তুমিময় শীত । লেখাঃ আরফিন রিয়া



 পাশের বারান্দায় দাড়ানো দাদুটার গায়ে চাদর পড়া দেখে বুঝতে আর বাকি রইল নাহ যে শীতকাল তাহলে চলেই এল🍂

শীতকাল আমার ভীষণ প্রিয় কারন শীতকালের

 সৃতিতে তুমি মেখে আছো☹️

 শীতের শুরুতে হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় কফিভরা গরম কাপ নিয়ে জানালার পাশে বসে "খোলা জানালা....." শুনতে শুনতে তোমার সাথে কত হাজার কথাই না বলা হয়েছে। 

তোমার মনে আছে? শীত এলেই আমি ভিষণ খুশি হয়ে যেতাম। শীতের ভোরে তোমার সাথে কুয়াশা ভরা রাস্তাগুলো হাঁটতে হাঁটতে মনে হত আমি হারিয়েগেছি স্বর্গ রাজ্যে💕

তুমি একটা কালো চাদর নিয়ে বের হতে আর আমরা এক চাদরে জড়োসড়ো হয়ে হাঁটতাম। শীতের প্রচন্ড দাপটও আমাদের দুজনের উষ্ণতাকে হার মানাতে পারত নাহ। তোমার একটা মেরুন কালার জ্যাকেট ছিল আমি তোমাকে একদম পরতে দিতাম না কেন জানো? ওটাতে তোমাকে বড্ড বেশি সুন্দর লাগত। আমি তো আবার অনেক বেশি হিংসুটে নিজের এত কাছের কিছুর ওপর অন্যের নজর পড়ুক এটা সহ্যই করতে পারতাম নাহ।আমাদের নিত্য দিনের সেসব অভ্যাস গুলোর কথা তোমার মনে পড়ে?

প্রতিটি ভোরে একসাথে চা না খেলে যেন দিনের শুরুটাই অসম্পূর্ণ থাকত।দুটো কাপে চা খাওয়া আমার সহ্য হত না বলে আমাকে খুশি করতে করিম মামার থেকে একটা বিশাল বড় মগে চা নিয়ে আসতে। কতবার যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতাম আমি তোমাকে আর ভাবতাম কিভাবে এই মানুষটা আমার বাচ্চামিগুলো এত অবলীলায় মেনে নিতে পারে!!

শীতের সকালের শিশির ভেজা "হলদে সর্ষে ফুল" আর  লম্বা লম্বা "হলুদের ফুল" আমার ভিষণ  প্রিয় বলে কতই না কষ্ট করে শিশিরের পানিতে ভিজেও একগুচ্ছ ফুল এনে কানে গুজে দিয়ে হাজারো হাজারো বায়নার মত এই বায়নাও পুরন করে দিতে😊

মনেপড়ে তোমার শিতের দুপুর ০১.৩০ মানেই আমার বাসার পাশের গলিতে তুমি এসে দাড়াতে আমাকে গোসল করার পর ভেজা চুলে রোদের ঝলমলানিতে কেমন লাগে তা দেখতে।আমি চারতলার ছাদের কর্নার থেকে চোখের ইশারায় কথা বলতাম আর ভাবতাম এত ভালো কেন বাসে ছেলেটা আমায়! কতদিন যে তুমি গোসল না করার জন্য এই শীতে বকা খেয়েছ আমার কাছে তা হয়ত গুনেও শেষ হবে না😆

শীতের বিকেল গুলোর কথা মনে আছে? 

শরীফ মামার চপ আমার পছন্দের ছিল বলে প্রতিবার দেখা করতে চকলেট এর সাথে ওই ১০ টাকার আলুর চপ গুলোও আনতে। একসাথে হাটতে হাটতে কখন ৫-৬ টা চপ একাই খেতাম খেয়ালই থাকত নাহ। প্রতিবার আমাদের তুমুল ঝগড়ার পর শীতের কনকনে ঠান্ডাতেও রাতের বেলাতে চলে আসতে আমার মান ভাঙাতে আমার বাসার বেলকুনির সামনে।যতক্ষণ না হাসিমুখ দেখতে পাগলের মত ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকতে।আমি তোমার ওই ছল ছল চোখ দেখেই আর না কথা বলে থাকতে পারতাম নাহ। একবার তো কথা বলিনি জন্য আমার কাজিনকে কল করে হাউমাউ করে কেঁদেছিলে। আগে জানতাম ছেলেরা নাকি শব্দ করে কাদে নাহ কিন্তু ওইদিন বুঝে ছিলাম আমাকে ছেড়ে থাকাটা সত্যি তোমার জন্য অসম্ভব। 

মনেআছে একবার তোমার সাথে জেদ দেখিয়ে ১২ টা আইসক্রিম খেয়ে একবার আমি কি কঠিন ঠান্ডা জ্বরে একটা অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক রাত পার করেছিলাম। আমি কথা বলতে পারছিলাম নাহ তবুও তুমি সারা রাত ধরে ফোনের ওপাশে ছিলে।পরদিন সকালে যখন আমাকে দেখতে এলে তখন তোমার চোখমুখ দেখেই বুঝেছিলাম সারা রাত চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছ। শীতের রাতগুলো অনেক বেশি মিস করি জানো।সেই কম্বলের নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার সুযোগটা বোধহয় শীতকাল ছাড়া আমরা পেতাম নাহ বললেই চলে।

সবকিছু মিলিয়ে শীত মানে "তুমি"

শীত মানে "আমরা" আর আমাদের হাজার কোটি সৃতি।

তাই এখন শীতকাল আসলেই বড্ড বেশি মন খারাপ লাগে।বারবার শুধু নিজেকে দোষী মনে হয়।কেন যে সেদিন তোমার পছন্দের পাকোরা খাওয়াব বলে তোমাকে আসার জন্য জেদ করলাম।

সেদিন যদি কুয়াশা ভরা রাস্তাটা একটু সাবধানে পেরুতে তাহলে হয়ত আমার থেকে আজ এত দূরে থাকতে হত না তোমাকে।আমি প্রতি শীতেই তোমার কবরের পাশে একটা করে লজ্জাবতী গাছ লাগিয়ে আসি কেন জানো? মনে হয় গাছটা সব সময় আমার চোখে ভাসে আমি ওটাকে অনুভব করতে পারি।কবে তুমি উঠে গাছটাকে ছুইয়ে দিবে আর গাছটার লজ্জায় নুইয়ে যাওয়া দেখে বুঝে নিব আমার শুভ্র আমার কাছে ফিরে এসেছে।

আর তারপর হাজারটা শীত পার করব দুজন একাসাথে।

ইশ আর একটা তুমিময় শীত যদি পেতাম!😥

-

কথায়ঃ আরফিন রিয়া

Post a Comment

Previous Post Next Post