গল্পঃ এ উইজার্ড।লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।পর্ব - ১১


গল্পঃ এ উইজার্ড । পর্ব - ১১
লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।

আলিসা নিজেকে তৈরি করতে লাগল লকেট উদ্ধারের জন্য। ঐ দিকে ফাহাদ আলিসাকে টেক্কা দেয়ার জন্য নিজের ভিতর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। কিন্তু সে ভালোভাবেই জানে নীল লকেট ছাড়া তার ভিতরে বলতে গেলে কোন প্রকার শক্তি ই থাকেনা। আলিসা কোনভাবে যদি ফাহাদের শরীর থেকে লকেট আলাদা করে দেয়, তবে আলিসার হাতে ফাহাদের মৃত্যু হওয়া অবধারিত। আবার আলিসা যদি সত্যি সত্যি ডাইনী হয় তবে ওর কাছে অনেক জাদুবিদ্যা ও থাকবে যা দ্বারা ও ফাহাদকে আটকে দিতে পারে। সুতরাং ফাহাদ সিদ্ধান্ত নেয় যে,সে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে।
মাশাড়ে যেহেতু ইটালীতে খুবই আলোচিত একজন অভিশপ্ত একজন ডায়নী ছিলো, ফাহাদ ঠিক করে সে মাশাড়ে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। অনলাইন এ সে মাশাড়ের তথ্য খুঁজতে থাকে। অনেক তথ্য পায়। কিন্তু সব তিলকে তাল বানানো তথ্য। মাশাড়ে কে নিয়ে প্রায় সব তথ্য ই গুজব ও কাল্পনিক গল্পকাহিনী লিখে রাখা হয়েছে।
তবে সব গল্পগুলোর মাঝে কিছু তথ্য ছিলো খুব কমন। যেমন মাশাড়ে গায়ে পরে কারো ক্ষতি করত না প্রথমে, সে ছিলো খুব পরিশ্রমী একজন নারী।কৃষিকাজ করে সে জীবন নির্বাহ করত। তবে আশেপাশের লোকজন তার খেত থেকে ফসল চুরি করত প্রায়শই। মাশাড়ে একদিন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিশাপ দিলো,
যে আমার এই কষ্টের ফসল চুরি করেছে সে যেন আগুনে ডুবে মরে।
মাশাড়ের কথা সত্যি হল;পরদিন ই গ্রামের ৪ জন যুবক ছেলে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা গেল।
এ ঘটনাকে সবাই কাকতালীয় ঘটনা মনে করলেও আসলে তা মোটেই কাকতালীয় ছিল না, মাশাড়ে একদিন সকালে তার ক্ষেতে কাজ করতে গেলে নতুন চকচকে একটা বই পরে থাকতে দেখে, বইটা বাসায় নিয়ে এসে পড়ার জন্য কিছু পাতা উল্টাতেই সে আদি ইটালীয় ভাষায় অদ্ভুত সব জিনিস লেখা দেখতে পায়, যা অনেকটা কবিতার ছন্দে তন্ত্র মন্ত্রের মত ছিলো। সে বইটার অনেক পাতা ই উৎসাহ বশত পরে ফেলে। কিন্তু কি পড়েছে তা আর বুঝতে পারে না। কিছুক্ষন পর একটু বিরক্তবোধ হওয়া শুরু করলে সম্পূর্ন শেষ না করেই সে বইটা নিজের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখে। খুবই দরিদ্র হওয়ার কারণে তার ক্ষেতে কাজ করতে হত প্রচুর। কাজের চাপে আস্তে আস্তে সে বইটার কথা ভুলে যায়।
এর বেশ কিছুদিন পরেই তার অভিশাপে আগুনে পুরে মারা যায়, তার ক্ষেত থেকে টমেটো চুরি করে নেয়া ৪ জন যুবক।
মাশাড়ে নিজেও এ ঘটনাকে কাকতালীয় ভাবে। কারন কারা টমেটো চুরী করেছিলো তাই সে জানত না। তবে তার ক্ষমতা সম্পর্কে সে জানতে পারে আরো কিছুদিন পর। সে নিজের কিশোর বয়সী ছেলেকে দুষ্টুমির জন্য অভিশাপ দিয়ে বসে।
" তুই যদি আমাকে না বলে অন্য ছেলেদের সাথে আবার খেলতে যাস, তবে যেন তোকে সাপে কামড়ায়।"
মাশাড়ের অভিশাপ টা সেদিন সন্ধ্যায় ই সত্য হয়।সাপেড় কামড়ে তার ছেলের মৃত্যু ঘটে। বিষক্রিয়ার ফলে মুখ থেকে সাদা সাদা ফ্যানা বের হয়ে রাস্তার পাশেই পরেছিল এরপর খুবই ভেংগে পরে সে। তার নিজের উপর আফসোস হতে থাকে।তবে আস্তে আস্তে সে নিজেকে সামলিয়ে নেয়।
এক পর্যায়ে সে তার এই অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে। তার সাথে যারা অন্যায় করেছিল তাদের অভিশাপ দিয়ে মেরে ফেলতে থাকে অথবা পংগু করে ফেলতে থাকে
তখন থেকেই আসোলে সবাই মাশাড়ে কে চিনতে শুরু করে এবং ভয় পেতে শুরু করে। খারাপ খবর খুব দ্রুত ছড়ায়। দেশে বিদেশে তার এই বদমান ছড়িয়ে যায় শেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় মাশাড়ে কে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে।
তাকে মেরে ফেলার প্লান করা হচ্ছে তা জানত না মাশাড়ে, খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে রাতে ঘুম দিয়েছিলো শান্তিতে। এমন সময় তার বাড়ির চারদিকে ঘিরে ফেলে কলোব্রারো গ্রামবাসী। চারদিকে কেরোসিন / পেট্রোল ছিটিয়ে কাঠের ঘরটায় আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। মাশাড়ে যখন টের পায় তখন বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। তারপর সব উজ্জ্বল। কিছুক্ষন পর অন্ধকার। গ্রামবাসীরা এসে মাশাড়ের কংকাল উদ্ধার করে পরদিন সকালে।
ফাহাদ অনলাইনের ট্যাব ক্লজ করে দেয়।
মাশাড়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু আলিসাকে বারবার সেই মাশাড়ে ই মনে হচ্ছে কেন ফাহাদের??
লাল লকেট ই বা আলিসা কেন খুঁজছে!! আলিসা যদি মাশাড়ে হয় তবে আলিসার মোকাবেলা কিভাবে করবে ফাহাদ!! ফাহাদের কাছে রয়েছে শুধু নীল লকেট, আর সামান্য কিছু টেখনোলজী। ওদিকে আলিসার কাছে রয়েছে ডাকিনী বিদ্যা। চিন্তায় পরে যায় সে।
ফাহাদ কোন একটা সমস্যার মধ্যে আছে, বুঝতে পারে সুবাতা। এদিকে সুবাতার গলা থেকেও হারনেস খুলে দেয়া হয়েছে, সুবাতার কাছে যেহেতু সুযোগ আছে কিছু একটা করার, সুবাতা মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক দিন ধরে তার মনে যে প্রশ্নটা জেগে আছে তার একটা সমাধান খুঁজবে সে।
.
.
.
.
.
প্রায় ৬৯ বছর আগের কথা, ডায়নী হিসেবে কুৎসা ছড়িয়ে পরায় ভারাক্রান্ত মনে রাতের খাবার শেষ করে বিছানার দিকে যায় মাশাড়ে। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই খুব গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে। হঠাৎ প্রচুর ধোঁয়া এবং পোড়া গন্ধে তার গভীর ঘুম টা ভেংগে যায়। তাকিয়েই দেখতে পায় তার চারদিকে আগুন জ্বলছে।কি হয়েছে বুঝতে পেরে
জীবনের শেষ নি:শ্বাস নেয়ার অপেক্ষা করছিলো মাশাড়ে। কিন্তু হঠাৎ ই বিছানার নিচ থেকে বের হয়ে আসে সেই বই টা। আকারেও বেশ কয়েকগুন বড় হয়ে যায়। আস্তে আস্তে বইটির মাঝখান থেকে খুলে যায়। সে বই এর মাঝখানের পৃষ্ঠা নং দেখতে পায়।১৩৩,১৩৪। এরপরই মাশাড়ে অনুভব করে আস্তে আস্তে শূন্যে উঠে সে যেন বইয়ের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে । নিজের বিছানার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় সে। মাশাড়ের মত ই দেখতে একজন বিছানায় পরে আছে নিস্তেজ হয়ে।
এরপর আর কিছু মনে নেই তার। সে শুধু অনুভব করতে পারে একটা কালো কোন জায়গায় শূন্যের উপর ভেসে আছে তার দেহ। চারদিকের শব্দ গুলো তার কানে ভেসে আসছে। তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পেরে সবাই আনন্দ উল্লাস করছে। কেউ কেউ তার পোড়া লাশ নিতে এসে বলছে এই লাশটাকে কোন রকম সৎকার করা যাবে না। নদীর জলে ভাসিয়ে দিতে হবে। চারদিকের মানুষদের কথাবার্তা শুনতে পেলেও কিছু দেখতে বা বলতে পারত না মাশাড়ে।এভাবেই একপ্রকার বন্দী অবস্থায় পরে থাকে মাশাড়ে।
.
.
.
ইটালীর ভ্যানিস শহরের একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে মনোবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যায়নরত কিছু ছেলে মেয়েরা মিলে ঠিক করে তারা এবার সেমিস্টার ব্রেকে কলোব্রারো শহরের সেই কুখ্যাত মাশাড়ের বাড়িটি পরিদর্শনের জন্য যাবে। যেহেতু তারা মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করত, আধ্যাত্মিক জিনিসের প্রতি তাদের সবার ছিল অন্যরকম একটা টান।আর মাশাড়ের বাড়িটিও ছিল পরিত্যক্ত। এই বাড়ির আশেপাশে আগেও কেউ থাকত না। এখনো কেউ থাকে না। এই রহস্যময় বাড়িটির ভেতরে ঢুকে ঘুরেফিরে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি ওরা।
ওরা ছিল চারজন ছেলে এবং দুজন মেয়ে।
মেয়ে দুজনের মধ্যে সবথেকে মেধাবী,সুন্দরী এবং সবার চেয়ে ভালো রেসাল্ট করা আলিসাও ছিলো।
নম্র ভদ্র মেয়েটির অলৌকিল জিনিসে বিশ্বাস ছিলো না মোটেই। ছেলেগুলো তো আরো বে পরোয়া। এ পৃথিবীতে আবার ডাকিনি থাকতে পারে নাকি!!
এসব সত্য মিথ্যার তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুরো দুই দিনের পথ পাড়ি দিয়ে ওরা এসে হাজির হয় কলোব্রারো গ্রামে।গ্রামটা এখন একদম ই খালি।প্রায় এক কিলোমিটার দূরে হাইওয়ের রাস্তা চলে গিয়েছে অন্য শহরের দিকে। মাঝামাঝি অবস্থিত এ এলাকাটা ঝোপঝাড়ে ঢেকে গিয়ে এখন পরিত্যক্ত প্রায়। হাইওয়ে থেকে গাড়ি কাঁচা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে এক কিমি পথ অতিক্রম করে ওরা চলে আসে কলোব্রারো গ্রামে।
গ্রামের এক কোণ বরাবর মাশাড়ের ঘর। পুড়ে যাওয়া ঘরটার কংকাল কাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক।
ওরা সবাই আস্তে আস্তে সেদিকে এগিয়ে যায়।
ঘরের ভিতর প্রবেশ করার আগে ওরা চিন্তা করে চারদিকটা ঘুরে ফিরে দেখবে। আলিসার সাথে অন্য যে মেয়েটা এসেছিল, ও ঐ চারজন ছেলেদের মাঝে একজনের সাথে তার বেশ ক'দিন ধরেই ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। তারা দুজন যেন এই নিবিড় প্রকৃতির মাঝে এসে হঠাৎ করে বেশি রোমান্টিকতায় ডুবে যায়। টিম থেকে আলাদা হয়ে তারা অন্যদিকে যায়। বাকি তিনজন ছেলে ও আলিসা মাশাড়ের ঘরে প্রবেশ করে এটা ওটা খতিয়ে খতিয়ে দেখতে থাকে। কাসার থালাবাসন, উপরে টিনের চালা, চারপাশে টিনের বেড়া সব কিছুতে কালো কালি লেগে আছে। বিছানার কাঠটা সম্পূর্ন পুড়ে নি। আলিসা সেদিকে গিয়ে কাঠের একটা অংশ পা দিয়ে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে দৃষ্টিগোচর হয় একটা মলাট পুড়ে যাওয়া বই। সবার অগোচরে আলিসা সেটা ব্যাগে পুড়ে নেয়।
বাকি তিনজন তখন অন্য কি যেন নিয়ে কথা বলছিলো।
ওদিক থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সাথে দুজন মানুষের আদিমতার চিৎকার ও ভেসে আসছিল। মাশাড়ের পোড়া ঘরে থাকা চারজন ই বুঝতে পারছিলো বাকি দুজন বাইরে লোকচক্ষুর আড়ালে কি করছে। ব্যাপারটা ছেলে তিনজনের মাঝে খুব বড় প্রভাব ফেলে। তাদের আচারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। আশেপাশে কেউ নেই। সুন্দরী আলিসাকে ভোগ করার এই একটামাত্র সুযোগ, যে সুযোগ প্রতিদিন আসে না।
তিনজন ই আলিসার দিকে এগিয়ে যায়। আলিসা ওদের মতলব প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর ওদের চাহনী ও অস্বাভাবিকতা দেখে ঠিকই ধরে ফেলে। ও বাকি তিনজনকে স্কিপ করে বের হতে যাবে এমন সময় খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেলে একজন। আলিসা প্রাণপণ চেস্টা করেও কোন লাভ হয়না, আলিসার চিৎকার, করুণা, প্রাণ ও সম্ভ্রম ভিক্ষা চাওয়া ওদের মনে উদারতার সৃষ্টি করেনা। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি তে আলিসার ব্যাগ থেকে বইটি ছিটকে পাশে গিয়ে পরে। উপর থেকে নিচে পরার কারণে বইটি খুলে যায়।
আলিসার গায়ে এক বিন্দু পরিমান সুঁতাও রাখে না বাকি তিনজন। কুকুরের মত পর্যায় ক্রমে একজনের পর একজন পালাক্রমে আলিসাকে ধর্ষণ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে আলিসা ওদের বলে আমি একবার এখান থেকে বের হই সব গুলোকে পুলিশে দিব।
চট করে কথাটা কানে লাগে সবার।ওরা ভাবে বিপদ এড়াতে উপায় একটাই আছে। খুন। খুন করে ফেলে রাখলে এই পোড়াবাড়িতে কেউ আসবে না ওকে খুঁজতে।
আলিসার গলা টিপে ধরে একজন।
কয়েকমিনিট পরেই আলিসার দেহটার নাম হয়ে যায় লাশ।
বাকি পাঁচজন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই নিজেদের ভিতর প্লান করে কেটে পরে ওখান থেকে। আলিসার লাশটা পড়ে থাকে ঐ পোড়াবাড়িতে-ই।
বাতাসে আস্তে আস্তে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকে। ২৪-২৫ পাতায় বইটা খুলে পরে ছিলো। আস্তে আস্তে পাতা উল্টে উলটে সেটা ১৩৩ এ পৌঁছায়। সাথে সাথে মাশাড়ে অনুভব করে সে আস্তে আস্তে অন্ধকার জগত থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
বই থেকে অনেকগুলো ধোঁয়া বের হয়ে আলিসার নাক মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে আলিসার সম্পূর্ন নগ্ন এবং ধর্ষিত দেহের ভিতরে।
সাথে সাথে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বইয়ের সে সকল পাতা, যা প্রথমদিন মাশাড়ে উৎসাহ বশত পড়ে ফেলেছিলো।
.
প্রায় ৬৭ বছর পরে আলিসার দেহ থেকে প্রথম চোখ খোলে মাশাড়ে। নিজেকে একটা পোড়া ঘরের ভিতর আবিষ্কার করে সে। এটা তার নিজেরই ঘর। কত বছর পার হয়ে গিয়েছে তা অনুমান করতে ব্যার্থ হয় সে। চাঁদের আলোয় চারপাশের জিনিসগুলো একটু একটু ঠাওর করা যাচ্ছে।
সাদা রঙ এর একটা ব্যাগের মত জিনিস তার দৃষ্টি কারে। আলিসা মেয়েটির জন্য তার কষ্ট হচ্ছে খুব। কিছু না দেখতে পেলেও চিৎকার চেঁচামিচি শুনে সে সবকিছুই বুঝতে পেরেছে, আলিসার সাথে কি হয়েছিলো।সাদা ব্যাগটা খুলে দেখার উদ্দেশ্যে,শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতেই মাশাড়ে অনুভব করে, তার
সারা শরীরে ব্যাথা করছে।বিষেশ করে নিম্নাঙ্গে। মুখ থেকে গোঙ্গানি বের হয়ে আসে তার।মুখ থেকে আহ... করে শব্দ টা বের হওয়ার সাথে সাথেই অবাক ও হয় সে। ৪৫ বছর বয়সী মাশাড়ের কন্ঠ কি এতটা সুন্দর ছিলো! কল্পনাতীত। ২২ বছরের তরুনীর শরীরটার সব কিছুই এখন তার অধীনে।
দেহটার অবস্থা বেশ একটা ভাল না। খামচি ও কামড়ের আঘাতে জর্জরিত পুরো শরীর। পানির তেষ্টা পেয়েছে খুব তার। কিন্তু পানি কোথায় পাবে?মাশাড়ে তার নতুন দেহটাকে টানতে টানতে নিয়ে যায় ব্যাগটার কাছে। চেইন খুলতেই প্রথমেই সে পানির বোতল পেয়ে যায়। অর্ধেক খালি পানির বোতল। ঢকঢক করে বেশ অনেকখানি পানি খেয়ে ফেলে সে।আলিসা যেহেতু ট্রাভেলের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল,
ব্যাগে, খাবার ও পানিসহ টুকটাক অনেক জিনিসপাতি সংগে রেখেছিল সে। মাশাড়ে সেখান থেকে পানি এবং খাবার খেয়ে ফ্লোরেই গা এলিয়ে দেয়। মশার জ্বালাতনে তার বিরক্ত লাগে না। দেহটাই যে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে!!
.
.
.
অনেকবছর পর মাশাড়ের চোখে এসে ভোরের আলো লাগে। তার ঘুম ভাংগে। নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় সে। গায়ে এক টুকরো সুতো ও নেই তার।
ফর্সা সুন্দর নমনীয় দেহে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। মনে মনে ভাবে সে, এত সুন্দর দেহ কিভাবে একজন মানুষের হতে পারে!! স্বয়ং দেবীদের মত দেহের মালিক হতে পেরে মাশাড়ার নিজের খুব খুশি লাগছিলো। আবার মেয়েটার জন্য দু:খ ও লাগছিল। আচ্ছা মেয়েটা কি দেখতে পাচ্ছে!! মাশাড়ে ওর সুন্দর দেহের ভিতরে ই আছে!! এই ঘর থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই একটা জলাধারের দেখা মেলে। মাশাড়ে ঠিক করে সেখানে গিয়ে নিজের গা ধুয়ে নিবে। কিছু জংলী ঔষধী গাছ চেনা ছিলো তার। ওগুলো ই হবে এখন ব্যাথা উপশম করার একমাত্র পাথেয়। হঠাৎ তার চোখ পরে সেই বইটার উপরে।যে বইটা তাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলো। বইটাকে হাতে নেয় সে। যে যে পৃষ্ঠাগুলো পড়া হয়েছিল সে পৃষ্ঠাগুলো সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।সে মনে মনে একটা যুক্তি মিলিয়ে নেয়। বইটির কিছু পৃষ্ঠা পড়ার পর সে একটা ক্ষমতার অধিকারী হয়। ক্ষমতাটা হল "এমন অভিশাপ দেয়া যেটার মানুষের জীবনে সত্যি ই প্রতিফলন ঘটে "। এই ক্ষমতা পাওয়ার ফলে সে সকলের ক্ষোভে পরে এবং তার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। যেহেতু এই ঘটনার উৎস বই এবং দায়ী বইয়ের ঐ নির্দিষ্ট কিছু পাতা, সেহেতু মাশাড়েকে বইটা প্রাণে বাঁচিয়ে দেয়, বিনিময়ে বইয়ের পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
সে তখন মাঝখান থেকে বইটা পড়লেও এবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করে। বইয়ের কোন শব্দ ই সে বুঝতে পারে না। কিন্তু শব্দ বানান করে পড়ে যায়। এভাবে কিছুক্ষন পড়ার পর তার মনে হতে থাকে সে বইয়ের লেখা গুলো আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করেছে। বইয়ের শব্দের অর্থগুল তার পরিচিত।মাশাড়ে পুরো বইটির দুই তৃতীয়াংশ পড়ে শেষ করে ফেলে এবং বুঝতে পারে তার ধারণাটাই সঠিক। তার অভিসম্পাত দেয়ার ক্ষমতাটা আর কাজ করবে না। দুই তৃতীয়াংশ পড়ে বাকিগুলো বাদ রাখার কারণ, মাশাড়ে চায়, সে আবার কোন ভাবে মারা গেলে যদি পৃথিবীতে বইয়ের মাধ্যমে ফেরৎ আসে, তখন পড়ার জন্য।
হঠাৎ ই মাশাড়ে হয়ে যায় অনেক ক্ষমতার অধিকারী। ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে ঘাটতে থাকে সে।আলিসার একটা নোটবুক ও পায় সেখানে। মাশাড়া জানতে পারে তার বের হতে প্রায় ৬৭ বছর সময় লেগেছে।
এতবছরে আশেপাশে থাকা ঘরগুলো একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তার পোড়া ঘরটা কিভাবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেটা একটা অবাক করা বিষয়।
আলিসার ব্যাগ থেকে একটা কালো টিশার্ট পায় মাশাড়ে। আলিসার
জিন্স এর প্যান্ট টা ওরা কিছু জায়গা দিয়ে ছিড়ে ফেললেও পরার মত অবস্থায় আছে। হাতে প্যান্ট এবং টি শার্ট নিয়ে সে রওনা দেয় জলাধারের দিকে।
গিয়ে দেখে জলাধারে প্রচুর কচুরীপানা। পানিও অপরিষ্কার।
এটা মাশাড়ের জন্য কোন সমস্যা না। হাত বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলাতেই সব কচুড়িপানা গুলো কালো এবং বেগুনী রঙ দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। এরপর মাশাড়ে হাত দিয়ে যেদিকে ইশারা করে সেদিকে উড়ে গিয়ে পরে । ময়লা পানি পরিষ্কার করা তো আরো সোজা ব্যাপার ছিলো।
বইটা পড়ার পর সে আরো একটা ব্যাপার জানতে পারে। ফারাও খুপুর পিরামিডের নিচে একটা গ্রান্ড গ্যালারী রয়েছে। যার কোন একটা জায়গায় সিংহাসনে খোদাই করে বসানো আছে ছোট্ট একটা লাল পাথর। বইয়ের পিছনের অংশে সেই লাল পাথরের আদলে পঞ্চভুজ আকৃতির একটা ছোট্ট গর্ত রয়েছে। ওখানে পাথরটা রাখতে পারলেই ফারাও খুপুর পিরামিডে আটককৃত হাজার হাজার আত্মা বইয়ের মালিকের অনুগামী চাকরে পরিনত হবে। এত ক্ষমতা পাওয়ার লোভ যেন আর সহ্য হয় না মাশাড়ের। সে ঠিক করে মিশর আসবে। তবে তার আগে আলিসাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে। ব্যাগ থেকে আলিসার পরিচয়পত্র বের করে মাশাড়ে।
তার নাম আজ থেকে মাশাড়ে না। আলিসা। একজন সুন্দরী দেবী ; " আলিসা"
.
.
প্রায় দুইদিন পর আলিসাকে ক্লাসে দেখে চমকে যায় বাকি পাঁচজন। তার পরদিন নিউজপেপারে বিচ্ছিন্নভাবে খুনে একই ভার্সিটির একই ক্লাসের ৫ জনের খুন হওয়ার খবর আসে। লাশের অবস্থা এত বিভৎস ছিল, নিউজপেপারেও তার ছবি ব্লার করে দিতে হয়েছে। মাশাড়ে ওরফে আলিসা তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেখানে সবার সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেয় এবং পড়াশোনা কম্পলিট করে। তারপর দু বছরের মাথায় মিশরে চলে আসে। এতদিনে সে তার পাওয়ারগুলো যথাযথ ভাবে ব্যাবহার করার প্রাক্টিস করে নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলেছে।তবে লাল পাথর উদ্ধারের জন্য তার একজন শক্তিশালী মানুষের দরকার হবে। গ্রান্ড গ্যালারীতে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করার মত শক্তি আলিসার নেই।
.
.
.
.
এতদিন পরে অবশেষে আজ আলিসার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। ভোর চারটার সময় গীজার চারদিক টা নিস্তব্ধ। এমন একটা পরিবেশে
আলিসা ও ফাহাদ দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে ফারাও খুফুর পিরামিডের পাদদেশে।
আলিসা ফাহাদকে উদ্দেশ্য করে বলল বাইক থেকে নেমে দূরে এসে বসতে। ফাহাদ ও তাই করল। আলিসা মনে মনে কি যেন একটা বলে হাতে কিছু বালি নিয়ে ছিটিয়ে দেয় বাইকের উপর, বাইকটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য
হয়ে যায়। ফাহাদ-ও আলিসার পাওয়ারের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে ফাহাদের সাহস কমে যাওয়ার চেয়ে বরং আসে আস্তে বেড়েই চলেছিলো। তার নিজের ভিতর আলিসার প্রতি অনেকটা আক্রমনাত্মক ভাব চলে আসে।
এরপর আলিসা পিরামিডের একদম কাছে চলে যায়। ফাহাদ পিছনে পিছনে তাকে অনুসরণ করে। আলিসা চোখ বন্ধ করে দু হাত উপরের দিকে উঠিয়ে একটা পাথরের ব্লকের সোজা করে ধরে। মুহূর্তের ভিতর ৬০ টন ওজনের পাথরটি আস্তে আস্তে বেগুনী ও কালো রঙ এর আলোতে আবৃত হয়ে যায়। আলিসা হাত দিয়ে পাথরটাকে একটু ঘুরাতে চেস্টা করে। কিন্তু সে ব্যার্থ হয়। আকাশ ভেংগে পরে যেন তার মাথায়। এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। সর্ব শক্তি দিয়ে সে চেস্টা করেছে। আগে বহুবার ৬০ টনের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বেশি ওজন সরিয়ে সে অনেক বার অনুশীলন করেছে। তবে এখন হঠাৎ কি হলো তার!! হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটা মটর বাইকের আওয়াজ ভেসে আসে। ফাহাদের সজাগ কান তা টের পেয়ে যায়। শব্দটা শূন্য বালু প্রান্তরের কোথা থেকে আসছে তা অনুসন্ধান করার জন্য ফাহাদ পিরামিড থেকে গীজা শহরের পথের দিকে একটু আগায়। আস্তে আস্তে আলিসার কাছ থেকে ফাহাদ অনেক দূরে সরে যায়। আলিসা আবারো একবার চেস্টা করে পাথরের ব্লকটাকে অল্প একটু ফাঁকা করার, যাতে তাদের দুজনের ঢোকার মত একটু জায়গা করতে পারে।
এবার খুব সহজেই আলিসা সফল হয়। পাথরের ব্লকটি ঘুরে যায় ও ভিতরে ঢোকার মত জায়গা হয়ে যায়।
এদিকে ফাহাদ সামনে আগাতেই একটা স্কুটি খুঁজে পায়। ইঞ্জিনে হাত দিয়ে দেখে, ইঞ্জিনটা খুব গরম হয়ে আছে। কেউ মাত্রই স্কুটিটা নিয়ে এদিকে এসেছে। কিন্তু কোথায় যেন গা ঢাকা দিয়েছে। তা নিয়ে ফাহদের মোটেই মাথাব্যথা নেই। আলিসার উপর ফাহাদের একটু কনফিডেন্স আছে। কোন প্রকার সমস্যা করতে চাইলে কেউ আলিসা তা সামলাতে পারবে। কিন্তু বিষয়টা যে ফাহাদকে একদম ই ভাবাচ্ছে না, তেমনটি নয়।
ফাহাদ ফিরে আসে আলিসার কাছে।এসে দেখে কাজ হয়ে গিয়েছে। আলিসার উপর থেকে প্রেসার কমাতে ই ফাহাদ স্কুটি টার কথা আলিসার কাছে গোপন রাখে।
পাথরের ব্লকের গা ঘেঁসে ফাহাদ ও আলিসা ভিতরের দিকে অগ্রসর হয়। একদম ছুপছুপে অন্ধকার ভিতরে। ক্রমশ সামনে এগোতে এগোতেই মাংস পচা গন্ধে তাদের পেটের নাড়ীভুঁড়ি মোচড় দিয়ে ঊঠে। আলিসা অভয় দেয়, ভিতরে প্রচুর ইঁদুর রয়েছে। ওদের খেতে এখানে অনেক সাপ আসে। সাপ বা ইঁদুরের মৃতদেহ থেকেই এরকম গন্ধ বের হচ্ছে হয়ত।
ফাহদ জিজ্ঞেস করে আলিসাকে, ভিতরে তো বোধহয় অনেক মমি আর কংকাল ও আছে। তাইনা??
আলিসা জবাব দেয় তা তো থাকবেই।
ফাহাদ ও আলিসা দুজনেই হাতের টর্চ জ্বালিয়ে নেয়।
ব্লকটা পার করে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে তারা। ফাহাদ নির্দেশ দেয়, ব্লকটা ঘুরিয়ে আগের মত করে দিতে।
আলিসা উত্তর দেয়, ব্লক ঘুরানো এখন সম্ভব নয়। আমি দু বার শক্তি ব্যাবহার করে ফেলেছি। এখন আবার এক ঘন্টা পর আমি ব্লক ঠিক করতে পারব।
ফাহাদ: আগে বলো নি কেন এমন ঘটবে? আমাদের যে কোন বিপদ হতে পারে।
.
আলিসা: আমি ভেবেছিলাম দুবারেই কাজ হবে একবারে খুলে ঢুকব। তারপর বন্ধ করে দিব।
.
ফাহাদ বিরক্তর স্বরে বলে, ভালো।
আলিসা অবাক না হয়ে পারে না।
ফাহাদকে প্রশ্ন করে, এই যে আমি বাইক অদৃশ্য করলাম,
পাথরের ব্লক ঘুরালাম, তুমি অবাক হওনি??
.
ফাহাদ উত্তর দেয়: এই যে এখানের ইঁদুর গুলো দেখছো, আমি নিজেকে অন্যান্যদের এই ইঁদুরের চেয়ে বেশি কিছু ভাবি না।
উত্তর শুনে আরো বেশি অবাক হয় আলিসা!! এই কি সেই ছেলেটাই!! যে ভয় পাবার কারণে চিকিৎসা নিতে এসেছিলো আলিসার কাছে!!
হঠাৎ লাইটের আলো জ্বলায় ইঁদুরের কিচকিচ শব্দ বেড়ে যায়। যে যার মত নিজেকে আড়াল করার জন্য ছুটাছুটি করছে। সব মিলিয়ে যেন অদ্ভুত এক পরিবেশ.....তবে ভেতরে আরো কত কি নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে কে জানে!!


.
.
পিরামিডের ভিতরে একটু খোলা জায়গা সামনের দিকে চলে গিয়েছে।চলার পথের
দেয়ালের গায়ে অনেক প্রকারের চিত্র আঁকা। মাঝে মাঝে মমির বাক্স সাজানো। দু একটার হাত বের হয়ে আছে কফিন থেকে।মমি বানাতে সময় লাগত ৭০ দিনের মত।
মমি বানানো হয় প্রধাণত এক প্রকার দুর্লভ মাটি ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাবহার করে যা মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করে। সুতরাং মমিতে রাখা দেহের পচন ধরে না। কিন্তু বের হয়ে থাকা হাতগুলোতে কোন প্রকার মাংস বা চামড়া অবশিষ্ট নেই । ইঁদুরের খাবার হয়ে গিয়েছে এতদিনে।আশে পাশে অযত্নে পরে থাকা মমি গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় এগুলো কৃতদাস দের মমি ছিলো হয়ত। ফ্লোরে প্রচুর ময়লা ধুলোবালি। আদিম যুগের কিছু সাধারণ অস্ত্র আশে পাশে সাজানো আছে। আরো আছে লোহার ভারী ভারী বর্ম। ঠিক কোন পথে এগোতে হবে তা জানা নেই তবে সামনে এগিয়ে যায় তারা।
নির্ভেজাল লাইমস্টোন কেটে প্রায় ৬৩টি সমাধি তৈরি করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগই অনেক দীর্ঘ এবং ক্রমে নিম্নগামী অসংখ্য ছোটবড় করিডরের জটিল বিন্যাসের মাধ্যমে অবশেষে গিয়ে ফারাওদের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। এ সমাধিগুলোতে নানা রকমের প্রতীক, দেয়ালে খোদাইকৃত ছবি, অন্যজগতে ভ্রমণের তথ্য এবং নতুন জীবনের প্রয়োজনীয় সব উপাদান দেওয়া থাকত। ধন-সম্পত্তি তো থাকতই। এর রুমগুলোর একদম কেন্দ্রে থাকত স্বর্ণমণ্ডিত ফারাও রাজাদের শবাধার।রুমগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে সিল করে দেওয়া হতো এবং এ সমাধির মূল্যবান দ্রব্য রক্ষা করার জন্য তখনকার মিসরের শ্রেষ্ঠ আর্কিটেকরা চোরদের ধোঁকা দেওয়ার উপযোগী ডিজাইন করার দায়িত্ব পেত। মাঝে মাঝে প্যাসেইজ রাস্তাগুলো বন্ধ করার জন্য বিশাল এবং মজবুত গ্রানাইটের প্লাগ ব্যবহার করা হতো। চোরদের দমন করার জন্য নকল দরজা, গোপন রুম ইত্যাদি অসংখ্য ব্যবস্থার তো থাকত ই,আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাধির প্রবেশ পথে কোনো অভিশাপ দিয়ে দেওয়া হতো।আলিসার জন্য যেটা ভয়াবহ ছিলো সেটা হলো ফাঁদ, যদিও আগে মানুষ এখানে এসেছে কিন্তু চতুর্থ চেম্বার আবিষ্কার করতে পারে নি। সুতরাং সেখানে প্রতিটা পদক্ষেপ ই বিপদজনক হবে।আলিসা সেই চতুর্থ চেম্বার খুঁজে বের করার জন্য ই একজন শক্তিশালী মানুষ খুঁজছিলো। ফাহাদের এগারোফোবিয়া থাকলেও আলিসা তার বইয়ের ক্ষমতার মাধ্যমে আঁচ করতে পেরেছিল, যে বিগত দিন গুলোয় ফাহাদ একাধিক মানুষকে খুন করেছে।চালাক এবং শক্ত-সামর্থ্যপূর্ণ না হলে বেশ কিছু খুন করার পর ও সর্বসম্মুখে ঘুরে বেড়ানো টা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া ফাহাদ লকেট সম্পর্কে কিছু তথ্য জানে বলে ধারণা হয়েছিলো আলিসার। এজন্যই ফাহাদের মত একজন এগারোফোবিয়ার রোগীকে ব্যাবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় আলিসা।
.
ফাহাদ ও আলিসা কিছুদুর এগোতেই দেখতে পায় ছোট্ট একটা সুড়ঙ্গপথ। এটা আস্তে আস্তে একদম চেম্বারের দিকে উঠে গিয়েছে। আলিসা এবং ফাহাদ
এ সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুকে পরে। সুড়ঙ্গটির উচ্চতা ৪ ফুটের মতো, এবং এর প্রস্থ এমন, যে একজন লোক কেবল প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে যেতে পারবে। মিনিট দশেক এ সুড়ঙ্গে হামাগুড়ি দিয়ে উপরের দিকে ওঠার পর দুজনে একটা ট্রানজিট লাউঞ্জের মতো জায়গায় এসে পৌঁছায়। জায়গাটা বেশ বড়। এখানে মাথা তুলে দাঁড়ানো যায়। এখান থেকে আর তিন দিকে তিনটা পথ চলে গেছে। দুজনেই বুঝতে পারল, পাজল তৈরির জায়গায় এসে গেছে। এখন ঠিক কোন দিকে যেতে হবে সেটাই অজানা।তিন দিকেই নানা কায়দায় কতগুলো ফলস চেম্বার বানানো আছে। প্রথমে ডানপাশের সুড়ঙ্গ ধরে সামনে আগায় তারা। হামাগুড়ি দিয়ে আগাতে আগাতে একপর্যায়ে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরে আলিসা। পথ যেন শেষ ই হচ্ছে না। প্রায় ৩০/৪০ মিনিট সুরঙ্গ ধরে আগানোর পর নিজেদের রেখে যাওয়া চিহ্ন দেখে বুঝতে পারে গোল একটা বৃত্তাকার জায়গায় বারবার ঘুরে আসছে তারা।ব্যাপারটা অনেক অদ্ভুত। একই জায়গায় বার বার ঘুরলে তো অন্তত টের পাওয়ার কথা, কিন্তু মোড় গুলো এত আস্তে আস্তে ঘুরানো হয়েছে যে কোন ভাবেই ওরা টের পায়নি। তাছাড়া টর্চের সামান্য আলো নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে এমন ও নয় যে দিনের আলোতে পরিষ্কার ভাবে সব কিছু দেখা যাচ্ছে।
সেখান থেকে বের হয়ে মাঝের সুরঙ্গে প্রবেশ করার পালা।
হঠাৎ আলিসার মনে পরে সে পাথরের ব্লক টা ঠিক করে আসতে ভুলে গিয়েছিল। নিরুপায় হয়ে আবার পেছনের দিকে ফিরে যেতে হয় তাকে। ফাহাদ বসেই অপেক্ষা করছিলো।আলিসা পাথরের ব্লক ঠিক করতে এসে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। লাইটের আলোয় দেখতে পায় নতুন একতা স্যান্ডেলের ছাপ, যা তারা যাওয়ার সময় খেয়াল করে নি। আলিসা ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না বেশি। পাথরের ব্লক ঠিক করে রাখতে এবার প্রথম চেস্টাতেই সফল হয় সে।
তাড়াতাড়ি করে আবার আগের পথ হেঁটে আলিসা ফিরে এসে দেখে সুরঙ্গের সামনে ফাহাদ নেই।
.
.
.
অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর ও ফাহাদকে না পেয়ে আলিসা বাম পাশের সুরঙ্গ ধরে আলিসা এগিয়ে যায়।
এ সুড়ঙ্গ টা আরো অনেক ছোট ও চাপা। পাশ ফিরে হাঁটতে হচ্ছে আলিসা কে।কয়েকটা বাঁক পেরিয়ে কিছুক্ষন হাঁটার পর আলিসা একটা বড় ফাঁকা কুঠুরি তে এসে পৌঁছে। কামড়ার চারদিকে টর্চ মেরে দেখে আলিসা বুঝতে পারে এটা কুইন্স চেম্বার।
এখান থেকে সুড়ঙ্গ বেয়ে উপরে উঠলে আরেকটা ফাঁকা চেম্বার, তার উপরে উঠলে আরো একটা চেম্বার পাওয়া যাবে যেটা স্বয়ং খুপু রাজার । আলিসার বইয়ে আঁকা ছবিগুলোর সাথে হুবুহু মিলে যাচ্ছে যেন।
রানীর চেম্বার থেকে সুড়ঙ্গ বেয়ে উপরে উঠে ফাঁকা চেম্বারটায় পৌঁছে যায় আলিসা। মনে মনে তার ফাহাদের জন্য ও চিন্তা হচ্ছিল। এ চেম্বারের চারপাশে শুধু আয়না এবং আয়না। দৈত্যাকৃতির একেকটা আয়না।
ওখানে মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নেওয়ার আবার আরেকটা সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে খানিক যাওয়ার পরে একটা আলিসান কক্ষে পৌছে যায় আলিসা। এটাই হলো মূল চেম্বার।এই কুঠুরির চারপাশ টা অদ্ভুত ভাবে তৈরী করা এখানে ছোট্ট একটা শব্দ হলেও তার প্রতিধ্বনি পুরো পিরামিডের সবখানে ছড়িয়ে যায়। এ চেম্বারের একুইস্টিক সিস্টেমটা এতটাই চমকের ছিলো যে, তা বানানোর সাড়ে চার হাজার বছর পরেও বিজ্ঞানীদের কাছে এটা এক বিস্ময়। পিরামিডে বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে, এটাও তাই। এখানে যে কোনো শব্দ উচ্চারিত হলে সমান তীক্ষ্ণতায় তা প্রতিসরিত হতে হতে প্রতিধ্বনি তুলে, ইকো সৃষ্টি হয়,পুরো পিরামিড জুড়ে। ফারাও রাজা খুফুর মমিটা এখানেই আছে।মাঝখানেই পাথরের তৈরি কফিনটা। চারপাশ থেকে লুট হয়ে গিয়েছে সব মূল্যবান ধন সম্পদ।এ জায়গাটা বেশ প্রশস্থ। এক সময় এখানে পাওয়া গিয়েছিল ১৪২ ফুট লম্বা সুগন্ধি কাঠের তৈরি এক নৌকা। এ নৌকাটি ছিল খণ্ড খণ্ড কাঠের টুকরো দিয়ে নিখুঁতভাবে জোড়া লাগানো। এ ধরনের কাঠ সাড়ে চার হাজার বছরের পুরানো হলেও অক্ষত ছিলো। খুফুর পুত্র নৌকাটি তার পিতার সমাধিতে রেখে দিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যাতে মৃত পিতাকে স্বর্গে যেতে হলে তার তো বাহনের দরকার। ধারণা করা হয় ফারাওরা নীলনদে যখন তখন ঘুরে বেড়াতেন। মৃত্যুর পরও যাতে তারা ঘুরতে পারেন সে জন্য এ ধরনের নৌকা রাখা হয়েছিল তাদের সমাধিস্থলে। নৌকাটি ছিল সবুজ রঙের। দাঁড়ের মাথায় বাজপাখির মাথা বসানো। সঙ্গে পদ্মপাতার চমৎকার নকশা।
.
.
.
বিগত প্রায় দুই হাজার বছরে এই রাজার চেম্বারের ভিতরে বহুজনই ঢুকেছেন। আব্বাসী যুগের শাসক মিসর জয় করে এটার ভিতরে ঢুকে কিছুই পাননি। জিনিসপত্র খালি দেখেছেন সেই নবম শতকেই। তারও আগে ঢুকেছিলেন আলেকজান্ডার। আঠার শতকের একেবারে শেষের দিকে ঢুকেছিলেন ফরাসি জংবাজ বীর নেপোলিয়ান। গ্রিক যোদ্ধা আলেকজান্ডার ২৪ বছর বয়সে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে এসেছিলেন এখানে, আর ফরাসি আক্রমণকারী নেপোলিয়ন এসেছিলেন ১৭৯৮ সালে। দুজনই এসে মিসর জয় করে এর রাজ কুঠরি দেখে গেছেন। নেপোলিয়নেরটা অনেক নাটকীয়। তার নির্দেশে তিনি একা এ কিংস চেম্বারে প্রবেশ করেন, তার কোনো সঙ্গীকে তিনি রাখেননি। কি দেখেছিলেন নেপোলিয়ন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি কখনোই দেননি, এও এক বিস্ময়।
আলিসা রাজার কুঠুরি তে গিয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে কোন ক্লু পাওয়া যায় কিনা পিরামিডের তলদেশের দিকে যাওয়ার জন্য কোন সুরঙ্গ পথের।
এদিকে ফাহাদের জন্য ও তার চিন্তা হচ্ছে। প্রধান চেম্বারের খোঁজ পাওয়ার পর আলিসা ফাহাদকে খোঁজার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। আলিসার ধারণা ফাহাদ হয়ত প্রথম তিনটে সুরঙ্গপথের মাঝের সুরঙ্গপথে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তাও যদি হয় তবুও ফাহাদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। মানুষ এসব জায়গায় আগেও গিয়েছে বার কয়েক। সুতরাং ফাহাদের তেমন কোন বিপদ হতে পারে বলে মনে হয় না।
তবুও আলিসা পাশের সুরঙ্গ পথে ফিরে এসে মাঝের সুরঙ্গ পথে পা বাড়ায়। এই পথটা কেমন যেন একটু ভেজা ভেজা।আলিসা হামাগুড়ি দিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই গভীর একটা গর্তে পরে যায়। গর্তটা বেশ বড়, ১৫ ফিটের মত গভীর। পায়ে বেশ ভালো ই ব্যাথা লেগেছে তার। তবে এইসব হাড়ভাংগা কিংবা কেটে যাওয়ার মত ব্যাপারগুলো সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আলিসার ডাকিনীবিদ্যা খুব ভালো কাজে দেয়।গর্তটার চারপাশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে। দেয়ালে শ্যাওলা ধরে আছে।এই খাড়া পিচ্ছিল দেয়াল বেয়ে তো কিছুতেই উপরে উঠা সম্ভব নয়।
গর্তটার দেয়াল চুইয়ে পানি কোথা থেকে আসছে তা দেখা না গেলেও পানিগুলো কোনদিকে চলে যাচ্ছে তা দেখা যায়। বৃত্তাকার গর্তাটার একটা কোনায় বেশ বড়ো একটা ফাঁটল। একজন মানুষ ঢুকে যেতে পারবে অনায়াসেই। সেই ফাটলের চারপাশে গজিয়ে আছে বিভিন্ন প্রকারের ছত্রাক। আলিশা হাতে লাইট নিয়ে গর্তটার দিকে এগোয়। কেডসের ছাপ দেখা যাচ্ছে সেখানে। আরো বেশি কৌতূহলী হয়ে ফাঁটলের ভিতরের দিকে উঁকি মারে সে। ক্রমশ বড় হতে হতে ফাঁটলটা যেন একটা পথ সৃষ্টি করেছে। আশে পাশে সবুজ কোন গাছপালার মোটা মোটা শিকড়। টুকরো টুকরো হয়ে পরে আছে। শিকড়গুলোর ভেতরে হাতের বাহু, মাথার খুলি, পায়ের পাতা সহ মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের হাড়গোড় পেঁচিয়ে পরে আছে।গাছের শিকড়গুলো দেখতে ভয়ানক সবুজ। সে পথ ধরে আরো সামনে আগায় আলিসা। একটা পর্যায়ে নীল আলোর ঝলকানি তে তার চোখে ধাঁধাঁ লাগে।চোখ হাত দিয়ে আড়াল করে আস্তে আস্তে সেদিকে আরো এগোতেই আলিসা দেখতে পায় পাথর ফুড়ে বের হওয়া একটা ডালের মত শিকড় থেকে নীল রঙের আলোটা ছড়াচ্ছে চারদিকে। নীল আলোর তীব্রতায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা একটা লিভিং রুমের মত বড়, মোজাইক করা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কক্ষ।টর্চ অফ করে দেয় সে। আলিসার মনে হচ্ছে সে একটা ভীন গ্রহে চলে এসেছে।নীল চাঁদ যেন নীল আলো ছড়াচ্ছে সে নীল আলোতেই সে দেখতে পাচ্ছে তার হাত দুয়েক সামনেই ৮ ফিট বাই ৮ ফিটের মত বর্গাকার একটা স্বচ্ছ জলাধার। পাথর দিয়ে বাঁধানো চারদিকে। পদ্মফুলের মত জলাধারে ভাসছে হলুদ রঙের কিছু অভূতপূর্ব ফুল। আর সেই জলাধারের ফুলগুলোর ওপাশেই উপুড় হয়ে ভেসে আছে ফাহাদের দেহ। গায়ের জামাকাপড় গুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।হাত পায়ের কোন নড়াচড়া নেই কোন একেবারেই নিস্তেজ অবস্থায় পানির উপরিতলে ভেসে আছে ফাহাদ।
.
.
.
চলবে...

Post a Comment

Previous Post Next Post