টা করছে ফাহাদ। কিন্তু আদৌ তাতে কাজ হওয়ার কোন লক্ষন নেই।নীল লকেট ফাহাদ ও জাসাস কে সমান শক্তি সাপ্লাই করলেও জাসাস প্রকৃতপক্ষে ফাহাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সুতরাং ফাহাদ এখন জাসাসের কাছে খুবই দুর্বল অবস্থায় আছে। তবে এভাবে থাকলে লকেটের প্রভাবে কেউ ই মারা যাবে না। জাসাস ঠিক করে ফাহাদের গলা থেকে লকেট খুলে ফেলতে হবে। কিন্তু এক হাত দিয়ে সে লকেট খুলবে নাকি ফাহাদকে ধরে রাখবে তা নিয়ে ভীষন কনফিউশন এ পরে যায়। অবশেষে জাসাস ঠিক করে, ফাহাদকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথা থেকে খাওয়া শুরু করবে। আট ফুট উচ্চতার একজন বিশালদেহী আদিম যুগের মানুষের কাছে ৫ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার কাউকে জীবন্ত চিবিয়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অবাক করার মত কিছু নয়।
.
.
.
আলিসা বলয়ের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে অনেকটাই বোরিং হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তার মনে পরে ফাহাদ লাল পাথর নিয়ে চলে আসার পরে তাদের এ জায়গাটা থেকে বের হতে হবে। কিন্তু এই ঢালু মসৃণ রাস্তা বেয়ে উপরে ওঠা এক ধরণের অসাধ্য কাজ। সে কথা চিন্তা ই আলিসা তার শক্তি ব্যাবহার করে বড় বড় পাথরের টুকরো জড়ো করতে শুরু করে আশ-পাশ থেকে। প্রথমেই কাচের সুঁচালো ফলা গুলো গুড়িয়ে দেয়। তার উপরে পাথর বসিয়ে সে ঢালু রাস্তায় ওঠার মত একটা পথ তৈরি করে। এসময় হঠাৎ ই আলিসার মনে পরে ফাহাদের রিভালবার টা উপরে পরে আছে, দ্বিতীয় চেম্বার এ। যেখানে ওদের নিজেদের শয়তানি রূপের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। আলিসার মনে আছে ওর প্রতিবিম্বটি ফাহাদের হাতে পাথর ছুড়ে মারার পরে রিভালবার টি হাত থেকে ছিটকে পরে যায়। যা ফাহাদ পরে আর তুলে নেয় নি। আলিসা সিদ্ধান্ত নেয় রিভাবার টা নিজের কাছে এনে রাখবে। ঢালু রাস্তা দিয়ে তরতর করে উপরের দিকে বেয়ে উঠে আলিসা। ৪৫ মিনিটের রাস্তা সে মাত্র ৫ /৬ মিনিটেই পারি দিয়ে ফেলে। কিন্তু উপরে আসার পরে অবাক না হয়ে পারে না। যেখানে রিভালবার টা পরে থাকতে দেখেছিলো সেখানে রিভালবার তো নেই ই, তার বদলে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোপ ছোপ রক্ত। আলিসার ও তো মাথা ফেটেছিল। কিন্তু এত রক্ত তো বের হয়নি। আর রিভালবার টাই বা গেল কোথায়!! এসব ভাবতে ভাবতে যখন সে চারদিকটা ভালো ভাবে খুঁজে চলছিল, ঠিক তখনই হুহুহুহুহুহু করে একটা মেয়েলি আওয়াজ ভেসে আসে। আওয়াজ টার উৎস কোথায় তা বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে গোটা পিরামিড জুড়েই শব্দটা ভেসে চলছে।
.
.
.
এদিকে রাতুলের অবস্থা খুবই ভয়াবহ দীর্ঘ দু দিন ধরে কো প্রকার খাবার দেয়া হয়নি তাকে। চাবুকের আঘাতের জায়গা গুলোতে পুঁজ হয়ে গিয়েছে। চাপ দিলেই ভেজা সাদা আঠালো পুঁজ বের হয়। খুব বিশ্রী ভাবে নিজের দিনগুলো কাটাচ্ছে রাতুল। বাথরুমের পানি খেয়ে আর কতদিন। ইচ্ছে করছে দেয়াল ভেংগে বাইরে বের হয়ে যেতে। কিন্তু তা অসম্ভব। শুধু শুধু শক্তি ক্ষয় করার কোন মানে হয়না। একরকম কষ্ট ভোগ করে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ ই বোধ হয় শ্রেয় ছিলো। রাতুল বুঝতে পারে ফাহাদ তাকে না মেরে এমন কষ্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। মনে মনে সে সিদ্ধান্ত নেয়, তার মুক্তি পেতে হবে।প্রয়োজনে সে একটা খুন করবে। নিজেকে নিজে খুন করে মুক্তি নিবে এ কষ্ট থেকে।
ফাহাদের নাকমুখ জাসাস এর বুকের অর্ধগলিত পচা মাংসের ভিতর সেঁটে ছিল। কফিনের ভেতরের স্বল্প অক্সিজেনটুকু শেষ হয়ে গেলেও ফাহাদের নিশ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছিল না লকেটের জন্য। কিন্তু পঁচাগলা মাংসের মধ্যে নাক ডুবে থাকায় তার অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। বার বার নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেস্টা করেও সে যেন ব্যার্থ। হ্যাঁচকা টান দিতেই একটু আগে যে দেহ থেকে লাশের হাত খুলে এসেছে সেই দেহে এত অসূরের মত শক্তি এলো কোথা থেকে!! ভেবে কূল পায়না ফাহাদ। এত ভয়ানক একটা সিচুয়েশনের ভিতরেও ফাহাদের একটা জিনিস কাজ করছে না,সেটা হল ভয়। কিন্তু সাহস দিয়ে কি হবে!!বার বার নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করেও এক পর্যায়ে সে হাল ছেড়ে দেয়। পিঠের উপর যেন হিমালয় পর্বত দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।কিছুক্ষন হাত পা ছোড়াছুড়ি করে নিস্তেজের মত পরে ছিল ফাহাদ। হঠাৎ সে অনুভব করে, মাথার খুলির উপর জাসাস বারবার দাঁত বসাতে চাচ্ছে। কিন্তু পাইন গাছের আঠা চুলের সাথে লেগে থাকায় বার বার ই মাথা আর চুলের উপর থেকে পিছলে যাচ্ছে ওর দাঁত। ফাহাদ খুব কষ্ট করে মাথাটা বুক থেকে ঘুরিয়ে জাসাসের দিকে তাকায়। সে দেখতে পায় কয়েকটি নোংরা কালো কালো বিকট আকৃতির দাঁত নিয়ে জাসাস বার বার ফাহাদের মাথায় কামড় দিতে চাইছে। নিজের মাথাকে একটু এপাশ ওপাশ করে জাসাসের মুখ থেকে বার বার নিজেকে বাঁচিয়ে নিচ্ছিল ফাহাদ। এক পর্যায়ে ফাহাদের খেয়াল হয় জাসাসের চোখ থেকেও তীব্রভাবে সেই পরিচিত নীল আলো বের হচ্ছে। ফাহাদ সাথে সাথেই বুঝে ফেলে জাসাসের দেহে হঠাৎ প্রাণ ফিরে আসার কারণ কি!!
ফাহাদের মাথা তখন চিন্তা করতে শুরু করে জাসাসের দেহ থেকে এই লকেটের স্পর্শ কিভাবে সরানো যায়!!তার হাত মুক্ত থাকলে হয়ত, পকেট থেকে ছুড়িটা বের করতে পারত। কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয়। গলার সাথে ফাইবারের চেন দিয়ে লকেট টি ঝুলানো ছিল। ফাহাদ সিদ্ধান্ত নেয় তার দাঁত দিয়ে চেন টেনে টেনে নিয়ে নিজের মুখের ভিতর পুরে ফেলবে। তাহলেই নীল লকেটের ক্ষমতা আর জাসাসের অনুকূলে কাজ করবে না।
ফাহাদ একটু চেস্টা করলো নিজের মুখ কে গলার চেনের কাছে নিয়ে দাঁত দিয়ে আটকে ধরার জন্য যাতে চেনটি টি আস্তে আস্তে টেনে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু ভাবা যত সহজ তার চেয়েও করাটা কয়েক গুন বেশি কঠিন।ফাহাদের গলা থেকে ঝুলে চেনটা জাসাসের বুকের উপর লেপ্টে আছে। দাঁত দিয়ে কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দাঁত দিয়ে কামড় বসাতে না পেরে জাসাস তার দাঁত দিয়ে হাতুড়ি দিয়ে লোহা ঢুকানোর মত ফাহাদের মাথায় আঘাত করে চলেছে। যার ফলে ফাহাদের মাথার চামড়া কেটে গিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। কিন্তু ফাহাদ মোটেও তা অনুভব করতে পারছে না।তবে রক্ত এবং জাসাস এর কার্যক্রম দেখে সে বুঝে নিচ্ছে তার সাথে কি ঘটে চলছে এখন। লকেটের চেইনের নাগাল পাওয়ার একটিমাত্র পথ ই খোলা আছে এখন। জিভ দিয়ে লেপ্টে থাকা ফাইবারের চেন টা দাঁতের কাছে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু মমি করা একটা হাজার হাজার বছরের পুরোনো লাশের অর্ধগলিত মাংসের উপর জিভ চালাতে হবে ভেবেই ফাহাদের গা গুলিয়ে আসছে। এত ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট কাজ করার চেয়ে মারা যাওয়া ঢের ভালো। সিদ্ধান্ত নেয়ার দ্বিধাদ্বন্দ্ব তে এসে ফাহদের হঠাৎ মনে পরে রাতুলের কথা। তার মা কে হত্যার প্রতিশোধ তো এখনো নেয়া সম্পন্ন হয়নি। রাতুলের মত কাউকে শাস্তি না দিয়ে এত সহজে মারা যেতে পারে না সে। তার উপর তার বাবার এক্সিডেন্ট এর জন্যও এই নিকৃষ্ট রাতুল ই দায়ী। নাহ,বেঁচে তাকে থাকতেই হবে, অন্তত রাতুলকে বাঁচিয়ে রেখে কষ্ট দেয়ার জন্য। নীল আলো ফাইবারের চেন টায় প্রতিফলিত হয়ে চকচক করছে। অনেকটা ঘৃণা নিয়েই মুখ থেকে জিব বাড়িয়ে চেন টার নাগাল খোঁজার চেস্টা করে ফাহাদ।
পচগলা মাংস এবিং পাইন গাছের তরল আঠার মত জিনিসের উপর জিভ লাগতেই গা গুলিয়ে বমি আসে ফাহাদের। কিন্তু কোন রকমে সহ্য করে নেয় সে। প্রশ্নটা জীবন মৃত্যুর। হা করে জীভ দিয়ে অনুমান করে চেইনের অস্তিত্ব খুঁজতে থাকে ফাহাদ। এদিকে মাথার খুলির উপর নোংরা দাঁত দিয়ে অনবরত ঠুকে চলেছে জাসাস। অনেক ক্ষন পচগলা মাংসের ভিতর জিভ চালাতে চালাতে জিভের ডগায় চিকন একটা সুঁতোর অস্তিত্ব খুঁজে পায় সে। জিভের ডগা বাকিয়ে সেটা নিজের মুখের ভিতর নিয়ে আসতে চেস্টা করলে ব্যার্থ হয় ফাহাদ। চিটচিটে আঠা থাকার কারণে চেইনটা তো উঠলো ই না বরং এক গাদা মাংস পচা রসালো দ্রবন জিভে লেগে মুখে চলে আসে। কি উৎকট স্বাদ!! কিন্তু এই শেষ এবং একমাত্র উপায়ে একবার ব্যার্থ হয়েই হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। বার বার চেস্টা করতে থাকে ফাহাদ। ততক্ষনে তার মুখ ভর্তি হয়ে গিয়েছে তার মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত, এবং পচা মাংসের জলীয় দ্রবনে। থেমে থাকার কোন মানে হয় না। বার বার চেস্টা করতে করতে এক পর্যায়ে জিভের ভাজের সাথে চিকন শক্ত ফাইবারের সুতোটাও উঠে চলে আসে। দাঁতের নাগালের মধ্যে আনার পরে চিবিয়ে চিবিয়ে এবং জিভ দিয়ে টেনে ফাহাদ ও জাসাসের বুকের মাঝে পিষে থাকা লকেট টা আস্তে আস্তে বের করে আনতে শুরু করে ফাহাদ। জিভের বেশ কিছু অংশ শক্ত ফাইবারের চিকন চেইনে লেগে কেটে যায়। এদিকে ঝর্নায় গোসল করার সময় মাথার উপর থেকে যেমন পানি পরে ঠিক তেমনি রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে ফাহাদের মাথা থেকে। দেখতে দেখতে এক সময় লকেট টি দুজনের পিষে থাকা বুকের শেষ প্রান্তে চলে আসে।শেষবারের মত দাঁতের সাথে লকেটের চেইন নিয়ে খুব জোড়ে একটা টান দিতেই ফট করে লকেট টি ফাহাদের মুখের কাছে ছিটে বেরিয়ে আসে। সাথে সাথে ফাহাদ সেটাকে মুখে পুরে নেয়।
.
.
.
আস্তে আস্তে ফাহাদের পিঠের উপরের পর্বত সমান চাপ হালকা হয়ে আসে। মাথার উপর দাঁত দিয়ে হাতুড়ি পেটানো বন্ধ হয়। ফাহাদ নিজেকে ঘুরিয়ে নিয়ে উবু হয়ে আটকে থাকা অবস্থান থেকে থেকে চিৎ হয়ে যায়। এবং কফিনের দরজায় প্রচন্ড জোরে একটা লাথি মারে। কাঠের ভারী দরজাটা ফুটবলের মত উড়ে গিয়ে উপরের দেয়ালের সাথে আছড়ে পরে এবং প্রচন্ড জোড়ে শব্দ হয়ে কয়েক খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। শব্দটা আলিসাও শুনতে পায়। সে কান্নার আওয়াজ অনুসন্ধান করা বাদ দিয়ে ছুটে চতুর্থ চেম্বারের দিকে নেমে আসে।
কফিন থেকে মুখের ভিতর লকেট নিয়ে ফাহাদ বের হয়ে আসে। বের হওয়ার পর সে অনুভব করে তার মাথার চামড়া প্রায় কান পর্যন্ত কেটে গিয়ে একপাশ থেকে অনেকখানি ঝুলে আছে। মাথার হাড় উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে চামড়া কেটে। তবে সে নিজের মধ্যে কোন প্রকার দুর্বলতা বা ব্যাথা অনুভব করছে না। তবে মাথার মাঝখান থেকে কান পর্যন্ত কাটা ঝুলানো চামড়া নিয়ে হাঁটতে তার বিরক্ত লাগছে। সারা গায়ে রক্ত এবং পচা মাংসের গন্ধ। বিশুদ্ধ কোন প্রকারের পানি নেই যা দিয়ে সে নিজেকে পরিষ্কার করতে পারবে।ব্যাগে করে নিয়ে আসা পানির বোতল থেকে পানি বের করে মুখ কুলি করে নেয় সে। জীবনে এতটা বাজে দিনও আসবে !! সেটা কল্পনার বাইরে ছিলো তার। এদিকে আলিসা ছুটে এসে সুরক্ষা বলয়ের বাইরে আটকা পরে। ভিতরে কি হচ্ছে তা কল্পনাও করতে পারছে না আলিসা। বলয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে ছটফট করতে থাকে সে। এছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার। ঝুলে যাওয়া চামড়াটা হাত দিয়ে মাথার উপরে রেখে একটা টিশার্ট ছিড়ে তা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে নেয় ফাহাদ।এবার অতি সাবধানে মুখের ভেতরে লকেট রেখেই জাসাস এর লাশটা বের করে কফিন থেকে। তবে এবার আর আগের মত না।ঢাকনা বিহিন কফিনটি উল্টে ঝাঁকি দিতেই থপ করে বের হয়ে যায় জাসাসের বিশাল মৃতদেহ। ঠিক যেন বিরিয়ানির প্যাকেট থেকে প্লেটে বিরিয়ানি ঢালার মত সহজ হয়ে যায় কাজ টা।বেশ বড় কফিন। পানিয়ে ভাসিয়ে দিলে অবলীলায় নৌকার মত ব্যাবহার করা যাবে।কফিনটিকে কালো নোংরা পানিতে ভাসিয়ে ফাহাদ নিজেও উঠে পরে। কফিনের দরজার এক খন্ড ভাংগা টুকরাকে বৈঠার মত ব্যাবহার করে ফাহাদ। অতিরিক্ত ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ই ফাহাদ তীরে ব্যাগ রেখে ওপাশে পাড়ি দেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।কিছুদূর আসতেই ফাহাদ অনুমান করতে পারে সিংহাসনের মাঝে বসার জায়গাটায় লাল পাথরটা শূন্যে ভাসছেম চারদিকে অদ্ভুত লাল আভা। সিংহাসন টি স্বর্ণ এবং দামী দামী দুর্লভ পাথরের উপর খুব সুন্দর করে বসানো আছে। হঠাৎ অদ্ভুত আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকায় ফাহাদ। তার ব্যাগটা ও ব্যাগে থাকা সকল জিনিসপত্র টুকরো টুকরো হয়ে শূন্যে ভাসছে। ফাহাদ দূরে চলে আসতেই জাসাসের আত্মা তার শক্তি পুনরায় ফিরে পেয়েছে এটি তার ই নিদর্শন। যাই হোক না কেন কাংখিত লাল লকেট তার থেকে মাত্র আর একটু দূরে।এপাড়ে নৌকা ভেড়ানোর মত করে কফিন ভেড়ায় ফাহাদ। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। মাথার ভিতর জ্বালাপোড়া এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবুও নিজের উপর জোর করে পায়ের নিচে দামী পাথর এবং স্বর্ণমুদ্রার স্তপ মাড়িয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে সে। সিংহাসনের উপর ভাসতে থাকা লাল পাথরটার কাছ থেকে মাত্র দু হাত দূরে দাঁড়িয়ে ফাহাদ। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যাবে। প্রচুর যন্ত্রনা তার উপর ভর করেছে। সব শক্তি যেন শেষ প্রায়।নিজের লকেটের দিকে তাকায় ফাহাদ। নিভু নিভু হয়ে নীল আলোটা ধরে রেখেছে। আবার এদিকের লাল পাথরটাতেও একটু আগে যেমন লাল আলোর ঝলকানী দেখা গিয়েছে তেমন নেই। ফাহাদ কিছু চিন্তা করতে পারছে না এখন। খালি মাথায় তার একটা ই চিন্তা এসেছিল। এ পাথর নিয়ে তার পালাতে হবে। পাথরটা ধরার জন্য সিংহাসনের দিকে ঝাপিয়ে পরে সে। ঝাপিয়ে পরে হাত দিয়ে লাল পাথর টা মুঠো করে ধরার আগ পর্যন্ত টুকুই মনে আছে ফাহাদের।এরপর ফাহাদ জ্ঞান হারিয়ে সিংহাসনের উপরেই আছড়ে পরে। তার মুঠোবন্দী হয়ে আছে সেই কাংখিত লাল পাথর। হঠাৎ ঠা ঠা শব্দে বজ্রপাত হতে শুরু করে। আকাশ থেকে যেমন নিচের দিকে বজ্রপাত হয়, তেমন না হয়ে ফাহাদের মুঠোয় থাকা লাল পাথর থেকে উপরের দিকে বজ্রেপাত হচ্ছে।হাজার হাজার বজ্রেপাতের শব্দ যেন পিরামিড টাকেই কাঁপিয়ে তুলেছে। এদিকে আলিসার সামনে থাকা বলয়টা মুহূর্তের ভিতরেই অদৃশ্য হয়ে যায়। সে দ্রুতগতিতে শব্দের উৎস খুঁজে সামনে এগোতে থাকে। আলিসা নিজেকে অনেকক্ষন পরে খুব শক্তিশালী অনুভব করছে। ছুঠে গিয়ে সে মাত্র কয়েক মিনিটেই জাসাসের লাশের কাছে পৌঁছায়। সেখানে রক্ত ও ফাহাদের টুকরো টুকরো ব্যাগ পরে থাকতে দেখে আলিসার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠে। পানির উপর দিয়ে সে লাইট নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। অন্ধ্যকারের ভিতরেও সাদা বিজিলীর আলো গুলো যেন বলে দিচ্ছিল আলিসাকে কোথায় যেতে হবে। আলিসা গিয়ে দেখতে পায়, লাল পাথরের ভেতরে বন্দী থাকা আত্মাগুল বজ্রপাতের মত করে বের হয়ে ওপারে পাড়ি জমাচ্ছে।কিন্তু এটা কি হলো!! সে তো চেয়েছিল আত্মাগুল কে নিজের গোলাম বানিয়ে রাখতে। তবে এগুলো চলে যাচ্ছে কেন এখন!!ফাহাদের হাতের মুঠোয় থাকা পাথরের দিকে চোখ যাওয়ার আগে আলিসার চোখ যায় ফাহাদের ক্ষতবিক্ষত দেহের উপর। বিশেষ করে মাথার অংশে। ফাহাদের এ বেহাল অবস্থা দেখে খুব কান্না পায় আলিসার।অনেকটা নিরাশা নিয়েই সে মন্ত্র পাঠ করে ফাহাদের দিকে হাত বাড়ায়। আলিসার ধারণাও ছিল না এইবার ফাহাদের উপর তার ডাকিনী বিদ্যা কাজ করবে। ফাহাদকে কিছুক্ষনের মধ্যেই আলিসা পূর্বের মত অক্ষত শরীরের অধিকারী করে দেয়। কিছুক্ষন যেতে না যেতেই ফাহাদের জ্ঞান ফেরে।জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই ভয় পায় সে। দৌড়ে গিয়ে আলিসাকে জাপটে ধরে। আলিসাও পরম মমতায় ফাহাদকে বুকের সাথে জাপটে নেয়।বাচ্চাদের মত কান্না শুরু করে ফাহাদ। কি হচ্ছে এখানে, কি ঘটেছিল তা আলিসা কিছুই জানে না। তবে এতটুকু ঠিকই জানে, এখন ফাহাদকে ভালবাসতে হবে। ফাহাদের গায়ে রক্ত এবং নোংরা গন্ধ লেগে থাকলেও সেটা এখন আলিসার খারাপ লাগছে না। নিজেকে ফাহাদের নোংরা শরীরের সাথে লেপ্টে নিতেও অনেক ভাল লাগছে তার। ফাহাদকে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই হাতের ইশারা দিয়ে কালো এবং অপরিষ্কার পানি একদম পরিষ্কার করে ফেলে আলিসা। আলিসা চাচ্ছিল দুজনে মিলে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিতে। অদ্ভুত হলেও সত্যি তখন আলিসার লাল পাথরের দিকে বিন্দুমাত্র মনোযোগ ও ছিল না।
ফাহাদকে আলিসা গোসলের জন্য আমন্ত্রন করে। ততক্ষনে ফাহাদের হাতের মুঠোয় থাকা পাথরের ভিতর থেকে শব্দ এবং বিজলী চমকানো থেমে গিয়েছে একদম ই। ফাহাদ হাতের মুঠোয় করে সেটা আলিসার দিকে এগিয়ে দেয়। আলিসা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে, এ পাথর আর কাজের না। আত্মারা মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। তাও দাও এটা আমার কাছে রাখব। আপাতত তোমার কাছেই রাখ এটা। ফাহাদ নিজের হাতের মুঠোয় পাথরটি ধরে রাখে। আলিসা ফাহাদের হাতের কবজি ধরে টলমল করা পানির ভেতরে নামে। এরপরের সময় টুকু শুধু ওদের দুজনার। অনেক্ষন ধরে গোসল করে পরিষ্কার হয় ওরা। ফাহাদ নিজেকে আলিসার প্রেমিক হিসেবে আবিষ্কার করে। আলিসাও তখন ভাবছিলো, এই ছেলেটি ছাড়া হয়ত তার জীবন টা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
.
.
.
.
.
গোসল শেষ করে দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় ফিরে যাবে। আলিসা প্রস্তাব দেয় পিরামিড থেকে বের হয়েই প্রথমে তারা বিয়ের কাজ সেরে নিবে। ফাহাদ বাঁধা দেয়, "আগে আন্টিকে জানাতে হবে"।
"কোন আন্টি?"
" সুবাতা আন্টি, আমি তাকে সাথে নিয়েই তোমাকে বিয়ে করব প্রিয়। "
ফাহাদের উত্তর পছন্দ হয় আলিসার।
দুজনে হেঁটে হেঁটে বেড়িয়ে আসে। আলিসা সিদ্ধান্ত নেয় সারাজীবন সে ফাহাদের সাথেই থাকবে। এখন আর তার দুর্বল লাগছে না ফাহদের সাথে থাকলে। দুজনে কথা বলে
হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসে দ্বিতীয় চেম্বারে। আয়নার ঘরটায়। খুব লম্বা পথ হেঁটে আসলেও দুজন কথা বলে পথ চললে তা আর লম্বা মনে হয়না। কিন্তু এতদূর হাঁটার পর ফাহাদ ক্লান্ত হয়ে পরে খুব। তাও আবার নিচের দিক থেকে উপরে উঠতে গ্রাভিটির বিপরীতে হাঁটতে হয়েছে। আলিসা ক্লান্ত ফাহাদের দিকে পানি এগিয়ে দেয়। পানি নেয়ার সময় ফাহাদ খেয়াল করে লাল পাথরটি এখনো তার মুঠোবন্দী অবস্থায় আছে। সে আলিসার দিকে লাল পাথর এগিয়ে দেয়। " এটা তোমার কাছেই রাখ। "
আলিসা অনাগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পাথরটি হাতে নেয় এবং ব্যাগ থেকে বই বের করে পেছনের অংশের সেই খালি জায়গাটার উপর পাথরটা ধরে। চুম্বক যেমন লোকাটে ঠাস করে টেনে নেয় বইয়ের পিছনের গর্তটাও পাথরটিকে সেভাবে টেনে নিয়ে একদম পার্ফেক্ট ভাবে লেগে যায় বইয়ের সাথে। বইয়ে পাথর লাগানোর সাথে সাথেই আলিসা নিজের ভিতরে অনেক চেঞ্জ অনুভব করে। সে হাওয়ায় ভেসে ফাহাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। লাল পাথর নিয়ে দূরে যাওয়ার সংগে সংগে ফাহাদের চোখ পুনরায় নীল হয়ে যায়। তার নীল লকেট আবারো দুপ করে জ্বলে ওঠে তীব্রভাবে। যাকে একটু আগে বিয়ে করার কথা ভাবছিল ফাহাদ, এখন এক অদম্য শক্তি ফাহাদকে বলছে তাকেই খুন করে ফেলতে। বইয়ের ভিতর পাথর প্রবেশ করানোর সাথে সাথেই আলিসাও ফাহাদকে তার শত্রু রূপে দেখতে শুরু করে।
পৃথিবীর সব জিনিসের ই দুটো বিপরীত দিক থাকে। পাথর দুটো ও একই রকম। একটা অন্যটার বিপরীত। খুব কাছে চলে এলে দুজনের কর্মক্ষমতা ই লোপ পায় এবং অকার্যকরী হয়ে পরে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্বে সরে যাওয়ার পর আবার পাথর দুটো নিজ নিজ পাওয়ার অর্জন করে ফেলে।নীল এবং লাল লকেট দুটোর শক্তি ছিল সমান সমান। আলিসা ফাহাদ দূর থেকে দেখতে পায় আলিসা শূন্যে ভাসছে তার চোখ থেকে যেন লাল আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। মুখে একটা সাইকিক হাসি । ফাহাদ জানে ওর কাছে গেলেই দুজনের পাওয়ার শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং দূর থেকে যা করার তা করতে হবে। কাচের ভাংগা টুকরো ও বড় বড় পাথর ছুড়ে মারতে থাকে আলিসার দিকে। কিন্তু সেগুলোকে মোকাবেলা করা আলিসার কাছে কোন ব্যাপার ই ছিলো না। বরং আলিসা আস্তে আস্তে ফাহাদের দিকে এগিয়ে আসে। ফাহাদের যত কাছে আসতে থাকে ফাহাদের শক্তিও ততটাই লোপ পেতে থাকে। আলিসা এক পর্যায়ে একদম ই ফাহাদের কাছে চলে আসে। ফাহাদের লকেট ও আলিসার লাল লকেটের দুটোর ই কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফাহাদের নিজের ভিতরে প্রেমিক সত্তা চলে আসে। কিন্তু আলিসার মন ও দেহ সব কিছুই কন্ট্রোল করে ঐ বই। তাই লাল লকেটের প্রভাব কেটে গেলেও বইয়ের ভিতরে লাল লকেট সেট করা থাকায় আলিসার মন থেকে ফাহাদকে খুন করার মানুষিকতা মুছে যায় না। সে একটা বড় ত্রিভুজাকার কাঁচ ইশারার মাধ্যমে শূন্যে তুলে নেয় এবং ফাহাদের বুকের সোজা তাক করে। ফাহাদের বুকের ভিতর কাচের টুকরোটা আংগুল দিয়ে ইশারা দিয়ে আলিসা এক্ষুনি ঢুকিয়ে দিবে , এমন সময়ের ঠিক এক মিলি সেকেন্ড আগেই প্রচন্ড জোড়ে ঠাস করে একটা শব্দ হয়।
শব্দটি ফাহাদের খুব পরিচিত। রিভালবার থেকে ফায়ারিং করার সাউন্ড।সাথে সাথে আলিসার দেহটা লুটিয়ে পরে নিচে,"পেছন থেকে হেডশট।"
ফাহাদ টর্চ লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পায়, আলিসার দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পরার পরও সেটা থেকে ৪০-৪৫ বছর বয়সী একজন মহিলা বের হয়ে চোখের পলকেই যেন বইয়ের পাতায় ঢুকে গেল। আলিসার গুলিবিদ্ধ দেহ টা সাথে সাথে চোখের সামনে পঁচতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে,মাংসগুলো গলে পচে নিচে পরে, গিয়ে সাথে সাথে শুকিয়ে একটা কংকালে পরিনত হয়ে গেল। গুলির শব্দের উৎপত্তির দিকে টর্চ মারতেই দেখতে পায় লাল রক্ত জড়ানো কাপড় পায়ে পেঁচিয়ে তিন নম্বর চেম্বারে যাওয়ার সুরঙ্গ পথে বসে আছে সুবাতা।
অবাক হয় ভীষণ ফাহাদ।
নিজেদের প্রতিবিম্বের সাথে যুদ্ধ করে ওদের ভেংগেচুরে রেখে যাওয়ার পর যখন সুবাতা এই চেম্বারে প্রবেশ করে তখন অসাবধানতা বশত কাঁচের আঘাতে পা কেটে ফেলে বেশ কিছু জায়গা দিয়ে।
স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে হাঁটার পর ও প্রতিটা পদক্ষেপে পায়ে কাঁচের টুকরো ঢুকে যাচ্ছিল তার। এজন্য সুরঙগ ধরে সুবাতা উপরের চেম্বারে গিয়ে কাঁচ তুলছিল এবং ব্যাথায় কোঁকাচ্ছিল। যার শব্দ ইকো সিস্টেম থাকার কারণে পুরো পিরামিড জুড়ে শোনা গিয়েছে। ফাহাদ এত টাকা কোথায় পেল কি করে টাকা অর্জন করে এ সব কিছু জানার জন্য ই সুবাতা ফাহাদের পিছু নিয়েছিল। তারপর ওদের অজান্তেই ফলো করতে করতে এ পর্যন্ত পৌঁছা।কাঁচের চেম্বার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রিভালবার টা তুলে না নিলে আজ খুব বড় একটা মূল্য দিতে হত সুবাতাকে। ফাহাদ বা সুবাতা কেউ ই হয়ত বাঁচতো না। ফাহাদ সুবাতার দিকে এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে লাল পাথর থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তার ভেতরে আবারও শক্তি ফেরৎ আসতে শুরু করে।
ফাহাদ সুবাতাকে আড় কোলে নিয়ে বইটার কাছে চলে আসে এবং বই থেকে পাথরটি উঠিয়ে নিতে বলে। সুবাতার হাত পা তখনও কাঁপছিলো ভয়ে। সে আড়ালে থেকে ফাহাদ এবং আলিসার সব টুকু পাওয়ার ই দেখেছে।ফাহাদকে তার খুব ভয় হচ্ছে। ভয় হচ্ছে আলিসার বইটাকেও। তবুও ফাহাদের নির্দেশ অনুযায়ী আলিসা বই থেকে পাথরটি বের করতে চেস্টা করে। কিন্তু সে নার্ভাস থাকার কারনে সেটা পারছিলো না। তাছাড়াও পাথরটি খুব শক্তভাবে এঁটে ছিলো বইয়ের সাথে।
ফাহাদ হেঁটে হেঁটে বইয়ের একটু কাছে চলে আসে। লাল পাথরটার শক্তি এবং ফাহাদের নীল লকেটের শক্তি কমে আসে। ফাহাদ পকেট থেকে পেন্সিল নাইফ বের করে সুবাতার দিকে ছুড়ে দেয় এবং বলে হাত দিয়ে টাচ না করে আলিসার ব্যাগে থাকা পানির বোতলে পাথরটাকে সংগ্রহ করতে। সুবাতা ফাহাদের কথা মত আলিসার কংকালের পিঠে থাকা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে। অত:পর চাকু দিয়ে বইয়ের গর্ত থেকে লাল পাথরটি বের করে বোতল বন্দী করে ফেলে সুবাতা। তখন ফাহাদ ও সুবাতা দুজনেই খেয়াল করে বইয়ের প্রায় অর্ধেক পাতা পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গিয়েছে।
.
.
.
ফাহাদ নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে যায়। অনেক পেছনে ওয়াটার বোতলে লাল পাথরটি সংগে নিয়ে ফাহাদের পথ অনুসরণ করে সুবাতা। ফাহাদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়। এই লাল পাথরটি দিয়েও সে একটি লকেট বানাবে। নীল লকেট খুলে লাল পাথর পরিধান করে দেখবে তখন তার ভেতরে কি ধরণের শক্তি আসে! তবে সীমাবদ্ধতা তো রয়েছে। যদি কপালে এই পাথর লেগে যায়!! তবে তো পাথরের ভিতরেই বন্দী হয়ে থাকতে হবে।
ফাহাদ তখনো জানতো না যে তার নীল লকেটের ভেতরে রয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী ক্ষমতা। লাল পাথর যেমন মানুষের প্রাণ নেয়, নীল লকেট ঠিক তার বিপরীত ভাবেই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর যেখান থেকে ওরা ভিতরে ঢুকেছিল সেখানে এসে যায় ফাহাদ। গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে পাথরের ব্লকটাকে ধাক্কা দেয় সে। মন প্রাণ দিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করার চেস্টা করে। নীল লকেট থেকে আলোর বিচ্ছুরণ বেড়ে যায়। ফাহাদের চোখ আরো বেশি উজ্জ্বল নীল বর্ণ ধারণ করে।পাথরের ব্লক নড়ছে না তবু একটুও। আরো বেশি শক্তি প্রয়োগ করে সে। এবার তার চুল থেকেও নীলাভ আভার বিচ্ছুরণ ঘটে। সাথে সাথে কেঁপে উঠে হালকা একটু ফাঁকা হয়ে যায় ব্লকটি। একজন মানুষ বের হওয়ার জন্য অতটুকু জায়গা যথেষ্ট ছিল। প্রথমে ফাহাদ এবং পরে সুবাতা বের হয়। তখন ছিল মধ্যরাত।সুবাতার মোবাইলে চার্জ ছিল। সময় দেখে সে জানায় সাত দিন সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। ফাহাদ সুবাতাকে প্রশ্ন করে এই সাত দিনে কি খেয়েছ? সুবাতা উত্তর দেয় তার কাছে ফুড ক্যাপসুল ছিল। তা দিয়েই খাওয়ার কাজ সেরেছে।
পাথরের ব্লক টি পূর্বের মত ঠিক করে ফাহাদ। সুবাতা তার বাহনের খোঁজ করতে থাকে।
কিন্তু সাত দিন অনেক বেশি সময়। এত দিনে কেউ সরিয়ে ফেলেছে সুবাতার স্কুটি। আর ফাহাদের বাইক তো এখন খুঁজে পাওয়াই অসম্ভব, সেটা আলিসার হারিয়ে যাওয়ার সাথেই হারিয়ে গেল। কি আর করার আছে হেঁটে হেঁটে যতদূর যাওয়া যায়, সকাল হলে গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে কায়রো তে।
.
.
ফিরে আসার পর রাতুলকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ফাহাদ এবং সুবাতা। বেচারা সুইসাইড এটেম্পট করার চেস্টা করেছিল হয়ত। কিন্তু খালি রুমে নিজেকে মেরে ফেলার মত তেমন কিছুই পায় নি সে।দেয়ালের সাথে নিজের কপাল ঠুকেছিল হয়ত। রক্ত জমাট বাধা কাটা কপাল আর দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা রক্ত তা-ই বলে।ফাহাদ রাতুলের রুমে ঢুকে নাকে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরায়। রাতুল জ্ঞান ফিরে পেয়ে ফাহাদকে দেখতে পাওয়া মাত্রই দুর্বল হাতে ফাহাদের গলা চেপে ধরে এবং বলতে থাকে, তোর এই মৃত্যুঞ্জয়ী লকেট না থাকলে আজ তোকে মেরেই ফেলতাম। ঠিক যেমন তোর মা কে মেরেছিলাম। ফাহাদ উত্তর দেয় এই লকেট মৃত্যুঞ্জয়ী??
" না হলে কি তোর মাকে আমি কম লোভে খুন করি?? দেখ, আমার ভুল হয়েছে তোর এই লকেটের লোভে পরে গিয়েছিলাম। আমাকে মাফ করে দে ফাহাদ। "
ফাহাদ কিছু একটা চিন্তা করে উঠে যায়।ফিরে আসে কয়েকটা মৃত ইঁদুর নিয়ে,রাতুলের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে, নিন, খেয়ে নিন।
রাতুল পেটের ক্ষুধা আর চাবুকের ক্ষততে তখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। একটা ইঁদুরের পেটের জায়গা ধরে মাথা কামড় দিয়ে ছিড়ে নেয় রাতুল। কচ কচ করে চোখ মুখ কান সহ চিবুতে থাকে সে। খেঁজুর খাওয়ার পর আমরা যেমন ভেতরের আঁটি ফেলি রাতুল সেভাবে মুখ থেকে ইঁদুরের দাঁত ফেলে আবার খাওয়ায় মন দেয়। ফাহাদ বলে, একদম ১ নম্বর লাশ খাওয়া ইঁদুর। পিরামিডের ইঁদুর। খান, খান।
বলে বের হয়ে যায়। রাতুলের রুম থেকে।
টাকা পয়সা শেষ প্রায়। আজ অনেক দিন পর বারে যেতে হবে। মাঝখানে অনেক দিন আসা হয়নি। নতুন কন্ট্রাক কবে পাওয়া যায় আবার, কে জানে!!
ইশ!! সেই ভদ্রলোকটা থাকলে কত ভাল হত!!
সেদিন সেই চিরপরিচিত এপ্রোণ আর মুখোশের পোশাক পরে বারে গিয়ে বামপাশের কোনায় গিয়ে দাঁড়াতেই একজন দালাল তাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আপনি কি রিভার্স ডাক্তার এর লোক?? উত্তরে ফাহাদ জানায় হ্যাঁ। সাথে সাথে চারদিকে একটা আনন্দের উল্লাস পরে যায়। এতদিন কোথায় ছিলেন এ প্রশ্ন করার সময় কারো কাছে নেই। সবাই শুধু নতুন নতুন কন্ট্রাক্ট নিয়ে হাজির। ফাহাদ বুঝতে পারল তার অনুপস্থিতিতে সেই ভদ্রলোক হয়ত সবার কাছে রিভার্স ডাক্তার এর খোঁজ করেছে আর তার গুনগান গাইয়ে বেরিয়েছে। বাহ ব্যাপারটা জমলো তাহলে বেশ। এসেই মুঠো ভর্তি টাকা পয়সা পাওয়া গেল।
একের পর এক প্রমাণ ছাড়া খুন হতে থাকে শহরে। সবাই ভাবে এক্সিডেন্ট। ফাহাদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়তে থাকে। সুনাম ছড়াতে থাকে। আজকাল আর তাকে বারে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়না। একটা গোপনীয় জায়গায় সুরক্ষিত রুম ভাড়া নিয়েছে সে। তার বাসার মত ই রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম। তার ঠিকানায় লোক এসে খুনের জন্য কন্ট্রাক্ট দিয়ে যায়। সবাই ফাহাদকে চিনে একজন ব্রোকার হিসেবে। খুনগুলো ও যে ফাহাদ করে, সেটা সবার ই অজানা। তবে এ তথ্য জানার জন্য বহু চাপ এসেছে ফাহাদের উপর। ফাহাদ নিজেই জানি না বলে সবাইকে এড়িয়ে গিয়েছে।প্রমাণ ছাড়াই খুনগুলো হয়ে যায় তাই পুলিশি ঝামেলাও হয়না ফাহাদের সাথে।
রাতুলের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়া বাড়াতে চরম বিপর্যয়ের পর্যায়ে চলে গিয়েছে রাতুলের স্বাস্থ্য। দিন সাতেক আগে হাত পায়ের আংগুল গুলো হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে থেঁতলে পরে হ্যাক-স ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেছিল ফাহাদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাতুলের ক্ষতস্থানে স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেও রাতুল আর ভাল হয়নি। পায়ে পচন ধরেছে।সারাদিন চিৎকার চেঁচামেচি করে যন্ত্রনায়। সুবাতার নতুন কাজ বেড়েছে। হাঁটতে অক্ষম রাতুলকে বাথরুমেও তাকে নিয়ে যেতে হয়। একদিন রাতুল সুবাতার কাছে অনুনয় করে, সে তার মায়ের সাথে একবার কথা বলতে চায়। সুবাতা কোন রিসপন্স করে না। কারণ সে জানে ফাহাদ দেখছে মনিটরে তাদেরকে। তবে সুবাতার মায়াও হয়।জীবনের এই শেষ সময়ে মায়ের সাথে কথা বলতে চাওয়াটা স্বাভাবিক। সুবাতা জানত, বাথরুমে ঢোকার পর পর ই মনিটরের শাটার অফ হয়ে যায়। সুতরাং সে সিদ্ধান্ত নেয় রাতুলকে তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য কিছুক্ষনের জন্য মোবাইলটা দিবে।
.
.
.
.
ফাহাদ ঠিক করে আর মাত্র কয়েকটা দিন পর ই সে এই পেশা ছেড়ে দিবে। ৫২ টার মত খুন সে করে ফেলেছে অলরেডী। যে বাসাটায় ফাহাদ ভাড়া থাকতো সে বাসাটা এখন সে নিজেই কিনে নিয়েছে। বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়ার মত টাকা পয়সা তার আছে। সুতরাং এই মারাত্মক বাজে পেশা ছেড়ে দেয়াই ভাল। বসে বসে যখন এ কথা ভেবে চলেছে ফাহাদ, তখনই ঘটনাটা ঘটে।
জীবনের পুরো ইতিহাস ঘেটেও সে বুঝতে পারে না তাকে কে মারার জন্য ভাড়াটে খুনীদের অফার করতে পারে, সেটাও আবার এমন ভাবে, যে কোন প্রমাণ থাকবে না। কারণ টা ই বা কি হতে পারে!!
যে লোকটা এসে টাকা টা দিয়ে গেল তাকে ফলো করলে হয়ত বা কাজ হতে পারত, কিন্তু ফাহাদ এ লোকটাকে চিনে। এটাও একটা দালাল। ফাহাদ মার্ডার হওয়ার আগে কিছুতেই এই দালাল মূল লোকের সাথে যোগাযোগ করবে না। আবার একে কিছু জিজ্ঞেস করলে হিতে বিপরীত হতে পারে, যেহেতু তার ছবি সংগ্রহ করেছে সেহেতু বাসার ঠিকানা জানাটাও অস্বাভাবিক কিছু না।সেদিনের মত ফাহাদ বাসায় চলে আসে। কে হতে পারে এই ব্যাক্তি!! রাতুলকে তো সব সময় মনিটরে দেখে রাখে সে। তাহলে কি সুবাতা? ফাহাদ মারা গেলে সবথেকে বড়
যার লস হবে, সে হলো সুবাতা। তাহলে সুবাতাও না। আরেকজন হতে পারে ফারাহ। ফারাহ এর বাসায় ও মাস্ক পরে গিয়েছিল ফাহাদ। তবে আর কে আছে এমন যে ফাহাদকে মারতে চায়!! যেই চাক ফাহাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ লকেট থাকলে তো আর মরবে না সে। রাতুলের কাছ থেকে জানতে পেরেছে সে তার শরীর যদি একেবারে ধ্বংস না হয়, তবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।দেহ একেবারে বিধ্বস্ত হলেও নতুন দেহে ঢুকে ঘন্টাখানেকের ভিতর লকেট উদ্ধার করলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।এখন
ফাহাদের মাথায় অন্য একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
রাতুলের পচন ভালো না হলে, ক্যান্সার হয়ে কয়েকদিনের ভিতরেই মারা যাবে।
লাল পাথর দিয়ে একটা লকেট বানিয়ে সে নিজ রুমের লকারে রেখে দিয়েছিল অনেক আগেই। ফাহাদ সিদ্ধান্ত নেয় রাতুলকে এত সহজে মুক্তি দেয়া যাবে না।লাল লকেটের মাধ্যমে রাতুলের আত্মা বন্দী করে রাখবে ঐ রুমটার ভিতরে। তারপর নতুন কোন লাশ এনে রাতুলকে নীল লকেট পরিয়ে দিলেই লাশের শরীরে রাতুলের আত্মা প্রবেশ করবে। নীল লকেট গলায় থাকলে যেহেতু মানুষ অনুভূতিহীন থাকে ও অনেক পাওয়ারফুল থাকে, সেহেতু লাল লকেট টাকে এমন একটা দুরত্বে রাখতে হবে, যাতে নীল লকেটের পাওয়ার অনেক কম থাকে, শুধুমাত্র আত্মাটা লাশের শরীরের ভিতরে থাকলেই হবে। কাজ শেষ হলে নীল লকেট খুলে দূরে নিয়ে গেলেই রাতুল আবার বন্দী হয়ে পরবে। এভাবে রাতুলকে কষ্ট দিয়ে আটকে রাখা যাবে।প্লানটা মাথায় আসতেই সাইকোর মত একা একা হাসতে থাকে ফাহাদ। সুবাতাকে জানিয়ে দেয় ফাহাদ, রাতুলকে ভাল কিছু খাওয়াতে, আর একদিন মাত্র জীবিত থাকবে সে। সুবাতার কথাটা শুনে একটু খারাপ লাগে। সেদিন রাতুলকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আসার সময় ফোন টা দিয়ে আসে। বলে শেষ বারের মত সব কথা বলে নাও সবার সাথে।
.
.
.
.
ফাহাদ সেদিন রাতে একটা লম্বা ক্যাচিং স্টিক এর মাধ্যমে লাল লকেট টি তুলে রাতুলের রুমে ঢুকে। রাতুল তাকিয়ে সব দেখলেও কিছু করার ছিল না তার।রাতুলের কপালে লকেট টি ছোঁয়ানোর সাথে সাথে রাতুলের চোখ বুজে যায়। সুবাতা দেখছিলো সব কিছুই। সে ওড়না দিয়ে নিজের মুখ ঢাকে।
লাল লকেট টি লাল আভায় জ্বলজ্বল করছিলো। রাতুলের নিথর দেহ ফ্লোরে পরে আছে। কাজ শেষে লাল লকেট টি রাতুলের রুমের ওয়ালে থাকা লকার এ রেখে দেয় ফাহাদ। বাসার সব লকারে ফাহাদের ফিংগারপ্রিন্ট সেট করা থাকায় সে নিশ্চিন্ত ভাবে সব লকার ইউস করতে পারে।
সকাল সকাল উঠে ফাহাদ মিউজিক-বক্সের ব্যাগের মধ্যে রাতুলের নিথর দেহ নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
সেদিন সন্ধ্যায় একটা ফোন আসে ফাহাদের ফোনে। গ্রিক হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে। তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেউ শাফায়তের মাকে না নিতে আসায় তারা ফাহাদ্রর কাছে শাফায়তের মা কে হস্তান্তর করতে চায়। তবে সে জন্য ফাহাদকে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। ফাহাদ বেজায় খুশি হয়। বৃদ্ধা মহিলাটির তবে গতি হলো আজ।খুব খুশি মনে ফাহাদ সেদিন সন্ধ্যাবেলা চলে যায় গ্রিক হাসপাতালের সামনে। ট্যাক্সি থেকে নেমে গ্রিক হাসপাতালের গেটের সামনে থেকে যখন ফাহাদ হেঁটে আসছিলো,তখন হঠাৎ ই গ্রিক হসপিটালের ১০ তলা ছাদের উপর থেকে ২০ টন ওজনের চারকোণা শেপ এর একটি স্টিলের কন্টেইনার বক্স ভূপাতিত হয়। এবং সেটা ঠিক ফাহাদের মাথা বরাবর এসে মাঠিতে আছড়ে পরে। চারদিকের পরিবেশ যেন হঠাৎ কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেকেই দেখেছিল একজন মানুষের শরীরের উপর বক্সটি ভূপাতিত হয়েছে। সেখানকার পিচ ঢালাই দেয়া রাস্তাটাও দেবে গিয়েছে অনেক খানি। তাহলে নিচে থাকা মানুষটির বর্তমান অবস্থা এখন কেমন হতে পারে তা কল্পনা করে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকেই চিৎকার দিয়ে চোখে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন।
.
.
.
ডা: হানিফের জীবনের সফলতম দিনগুলির ভিতরে আজকের সপ্তাহটি অন্যতম। গর্ভবতী স্ত্রী কে নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন রাজধানী শহর কায়রো তে। মূলত তিনি একজন সার্জন বিশেষজ্ঞ হলেও কায়রো এসেছেন একজন গবেষক হিসেবে। ডা: হানিফ হলেন এমন একজন ব্যাক্তি যিনি স্যালো ভাইরাসের আবিষ্কারক। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বড় বড় ডাক্তার এবং গবেষকদের সামনে তিনি আজ তার সদ্য আবিষ্কৃত স্যালো ভাইরাস প্রদর্শন করবেন। ভাইরাসটি একটি উপকারী হিলিং ক্ষমতা সম্পন্ন ভাইরাস।যেটা দেহের ভিতরে পুশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ১ হাজার গুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
যুগান্তকারী এই ভাইরাসটি আবিষ্কার করে ডা: হানিফ বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে নোবেল-বিজয়ী হওয়ার আশায় বিভোর। সন্তানসম্ভাবনা স্ত্রীর ডেলিভারির সময় হয়ে আসলেও তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে স্ত্রী সহ-ই কায়রো এসে হাজির হন স্যালো ভাইরাস কে সমগ্র পৃথিবীর সামনে প্রদর্শন করাতে।কায়রো পৌঁছেই নিজের স্ত্রীকে তিনি গ্রিক হসপিটালে এডমিট করিয়ে রাখেন। বেবী ডেলিভারির সময় হয়ে এসেছিল সেজন্য ই।
যেদিন সন্ধ্যায় সে পুরো পৃথিবীর সামনে স্যালো ভাইরাস প্রেজেন্ট করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, খুশিতে আত্মহারা সেদিন সন্ধ্যায় তিনি আরো একটি বড় ধরণের সংবাদ পান, সেটা ছিল দু:সংবাদ। তার স্ত্রী একটি মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করেছেন। খবরটা শুনে হানিফের সব খুশি কোথায় যেন উবে গেল।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। খুব দ্রুত একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিলেন গ্রিক হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
হঠাৎ এত বিকট একটা শব্দ শুনে দায়িত্বে থাকা নার্স সহ ডাক্তার রা রাস্তার দিকে ছুটে গেলেন।
ট্যাক্সি এসে জ্যামে আটকে আছে। রাস্তায় এমন একটা মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় চারদিক থেকে পুলিশ অফিসার সংবাদকর্মী নিরাপত্তা কর্মীরা এসে রাস্তা ব্লক করে রেখেছে। প্রচন্ড উৎকন্ঠা নিয়ে ট্যাক্সির ভেতরেই বসে আছেন ডা: হানিফ। চারদিক যখন খুব ব্যাস্ত, কি হয়েছে দেখার জন্য ডাক্তার নার্স রা ভীড় জমাচ্ছে রাস্তার পাশে ঠিক তখন-ই, বেড থেকে নেমে যায় ডা: হানিফের সাদা কাপড় দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে দেয়া সদ্য জন্মগ্রহণ করা মৃত ঘোষিত বাচ্চাটি। নিজের বিরক্তিকর লম্বা নাভী টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় তৃতীয় তলার লিফটের দিকে। সেখানে সবার পায়ের আড়ালে ছোট্ট দেহটা নিয়ে নিচে চলে আসে শিশুটি। গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে ছুটে যায় গেটের দিকে। সে স্পষ্ট দেখেছিল, একটা হাতুড়ি দিয়ে ডায়মন্ড কে আঘাত করলে যেমন সেটা ছিটকে দূরে চলে যায় তেমনি লকেটের পাথরটাও ছিটকে এসে পরেছিল প্রধান গেটে ওঠার সিঁড়ির বাম পাশের একটা কোনায়। দেহ থেকে বের হওয়ার পরে ফাহাদ ভালভাবেই দেখে গিয়েছিল লকেট টি কোথায় রয়েছে।
হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ির বাম পাশ থেকে নীল লকেটটি কুড়িয়ে নেয় সে। হাত দিয়ে মুঠো করে ধরতেই বরাবরের মত নীল আলোতে হঠাৎ আলোকিত হয়ে যায় চারপাশ। সবাই এতটাই ব্যস্ত ছিল যে পায়ের কাছে পরে থাকা একটা পুতুলের মত ছোট্ট শিশুর চোখ নীল হয়ে জ্বলছে তা কেউ দেখতে পায় নি। হাতের মুঠোয় নীল লকেট নিয়েই সবার পায়ের ফাঁকফোকর দিয়ে সে আস্তে আস্তে উঠে চলে যায় যে কেবিন থেকে নেমে এসেছিল সেখানে। তাকে বড় হয়ে উঠতে হবে অনেক হিসেব মেলানো বাকি। উপর থেকে কন্টেইনার ফেলার সাথে সাথে দুজন মানুষ ফাহাদের লকেট খোজার জন্য ছুটে এসেছিল। একজন ফারাহ ও অপরজন সেই মরুভূমির মাঝে একা ফেলে আসা মেয়েটি। ফাহাদ বুঝতে পারে, তার সেদিন ভুল হয়েছিল পুলিশ কন্সটাবেল এর ওয়াকিটকি টা ধ্বংস করে না আসাটা। মেয়েটা তো ফাহাদকে দেখেছিল। কিন্তু ফারাহকে কে জানালো ফাহাদের কথা?
ফারাহ বারবার বলছিলো মেয়েটাকে, "রাতুল বলেছে লকেট থাকলে ও আবার ফেরৎ আসবে। লকেট টি খুঁজে বের করতে হবে।" রাতুল ফারাহকে লকেট সম্পর্কে জানালো কিভাবে!!
ফাহাদ হিসেব কষে নেয় মনে মনে, সুবাতা হয়ত রাতুলকে ফোন ব্যাবহার করতে দিয়েছিল বাথরুমের ভিতরে। তাই ফাহাদ তা নোটিশ করতে পারে নি। রাতুল যেহেতু ফারাহ এর নাম্বার জানত আগে থেকেই সুতরাং ও ফারাহ কে কল দিয়ে ফাহাদের সম্পর্কে সব কিছু বলে দেয়। ফারাহ আর মরুভূমির মেয়েটির আগে থেকেই কানেকশন ছিল। তাই দুজনে মিলে ফাহাদকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাতুল প্রথমে ফাহাদের কথা ফারাহকে জানালেও লকেটের পাওয়ারের কথা বলে নি। তাই ওরা ফাহাদকে প্রথমে ভাড়াটে খুনী দ্বারা সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার ফোন করে লকেটের ক্ষমতা ও ফাহাদকে কিভাবে মেরে ফেলা যায় তা জানিয়ে দিয়েছিল রাতুল। ফারাহ ও পুলিশ অফিসারের স্ত্রী মিলে তাই এই প্লান টি করে ফেলে। পুলিশ অফিসারের স্ত্রী এবং ফারাহ দুজনেই ছিল অনেক টাকার মালিক। সুতরাং গ্রিক হাসপাতালের ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে ফাহাদের সম্পর্কে তথ্য নিতে এবং ট্রাপ বানাতে বেগ পেতে হয়নি ওদের। নিজের মুখের ভিতরে নীল লকেট টা নিয়ে শুয়ে শুয়ে সব হিসেব মিলিয়ে নেয় ফাহাদ। এখন শুধু বড় হওয়ার অপেক্ষা। তবে ফাহাদের জীবন এখন খুব ঝুঁকিতে রয়েছে। এক ঘন্টার মত লকেট কাছে না থাকলেই সে চিরতরে বিদায় নিবে পৃথিবী থেকে।
যানজট কেটে গেলে ডা: হানিফ এসে পৌঁছেন নিজের স্ত্রীর কেবিনে। সেখানে তখন শুয়ে শুয়ে শিশুটি হাত পা নাড়াচ্ছিলো।দুজন নার্স এ দৃশ্য দেখে অবাক না হয়ে পারলেন না। ভালোভাবে এদিক সেদিক করে দেখলো তারা। না। সবকিছু ঠিক আছে। তবে এর নাভী কোথায়!!হাত পা এবং শরীরে ধুলাবালি। সবকিছু কেমন ঝামেলাপূর্ণ লাগছে তাদের কাছে। ডা: হানিফ তার ছেলের নড়াচড়া দেখে খুশিতে আর এত কিছু খেয়াল করেন নি।নার্স রা ও বেশি ঘাটায় নি ব্যাপারটা নিয়ে। তার স্ত্রীর জ্ঞান তখনো ফেরে নি।
ডা: হানিফ সিদ্ধান্ত নেয় মাত্র ২ দিনের মাথায় ই তিনি দেশে ফিরে যাবেন এবং পুনরায় গবেষনার কাজে ও বাচ্চার দেখাশোনার কাজে মন দিবেন । ফাহাদ চুপচাপ ডা: হানিফের কোলে শুয়ে আদর খেতে থাকে। তার শুধু খেয়াল রাখতে হবে ওটা যেন পেটের ভিতরে চলে না যায়।
to be continued.....

Post a Comment

أحدث أقدم