গল্পঃ ব্লাক ক্যাফেটেরিয়া | লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ | পর্বঃ ৩

গল্পঃ ব্লাক-ক্যাফেটেরিয়া 
পর্ব-৩

লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ



সাদা ধবধবে, লম্বা লোম যুক্ত আলফা, হেলেনের একমাত্র কাছের বন্ধু, আলফা হলো একটি সাইবেরিয়ান নেকড়ে। চোখগুলো অদ্ভুত রকমের নীল,আকারে অন্যান্য নেকড়েদের থেকে অনেক বড়। ওর নীল চোখ এবং তুলতুলে সাদা লোম গুলো হেলেনের ভীষণ প্রিয় ছিল।

আলফা দেখতে যতখানি সুন্দর, ঠিক ততখানি হিংস্র এবং ভয়ানকও।চোয়ালে থাকা সাদা সাদা বড় দাঁতে ছিলো অসম্ভব রকমের শক্তি, ব্লেডের মত ধাঁরালো দাঁতগুলো দিয়ে এক কামড়ে যে কারো ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়ার শক্তি আলফার কাছে ছোটবেলা থেকেই ছিলো।
তবে হিংস্রতা সব সময়ে ওর স্বভাবে ফুটে ওঠে না। ভীষন আদুরে আলফা হেলেনের গা ঘেষে থাকে সব সময়ে। আলফাকে উত্তেজিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে হেলেন কে আঘাত করা। হেলেনের সাথে খারাপ কিছু কেউ করলে, আলফা সেটা একদম ই সহ্য করতে পারে না।একবুক হিংস্রতা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার উপরে। তাই হেলেনের কাছে আলফার আস্থার জায়গাটাও অনেক বেশি মজবুত। হেলেন আলফার উপর ভরসা রেখেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে।
বিলওয়াল সাথে আসতে চাইলে জোর গলায় তাকে না করে দেয়। কারণ হেলেন জানে, এরিকের জায়গা থেকে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা হেলেনের পরে যদি কারো থেকে থাকে, সে হচ্ছে বিলওয়াল। তাই বিলওয়ালের জীবন ঝুঁকিতে পরে এমন কিছু করতে চায় না হেলেন। বিলওয়াল নিরাশ হয়ে আস্তাবলের সবথেকে তেজী লাল রঙের ঘোড়া, 'রিও' কে হেলেনের সাথে দিয়ে দিতে চায় । কিন্তু রিওর সাথে আলফার সাপে নেউলে সম্পর্ক। দুজনে মারামারি করে রক্তারক্তি না করলেও একজনের মুখ অন্যজন খুব বেশি একটা দেখতে পারে না। হেলেনের পশুপাখির সাথে সখ্যতা গভীর হয়ে উঠে খুব সহজেই। হেলেন ওদের মন বোঝে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়,নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। এই আদরের ভাগীদার ছিলো আলফা এবং রিও দুজনেই। হেলেনের ভালোবাসার ভাগ নিয়ে দুজনের মধ্যেই চলে ভীষণ রেষারেষি, মান অভিমানের খেলা।তবে জংগলের পথে রিও কে সাথে না নেয়াই উত্তম। হিংস্র জন্তু জানোয়ারের হামলা হতে পারে বিশ্রাম নেয়ার সময়। তাছাড়া তখন বাইরে বেশ ঠান্ডা আবহাওয়া। উলের মত লোম থাকায় বাইরের ঠান্ডা সহ্য করার মত ক্ষমতা আলফার থাকলেও রিওর সমস্যা হবে।সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে, হেলেন শুধুমাত্র আলফা কে নিয়েই রওনা দেয়। তবে যাওয়ার আগে রিওর মাথা বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে যায়। ঘোড়া হলেও, বিদায়ের কষ্ট বোঝার মত অনুভূতি রিওর ছিলো। কান্নামাখা চোখে বিদায় দেয় হেলেন কে।
রাতের অন্ধকারে লন্ঠন হাতে নিয়ে হেলেন বেড়িয়ে পরে সামুয়্যেল এর বাসার উদ্দেশ্যে।
শুধু বাবা হত্যার প্রতিশোধ নয়, আটজন ছেলের গর্ভবতী হওয়ার রহস্যটাও যে বের করতে হবে!!
বিলওয়ালের কাছে থাকা হাতে আঁকা কাগজের খুব সুনিপুণ এবং বিস্তারিত ম্যাপটি হেলেন কে প্রদান করে। সাথে কিছু শুকনো খাবার ও ধারালো একটি ছুড়ি দিয়ে দেয় সিস্টার মেরী।
সামুয়্যেল এর আস্তানা খুব একটা কাছে নয়। জনপদের রাস্তা দিয়ে ঘুরে গেলে প্রায় দু দিন লেগে যাবে। তার চেয়ে ঘন জংগলের মধ্য দিয়ে শর্টকাট রাস্তায় এক দিন সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ওখানে।শ্বাপদসংকুল হলেও আলফা সাথে থাকায় একটা ভরসা পায় হেলেন। আলফাকে এরিকের লোকজন রা মোটামুটি সবাই ই ভালো ভাবেই চেনে। এই গভীর জংগল হলো বনদস্যুদের অভয়ারণ্য।
আর এরা সবাই ই এরিকের আন্ডারে কাজ করে।
সুতরাং আলফার সাথে হেলেনকে দেখলে সবাই সম্মানে মাথা নুইয়ে ফেলবে। কারণ হেলেনের পোশাক পরিচ্ছদ ই বলে দিচ্ছে, সে কে হতে পারে।
জামার সাথে লাগানো টুপিটা দিয়ে মাথা ঢেকে নেয় হেলেন। দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যায় সে। হেলেন চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে বিলওয়াল এবং সিস্টার মেরী।
হেলেন অনেক শক্তপোক্ত মেয়ে হওয়ায় দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। পিছন পিছন হেলেদুলে হাঁটতে থাকে আলফা।
দীর্ঘ চৌদ্দ পনের ঘন্টার পথ।
জংগলের ভেতরের পরিবেশ বড় অদ্ভুত। থেমে থেমে হুতুম পেঁচার ডাক। পেঁচারা রাতে অন্যান্য ছোট পাখি, এবং ইঁদুর ধরে খায়।শুধুমাত্র রাতের শিকারীরা রাত জেগে শিকার করে।
জংগলের ভিতরে তাদের উপস্থিতির শব্দ বুকে কাঁপন উঠিয়ে দেয়। হেলেন খুব সাহসী হলেও, মেয়েদের মন তো!! একটু তো কাঁপবেই৷ তার উপরে ওর সারা জীবনে এই প্রথম নিজ মহলের বাইরে আসা। বেশ কয়েকঘন্টা নিরবিচ্ছিন্নভাবে হাঁটার পরে হেলেন একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আলফা তখন ও মনের সুখে হেলেদুলে হাঁটছে। বন্যপ্রাণীরা বনেই বেশি শক্তিশালী ও প্রফুল্লতা অনুভব করে। হেলেন আলফার পিঠে চেপে বসে। এতক্ষন হেলেনের জন্য বেশ আস্তে আস্তে হাঁটতে হয়েছে আলফার। কিন্তু এখন আর বাঁধা নেই। হেলেনকে পিঠে নিয়ে দুর্বার গতিতে বনের মাঝ থেকে ছুটে চলে আলফা। হেলেন আলফার গলায় থাকা হারনেস ধরে শক্ত হয়ে বসে। বাতাস লেগে লন্ঠন নিবে যায়। কিন্তু তাতে কি!! মাথার উপরে পূর্ণ চাঁদের আলোর ছিটেফোটা আলো গাছের পাতার ফাঁকা দিয়ে এসে চারদিকটা খুব হালকা আলোকিত করে রেখেছে। যদিও এটুকু আলোতে একজন মানুষ দু পা ও সামনে আগাতে পারবে না। কিন্তু নেকড়ে দের জন্য এটুকু আলো ই যথেষ্ট।হেলেনের কাছে কেমন স্বপ্নের মত লাগছে বিষয়টি। চাঁদের আলোয় জংগলের মাঝ দিয়ে একটা নেকড়ের পিঠে বসে ছুটে চলা.. হয়ত পৃথিবীর সকল মেয়ে ই চাইবে এমন একটা মুহুর্ত উপভোগ করতে।
বেশ কয়েকঘন্টা একটানা ছুটে চলার পরে আস্তে আস্তে গতি মন্থর হয়ে আসে আলফার। হেলেন বুঝতে পারে এখন বিশ্রাম দরকার।
আগুন জ্বালানোর মত উপকরণ তার কাছে ছিলো। লন্ঠন জ্বেলে কিছু কাঠ খড় জোগাড় করে হেলেন বনের ভিতরেই একটা ফায়ার প্লেস তৈরি করে।
ফায়ার প্লেসের পাশে বসে পানি এবং শুকনো কিছু খাবার খেয়ে নেয় হেলেন। কিছুক্ষনের জন্য হেলেনের সঙ্গ ত্যাগ করে আলফা।এই ঘনো জংগলের ভেতরে রাতে নিজের খাবার খুঁজে নিতে বেগ পেতে হয়না ওর। ছোট ছোট বন্য প্রানীদের মাংসে আলফার ক্ষুধা নিবারণ হয়। তৃষ্ণা মেটায় তরতাজা রক্তে।
আলফা যখন ফিরে আসে, ততক্ষনে ফায়ার প্লেসের পাশে কিছু পাতা বিছিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরেছে হেলেন। আলফাও হেলেনকে কোলের ভিতরে নিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পরে।ফায়ারপ্লেসের উপকরণগুলো ততক্ষনে জ্বলে জ্বলে শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। শেষ ফু টা দিয়ে দেয় বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। চাঁদের এবং জোনাকির আলো ছাড়া আর কোন আলোরই দেখা পাওয়া যায় না এ গহীন জংগলে। জংগলের ভেতরে সকাল হয় একটু দেরীতে। সূর্যের আলো ভেতরে এসে ঢুকতে ঢুকতে একটু দেরী করে ফেলে। পাখির কিচির মিচির আওয়াজে আড়মোড়া দিয়ে ঘুম ভাংগে হেলেনের।
উঠে দেখতে পায় তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আলফা। হেলেনের জেগে ওঠার অপেক্ষা করছে। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আবার পথচলা শুরু হয় তার। যতদূর পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় যাবে। তারপর আলফার পিঠে চেপে পারি দেয়া যাবে আরো কিছু পথ। ম্যাপ খুলে কম্পাসের সাথে মিলিয়ে হেলেন তার গতিপথ ঠিক করে নেয়।
গহীন জংগলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে বেশ সাচ্ছন্দেই এগিয়ে যেতে থাকে সে। প্রকৃতির সাথে হেলেন খুব বেশি মিশতে পারে। সময় কোন দিক দিয়ে বয়ে চলে যায় তা একেবারেই অনুমান করতে পারে না হেলেন। তবে বেশ কিছুক্ষন পর, যখন শরীরে অবসাদ নেমে আসে, উপরে সূর্য্যের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে, এখন ভর দুপুর। বিশ্রাম নেয়ার মত একদম ই সময় হাতে নেই। হালকা পানি পান করে আলফার পিঠে আবার ও সওয়ারী হয় হেলেন।
আলফা রাতের মত দ্রুত গতিতে না ছুটলেও মধ্যম গতিতে এগিয়ে যায় বেশ কিছুক্ষন। কয়েক ঘন্টা সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিলো। তবে হঠাৎ বাঁধলো বিপত্তি। ছুক ছুক করে নাক দিয়ে কি যেন শুকতে লাগলো আলফা। হয়ত কোন কিছুর ঘ্রাণ পেয়েছে সে। হেলেনের আদেশ উপেক্ষা করেই ঘ্রাণ অনুসরণ করে আলফা ছুটে চলে ভিন্ন পথে। ঝোপ ঝাড়, ছোট নালা ডিংগিয়ে বেশ কিছুক্ষন ছোটার পরে উপস্থিথ হয় ছোট একটা টিলার মত উঁচু জায়গার সামনে। এতক্ষন আলফার পিঠে বসে কথা অমান্য করার জন্য চড় থাপ্পড় চালাচ্ছিলো হেলেন, তবে আলফা টিলা টার সামনে এসে দাঁড়ানোর পরে হেলেন চড় থাপ্পড় থামিয়ে দেয়। নাকে এসে লাগছে প্রচন্ড বিদঘুটে একটা গন্ধ।
তবে সবথেকে বড় বিষয়, যেটা হেলেনের মাথায় চক্কর খাওয়ায় সেটা হলো একটা হাতের কড়ি,
স্বর্ণের হাতের কড়ি,
এই কড়িটাকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে হেলেন। এরিকের হয়ে গুপ্তঘাতকের কাজ করা লোকদের লিডারের হাতের কড়ি। হঠাৎ করেই ফ্লাশব্যাকে ফিরে যায় হেলেন। সেদিন যে আটজন কে সামুয়্যেলকে ধরার জন্য পাঠানো হয়েছিলো, সে আটজনের দলের নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিটির হাতে সব সময় দিয়ে রাখা স্বর্নের কড়ি টি দেখতে পায়নি হেলেন।
সেই কড়ি এখানে পড়ে আছে কি করে!! আর এত বিদঘুটে গন্ধটাই বা কিসের!!
আলফার পিঠ থেকে নেমে কড়িটি হাতে নিয়ে সামনের উঁচু টিলাটির দিকে তাকায় হেলেন। ওপাশে কি আছে তা দেখার জন্য মন আনচান করতে থাকে তার।
সামনে দু পা এগোতেই আলফার মুখ থেকে ঘড় ঘড় আওয়াজ শুনতে পায় হেলেন। সে থেমে যায়। হেলেন বুঝতে পারে আলফা তাকে ওদিকে যেতে বারণ করছে। আগে আলফা গিয়ে ওপাশটা দেখে,বিপদমুক্ত হলে হেলেনকে সংকেত দিবে, তারপর সে যাবে।
দু লাফে টিলার উপরে উঠে যায় আলফা। ওপাশে চোখ রাখার পর ই পাগলের মত ছুটোছুটি করে গলায় অদ্ভুত এক আওয়াজ করতে থাকে। হেলেন আলফার এমন আচরণের সাথে একদম ই পরিচিত নয়।
হেলেন এগিয়ে যায় টিলার দিকে। আলফা দৌড়ে এসে তাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হেলেন অনড়। ওপাশে কি আছে দেখতেই হবে। আলফা হেলেনের কাপড় কামড়ে ধরে তাকে থামিয়ে দেয়। হেলেন ঘাড় ঘুরিয়ে আলফার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আলফা ভয়ে হেলেনকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু গা ঘেষে হেলেনের সাথে এগিয়ে যায় সামনে। হেলেন টিলার উপরে উঠে অপরপাশের দিকে দৃষ্টি দেয়। সাথে সাথেই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরতে হয় তাকে।
লম্বা চুল মাটিতে ছড়িয়ে, মাটির উপরে ঊপুর হয়ে পরে আছে একটা বিচ্ছিন্ন মাথা। একটু দূরেই কাটা একটা হাত, তার পাশে মেয়েটার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন এক পা। আরেকপাশে পরে আছে বাকি দেহ সহ আরেক পা। তলপেট চিড়ে বুকের ও পেটের ভেতরের অর্গান গুলো কোন বন্য জীব জানোয়ার খেয়ে গিয়েছে। শুধু খোলস টা ই অবশিষ্ট আছে।
এত বিভৎস দৃশ্য আগে কখনোই দেখে নি হেলেন। চোখ ফেটে পানি চলে আসে তার।
সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারে, মেয়েটির সাথে কি হয়েছিলো।
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন একটা মেয়ের লাশ দেখে যখন চোখে ঘোর লেগে গিয়েছিলো হেলেন এর তখন ই কুঁই কুঁই শব্দ করে মাটিতে লুটিয়ে পরে আলফা।
কে বা কারা যেনো আলফার গায়ে বেশ কিছু পয়জন ডার্ট ছুড়ে মেরেছে। জংগলের বিষাক্ত গাছের আঠা ছ ইঞ্চি সুঁচালো তীরের মাথায় লাগিয়ে পাইপে ফুঁ দিয়ে ছুড়ে মারা হয় শিকারের বস্তুর দিকে। বিষের প্রতিক্রিয়ায় শিকার খুব তাড়াতাড়িই অজ্ঞান হয়ে যায়।
আলফাকে তির খেয়ে লুটিয়ে পরতে দেখে চারদিকে চোখ বুলায় সে। হেলেন নিজেকে
আবিষ্কার করে বন্দি অবস্থায়। চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলেছে বনদস্যু রা।
গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ডার্ট মেরেছিলো আলফার গায়ে।এতটাই দক্ষ ও নিশ্বব্দে হেঁটে এসেছে তারা, আলফা মোটেও টের পায়নি। এভাবেই হয়ত দক্ষভাবে শিকার করে জীবন ধারণ করে জংগলে থাকা মানুষরা। সবাই আস্তে আস্তে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
একটু পরে তাদের মাঝে উপস্থিত হয় ঐ দলের সর্দার। সর্দার কে দেখা মাত্রই খুশি হয় হেলেন। এরিকের বাসায় তাকে মাঝে মধ্যেই যেতে দেখত সে। সর্দারের নাম ও জানা আছে তার, " জোমাইন"।
হেলেন ও আলফাকে দেখেই জোমাইন তাদের চিনতে পারে।নিজের শিষ্যদের উপরে প্রচন্ড ক্ষেপে যায় জোমাইন। যদি কোনভাবেও এরিক জানতে পারে, হেলেন ও তার পোষ্য নেকড়েকে ভুল বশত ও আক্রমণ করা হয়েছিলো, তাহলে সবার গলা কাটা যাবে, এটা নিশ্চিত।
এরিকের হাত থেকে বাঁচতে হলে এখন উপায় একটা ই আছে। হেলেনকে মেরে ফেলা এবং গুম করে দেয়া, যাতে এরিক কখনোই জানতে না পারে হেলেন কোথায় আছে কেমন আছে, তাহলেই আর ঝামেলা হবে না। জোমাইন যখন সবাইকে আদেশ দেয় হেলেনকে মেরে ফেলার জন্য, হেলেন একদম নির্ভীক ভাবেই তার হাতের চাকু বের করে দাঁড়িয়ে যায়। সে খুব ভালো করেই আত্মবিশ্বাসী, এ ক'জন লোককে পরাস্ত করতে কোন সমস্যা ই হবে না হেলেন এর।
কিন্তু হেলেন এর ধারণা ভুল ছিল। হঠাৎ সে অনুভব করে তার পিঠে এসে বিঁধে গিয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট তীর। তীব্র বিষের প্রতিক্রিয়ায় হেলেন চোখে আবছা দেখতে শুরু করে।
এ অবস্থায় যুদ্ধ করা যাবে না। বাঁচার জন্য হেলেন টিলা থেকে খুব জোরে একটি লাফ দেয়। যারা হেলেনকে মারতে এসেছিলো তাদের মাথার ওপর দিয়ে ওপাশে গিয়ে পরে হেলেন। তার পর যেদিকে চোখ যায় ছূটতে থাকে। কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সবাই। এতগুলো বিষাক্ত তীর গায়ে বিঁধলে বনের সবথেকে বড় জন্ত হাতিও কয়েক সেকেন্ডে মাটিতে পরে যায়, আর এই মেয়েটা দিব্যি গায়ের জোরে দৌড়ে চলেছে!! বিষ্ময় কাটিয়ে উঠে কিছুক্ষন পর তারাও হেলেনের পেছনে ছুটতে শুরু করে।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়াতে থাকে হেলেন।
তার সাথে দৌড়ে কুলায় এমন মাত্র পাঁচ ছজন শক্তিশালী ব্যক্তি ই ছিলো ঐ দলে।
হেলেনকে ওরা ই পেছন পেছন তারা করতে থাকে। বাকি সবাই হাঁপিয়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেয়। ঝোপ ঝাঁড়, গাছের গুড়ি ডিংগিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটতে থাকে হেলেন। পেছনেই তাড়া করছে সাক্ষাৎ মৃত্যু।
বৃষ্টির ফোঁটা এসে গায়ে লাগে তার।
চারদিক তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নেমেছে আরো কিছুক্ষন আগেই।
হেলেন পৌঁছে গেছে কোন এক জনপদে।কিন্তু তাও কোথাও কোন লোকজন নেই। পেছনে এখনো ছুটছে জানোয়ারগুলো। শক্তি প্রায় শেষ হেলেনের৷ হঠাৎ অদূরে কোন এক দোকানে টিমটিমে আলো দেখতে পায় সে।
দৌড়ে গিয়ে সেখানে ই ঢুকে পরে। দোকানের সামনের দিকে বসা বৃদ্ধ একটা লোক। তাকে কিছু বলার সময় নেই। ছূটে ভেতরের দিকে চলে যায় সে।
কতবড় একটা বোকামি হলো এখানে ঢুকে সেটা হেলেন বুঝতে পারে একটু পরেই। শেষমেশ হয়ত ধরা পরে ই গেলো!! জ্ঞান আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা হেলেনের। ওরা এসে হাত ধরে ফেলেছে।
ওদের মোটা পায়ের ফাঁক গুলো দিয়ে হেলেন বিজিলীর আলোতে দেখতে পায় দরজায় দাঁড়ানো কোন একজন অদ্ভুতুড়ে মানুষকে। অকারণেই মনে একটু আশার আলো দেখে সে। তারপর আর কিছু মনে নেই তার।
.
.
.চলবে..
.
tag:-
bangla thrilar story 
বাংলা থ্রীলার গল্প
হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ এর গল্প
বাংলা নতুন গল্প
থ্রীলার গল্পের লেখক
ডেভিল স্টোরি বাংলা

Post a Comment

Previous Post Next Post