গল্প: সার্ভাইভ সমাপ্তি পর্ব।লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ


গল্প: সার্ভাইভ
সমাপ্তি পর্ব
না, কারো ঘড়িই চলছে না। কারো মোবাইলই খোলা নয়। এমন সময় নেহা চিৎকার করে উঠলো। একটা বড় তেলাপোকা তার পাশে বসে সুঁড় নাড়ছে তাই দেখে। রিফাত তার খালি পানির বোতলে তেলাপোকাটাকে ঢুকিয়ে টেবিলে রেখে দিলো। আর নেহাকে উদ্দেশ্য করে বললো, "যখন ঘুমাবে তখন তোমার মুখে ঢুকিয়ে দিব।" ফাহাদ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো, "এ সময় টা ফাজলামি করার সময় না ফাহিম।আমাদের এখনই বের হতে হবে। আমার কাছে ভালো লাগছে না কিছুই।"
সবাই একটু ইতস্তত করলেও রাজি হয়। ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে সবাই উঠে পরে। জলসা ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা টানতেই তারা অবাক হলো! দরজা খুলছে না! ১০ ফুট উঁচু ও ৫ ফুট প্রস্থের দরজাটা তো খোলাই ছিলো এতক্ষন!! তবে এখন খুলছে না কেনো!!
আর আটকালোই বা কখন!! শব্দ তো কেউই পায় নি।
সবার মনের ভিতর এবার ভয় চেপে বসলো।
বাইরে এখন বেলা কয়টা তা জানারও উপায় নেই। ফাহিম বের হওয়ার অন্য কোনো রাস্তা খুঁজতে লাগল। কিন্তু খুঁজে পেলো না। তবে বড়-সড় রুমটার এক কোনায় গোসল ও প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য একটা ছোট্ট রুম পেলো। গোসলের জন্য রুম আছে। কিন্তু পানি নেই। তড়িৎ গতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিছু করার। ওদের কাছে পানি বা খাবার নেই বেশি। ফাহাদ লন্ঠন নামিয়ে কাঠের দরজা পোড়ার জন্য আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু ফলপ্রসূ হয়না। দরজায় একটু পোড়ার ছাপও পরে না। এদিকে নেহা কান্নাকাটি শুরু করেছে। কাল রাত থেকেই ক্লান্ত সবাই।বের হওয়ার উপায় ভাবতে ভাবতে সবাই একটা সময়ে ঘুমিয়ে পরে।
.
.
.
.
বেশ লম্বা ঘুম।
সবার আগে ঘুম ভাঙে ফাহাদের। সে ঘুম থেকে উঠে রুমের প্রতিটা অংশ তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে! কিছু পাওয়া যায় কিনা তার আশায়। বের হওয়ার জন্য কোন আলাদা উপায় কি আছে এখান থেকে!! মেকাপ রুমের ড্রয়ার থেকে শুরু করে সব কিছু খোঁজা শুরু করে সে। কিন্তু তেমন কিছুই পায় না। মদের কিছু বোতল আছে। সেগুলো খালি। বিছানার উপরের তোষক/জাজিম তুলে খোঁজার সময় হঠাৎ একটা কাগজের টুকরো পায় সে।
সেখানো রোমান সংখ্যা দিয়ে দাগ টানা। হিসেব করলে সংখ্যা টা হয় ১৩। কাগজটার নিচে বাংলা হরফে লেখা ১৬...
নিচের লেখাগুলো পড়তে যাবে এমন সময় ফাহিম ডাক দেয়, "ফাহাদ, আমরা কি আটকা পরেছি??"
ফাহাদ গম্ভীর গলায় উত্তর দেয়, "জানি না" প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে সবার। বেঁচে থাকতে হলে পানি তো খেতেই হবে। রিফাত ও নেহার ঘুম ভাঙার পর ওরা উঠে কোন কথা বলেনা। শুধু নিজেকে গালি দেয়া ছাড়া ওদের কাছে আর কিছুই করার ছিলো না।
বিভিন্ন ভাবে বের হওয়ার চেষ্টা করতে করতে কত ঘন্টা যে পার হয়ে যায়, তা ওরা নিজেরাও জানে না। তবে পানির তেষ্টা পেয়েছে ওদের খুব। সার্ভাইভাল রুলস কিছুটা জানা আছে রিফাতের। ও সবাইকে সাজেস্ট করলো নিজেদের মূত্র গুলোকে ব্যয় না করতে। কাঠফাটা তেষ্টায় অন্তত কিছুটা হলেও তৃষ্ণা মেটাবে। কিন্তু এভাবেও বা কতদিন!! বের তো হতে হবে।ইতিমধ্যে ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় সবাই উঠে চলাফেরা করার শক্তিও অনেকটা হারিয়ে ফেলেছে। নেহা উঠে টেবিলের কাছে যায়। বোতলে বন্দী তেলাপোকাটাকে বের করে, মরেনি এখনো। তেলাপোকারা খাবার ছাড়াও অনেক দিন বেঁচে থাকে। কোন কিছু না ভেবেই মুখের ভিতর চালান করে দেয় তেলাপোকাটাকে। কচ্ কচ্ শব্দে চিবুতে থাকে সে। বাকি তিনজন তাকিয়ে দেখছিলো মাত্র। অনুমান করতে পারে ওরা, প্রায় ৪৮ ঘন্টার মত আটকে আছে ওরা পানি এবং খাবার ছাড়া।
পেটের ক্ষুধায় পারলে নিজের হাত পা চিবিয়ে খেয়ে ফেলে এমন অবস্থা। আর তার থেকেও বড় সমস্যা করছে পানির পিপাসা। ফাহাদ আস্তে আস্তে নিজেকে চার হাত পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় নিজের ব্যাগের দিকে। ব্যাগ খুলে একটা আনন্দ চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। আমার ব্যাগে রুটি ছিলো!! অথচ আমার মনে নেই। কথাটা বলার সাথে সাথে বাকি তিনজন ওর দিকে প্রায় ছুটে আসে। ওর হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার জন্য রীতিমত ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে রিফাত। কিন্তু ফাহাদ তার ব্যাগ হাতছাড়া করতে নারাজ। হঠাৎ রিফাত সজোরে একিটা ঘুষি বসিয়ে দেয় ফাহাদের নাক বরাবর। তারপর ফাহাদের হাত থেকে ব্যাগ টা ছিনিয়ে নেয়।
নাক থেকে রক্ত মুছতে মুছতে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলে ফাহাদ। একটু ঝাপিয়ে পড়েই হাতের ছুড়িটা রিফাতের গলার মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দেয় সে। ফাহিম ও নেহা চিৎকার করে প্রতিবাদ করে উঠে। হাতে মদের বোতল নিয়ে ফাহাদকে মারতে আসে নেহা। ফাহাদ হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয় তাদের। রিফাত এখনো মারা যায় নি। ছটফট করছে। রিফাতের গলা থেকে গলগল করে বের হওয়া রক্তে চুমুক দেয় ফাহাদ। পানির তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। মানুষের রক্তের ৭০ ভাগ ই পানি।ফাহিম ও নেহাও ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়ে রিফাতের কাটা গলার উপর থেকে রক্ত পান করতে।ওরা তিনজন ই রিফাতের লাশটাকে ফ্লোরে ফেলে চার হাত পায়ে ভর দিয়ে জিভ টা ক্ষত স্থানে নিয়ে বের হওয়া রক্ত গুলো নিমিষেই খেয়ে নিচ্ছে। রিফাত তখন ও গোঁ গোঁ শব্দ বের করে হাত পা ছুঁড়ছিলো। ফাহাদ ওদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে এক নিশ্বাস এ কয়েক ঢোক করে রক্ত পান করে নিয়ে সরে যায়। নেহা ও ফাহিম তারপর আবার খেতে শুরু করে।পানির তেষ্টা মেটার পর ফাহাদ রিফাতের বুকের মাঝ বরাবর চাকু দিয়ে কাটতে শুরু করে। মানুষের কলিজার সাইজ খুব একটা ছোট হয়না।কলিজার সাথে হৃদপিন্ডটাও ভালো একটা খাবার হতে পারে। মাংস গুলোতো আছেই। রিফাতকে দিয়ে ওদের বেশ কয়েকদিন চলে যাবে।
তবে অদ্ভুত একটা ব্যাপার খেয়াল করলো ওরা। রিফাত মারা যাওয়ার সাথে সাথে ওদের ঘড়ি গুলো চলতে শুরু করলো। ওরা সেদিন এ বাড়িতে ঢুকেছিলো ৪:৪৫ এ। এখন ঘড়িতে বাজবে ৪:৪৬ অর্থাৎ এতদিন বন্ধ থাকার পর আজ আবার ঘড়ি চলতে শুরু করেছে।
ধীরে ধীরে দিনের পর দিন পার হয়ে যেতে থাকে। ওরা বন্দী অবস্থায় আছে তিনজন। এদিকে রিফাতের লাশ থেকে গন্ধ বের হতে শুরু করেছে। চাকু দিয়ে কেটে কেটে খাওয়ার ফলে অনেক জায়গা থেকে হাড় বের হয়ে এসেছে। নেহা এবং ফাহিম দুজন বিছানার দু দিকে পরে আছে। ফাহাদ হাতের চাকুটা মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে
গম্ভীর কন্ঠে ওদের বলল,
" পৃথিবীর সব কিছুই নিয়ম মেনে চলে। আমরা একটা গোলক ধাঁধায় আটকে গিয়েছি।এটা থেকে বের হওয়ার পথ নিশ্চয়ই আছে। শুধু নিয়মটা অনুসরণ করতে হবে। যে বা যারা আমাদের আটকে রেখেছে, তাদের যদি উদ্দেশ্য থাকতো আমাদের মেরে ফেলার তবে অনেক আগেই মেরে ফেলত। আমাদেরকে বেঁচে থাকার অপশন দিয়েছে। এখন বের হতে হলে আমাদের কোন একটা উপায় বের করতেই হবে।
ফাহাদের কথা শোনার মত মুড এখন আর নেহা বা ফাহিমের কারোই নেই। ফাহিম হঠাৎ করে গরগর করে বমি করে দেয়। লাশের গায়ের গন্ধ আর বমির গন্ধে পরিবেশ আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে। নেহা কাঠের দরজাটা ধরে কিছুক্ষন টানা টানি করে বৃথা খোলার চেষ্টা করে। তারপর শক্তি হারিয়ে ওখানেই দরজার পাশে শুয়ে পরে। ফাহিম গোঙাতে গোঙাতে লাশ থেকে একটু দূরে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরে।
ফাহাদ উঠে একবার মেকাপ ঘরের দিকে যায়। ফাহিমের বমির গন্ধে ওর ও বমি আসছিল খুব। মেকাপ ঘরে ঢুকে বড় বড় আয়নাগুলোর সামনের চেয়ারে বসে পরে ও । এভাবে কেটে যায় কয়েকমুহূর্ত।
.
.
.
হঠাৎ আয়নার ভিতর থেকে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
"ফাহাদ"
আয়নার দিকে তাকিয়ে ফাহাদ দেখলো কয়েকদিন আগে যে রিফাত কে ও খুন করেছে, সে আয়নার ভিতর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সাথে সাথেই ফাহাদ হাতে থাকা ছুরিটা ছুড়ে মারে আয়নার উপর। বিকট ঝনঝন শব্দে আয়নাটা ভেংগে ফ্লোরে পরে যায়। যে জায়গাটায় আয়না ছিলো সেখানের দেয়ালে চোখ যায় ফাহাদের। তাজা লাল রক্ত দিয়ে রোমান সংখ্যায় দাগ টানা।ঠিক যে রকম দাগ টানা ছিলো সেই খুঁজে পাওয়া কাগজ টার উপর।তবে কাগজের উপর দাগ ছিলো ১৩ টি।
কিন্তু দেয়ালের উপর ১৪ টি দাগ। কাগজটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখতে শুরু করে সে।দাগের রহস্যটা হয়ত ওদের মুক্তি পাওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
ফাহাদ বের হয়ে ব্যাগ নিয়ে আসে।আনার সময় দেখতে পেল ফাহিম তার নিজের শার্ট খুলে হাসছে, এ হাসির কারণ খোঁজার সময় ফাহাদের নেই। ফাহাদ ব্যাগের ভিতর থেকে খাতা কলম নিয়ে আবার চলে আসে মেকআপ রুমে। এসে ওদের সাথে যা যা ঘটেছে তা ঝটপট লিখতে থাকে খাতায়। সব ঘটনার ভিতর লিংক খুঁজে বের করা ছিলো ওর উদ্দেশ্যে।
.
.
.
নেহা জলসা ঘরের দরজার সামনে পা ভাঁজ করে কাত হয়ে শুয়ে আছে, ফাহিম চোখ বুজে হাসতে থাকে। সে জানে জীবনের শেষ কয়েকটি দিন সে পার করতে যাচ্ছে।
হঠাৎ কি যেন হয় ফাহিমের, নিশ্বাস ঘন হতে থাকে, ঘড় ঘড় আওয়াজ করতে করতে সে এগিয়ে যায় নেহার দিকে। নেহা তখন অচেতন প্রায়, ফাহিম কখন তাকে বিবস্ত্র করে ফেলেছে সে তা টের পায় নি। কিন্তু নেহার একটু পরই টের পায়, যখন সে তার নিম্নাগের পিছন দিকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে, মরন আর্তনাদ করে উঠে নেহা। কিন্তু ফাহিম ওর গলা চেপে ধরে।
নেহা ঘুরে সোজা হয়ে উঠতে চাইলেও তখন ছিলো নিরুপায়। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। কষ্টে নেহার চোখ ফেটে পানি চলে আসে। এদিকে পাগলের মত পিছন থেকে ধর্ষন চালাতে থাকে ফাহিম।
কিছু একটা যে হচ্ছে তা অনেক আগেই টের পেয়েছে ফাহাদ। কিন্তু সে শত চেষ্টা করেও মেকআপ রুম থেকে বের হতে পারছিলো না। এপাশ থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে ফাহিম , এদিকে নেহার কাতর আর্তনাদ বেড়েই চলছে। পুরোনো ছোট কাঠের দরজায় লাথি দিতে দিতে একসময় ভেংগে ফেলে ফাহাদ। বাইরে এসে ফাহিমকে এ অবস্থায় দেখে কিছু না ভেবেই ছুটে যায় ও।
ধাক্কা দিয়ে ফাহিমকে সরিয়ে দেয় নেহার গা থেকে। ফাহিম পাশে কাত হয়ে পরে। হঠাৎ ফাহিম মুহূর্তের ভিতর ই উঠে দাঁড়িয়ে ফাহাদের বুকে একটা লাথি মারে ফাহাদ প্রায় উঁড়ে গিয়ে হারমোনিয়াম আর তবলাগুলোর উপর পরে। আর্তনাদ করে উঠে ফাহিম। ফাহিমের চোখগুলোর ভিতর যেন ধিক করে আগুন জ্বলে উঠলো। ঘটনার আকষ্মীকতায় অবাক হয় ফাহাদ। ফাহিমের গায়ে এত শক্তি কোথা থেকে আসলো। এক পা নড়বার শক্তিও নেই ফাহাদের। ফাহিম জলসা ঘরে অবস্থিত খাটের একটা পায়া ধরে টান দিতেই পায়া ভেংগে ওর হাতে চলে আসে। তারপর সেটা নিয়ে এগোতে থাকে ফাহাদের দিকে। নেহা ফাহাদকে বাঁচানোর জন্য ফাহিমের পা জাপটিয়ে ধরে। ফাহিম নেহাকে এক হাত দিয়ে উপরে টেনে তুলে ভাংগা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে বিকট শব্দে হাসি দেয়। পৈচাশিক সে হাসি কোনো মানুষের তো হতেই পারে না।
ফাহাদ কোনো রকমে উঠে বসে ততক্ষনে।ফাহিম খাটের পায়া নিয়ে ফাহাদের দিকে ছুটে আসে।
কিন্তু আসার সময় ফাহিমের নিজের বমির উপর পা পিছলে পরে যায় ফাহিম নিজেই। ফাহাদও কোনোরকম সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পরে হাতের চাকুটা ফাহিমের বুক বরাবর সেঁধিয়ে দেয়। ছোট একটা চাকু। ফাহিমের যেন কিছুই হয়না তাতে। ঘুরে ফাহাদকে নিচে ফেলে দেয়। বমির ভিতর লেপ্টে যায় ফাহাদ। হঠাৎ নেহা এসে ওদের সাথে করে আনা দঁড়ি দিয়ে ফাহিমের গলা পেঁচিয়ে ধরে। ফাহিম হাত দিয়ে দড়ি ছিড়ে নেহাকে ছুড়ে মারে আবারও এবার নেহা গিয়ে একদম রিফাত এর পচা গলা লাশের উপর পরে। লাশের পেটের অর্ধগলিত নাড়িভুঁড়ির উপর নেহা মুখ থুবড়ে পরে। ঠিক এই সুযোগটা কাজে লাগায় ফাহাদ। তড়িৎ গতিতে ফাহিমের বুক থেকে ছুড়িটা বের করে নিয়ে ওর গলার মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। ফাহিমের জোর কমে যায়। ও জানোয়ারের মত চিৎকার করে ফাহাদের উপর থেকে সরে যায়। ফাহাদ এক টানে চাকুটা বের করে নিয়ে ক্রমাগত ফাহিমের গলার ভিতরে আঘাত করতে থাকে।
এক পর্যায়ে ফাহিমের দেহটা নিথর হয়ে যায়। ক্লান্ত ও নোংরা শরীর নিয়ে ফাহাদ ফ্লোরে শুয়ে পরে। ওদিকে নেহাও উঠে আসে। নেহার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না রিফাতের পঁচাগলা নাড়িভুঁড়ি নাক-মুখে লেগে থাকার কারণে। নেহা ঐ অবস্থায় ই দৌড়ে আসে। ফাহাদের বুকে আঁছড়ে পরে। প্রাণখুলে কান্না করতে থাকে। নেহাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা ফাহাদের জানা নেই।ফাহাদের চোখের দিকে তাকায় নেহা। ফাহাদের ইশারায় ফাহিমের গলার কাছে চলে যায় সে। তারপর গলার ক্ষতস্থানে চুমুক দেয়।
নেহার খাওয়া শেষ হওয়ার পরে ফাহাদ....
তবে ওরা দুজনেই টের পায় বিকট শব্দে যেন দরজাটা কেঁপে কেঁপে উঠে যেন একটু ফাঁকা হয়ে গেলো। সেখান থেকে অল্প এক চিলতে দিনের আলো এসে জলসা ঘরে প্রবেশ করে। বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বলতে জ্বলতে লন্ঠন এর আলো কমে এসেছিলো। আর এমন সময় নতুন আশার আলো দেখতে পেল ওরা।দুজনেই ধীর পায়ে এগিয়ে যায় দরজাটার দিকে। দরজাটা এতই কম ফাঁকা হয়েছে, যে একটা আংগুল ও প্রবেশ করানো যায় না। দুজনে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও কোন উপায় পায় না। ফিরে এসে ফাহিমের উরু থেকে এক খাবলা মাংস কেটে নিয়ে মেকাপ রুমে চলে আসে দুজনই। এখানে আসলে গন্ধটা কম লাগে নাকে। হঠাৎ ফাহদের চোখ যায় সেই ভাংগা কাচের পিছনের দেয়ালের দিকে। সেখানে আরো একটা দাগ উঠেছে। মোট দাগ হলো ১৫.... কাগজের টুকরোয় নিচে লেখা ছিলো ১৬.. আর আয়নার পিছনের দেয়ালটাতেও আর একটা দাগের ই জায়গা আছে। তার মানে দাগগুলো হচ্ছে খুনের সংকেত। হিসেব পরিষ্কার! আর একটা খুন মানে ১৬ পূর্ণ। আর মুক্তি মেলার উপায় একমাত্র এটাই আছে। কখন যে মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে নেহা তা খেয়াল ই করে নি ফাহাদ। জলসা ঘরের ভিতরে তাকিয়ে সে দেখতে পায় নেহা ফাহিমের প্যান্ট খুলে নিজে পরছে। নেহার পরনে যে বস্ত্র নেই এতক্ষনে তা খেয়ালই করেনি ফাহাদ। হঠাৎ নেহার ভিতর একটা পরিবর্তন চলে আসতে শুরু করে। ও হাসতে শুরু করে। ফাহিম তখন যেভাবে হাসছিলো ঠিক সেভাবে। ফাহাদ দৌঁড়ে যায়। নষ্ট করার মত সময় তার নেই। নেহাকে মেরে ফেলতে হাতই যথেষ্ট। ফাহাদ নেহার কাছাকাছি আসতেই বসা অবস্থায় ফাহাদের রান বরাবর ওরই সেই প্রিয় হলুদ বাটের চাকুটা ঢুকিয়ে দেয় নেহা।
ক্রমাগত চাকু দিয়ে আঘাত হানতে থাকে ফাহাদের শরীরে। ফাহাদের পা-উরুর বেশ কয়েকটি অংশ ক্ষত বিক্ষত হয়। নিচে এলিয়ে পরে ফাহাদ। নেহা দাঁড়িয়ে ফাহাদের গলা বরাবর পা দিয়ে পারা দেয়। নেহাকে খুব নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে। শক্তিহীন অসহায় ফাহাদের চোখের সামনে ভেঁসে উঠে সেদিনের সেই নেহার চেহারা, যেদিন নেহা কুকুরটার মাথায় আঘাত করে ঘিলু আলাদা করে দিয়েছিল। হঠাৎ একটা বুদ্ধি এসে যায় ফাহাদের মাথায়। ওদিকে নেহার চাকু ফাহাদের গলার দিকে নামছে।
হঠাৎ-ই ঝাঁপ করে একটা শব্দ হলো। নেহা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। ডাম হাতে ফাহিমের ভাংগা খাটের পায়াটা তুলে নেহার কান সোজা একটা আঘাত করতেই নেহা কাবু হয়ে গেল। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো ফাহাদ। দেরী না করে মাথার মাঝ বরাবর চালিয়ে দিল খাটের পায়া টা।
ঠিক সেদিনের কুকুরটার মতই নেহার মাথা ভাগ হয়ে আছে। মাথার ভিতর থেকে ঘিলু দেখা যাচ্ছে নেহার।
ফাহাদ ও ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পরে। কিন্তু একটু পর ই ফাহাদের ভিতর কেমন যেন মনে হতে থাকে। পাগলের মত হাসি পাচ্ছে তার। হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দু'হাত মুঠো করে ধরে একটা চিৎকার করে সে। চিৎকারের জোরে পুরো দালান বাড়িটা কেঁপে উঠে। নিজেকে হালকা লাগে ফাহাদের।
জলসা ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দরজার মাঝ বরাবর একটা লাথি দিতেই ১০ ফুটের দরজাটা উড়ে গিয়ে জমিদার বাড়ির উঠোনে পরে। দেলোয়ার এবং নীলচাঁদ দম্পতি ভয়ে জড়োসরো হয়ে একটা রুমের ভিতর গিয়ে লুকায়।
দেলোয়ার নীলচাঁদকে উদেশ্য করে বলে,
আধ্যাত্মিক শক্তি পাওয়ার লোভে জমিদারের ছোট ভাই জলসা ঘরে যে মানুষ নিয়ে খুন করত, সে ঘর থেকেই এই শব্দটা আসছে।
নীলচাঁদ ভয়ার্ত কন্ঠে বলেন, কিন্তু ১৬ জন খুন করে রিচুয়াল পূর্ণ করার আগেই তো জমিদারের ছোট ভাই খুন হয়ে যান নিজেই। তাহলে এত বছর পর!! আজ কি হলো হঠাৎ??
মালুম নেহি সাহাব,
মুজে কুছ মালুম নেহি।
কাল রাতে কুকুরটাকেও কেউ মেরে ফেলল,
কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না।
সাহাব, আমার খুব ভয় করছে।
জমিদার বাড়ির উঠোন থেকে নোংরা শরীর নিয়ে হেঁটে বের হয়ে যাচ্ছে ফাহাদ। তার চারদিকে ঝড়ো বাতাস বইছে। ভিতর থেকে গেট খুলে বের হলো সে।
শেষবারের মত সে আবারো একবার অবাক হলো ফাহাদ। গেটের সামনে পরে থাকা কুকুরটার তাজা লাশ দেখে।
যেন এটাকে গত রাতেই কেউ খুন করেছে।
-------------
(সমাপ্ত)

Post a Comment

Previous Post Next Post