গল্পঃ নাগরাজ( পর্ব -ঃ২) Writer:Sukhi Akther


গল্পঃ নাগরাজ( দ্বিতীয় পর্ব)Writer:Sukhi Akther
প্রথম পর্বের লিংকঃ গল্পঃনাগরাজ (প্রথম পর্ব),লেখাঃ Sukhi Akther
.
বাড়ির সবাই ছেলেটার লাশের সামনে দাড়িয়ে আছে। 
কেউ কিছু বুঝতে পারছে না কি করে কাজের ছেলে রহিত দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে গিয়েছিল। লাবন্যের বাবার স্পষ্ট মনে আছে তিনি রহিত কে সিড়ির কাছের ঘরটায় শুতে দেখেছিলেন।তিনি ছোটবেলা থেকে রহিত কে চিনতেন আর যাই হোক রাতে ঘুমের মধ্যে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় চলে যাওয়ার অভ্যাস নাই।এমন না যে রহিত নেশা করতো তাহলে এতো রাতে সে কি করে ঐ জায়গায় গেলো?
সকালে যদি করিম মিয়া না বলতো যে রহিত কে পাশের গ্রামের দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখেছেন।করিম মিয়া মনে করেছে রহিত হয়তো মজা করে শুয়ে আছে তাই তিনি রহিত কে না ডেকে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। সকালে একে একে সবাই ঘুম থেকে ওঠে গিয়েছিল কিন্তু রহিত এখন ও ঘুম থেকে উঠে নি। বড় আশ্চর্য কান্ড যেখানে এতো বছর ধরে রহিত নিজে আগে উঠে বাড়ির সবাই কে ডেকে তোলতো।লাবন্যের বাবা প্রপ্রথম মনে করেছিলো রহিত হয়তো আজ অসুস্থ তাই হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে নি।তিনি কাল রাতেও রহিত কে সুস্থ দেখেছেন রাতের মধ্যে এমন কি হলো যে রহিত এখনও ঘর থেকে বের হচ্ছে না?
বেলা যতো বাড়ছে লাবন্যের বাবার চিন্তা ততো বেশি বাড়ছে।তিনি রহিত কে বাড়ি এবং পুরো গ্রাম খোঁজে কোথাও পান নি।যখন নিজে দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে গিয়ে রহিতের গায়ে স্পর্শ করে দেখেন রহিত সারা শরীল নীল রং ধারণ করেছে।মাথায় হাত দিতেই এক মুঠো চুল উঠে এলো।রহিত বাড়ির কাজের ছেলে হলেও কখনো তাকে কাজের ছেলে মনে করেন নি লাবন্যের বাবা।
সবাই ধরাধরি করে রহিতের লাশ টা বাড়ি নিয়ে আসলো। লাবন্যের বাবা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন এই ছোট থাকতে ছেলেটা তার বাড়িতে আসছে আজ এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে লাশ হয়ে।
সবার কাছে রহিতের মৃত্যুর বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করতে পারছে না লাবন্যের বাবা।ঘরে নতুন জামাই সে যদি ভয় পেয়ে বসে নাগ ছোবল মেরে রহিত কে মেরেছে। সারা শরীলে বিন্দুমাএ রক্ত হয়তো রাখে নি। লাবন্য কাল থেকে কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলে যাচ্ছে সে যদি এখন সবার সামনে সামীর কে সাপ বলতে শুরু করে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া গ্রামের মানুষজন সামীরের সাথে আমাদের কে গ্রাম ছাড়া করে ছাড়বে।
লাবন্য এমন কেনো করছে কিছুই আমার মাথায় আসে না। সামীর কি করে সাপ হবে?এক বার সাপ এক বার মানুষ হবেই বা কেনো?যদি সামীর সাপ হয়ে থাকে তাহলে লাবন্য কে কেনো বিয়ে করতে যাবে?লাবন্য ছাড়া আরো অনেক মেয়ে আছে গ্রামে।হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মানলাম এক সময় শান্তর সাথে লাবন্যের রিলেশন ছিলো তাই বলে লাবন্য এখন সামীরের নামে মিথ্যা কথা বলবে?লাবন্য এসব কথা শুনলে সামীরের বাবা মা কখনো লাবন্য কে কখনো তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে না।
রহিতের লাশটা দাফন করার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে বাড়ির সবাই। লাবন্য বাবা কিছু না বললেও লাবন্য পুরো বিষয় টা বুঝতে পারছে। এই কাজ সামীর অথবা তার সাথের কেউ করেছে কিন্তু কেনো?এসব করে কি লাভ সামীরের?আনমনে ভাবছে লাবন্য। পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে লাবন্য।
-কে?
-একটা রাত আমার সাথে কাটালে এখনও তুমি আমার স্পর্শ বুঝতে পারো না লাবন্য? (সামীর)
-আপনি এখানে?আমি তো ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম।তাহলে আপনি কি করে আমার ঘরে প্রবেশ করেছেন?
-তুমি ভুল ভাবছো লাবন্য।
তুমি নিজেই দরজা খোলা রেখেছো। ভালো করে মনে করে দেখো,হাসি মুখ করে বললো (সামীর)
-লাবন্য তাকিয়ে দেখে ঘরের দরজা খোলা।
কিন্তু লাবন্যের স্পষ্ট মনে আছে সে দরজা লাগিয়ে ছিলো।
-এতো চিন্তা করতে হবে না তো।
এখন তুমি অসুস্থ রেষ্ট নাও। নাকি ভয় করছে?আমি তোমার পাশে থাকবো?(সামীর)
-না বলে চেঁচিয়ে ওঠে লাবন্য।
লাবন্যের চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরে আসে লাবন্য মা।
লাবন্য বিছানায় বসে আছে। লাবন্য ঘিরে সামীর বসে আছে। এই মুহুর্তে এখানে এসে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন লাবন্যের মা।কিন্তু লাবন্য যে ভাবে চিৎকার দিলো না এসে কোনো উপায় ছিলো না।তিনি তো আর জানতেন না যে লাবন্য সামীরের সাথে আছে।
লাবন্যের মা কে দেখে সামীর বিছানা ছেড়ে ওঠে যায়। যেখানে যায় হয় শ্বশুর আর নাহয় শাশুড়ী থাকে নতুন জামাই বউ যে কিছু টা সময় কাটাতে চায় সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল আছে?
-তুমি বসো বাবা।
লাবন্য হঠাৎ এতো জোরে চিৎকার দিবে কে জানতো
তুমি লাবন্যের পাশে আছো জানলে কখনো আসতাম না আমি এখানে।বুঝতে পারছোই তো সকালের রহিতের ঘটনা সবার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। (লাবন্যের মা)
-সমস্যা নাই। আমি চলে যাচ্ছি আপনি বরং লাবন্যের পাশে থাকেন।আমি বাড়ির ঐ দিকে গিয়ে দেখি দাফনের কাজ কতো টুকু হলো। (সামীর)
-তুমি নতুন মানুষ তোমার কোথাও যাওয়া লাগবে না।
কোথায় আবার নতুন বিপদ শুরু হয় তার চেয়ে ভালো তুমি লাবন্যের পাশে বসো।(লাবন্যের মা)
-তোমরা সবাই যাও।আমি একা থাকতে পারবো।
আমার সাথে কাউকে থাকতে হবে না।
-হুহ কাল রাতের মতো আজও হয়তো ভয় পেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায় চলে যাওয়ার প্লেন আছে? (সামীর)
-চুপ কর তো তুই লাবন্য। আমারে এবার শান্তিতে থাকতে দেয়।
সামীর তুৃমি লাবন্যের ঘরে থেকো তো বাবা।আমাদের কারোর কোনো কথা তো শুনে না এখন যদি তোমার কথা শুনে। (লাবন্যের মা)
-আপনি চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাতে সবাই খেতে বসেছে।লাবন্য আসতে চায় নি সবাী জোরাজুরিতে আসলো। সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে রহিতের ঘটনার পর থেকে।
-শুনলাম মাগরিবের সময় নাকি দুই বছরের এক বাচ্চারে সাপে ছোবল দিয়েছে। গলার কাছে ভয়ংকর ভাবে কাটা ছিদ্র করা ছিলো।তবে এটা অন্য সাপে করেছে(লাবন্যের বাবা)
-সামীরের মুখ টা লাল হয়ে যাচ্ছে। কে বলেছে তাতে এখানে আসতে?এসেছে তো আবার এক জন কে মেরে চলে গেছে। (সামীর)
রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটা লাবন্যের সারা শরীল কাঁপতে শুরু করেছে এতো শীত কেনো লাগছে?চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে একটা মস্ত বড় সাপ তাকে পেঁচিয়ে রেখেছে। রাতে লাবন্য ঘুৃমিয়ে যাওয়ার পরে লাবন্যের মা তার রুমে চলে যায়।সামীর আর লাবন্য কে রুমে দিয়ে।
.
.
চলবে

Post a Comment

Previous Post Next Post