গল্পঃ এ উইজার্ড।লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।পর্ব - 10


গল্পঃ এ উইজার্ড । পর্ব - 10
লেখক : হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ


গলা থেকে নীল লকেট খুলে রাখার পর ফাহাদ একটু অসুস্থ বোধ করে। সেটা তার জন্য সমস্যার ছিলো না। কিন্তু সমস্যা যেটা হলো, চারপাশের পরিবেশকেও কেমন যেন ভিন্ন ভিন্ন লাগতে শুরু করে। তার মনের ভিতর যে সাহস এতদিন ছিলো তা সে যেন হঠাৎ ই হারিয়ে ফেলে। এতগুলো মানুষকে কিভাবে খুন করেছে সেটা ভাবতেই ফাহাদের গা কাঁটা দিয়ে উঠে।নিজেকে আগের চেয়ে অনেক দুর্বল একজন মানুষ মনে হয় নিজের কাছে।
তিং মাং এবং উমরের কথা মনে পরার সাথে সাথে তার বাবা মায়ের জন্য আগের থেকেও বেশী কষ্ট পায় ফাহাদ। তার বাবা মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী রাতুলকেও তার প্রচন্ড ভয়ানক একজন মানুষ মনে হতে থাকে। সে যেন নিজের জগতেই নতুন ও ভিন্ন ভাবে প্রবেশ করেছে। যেখানে চারদিকে প্রতিমুহূর্তে রয়েছে অসংখ্য বিপদ।
ঠান্ডা এসি রুমেও প্রচন্ড ঘাম হচ্ছিলো ফাহাদের।তবে লকেট খোলার পরে শারিরীক অবসাদগ্রস্ত হওয়া এবং মনে ভয়ের সঞ্চার হওয়া ছাড়া আর তেমন কোন অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হয়নি তার।
ফাহাদের বুদ্ধিমত্তা ছিলো ছোট থেকেই প্রখর, সে এটা চিন্তা করতে থাকে, আসোলেই কি তার মনের ভিতর ভয় আছে নাকি তার এই ভয় পাওয়ার পিছনে লকেটের হাত আছে!! যাতে সে লকেটটিকে নিজের শরীর থেকে না খুলে,এজন্য লকেট তার মনের উপর কোন প্রভাব ফেলছে না তো!!
চোখ বন্ধ করে লকেটের উপর হাত দিতেই আবার সে নিজেকে আগের রূপে ফিরে পায়। লকেট গলায় ঝুলিয়ে সে ভাবতে থাকে লকেটটার ক্ষমতা সম্পর্কে। লকেট থাকা কিংবা না থাকা এ দুইয়ের মাঝের পার্থক্য টা বুঝতে পারে ফাহাদ।
ধরা যাক ফাহাদের দুটি সত্তা।
ফাহাদের ১ নম্বর সত্তা কাজ করে লকেট পরিহিত অবস্থায়।
সে খুব শক্তিশালী, নির্ভীক, সতর্ক এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকশগুন বেশি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন।
.
ফাহাদের ২ নম্বর সত্তা লকেট না পরিহিত অবস্থার ফাহাদ।
সে খুবই ভীতু, অপেক্ষাকৃত কম সতর্ক, দুর্বল এবং অসুস্থ ও বটে।
ফাহাদ চাইছিল এ দুটো সত্তার মাঝের ব্যাবধান কমিয়ে আনতে।অর্থাৎ লকেট খোলার পর যেন সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।এজন্য তার দরকার চিকিৎসার। শারিরীক এবং মানষিক উভয় ই।
ফাহাদ গলায় লকেট রেখেই ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু অনেকগুল টেস্ট করানো সত্ত্বেও তেমন কোন সমস্যা তার শরীরে খুঁজে পায়না ডাক্তাররা।
পরবর্তীতে ফাহাদ তার লকেট খুলে পকেটে রেখে অন্য একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। কিন্তু যেতে গিয়েই ই বাঁধে সমস্যা।লকেট খোলার পরে যেন গাড়ি ঘোড়ার ভয়ে পা-ই দিতে পারছিলো না সে।আশেপাশে কত বেশি মানুষ!! নিজেকে খুব অসহায় লাগতে থাকে তার।
যেন এই পৃথিবীতে সবাই রঙ্গিন কিন্তু সে সবার মাঝে শুধুমাত্র সাদা-কালো একজন মানুষ।
আতংকের প্রভাবে একটা পা ও সামনে এগুতে পারেনি ফাহাদ। অত:পর বাধ্য হয়েই লকেটটাকে গলায় ঝুলাতে হল তার। সিদ্ধান্ত নেয় টেস্টগুলো করানোর ঠিক আগের মুহূর্তে লকেট খুলে রাখবে সে।
.
.
.
এবার বেশ কিছু সমস্যা ধরা পরে ফাহাদের। বিশেষ করে কিডনীতে। ওগুলোর অবস্থা একদম ই ভালো না। আর কয়েকমাস দেরী হলেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারত। মানব দেহের প্রতিটি কিডনীতে ১২ লাখ নেফ্রন থাকে। এ নেফ্রন নষ্ট হয়ে গেলে কিডিনী অকেজো হয়ে যায়।
ফাহাদের এই নেফ্রন কাউন্ট কমতে শুরু করেছে। হয়ত আর কয়েকদিন পর ৫০ শতাংশ নেফ্রন নষ্ট হয়ে যেত। ফাহাদকে বেশ কিছু টিপস এবং ঔষধ লিখে দেন ডাক্তার রা।
শুরু হতে থাকে ফাহাদের দ্বিতীয় সত্তাকে সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া।
কিন্তু ভয়ের দিকটা দূর করতে হলে সাইক্রিয়াটিক দেখানো দরকার।
মিশরের সবিচেয়ে ভালো সাইক্রিয়াটিক আছেন একজন কিন্তু তার কাছে ফাহাদের যাওয়াটা নিরাপদ হবে না। ফাহাদ যে একজন খুনী তা যদি সে ধরে ফেলে!!
মাঝারী মানের একজন সাইক্রিয়াটিকের খোঁজ করতে থাকে ফাহাদ। এবং এমন একজনকে খোঁজ করতে থাকে, যে হবে মেয়ে। কারণ ফাহাদের ধারণা সাধারণত মেয়েদের বুদ্ধীমত্তা একটু কম হয়ে থাকে, ছেলেদের মত কৌতূহলী মনোভাব টা তাদের থাকে না।
বেশ কিছুক্ষন অনলাইনে খোঁজাখুঁজির পরে ফাহাদ পেয়ে যায় আলিসা নামের একজন মেয়েকে। হুট করেই কারো কাছে গিয়ে তাকে নিজের সমস্যার কথা খুলে বলতে নারাজ ফাহাদের প্রথম সত্তা। তাই ফাহাদ প্রথমে সাইক্রিয়াটিক আলিসার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে ঘাটতে শুরু করে।
মেয়েটা মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেছে ইটালির ভেনিস শহরে,জন্ম সেখানেই। গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করেছে বেশিদিন হয় নি। সেখানেই নিজের একটা পারসোনাল চেম্বারে বসেছিল কিছুদিন। তারপর হঠাৎ মিশর চলে আসে আলিসা।
মিশরে এসে মূলত চিকিৎসা শুরু করে নি সে। কিছুদিন কি যেন একটা নিয়ে রিসার্চ করছিলো। পরে টাকাপয়সার সমস্যা হওয়ায় তার আংকেলের পরিচিত একটি মেডিসিনের দোকানের পিছনের অংশের ছোট্ট কামরায় বসে চিকিৎসা ও বিভিন্ন রকম থেরাপি দিতে শুরু করেন।তবে বেশ অল্প সময়ে ভালো সুনাম অর্জন করেছে সে। চারদিকে ভালো-ই নাম ডাক রয়েছে।
যেহেতু মেয়েটি মিশরের না, সেহেতু মিশরের মানুষ সম্পর্কে তেমন ঘাটবে না। তার উপর ফাহাদ তো বাংলাদেশের।
ফাহাদ মূলত আলিসার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে এ তথ্যগুলো পেয়েছে।
আলিসার ছবির কমেন্টস, যারা কমেন্টস করে তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে এতটুকুই জানতে পেরেছে সে।তবে সেই সাথে আরো একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার রয়েছে। আলিসা পিরামিড কিংবা ফারাও দের রিচুয়াল নিয়ে রিসার্চ করতে মিশরে এসেছে। খটকা লাগলো একটু, আলিসা মনোবিজ্ঞানের স্টুডেন্ট হয়েও ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করছে কি কারণে সেটা ভেবে।
.
.
.
আলিসার কাছে যাওয়ার আগে আগে লকেট টা খুলে নেয় ফাহাদ। সেটা নিজের লকারে রেখে,ফিংগারপ্রিন্ট দিয়ে লক করে রাখে সে।
তারপর ই হয় সমস্যা। সুবাতাকে দেখেও সে যেন ভূত দেখার মত চমকে উঠে। সুবাতা নিজেও ফাহাদের চেহারা দেখে অবাক হয়। কেউ চাইলেই চেহারা থেকে ভয়ের ছাপ দূর করে ফেলতে পারে না।সুবাকে এড়াতে ফাহাদ এক প্রকার দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফাহাদের দ্বিতীয় সত্তা প্রথম সত্তার মত অতটা সতর্ক না।
ভুলে ফাহাদ তার রুমের দরজাটা খোলা রেখেই বের হয়ে পরে।ফাহাদের ভয়ার্ত চেহারা দেখার পর অনেকটা কৌতূহল নিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে সুবাতা। সেখানে টি টেবিলের উপর রাখা দুটো মনিটর। একটায় সুবাতার নিজের গলার হারনেসের ভিডিও। অন্যটায় রাতুলের। যদিও রাতুলের হারনেসের মনিটর একটা সুবার কাছে আগে থেকেই রয়েছে। পাশেই রাখা দুটো টু বাটন মিলি রিমোট কন্ট্রোল। সুবা দেখে দারণা করে নেয় এ দুটো হয়ত তাদের দুজনকে কন্ট্রোল করার রিমোট ই হবে।
ফাহাদের সাথে এখনো দেখা হয় নি রাতুলের। রাতুল ঠিকভাবে হাঁটতে পারছে না এখনো। সারাদিন চুপচাপ শুয়ে থেকে কাটিয়ে দেয় তার সময়গুলো। সুবাতা সময়-মতো এসে মজাদার সব খাবার পরিবেশন করে। মাঝবয়সী রাতুলের কিছুই করার থাকেনা শুধু সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করা ছাড়া। তাছাড়া, ঘরের বাইরে বের হলেই সম্ভাবনা আছে আবার পুলিশের কারাগারে ঢোকার। তখন আর এত ভালো খাওয়া এবং ফাইভ স্টার বাথরুম পাওয়া যাবে না। সবকিছু ভেবে রাতুল চুপচাপ থাকে। এছাড়াও ফাহাদের নিষেধ আছে রাতুলের সাথে সুবাতা যেন কোন প্রকার কথা না বলে।
.
মনিটরের উপরে আবার শাটার সিস্টেম লাগানো দেখে অবাক হয় সুবাতা ।
এমনটা সে আগে দেখেনি। তার মানে কখনো কখনো এই শাটার ডাউন করা হয়। সুবাতা প্রথম ভাবে হয়ত ঘুমানোর আগে চোখে আলো যাতে না যায় তাই শাটার ক্লজ করে রাখে হয়ত। কিন্তু পরক্ষনেই সে বুঝতে পারে তার ধারণা ভুল।মনিটরের যে অবস্থান তাতে বেডের উপরে থাকা ফাহাদের ঘুমের কোন অসুবিধে হওয়ার কথা না।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে সুবাতা।তাহলে শাটার কেনো!!
"sorry i can't answer your question "
রোবোটিক ভয়েস শুনে চমকে উঠে সুবাতা। শব্দের উৎস খুজতে গিয়ে দেখতে পায় টেবিলের উপর থাকা কালো বৃত্তাকার একটা জিনিস থেকে শব্দ টা আসছে। যার উপরের অংশে গোলাকার ব্লু রে। নিচে খুব ছোট ছোট করে লেখা,
Echo Voice assistant.
.
.
.
.
একটা ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে কোন রকমে উঠে পরে ফাহাদ। উদ্দেশ্য আলিসা এর চেম্বার। ফাহাদ চোখ খুলতে পারছিলো না ভয়ে।
ট্যাক্সিচালকের ডাক শুনে সে আস্তে আস্তে চোখ খুলে।
আলিসার চেম্বারের সামনে এসে গিয়েছে ফাহাদ। মনে মনে সে আশা করছে একটা থেরাপি নিলেই হয়ত এই ভয়ের রোগ টা দূর হয়ে যাবে।
ফাহাদ চেম্বারে ঢোকার আগে কল্পনায় ও ভাবতে পারে নি যে, এই সুন্দরী ম্যাডাম আলিসা ই হবে পৃথিবীতে তার ভয় পাওয়ার একমাত্র কারণ। হোক সেটা ফাহদের প্রথম সত্তা কিংবা দ্বিতীয় সত্তা।
.
.
.
.
সাইক্রিয়াটিক আলিসার চেম্বারের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর ভেতরের দিকে ঢুকতে উদ্যত হয় ফাহাদ।
ঔষধ বিক্রির বড় একটা রুম পেরিয়ে গিয়ে তারপর হলো আলিসার রুম। সেদিকে পা বাড়াতেই মেডিসিনের ক্যাশে থাকা থাকা হ্যাংলা একটি ছেলে ডেকে বলল, কোথায় যাচ্ছেন??
ফাহাদ কম্পিত কন্ঠে জবাব দেয়, "আলিসা"। ফাহাদের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শুনে ছেলেটি ভাবলো হয়ত বড় কোন অসুখে ধরেছে,সে বলল,
" আলিসা ম্যাম লাঞ্চ করে ফিরেন নি এখনো। আপনি ওনার রুমে বসুন। আমি ফোন করে ডেকে দিচ্ছি।"
ফাহাদ আস্তে আস্তে গিয়ে আলিসার ছোট্ট চেম্বারের মত রুমটায় ঢুকে। এখানে এসে সে বুঝতে পারল, আলিসা রোগী নিয়ে বেশি একটা ব্যাস্ত থাকে না। যেহেতু আলিসা সাইক্রিয়াটিক সেহেতু মানুষ ছুটির দিনে বা উইকইন্ডেই বেশি ভীড় করে ওনার কাছে। ফাহাদ গিয়ে আলিসা যেখানে বসে ঠিক তার বিপরীত দিকের চেয়ারটায় বসল। এখন ভয় একটু কম লাগছে।
আলিসার চেম্বারের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর বইপত্র।সবগুলো - ই প্রায় মমি নিয়ে।
ফাহাদ সেগুলোতে চোখ বুলাতে লাগল। হঠাৎ করেই তার চোখ গেল পেপার ওয়েট দিয়ে ঢাকা একটা আর্ট পেপারের দিকে।
সেখানে সাদা কালো পেন্সিলে স্কেচ করে পঞ্চভুজ আকৃতির একটি লকেট আঁকা।
লকেটের শেপ টা ফাহাদের খুব পরিচিত। ওর সেই নীল লকেটের শেপ। ফাহাদের মনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। আলিসা কিভাবে এই লকেটের সন্ধান পেলো!! আলিসার সাথে লকেটের সম্পর্ক কি হতে পারে!! নাকি ইটালী থেকে এই লকেটের খোঁজেই আলিসা মিশর এসেছে। ফাহাদ বুঝতে পেরেছিলো তার লকেট টা যে সে কোন লকেট নয়, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন লকেট। সুতরাং এমন লকেটের চাহিদা সবার কাছে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
ফাহাদ যখন এ-সকল চিন্তায় মগ্ন, ঠিক তখন ই কক্ষে আলিসা প্রবেশ করে।
ফাহাদকে দেখেই অবাক হয়ে যায় সে।
৫ফিট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষ। কিন্তু গ্রীক দেবতাদের মত চেহারা। চেহারা ভিতর উদারতা এবং ক্রোধের সংমিশ্রণ।
ফাহাদ আলিসাকে আগেই দেখেছিল ছবিতে। তবে বাস্তবে তার থেকেও বেশি সুন্দরী আলিসা।অদ্ভুত সুন্দর। একজন ব্যাক্তি যত রাগী ই থাকুক না কেন, আলিসার চেহারা দেখলেই তার রাগ কমে যাওয়ার মত সৌন্দর্য আলিসার মাঝে রয়েছে।
আলিসাকে দেখে ফাহাদের মাঝে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা একটু কমে আসে।
আলিসা নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে। ফাহাদ আলিসাকে সব কিছু খুলে বলে শুধুমাত্র লকেটের ব্যাপারটা বাদে।
সব শুনে আলিসা বুঝতে পারে, ফাহাদের এগারোফোবিয়া রোগ আছে, সে খোলামেলা পরিবেশে চলতে ভয় পায়, যেমন শপিংমল কিংবা ব্যাস্ত রাস্তাঘাট। সে ফাহাদকে বায়োলজিক্যাল চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, সেডেটিভস খেতে দেয়। এবং নন বায়োলজিক্যাল চিকিৎসার জন্য উপদেশ দেয় সিস্টেমেটিক ডিসেন্সেটাইজেশনের। যা হলো, যেসকল পরিস্থিতিকে রোগী ভয় পায়, নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিতভাবে রোগীকে ধাপে ধাপে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি আনা। ধীরে ধীরে রোগী তখন ভয়টা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এ সব রকমের পদ্ধতিতে পরিবারের সবার সাহায্য খুব দরকার। কিন্তু ফাহাদের পরিবারে তেমন কেউ ছিলো না সাহায্য করার মত। ফাহাদ বাধ্য হয়েই আলিসাকে অনুরোধ করে, আলিসা যেন তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে।
আলিসার ফাহাদকে প্রথম দেখায় ই পছন্দ হয়ে যায়। যার ফলে সে ফাহাদকে আশ্বস্ত করে,সময় পেলে ওকে নিয়ে বাইরে বের হবে।
ফাহাদ আলিসার কথায় খুব খুশি হয়। উঠে চলে আসতে যাবে এমন সময় মনে করে আলিসাকে জিজ্ঞেস করে ফেলে, আচ্ছা এই লকেট টা যে আঁকা আপনার টেবিলের উপর, এটা আপনি কোথায় দেখেছেন? একটু চমকে উঠে আলিসা, পরক্ষনেই স্বাভাবিক কন্ঠস্বরে বলে!! কিসের লকেট! এটা একটা জ্যামিতিক অংকন। ফাহাদ বুঝতে পারে আলিসা মিথ্যা বলছে। কথা না বারিয়ে উঠে আসবে ফাহাদ, তখনই আলিসা ফাহাদকে বলল, " বসো"।
এটা যে একটা লকেটের স্কেচ তা তুমি কিভাবে বুঝলে??
ফাহাদ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, এই লকেট কোন সাধারণ লকেট না। এটা একটা অলৌকিক লকেট।
আলিসা ওর এ কথাটা শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে শুধু।
"আর কি কি জানো লকেট সম্পর্কে??"
ফাহাদকে জিজ্ঞেস করে সে।
ফাহাদের একটা অভ্যাস ছোট থেকেই। কখনো মিথ্যা বলে না। কিন্তু সে চাচ্ছেও না, লকেট যে তার কাছে, সেটা আলিসা জানুক। তাই বুদ্ধি করে জবাব দেয়,
এই লকেটের ব্যাপারে অনেক কিছুই আমার অজানা। বলতে পারেন ধারণার ও বাইরে।
"লকেটের পেছনের কাহিনীটা জানো তো??"
আবারও প্রশ্ন করে আলিসা।
না" জানিনা। ফাহাদ জবাব দেয়।
আলিসা: তবে তুমি লকেটের সম্পর্কে কার কাছ থেকে জানলে??
ফাহাদ: তা আপনার না জানলেও চলবে।
আলিসা: আচ্ছা, শুনো! তুমি আমাকে এ ব্যাপারে কি কিছু সাহায্য করতে পারবে??
ফাহাদ যেন এমন কিছু একটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো।
সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো সাথে সাথেই। তবে আলিসা একটা শর্ত বেঁধে দিলো। শর্তটা হলো,
ফাহাদকে শুধুমাত্র কথাটা গোপন রাখতে হবে এবং আলিসার সব কথা শুনতে হবে । আলিসা ভালো করেই জানত ফাহাদ মানুষজন ভয় পায়। সুতরাং বেশি মানুশের সাথে ওর মেশার সম্ভাবনা নেই। এরপর আসলো প্রলোভন,
আর এই প্রলোভন দেখাতে গিয়ে আলিসাকে তার লকেটের পেছনের ইতিহাস তুলে ধরতে হলো।
.
.
.
.
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত গিজা নামক স্থানে গেলে দেখা মিলবে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় পিরামিডটির।গিজার এই পিরামিডটিকে অনেকে খুফুর পিরামিডও বলে থাকেন। এখানে মোট তিনটি সমাধি কক্ষ রয়েছে। সম্রাট খুফু, তার স্ত্রী এবং এই দুইটি কক্ষের তলদেশে আরও একটি ফাঁকা কক্ষ রয়েছে, যা গ্র্যান্ড গ্যালারী নামে পরিচিত।
আজ থেকে প্রায় ৪,৫০০ বছর আগের কথা। ফারাও অধিপতি খুফুর নির্দেশে এক বিশাল এবং সুরক্ষিত সমাধিস্থলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেই সময় মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল যে, মৃত্যুর পরেও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। আর তাই মৃত্যু পরবর্তী সময়ে যেন তাদের কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য শবদেহের সাথে তার প্রয়োজনীয় সবকিছু সহ অর্থ-সম্পদও দিয়ে দেয়া হত। কেউ যেন পরবর্তীতে এগুলো চুরি করতে না পারে, সে কারণে ব্যাপক গোপনীয়তা ও সুরক্ষার সাথে পিরামিড নির্মাণ করা হতো।
কথিত আছে, এই পিরামিডের অভ্যন্তরে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫৫ ফুটের এক বিশাল গুপ্ত কক্ষ। এই কক্ষটি কেন তৈরি হয়েছিল বা এতে কী রয়েছে বা আদৌ এমন কোনো গুপ্ত কক্ষ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে আজও প্রমাণিত হয়নি। প্রাচীনকাল অর্থাৎ পিরামিড তৈরির প্রাক্কাল থেকেই চলে আসা গুঞ্জনের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে চলেছেন বিজ্ঞানী এবং পুরাতত্ত্ববিদেরা।
১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম অনুমতিক্রমে গিজার এই পিরামিডে অনুসন্ধান চলে। অনুসন্ধানকালে সম্রাট খুফুর স্ত্রীর সমাধিকক্ষের আশেপাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় এবং এই কক্ষের সংলগ্ন ঘরটিতে ছিদ্র করা হয় গুপ্ত কক্ষ খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু সেরকম কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি সেখানে।
তবে মজার ব্যাপার কি জানো?? Anthropology পড়ে আমি জানতে পারলাম যে,ফারাও রাজারা মৃত্যুর পর তাদের মমি করে সমাধিস্থ করার সময়, হাজার হাজার যুবতী মেয়ে এবং দাসদের তাদের সাথে কবর দিতো।
কিন্তু খটকাটা কোথায় জানো??
একজন রাজা মারা যাওয়ার সময় হাজার হাজার চাকর রা তো আর মারা যেত না। তবে তাদের রাজার সাথে কবর দেওয়া হত কিভাবে??
.
ফাহাদ: তার মানে খুন করত ওদের? এটা বলতে চাচ্ছেন??
.
চকচক করে ঊঠে আলিসার চোখ।
হ্যাঁ। খুন করা হত। তবে সেটা সাধারণ খুন নয়। ওদের খুন করা হতো একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে।
.
ফাহাদ: কি পদ্ধতি??
.
আলিসা: ওরা যাতে মৃত্যুর পরে ওদের রাজার দাসত্ব করে এবং যৌন ক্ষুধা মিটাতে পারে সেজন্য ওদের কপালে পঞ্চভুজ আকৃতির একটি লাল পাথর ছোঁয়ানো হত।এই পাথরের শক্তি ছিলো মানুষের দেহ থেকে আত্মা বের করে এনে বন্দী রাখা। এরকম হাজার হাজার দাস দের আত্মা পাথরের দ্বারা বন্দী করার পর সেই পাথর রাজাদের সিংহাসনের মাঝে খোদাই করে পিরামিডের একটি গুপ্ত স্থানে লুকিয়ে রেখে দেওয়া হত।লাশগুলো মমি করে রাজার চারদিকে দাফন করা হত। আত্মারা দাসত্ব করতে চাইতো না। তারা সব সময় এই পাথর খুঁজতো, সিংহাসন থেকে এই পাথর আলাদা করলেই তারা মুক্তি পেয়ে ওপারে চলে যেতে পারবে। তাই পিরামিডের ভেতর তৈরি করা হত গুপ্ত কক্ষ। এই পঞ্চভুজ লাল পাথরটা আসলে একটা লকেট যা জীবদ্দশায় পড়ত ফারাও রাজারা। প্রত্যেক ফারাও রাজার সমাধি স্থান এরকম পাথর পাওয়া যেত যদি না আত্মারা আগেই পাথরটি খুঁজে বের করে মুক্ত হয়ে চলে যেত। তবে এখন শুধুমাত্র একটা পিরামিডের ভিতর ই এই লাল লকেট টি পাওয়া যাবে । আমি চাই সেই লকেট তুমি আমি মিলে উদ্ধার করি। আত্মারাও মুক্তি পাবে, আমরাও একটা অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জিনিস পেলাম।
( মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচে ফাহাদ। এটা তবে তার মায়ের দেয়া ব্লু লকেট না। তবে রহস্যের ও গন্ধ পায় সে। একটা ব্লু লকেট যা শরীরের সব দুর্বলতা দূর করে দেয়, আর অন্যটা একই রকম দেখতে লাল লকেট যা মানুষকে মেরে ফেলে।)
.
ফাহাদ: আমাদের আগে কেউ অনুসন্ধান করে নি??
.
আলিসা: ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম অনুমতিক্রমে গিজার এই পিরামিডে অনুসন্ধান চলে। অনুসন্ধানকালে সম্রাট খুফুর স্ত্রীর সমাধিকক্ষের আশেপাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় এবং এই কক্ষের সংলগ্ন ঘরটিতে ছিদ্র করা হয় গুপ্ত কক্ষ খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু সেরকম কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি সেখানে। কার্যক্রম সেখানেই স্থগিত করে দেয়া হয়।
.
ফাহাদ: তবে আমরা খুঁজে পাব কিভাবে??
.
আলিসা-সিম্পল, আমরা ভিতরে ঢুকব ইলিগাল ভাবে। তাহলে আমাদের আর কেউ সময় বেঁধে দিতে পারবে না। ইচ্ছেমত যতদিন ইচ্ছে ঘুরতে পারব। তাছাড়া আমার কাছে এমন কিছু শক্তি রয়েছে যা আমাদের সাহায্য করতে পারে।
.
ফাহাদ: তুমি শক্তি পেলে কোথা থেকে??
.
আলিসা: আমার জন্ম ইতালীর কলোব্রারো তে।১৯৫০ সালে কলোব্রারোর অধিবাসী মাশাড়ে নামের এক শক্তিশালী নারী ডাইনি হিসেবে সর্বত্র বিখ্যাত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কলোব্রারোর বাইরের অধিবাসীরা তার অভিশাপে অভিশপ্ত হতো। মনে করা হতো, তিনি তার শক্তিশালী জাদুটোনা করে কলোব্রারোকে বেঁধে রাখত ও নিয়ন্ত্রণ করত। সে অভিশাপ দিত ও শক্তিশালী জাদুমন্ত্র প্রয়োগ করত। তাই কলোব্রারো ইতালিতে কুখ্যাত হয়ে ওঠে। ডাইনি ও জাদুমন্ত্রকে প্রতিবেশী শহরগুলো ভয় পেত। তারা মনে করত, মাশাড়ের অভিশাপ তাদের দুর্ভাগ্য বয়ে আনবে বা দুর্ভাগ্যের জন্য তারা মাশাড়ের অভিশাপ বা জাদুটোনাকে দায়ী করত। তবে মাশাড়ে অত খারাপ ছিলো না। তার কাছে কিছু অতিপ্রাকৃত শক্তি থাকলেও, কেউ তাকে কিছু না বললে সে কাউকে ক্ষতি ই করত না। ও এখনো বেঁচে আছে। আমার সাথে যোগাযোগ হতো। ওর কাছ থেকে আমি কিছু প্যারানরমাল জিনিস শিখে নিয়েছি আর কি!!
ফাহাদের পুরো বিষয়টা খুব ইন্টারেস্টিং লাগে।
তার মনে ভয় নেই তেমন। যাওয়ার সময় তার নীল লকেট টা থাকলে তেমন অসুবিধে হবে না। মনে মনে ভাবে সে।
আলিসার সাথে সে চুক্তিবদ্ধ হয়, লকেট উদ্ধারের কাজে ফাহাদ আলিসাকে সাহায্য করবে। বিনিময়ে আলিসা ফাহাদকে দিবে তার দেহ এবং পাক্কা ৫০ লক্ষ পাউন্ড।
তবে ফাহাদের একটা ব্যাপার খুব অদ্ভুত লাগতে থাকে। আলিসার ছায়াটা সাধারণ মানুষের মত অতটা গাড় না। ফাহাদের সিক্সথ সেন্স বার বার তাকে বলছে, এ মেয়েটা আলিসা নামের কেউ না। এ হলো খোদ মাশাড়ে নিজেই।
ফাহাদ আলিসার চোখে চোখ রেখে কথা দেয়, সে যখন চাইবে তখন ই পিরামিডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে সে।
কিন্তু ঢুকবে ই বা কিভাবে ভিতরে?? ফাহাদ জিজ্ঞেস করতেই
আলিসা হাসতে হাসতে জবাব দেয়,সে ভার তুমি আমার উপরে ছেড়ে দাও।
.
আলিসা ওরেফে ডাইনী মাশাড়ে কে পিরামিডের ভিতরে ঢুকে লাল লকেট আনার জন্য সাহায্য করার কথা দিয়ে ফাহাদ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু তার ভিতর বেশি মানুষ ও যানবাহনগুলকে ভয় পাওয়া ব্যাপারটা থাকায়, পুরো রাস্তা তাকে চোখ বুজে থাকতে হয়। বাসার আসার পর ফিংগারপ্রিন্ট দিয়ে লক খুকে ভিতরে প্রবেশ করে সে।
সুবাতা সোফায় বসে বসে টিভি দেখছিলো। ফাহাদ ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সে লাফ দিয়ে উঠে টিভি অফ করে সোফার পাশে দাঁড়িয়ে যায়।
ফাহাদ সুবাতার চোখের দিকে না তাকিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি দেখুন টিভি, সমস্যা নেই।
বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে যায় সে।
সুবাতা ফাহাদকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে।
ছেলেটাকে বড্ড অগোছালো লাগছে।
সুবাতা ফাহাদের উপর মনে মনে খুব খুশি, এর কারণ সে মনিটরের সামনে লাগানো শাটারের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে। সুবাতা কিংবা রাতুল যখন বাথরুমে ঢুকে তখন মনিটরের উপর অটোমেটিক শাটার নেমে আসে। যার ফলে রাতুল কিংবা সুবাতার প্রাইভেসি ঠিক থাকে শতভাগ। এমন ভালো একটা ছেলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার উপায় নেই। তাছাড়া সুবাতার এই সন্তানতূল্য ফাহাদ ছাড়া আর কেউ-ই নেই। এসব ভাবতে ভাবতেই
সুবাতা আবার সোফায় বসে টিভি দেখায় মন দেয়, হঠাৎ সে পিছন থেকে ঘাড়ের উপর একটা স্পর্শ অনুভব করে। চটজলদি পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পায় ফাহাদ দাঁড়ানো তার পিছনেই।
.
.
হাত দিয়ে সঠিক জায়গায় টাচ করা মাত্রই গলা থেকে হারনেস টা খুলে গেল সুবাতার।সুবাতা ফাহাদের এমন আচরণ এ একটু অবাক ই হলো বটে।
সুবাতাকে ফাহাদ বলল, এ হারনেস পরে বাইরে বের হলে পুলিশ বা অন্য মানুষ-জন দেখলে তোমাকে আটক করবে। যা আমার জন্য বিপদের।
সুবাতা জবাব দেয়, " কিন্তু আমি তো বাইরে নামি না"
.
- "আজ নামবেন আপনি।"
.
- কেনো?
.
- " আমাদের আগের ভাড়া বাসাটায় যাবেন, সেখান থেকে আব্বু ও আম্মুর ব্যাবহার করা জিনিসপত্র গুলো সব নিয়ে আসবেন।"
.
- " কিন্তু আমার কাছে তো তেমন টাকা পয়সা নেই।"
ফাহাদ পকেট থেকে ৫ হাজার পাউন্ড বের করে দেয় সুবাতাকে।
-" এতে কাজ হয়ে যাবে"
সুবাতার কাছে তখনও ফাহাদকে কনফিউজড লাগছিলো। ফাহাদ হয়ত এখন খুব ইমোশনাল হয়ে আছে,মনে মনে ভাবে সুবাতা।
ধীর পায়ে হেঁটে ফাহাদ চলে যায় নিজ রুমে। শারিরীক ভাবেও অনেকটা অসুস্থ সে। মেডিকেল টেস্ট না করালে তো বুঝত ই না তার কিডনীতে বড় ধরনের সমস্যা হতে চলেছে।"
আপাতত ফাহদের একটু বিশ্রাম দরকার।
ফাহাদ হঠাৎ কি মনে করে যেন তার লকারের দিকে গেল। লকার খুলে লকেটটা বের করল, যেভাবে রাখা ছিল সেভাবেই আছে। সেটা হাতে নিয়ে গলায় পরতেই হঠাৎ লকেট থেকে নীল আলো বের হয়ে ফাহদের চারপাশ নিমজ্জিত হয়ে গেল ।আলোর উজ্জ্বলতা এতই ছিল যে তার চোখ যেন বুজে আসল।সে অবস্থায় সে অনুভব করল তার হাত পায়ের পেশি আগের থেকে একটু মোটা ও দৃঢ় হচ্ছে,চিবুক যেন আরো একটু চওড়া হলো। মনের সাহস বেরে গেল হাজারগুন। একটু পর আলোর তীব্রতা কমে গেলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে সে। দেয়ালে থাকা বড় একটা আয়নার দিকে তাকাতেই প্রথমবারের মত নিজের নীল চোখ দেখতে পায় ফাহাদ।
চোখের ভিতর কোন মনি নেই শুধু দগদগে নীল। নিজেই চমকে উঠে সে।কিছুক্ষনের মাঝেই আস্তে আস্তে চোখ থেকে নীল রঙ সরে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায় তার চোখ।আয়নায় তাকিয়ে নিজের দেহের দিকে লক্ষ্য করে সে। দিনরাত ২৪ ঘন্টা ব্যায়াম করলে শরীরে যেমন বাইসেপস ট্রাইসেপস পেশি গুলো দৃঢ় ও দৃশ্যমান হয় ঠিক সেরকম লাগছে তাকে।
লকেট পরিধান করার পর তার শারিরীক পরিবর্তন ই আসে নি শুধু, এসেছে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ও।সে ছুটে সুবাতার কাছে আসে। সুবাতা তখন ফাহাদের জন্য খাবার তৈরিতে ব্যাস্ত ছিল। ফাহাদ সুবাতাকে আদেশের স্বরে বলে, এ বারির বাইরে পা দেয়ার দরকার নেই আপনার। পুলিশের কাছে আপনি মিসিং, রাতুল পলাতক, বের হলে ঝামেলা হতে পারে।
সুবাতার ফাহাদের কথা মেনে চলা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।

.
.

এদিকে আলিসার ব্যাস্ত দিন কাটছে।
প্রায় ৬০ টন ওজনের একটা পাথর ব্লক সরিয়ে পিরামিডের ভিতরে ঢুকতে হবে। এটা চাট্টিখানি কথা নয়। যুগে যুগে মানুষ গবেষনার উদেশ্যে ঢুকেছে পিরামিডে।
পিরামিড রহস্য যতটা জটিল, তার চেয়ে জটিল এই গবেষনাগুলোর ফলাফল জানা! সহজ করে বলতে গেলে, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনা দলবদ্ধভাবে হয়েছে সবসময়, তাও কিন্তু না। বহু বছর বহু গ্রুপ, আইনি / বেআইনি উভয় ভাবেই পিরামিডে অভিযান পরিচালনা করেছে! এর মধ্যে লুণ্ঠনও চলেছে অবকণ্ঠিত ভাবে। অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনার নামে চুরি হয়েছে প্রচুর সম্পদ! জটিলতা আরো আছে। কেউ চায়নি তার গবেষনার শেষ হোক, যত বেশি গবেষনার সময় নেয়া যাবে তত বেশি গুপ্তধন খোঁজা যাবে।। পিরামিডের ব্যাপারে সত্য উদঘাটনের চাইতে, উদঘাটিত সত্য গোপনের চেস্টা এখানে বড় বেশি। খুফু, খাফ্রে, মেনকাউর এই তিন ফেরাউনের ব্যাপারে অনেক বেশি গবেষনা করা হয়েছে। তবে সেই গবেষনার ফলাফল কি?? সেটা কেউ ই জানে না।!মানুষ রহস্য প্রিয়!! থাকুক না কিছু বিষয় রহস্যময়!!
তবে আলিসার যে লকেট টা চাই!! এতগুলো বছরের সাধনা, যার ফল পেতে হয়ত বেশি দেরী নেই।তবে
মিশরের অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুতানখামেন মমিকে যারা বিরক্ত করবে, তাদের মৃত্যু অনির্বায। এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল ১৯২২ সালে প্রথম তুতানখামেনের মমি আবিষ্কারের পর থেকে। খনন কার্যে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হোয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে যে সব কর্মী যুক্ত ছিলেন, ঘটনাচক্রে তাঁদের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু ঘটেছিল অস্বাভাবিক ভাবে। তবে বিজ্ঞানের চোখে এ সব নেহাতই কুসংস্কার।তবে আলিসা জানে এগুলো কিছুই কুসংস্কার নয়। তুতান খামেন মমি যতটুকু না ভয়ানক ফারাও কুফুর মমি তার চেয়েও বেশি ভয়ানক। বিশেষ করে সিংহাসন যেখানে রাখা আছে, সেখান টায় হাজার আবদ্ধ আত্মাদের ঘোরাফেরা।
.
.
.
.
লকেট পরার পর থেকেই আবার ফাহাদের মনে রাতুলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে তীব্র হয়ে উঠে। বেচারা এতদিন খেয়ে দেয়ে ভালো ই সুস্থ হয়েছে।
রাতুল নিজ কামরাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো কি করা যায়!! হঠাৎ প্রথমবারের মত তার রুমের লাইট অফ হয়ে যায়। একদম পুরোপুরি অন্ধকারে ঢুবে যায় রাতুলের রুমটি একদম ঝুমঝুমে অন্ধকার যাকে বলে।রাতুল লাফ দিয়ে উঠে বসে। কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না, চারদিকে কি আছে । শুধু তার গলায় পড়ানো হারনেসের উপর দুটি লাল আলোর ছোট্ট বিন্দু সেই অন্ধকারে দৃশ্যমান ছিল।লিফটের দরজা যেমন দুদিকে খুলে যায় তেমনি রাতুলের রুমের দরজাটাও খুলে গেল আস্তে আস্তে।রাতুল দেখতে পেল, ভেতরে প্রবেশ করলো কেউ। তারপর আবার দু দিক থেকে এসে ইস্পাতের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। আবারো সেই ধু ধু অন্ধকারময় পরিস্থিতি।
রাতুল বেশ ভয় পেয়েছে। সে তার নিজের জায়গা পরিবর্তন করে একটা কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে তার হারনেসে দুটি লাল আলোর ডট তার অবস্থানটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কোথায় দাঁড়ানো। এভাবে
প্রায় ৫/৭ সেকেন্ড কেট্র যাওয়ার পর রাতুল হঠাৎ অনুভব করে তার ডান চোখ আর ঠোঁট বরাবর চিকন কিছু একটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে,সাথে সাথে সপাং করে একটা আওয়াজ ও তার কানে আসে।
চাবুকের আঘাত..!! ঠোঁট আর চোখে প্রচন্ড জ্বালা করতে শুরু করে রাতুলের। ঠোঁট থেকে দরদর করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে রাতুল। চোখের পাতা কেঁটে দু ভাগ ই হয়ে গিয়েছে তার।হাত দিয়ে ক্ষতস্থান টা আড়াল করে সে।দু হাত রক্তের ফোয়ারায় ভেসে যায়। একটা আঘাতেই যেন রাতুল কাবু হয়ে গিয়েছে। ফাহাদ আবারো চাবুক চালায়। সে চাবুক চালাচ্ছদ রাতুলের হারনেস দেখে। অনুমান করে, যেখানে গিয়েই লাগুক না কেন তাতে ফাহাদের কিছু যায় আসে না। সপাং সপাং করে গায়ের যত জোর আছে তা দিয়ে সে চাবুক চালায়। রাতুল তার সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করতে থাকে।
ফাহাদ চাবুক মারা থামায়। কিন্তু রাতুলের চিৎকার চেঁচামিচি থামে না। রাতুলের মনে হচ্ছে তাকে কেউ যেন গরম পানির ভিতর চুবিয়ে ধরেছে। শারা শরীর জ্বালাপোড়া করছে তার।ফাহাদ রুম থেকে দরজা খুলে বের হয়।
রাতুল দরজা দিয়ে উঠে দৌড় দিবে এমন অবস্থায় ছিলো না তখন। লাইট জ্বালিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে ফিরে আসে ফাহাদ। মুখে তার মাস্ক পড়া।
হাতে একটা ফার্স্ট এইড বক্স।
সুবাতাকে ডাক দিলে, ফাহাদের ডাক শুনে সুবাতা তড়িঘড়ি করে চলে আসে। ফাহাদ সুবাতাকে আদেশ দেয়,
" ওকে উঠিয়ে এই চেয়ারে বসাও।"
সুবাতা চোখ মেলে তাকাতে পারছিল না রাতুলের দিকে। এলোপাথাড়ি চাবুকের আঘাতে রাতুলের চেহারা বিকৃতপ্রায়।
রাতুলকে উদেশ্য করে ফাহাদ বলে,
এ বাসার প্রতিটা রুমে ভয়েস এসিস্টেন্ট সিস্টেম অন করা আছে আমার। কোন প্রকার চালাকি করলে অত্যাচারের মাত্রা বাড়াব। তবে ভয় নেই। জানে মারবো না।
সুবাতা রাতুলের হাত ধরে টানলেও রাতুল উঠতে নারাজ। এ অবস্থা দেখে ফাহাদ এগিয়ে যায়। রাতুলের একটা পা ধরে টেনে নিয়ে আসে চেয়ারের কাছে। এসময়ে রাতুলের পরিধানে থাকা একমাত্র তোয়ালেটা খুলে যায়। সুবাতা এ দৃশ্য দেখে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় ফাহাদ বলে, দাঁড়ান আন্টি,
সুবাতা দাঁড়িয়ে যায়।
.
- একটা স্কচটেপ নিয়ে আসেন।
.
সুবাতা রুম থেকে স্কচটেপ আনার জন্য বের হয়।
একটা পুতুলের পা ধরে উপরে উঠিয়ে কেউ যদি চেয়ারে ছুড়ে মারে ফাহাদও ঠিক সেভাবে রাতুলকে ছুড়ে মারে চেয়ারের উপর। ফাহাদ নিজেও কিছুটা অবাক হয়। এত শক্তি সে কোথায় পেল!!
প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় গোঙাতে থাকে রাতুল।
ততক্ষনে স্কচটেপ এসে গিয়েছে।
রাতুলকে ঠিক ভাবে বসিয়ে পুরো স্কপচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলে ফাহাদ। শুধু মাথা ও পায়ের গোড়ালি বাদে।
সুবাতাকে আদেশ দেয় চেয়ারটা ভালোভাবে ধরতে, যেন পরে না যায়।
সুবাতাও চেয়ারের পিছনে গিয়ে ঠিকভাবে চেয়ারটাকে শক্ত করে ধরে।
চোখের পাতা মাঝখান দিয়ে দু ভাগ হয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্রি দেখাচ্ছে বড্ড।ফাহাদ সিদ্ধান্ত নেয় এটাকে একদম ই বাদ দিতে হবে।
কিটবক্স থেকে ধারালো কাঁচিটি বের করে নেয় সে। তারপর চোখের পাতার পিসি টেনে ধরে কাটার উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাতুল বারবার মাথা ঝাকাচ্ছিল। ফাহাদ বেশ শান্ত স্বরেই বলল, ওহ ডিয়ার রাতুল আংকেল, আপনি আমাকে ছোট বেলায় চিপস কিনে দিতেন। তাই আপনার জন্য আমার দয়া আছে।আমি চাইনা আপনার চোখ আমার কাঁচির খোঁচায় নষ্ট হোক। সোজা হয়ে বসুন। যাস্ট একটা পিঁপড়ার কামড়ের মত লাগবে।
রাতুল চুপ হয়ে যায়।
ফাহাদ পিসে টেনে ধরে চোখের পাতাটার গোড়ায় কাঁচি চালিয়ে দেয়। কটাস করে একটা শব্দ হয় শুধু। চোখের পাতা ফাহাদের হাতে ঝুলছে এখন।
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রনায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে রাতুল।ফাহাদ সুবাতাকে পানি আনতে বলে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সমস্যা হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব ফাহাদ পানি দিয়ে রাতুলের নাকমুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়। মনে মনে ভাবে এটা তো ট্রেলার ছিল রাতুল আংকেল!!
ফাহাদ সুবাতাকে বলে যেন সে রাতুলকে সামনের দুদিন খুব ভালো রান্না করে ইচ্ছেমত পেট পুরে খেতে দেয়।
অত:পর
নিজের রুমে চলে আসে সে। ঝর্ণার পানিতে গোসল করতে করতে ভাবে, আলিসার কথা যদি সত্যি হয় তবে পিরামিডের ভিতর যেতেই হবে তাকে। লকেট উদ্ধারের পর আলিসাকে খুন করে লকেট টা হাত করতে পারলেই তার অনেক বড় একটা উপকার হয়। টাকাপয়সা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। পরবর্তী তে টাকা নিয়ে খুন করার কাজে এই লকেকটা-ই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল অস্ত্র হবে।...
(চলবে)
লেখক: হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post