গল্পঃ ব্লাক-ক্যাফেটেরিয়া ☕ পর্ব ১২ | লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।



গল্পঃ ব্লাক-ক্যাফেটেরিয়া ☕ পর্ব ১২

লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।


______________________
নদীর দু'পাশে যেমন দুরকম জীবনব্যাবস্থা বিদ্যমান,
বিশাল এবং বিস্তৃত ঘন বন-জংগলের দুপাশের অবস্থাটাও ঠিক তেমনি। 
সাধারণত বড় কোন নদীর এক পাশে খুব দ্রুত শহরায়ন হয়, গড়ে উঠে বড় বড় অট্টালিকা, শপিং মল সুপার-শপ, পার্ক কিন্তু অপর পারের চিত্র আবার একেবারেই আলাদা থাকে, সেখানে বসবাস করে কৃষক, জেলেরদের মত নিম্নবিত্ত পরিবারেরা নদীর মতই দুপাশকে আলাদা করে দিয়েছে এই বিশাল বন। হেলেনদের আবাসস্থল ছিলো উন্নত শহরের একদম মাঝে। এরিক তার  ব্যাবসা এবং চাঁদার টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছিলো বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলের মত ভবন। তবে শহরের মাঝের উন্নত এ অট্টালিকা ছাড়াও জংগলের কোল ঘেঁসে তৈরি করেছিলেন অন্য একটি আবাসস্থল। শহুরে জীবনের হট্টোগল ও শব্দদূষন থেকে বের হয়ে একটু রিল্যাক্স করার জন্য ই যে এরিক জংগলের পাশ ঘেঁষে এ বাড়িটি বানিয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। এ বাড়িটার ভিতরে এরিক তার কালো টাকা গুলো লুকিয়ে রাখতো। শহরের মাঝের  বড় ভবনের বাড়িটার ভিতরে  ছিলো উপাসনালয়,  গোসল করার জন্য সুইমিংপুল, মাথার উপরে বিলাসবহুল ঝাড়বাতি, উন্নতমানের সোফা,চেয়ার টেবিল।
 তবে জংগলের একটু পাশ ঘেঁসে তৈরি করা একতলা বাড়িটার এড়িয়া ছিলো জেলখানার দেয়ালের মত উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা,ছিলো ঘোড়ার আস্তাবল, হাঁস মুরিগীর খোপ, কবুতর।
  এরিক তার প্রিয় নেকড়ে আলফাকেও এখানে রাখতেন,
হেলেনকে বাড়ির উঠোনে যুদ্ধবিদ্যার দীক্ষা দিতেন।
এ একতলা বাড়িটির আসবাবপত্রতেও একটা পুরাতন রহস্যময় ভাব ছিল।এখানের থালাবাসন গুলো ছিলো কাঁসা এবং পিতলের  তৈরি।
এড়িক এ বাসাতে বসেই জংগলের ভিতরে বসবাস করা সব বনদস্যু-সর্দারদের নিয়ে বৈঠক করতেন। এছাড়াও শহরে থাকা সব অন্ধকার জগতের লোকদের সাথে বৈঠক করার এবং টাকা আদান প্রদান করার জন্য এ বাসাটিই সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হতো।
হেলেন অট্টালিকার চারদেয়ালের মাঝে বদ্ধ থাকার চেয়ে আলফা ও রিওর সাথে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং দেখাশোনা করার জন্য ছিলো বিলওয়াল। 
বিলওয়াল পরিশ্রমি হওয়ায় গুপ্তচরের দায়িত্বটাও ওর কাঁধেই ছিল। আর সবথেকে বড় কথা এরিকের গোপন সমাধি ও হয়েছে এ বাসাতেই  খড়ের গাঁদার নিচে। নিজের বাবার মৃতদেহকে এভাবে অবহেলায় খড়ের গাঁদার নিচে পুঁতে রাখতে কেন যেন তেমন বেশি কষ্ট হচ্ছিলো না হেলেন এর। হবেই বা কিভাবে, তার অনুভূতি গুলো তো সিস্টার মেরীর মায়াজালে বন্দি ছিলো।
জংগলের এই পাশ যেমন উন্নত ছিলো, অপর পাশটা ছিল তেমনি  অনুন্নত।বৃদ্ধ ক্রুইফের মত মধ্যবিত্ত পরিবারদের বসবাস। শহরে বড় বড় অপকর্ম করে অনেক ক্রিমিনাল ই গা ঢাকা দিত গহীন জংগলে। আশ্রয় নিত বনদস্যুদের কাছে অথবা দু দিনের পথ পাড়ি দিয়ে  চলে আসতো  এপারে এসে কয়েকমাস গা ঢাকা দিয়ে থেকে আবার সুযোগ বুঝে শহরে উঠে যেত।
তবে এই মফস্বল ধরে  দেড়শো  কিমি পথ এগুলে আবার একটা নতুন শহরের সূচনা, সে শহর জংগলের ওপারের এরিকের শহরের থেকেও উন্নত। সেখানেই বেড়ে উঠা রোমান নামক ছেলেটির। ক্রুইফের বাসা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা মাত্র পুলিশ স্টেশন। 
পুরো মফস্বল সেই একটা পুলিশ স্টেশনেরই আন্ডারে।
এখানে এসে হুট করেই কোন কূল কিনারা করতে পারছে না রোমান। প্লান  ছিল হেলেনকে নিয়ে সে বনদস্যুদের  ডেরায় হামলা দিবে। এদিকে সব কিছুর বন্দোবস্ত করার কাজ শুরু হয়ে গেলেও হেলেনকে সকাল থেকেই খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ। অবশ্য আলফা চাইলে হেলেনের গন্ধ শুঁকে হেলেনকে অনায়াসেই খুঁজে বের করতে পারে, কিন্তু হেলেন নিজেই নিষেধ করে গিয়েছে আলফাকে এমন কিছু করতে। বেশ চিন্তিত হয়ে পরে রোমান। মন খারাপ করে ঘরের এদিক সেদিক পায়চারি করতে থাকে। কি করা উচিৎ একদম ই ভেবে পাচ্ছিলো না  সে। 
.
.
এদিকে রাগে ফুলে ফেঁপে উঠেছে সিস্টার মেরি। এতদিন হয়ে গেছে, কোন প্রকার খোঁজ নেই হেলেনের। 
তার প্লান কি তাহলে ব্যর্থ!!গোপনে অনেক দূর এগিয়েছিলো সিস্টার মেরী। খড়ের গাঁদার নিচে যেখানে এরিক কে কফিন সহ পুঁতে দিয়েছিলো হেলেন এবং বিলওয়াল৷ তার পাশেই বিনা কফিনে পোঁতা আছে হেলেনের মায়ের লাশ। কিন্তু হেলেন সেটা জানে না। হেলেন ভেবেছিল স্যামুয়েলের সাথে তার মা হয়ত ভেগে গিয়েছে।  তবে হেলেনের কোন কারণ ছিলোনা জংগলের  দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ওর মায়ের খোঁজ করতে  যাওয়া, সিস্টার মেরী বুঝিয়েছিলো হয়ত ওর মাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এজন্য হেলেন প্রথমে আট জন সদস্যের একটা টিম পাঠালেও তারা বিপথগামী হয়ে একটা জংলী মেয়েকে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে খুন করে। এটা কোনভাবে ওহমার দৃষ্টিগোচর হয় এবং ওহমার অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে ঐ আটজন ফিরে আসে হেলেনদের ডেরায়।
 চাইলে ওহমা ওখানেই ঐ আটজন কে মেরে ফেলতে পারতো। কিন্তু সে চেয়েছিল সিস্টার মেরীকে তার বর্তমান ক্ষমতা সম্পর্কে একটু ধারণা দিতে। সিস্টার মেরী যখন বুঝতে পারে বর্তমানে ফিনিক্স তার শক্তি ক্ষমতা অনেক বেশি বাড়িয়ে ফেলেছে, তখন ই সে ভয় পাওয়া শুরু করে এবং প্লান করে হেলেন কে হত্যা করে তার ক্ষমতা ফিরিয়ে নেয়ার। হেলেন মাঝবয়সী হলে সিস্টার মেরীর জন্য একটু বেশি ই উপকার হত, কিন্তু অপেক্ষা করার সময় সিস্টার মেরীর হাতে নেই। কারণ যে কোন সময় ফিনিক্স তার উপর আক্রমণ করলে  সে নির্ঘাত মারা পরবে। ফিনিক্সের মোকাবেলা তো দূরের কথা
 হেলেনকে  সামনা সামনি মারার মত শক্তি ও সিস্টার মেরীর ছিলো না। কারণ হেলেন ছিল অনেক বেশি সতর্ক,  যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী,  এছাড়াও বিলওয়াল বা আলফা সার্বক্ষনিক হেলেনের সাথে থাকতো।
মেরী হেলেনকে ভুলভাল বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয় স্যামুয়েলের বাড়ির উদ্দেশ্যে।এর একদিন আগেই মেরী  একজন বনদস্যুর সাথে আলাপ করে পথিমধ্যে হেলেনকে মেরে ফেলার গোপন চক্রান্ত করে রাখে।কিন্ত সৌভাগ্যক্রমে  হেলেনকে সেদিন মারতে পারেনি কেউ। এদিকে হেলেনের মৃত্যু হয়নি, আবার ওর কোন খোঁজ খবর ও নেই,  হেলেন মারা গেলে মেরী তার ক্ষমতা ফিরে পেত। যেহেতু পায়নি, তাই সে বুঝে যে হেলেন জীবিত আছে এখনো। কিন্তু ওর খোঁজ কেউ ই দিতে পারে নি। টেনশনে পরে যায় মেরী। যদি হেলেন ওহমার হাতে পরে বা কারো সাথে ফিজিকাল রিলেশিনে আবদ্ধ হয়ে যায়। নিজের ভুলের কারণে নিজেই আফসোস করতে থাকে। ওহমার উপস্থিতি ঐ জংগলে আছে জেনেও হেলেনকে ওখানেই পাঠানো টা বোকামি হয়েছে একটা। 
সিস্টার মেরী খুব দ্রুত বনদস্যু সবাইকে বিলওয়ালের মাধ্যমে জড়ো করে বৈঠক বসায়। বিলওয়ালের অগোচরে সবাইকে এরিকের জমানো টাকা থেকে বিপুল পরিমান দান করে এবং বলে দেয় হেলেনকে যেভাবেই হোক না কেন, দু তিনদিনের ভিতর মেরে ফেলতে। 
এর হেরফের হলে বনদস্যুদের সবাইকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে, হুমকি দেয় সিস্টার মেরী। এরিকের কারণেই বনদস্যুদের ধরতে সাহস করতো না পুলিশরা।
সিস্টার মেরী সবাইকে বুঝিয়েছে হেলেন এরিকের নিজের মেয়ে না। হেলেন অনেক টাকাপয়সা নিয়ে এরিক কে জখম করে পালিয়ে গিয়েছে। এরিক তাই অসুস্থ আবস্থায় আছে এবং সিস্টার মেরীকে দায়িত্ব দিয়েছে হেলেনের মৃত্যু নিশ্চিত করার।উপাসনালয়ে কাজ করা সিস্টার মেরীকে ধার্মিক ভেবেই তার কথা অবিশ্বাস করেনা  বনদস্যুরা। এছাড়াও ওরা এরিকের বিপরিতগামী  হওয়ার কথা কল্পনাও করত না। সবাই মিলে তাই প্রতিজ্ঞা করে  যে করেই হোক হেলেনের মৃত্যু নিশ্চিত করবে ওরা৷ 
.
.
গত দুদিন ধরে হেলেন নিঁখোজ। হেলেন বা রিও কাউকেই পাওয়া যাচ্ছেনা।  এদিকে রোমান আক্রমণ করার প্রায় সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। 
রোমান তার  এ অপারেশনের নাম দিয়েছে মিশন ওয়াইল্ড হান্ট। 
এবং টোটাল ৫০ জন সশস্ত্র  বাহিনীর  একটা টিম তৈরি করেছে যাদের ভূষিত করা হয়েছে এইচ স্কয়াড ( H. squad)   নামে।
শুধুমাত্র রেকি করার কাজ বাকি, যেটা হেলেনকে সাথে নিয়ে করতে হত। কিন্তু তাকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
.
.
.
 পড়ন্ত বিকেলে  আরো একটা পুরানো আমলের জিপ এসে থামে ক্রুইফের বাড়ির সামনে।
জিপটা একজন ব্যক্তিতে  বাড়ির  সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। রোমানের ব্যাবহৃত গাড়ি পার্ক করা দেখে নিশ্চিত হয়ে লোকটি ক্রুইফের বাড়ির আংগিনায় ঢুকে পরে৷ ঠক ঠক ঠক করে দরজায় টোকা দেয়। 
দরজা খুলেন মিসেস ক্রুইফ।
খুলেই দেখতে পান  খাঁকি রং এর ড্রেস পরা মাথায় সবুজ টুপি দেয়া একটা লোক দাঁড়িয়ে মুচকি মুচিকি  করে  হাসছে। 
-কে আপনি? জিজ্ঞেস করেন মিসেস ক্রুইফ।
- হিহিহিহি, আমি সিদ্দীক। 
- মুসলিম?
- আলবৎ। আমি কেনো?  আমার বাবা দাদা, সবাই মুসলিম।
- কাকে চাচ্ছেন? 
- রোমান স্যার আছেন এখানে? 
- হ্যাঁ। 
- আমি ওনার বাসার দারোয়ান ছিলাম। আবার বলতে পারেন কাছের মানুষ ও। আমাকে খবর দিয়ে এনেছেন উনি। 
মিসেস ক্রুইফ হাসিমুখে ভেতরে আসতে বলেন সিদ্দীক কে। 
বলেন, সিদ্দীক একটি সুন্দর নাম। এর অর্থ জানো তো?
- মাথার সবুজ ক্যাপ খুলে জিহবা বের করে মাথায় হাত দিয়ে বলে, ওহ নো!!  আমার নামের অর্থই আমি জানি না!! 
- সিদ্দীক মানে হচ্ছে সত্যবাদী। 
কথোপকথনের ভিতরে প্রবেশ করে রোমান। সিদ্দীক রোমানকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এত জোড়ে রোমানকে জড়িয়ে ধরে,রোমানের পা মাটি থেকে দু ইঞ্চি উপরে উঠে যায়। মাথায় দু চারটা চাটি দেয়ার পর সিদ্দীক রোমানকে ছেড়ে দেয়। 
মাথা নুইয়ে বলে, সরি স্যার, আসলে অনেক দিন পর দেখলাম তো!! আপনি সুস্থ আছেন?
- হু। তোকে এনেছি কেন এখানে জানিস? 
-  জানি স্যার, সিগারেট আনানোর জন্য। 
- রোমানের চোখেমুখে বিরক্তি ফুটে উঠে।
মিসেস ক্রুইফের দিকে তাকিয়ে রোমান  বলে,আন্টি, আজ থেকে বাজার সদয় যা দরকার পরে আমাকে বলবেন, আমি সিদ্দীক কে দিয়ে আনিয়ে নেব। ক্রুইফ আংকেলের বাজারে যেতে হবেনা। টাকাও খরচ করতে হবেনা।
শুধু আমাদের দুজনকে সহ্য করতে হবে আপনার।
সিদ্দীক আসলে ভুল কিছুও বলে নি। রোমানের সিগারেট আনতে অনেক দূরে যেতে হত। অপারেশনের রেকি করার টাইমে বারবার সিগারেট কিনে আনতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হবে। এজন্য ই মূলতো সিদ্দীক কে খবর দেয়া হয়েছে।
 সিদ্দীক আসার পর থেকেই মিসেস ক্রুইফের সাথে  একদম লেগে থেকে সারাদিন আড্ডা  দেয়া শুরু করেছে। 
খ্রিস্টান মেয়েরা  অনেক সুন্দর হয় কিনা এটা জেনে নেয়ার চেস্টা করছে বিভিন্ন আংগিকে। 
হেলেন যে রুমটায় থাকতো, আলফা এতক্ষন সেখানে ঘুমিয়ে ছিলো। রোমানের মনটাও একটু বিষন্ন ছিলো। সে ঠিক করে আলফাকে নিয়ে বাইরে ঘুরে আসবে। ততক্ষনে সন্ধ্যা নেমেছে। ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে চা খেয়ে আসার জন্য আলফাকে ডেকে তোলে রোমান।
আলফা রোমানের পেছন পেছন বাইরে আসে। সিদ্দীক  আলফাকে দেখে ভয় পেয়ে দৌড়ে মিসেস ক্রুইফের রুমে চলে আসে। এসে  ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। 
সিদ্দীকের স্বভাব আগে থেকেই জানতো রোমান। তাই বেশি অবাক না হয়ে আলফাকে নিয়ে নেমে পরে বাইরে।
রোমান তখন ও ভাবতেও পারছিলোনা কি অপেক্ষা করছে তার জন্য!
একমাত্র রোডলাইটের টিমটিমে আলোর ভিতর দিয়ে যখন হাঁটছিলো রোমান, ফুশ করে একটা  বর্শা তার কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। বর্শা হলো লম্বা লাঠির মাথায় লাগানো ধারালো ফলাযুক্ত একপ্রকার অস্ত্র। রোমান ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় আরো একটি বর্ষা ছুটে আসছে তার ঠিক কপাল বরাবর। কোন দিকে সরার সুযোগ ও হয়ত ছিলো না রোমানের। এরই মাঝে হুট করে  আলফা লাফ দিয়ে সামনে চলে আসে।
এক চোখের ভিতর দিয়ে বর্শা গেঁথে যায় আলফার। 
রক্ত বেয়ে পরতে থাকে টপ টপ করে। একটা হুংকার দিয়ে রোমান কে পেছনে রেখে সামনে গার্ড দিয়ে দাঁড়ায় আলফা। 
রোডলাইটের আলোতে অন্ধকার থেকে দৃশ্যমান হয় প্রায় বিশ জনের মত বনদস্যু। সবার হাতেই ধারালো অস্ত্র।
আলফা আরো একটা আকাশচেড়া হুংকার দেয়। 
একটা বড় লাফ দিয়ে ঝাপিয়ে পরে  ওদের উপর।  এক কামড়ে একজনের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে। আরেকজন ওকে  মারার জন্য ধারালো ছুড়ি উঠাতেই তার হাত কামড়ে ছিড়ে ফেলে আলফা কিন্তু তৃতীয় অন্যজনের একটা বর্শা এসে ওর পেট এঁফোড় ওফোড় করে দেয়। 
তবুও থামানো যায়না আলফাকে। একের পর একজনের উপর ঝাপিয়ে পরতে থাকে সে। যার শরীরে আলফা যতটুকু জায়গা জুড়ে একটা কামড় বসায়,  তার ততটুকু অংশ একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এভাবে এগারো জনের নির্মম মৃত্যু হয় আলফার আক্রমনে কিন্তু অনেক গুলো ধারালো অস্ত্রের কোপ এবং বেশ কয়েকটা বর্শা আলফাকে বিধ্বস্ত করে দেয়।
শেষের একটা বর্শা এসে আঘাত করে আলফার একদম মাথার ভিতর। সাদা ফুরফুরে লোমগুলো লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। বীরের মত যুদ্ধ করতে  করতে একসময় ধুলোর উপর গা এলিয়ে পরে আলফার। ওদের দলের ৯ জন তখনো জীবিত। এগিয়ে আসে রোমানের দিকে। রোমান তার রিভালবার বের করে ছয় রাউন্ড গুল চালায়। লুটিয়ে পরে আরো ছয়জন।রিভালবারে ছয় রাউন্ডের বেশি গুলি ছিল না। বাকি রইলো তিনজন। এদের জন্য রোমানের  কারাতে বিদ্যা ই যথেষ্ট। 
কিন্তু না, রোমান ভুল ছিলো। আড়াল থেকে দৃশ্যমান হয় আরো গোটা দশেক বনদস্যু। 
বেশ কয়েকটা বর্শার আঘাত থেকে কৌশলে নিজের গা বাঁচিয়ে নেয় রোমান। ধারালো ও বড় ছুড়ি হাতে এগিয়ে আসতে থাকে সবাই। রোমান ও আস্তে আস্তে পিছু হটতে থাকে। পিছনে যেতে যেতে হঠাৎ শক্ত কিছু একটার সাথে পিঠে  ধাক্কা খায় রোমান। এই বুঝি দেয়ালেই পিঠ ঠেকে গেল।কিন্তু রোমানকে অবাক করে দিয়ে সবাই নিজ হাতের অস্ত্র ফেলে দৌড়ে চলে যায়। 
পেছনে ঘুরে তাকায় রোমান। শক্ত কোন বস্তুর সাথে সে ধাক্কা খায়নি। ধাক্কা খেয়েছে একজন ব্যক্তির সাথে, রোমান খুব ভালোভাবেই চিনতে পারে, ব্যক্তিটি আর কেউ নয়। ওহমা তকিতা। 
.
.
.
- চলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post