গল্পঃ এ উইজার্ড পর্ব - ৩।লেখক: হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।

গল্পঃ এ উইজার্ড
পর্ব - ৩

___________

একটা খুব সুপরিকল্পিত প্লান নিয়ে সামনে আগানোর পথে ছোট্ট একটু লোভের কারণে ফাহাদকে চরম একটা বিপদে পড়তে হলো। টাকা এবং নারীর লোভ সবাইকে নিজের লক্ষ্যচ্যুত করে। তখন
ফাহাদের লক্ষ্য ছিলো মোটামুটি বিশ লক্ষ পাউন্ড ইনকাম করে ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটে রেখে বাকি জীবন ইন্টারেস্টের টাকায় কাটিয়ে দিবে। খুব কষ্ট করে নিজের এটিএম কার্ড এ মাত্র ৬০ হাজার পাউন্ড জমা করতে পেরেছিল সে। হঠাৎ বেশ কিছু টাকার লোভে ঝাপিয়ে এবার পরতে হলো বড় একটা গর্তে, কেউ যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় নিকোলাস খুন হয়েছে এবং এ কাজের জন্য ফাহাদ দায়ী, তবে ফাহাদকে জ্যান্ত হাত পা বেঁধে ওদের ক্ষুধার্ত কুকুরের সামনে ছেড়ে দিবে। কুকুরগুলো ওকে ছিড়ে ছিড়ে খাবে। অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে মারা যেতে হবে ভেবেই ফাহাদের গা শিউরে উঠে।
ইবনীকে কিভাবে সরিয়ে দেয়া যায় তা নিয়ে অনেকগুলো প্লান ভাবে সে।
কিডন্যাপ করে মরুভূমির মাঝে নিয়ে গিয়ে র‍্যাটল স্নেক দিয়ে কামড় খাইয়ে মারলে কোন প্রুভ থাকবে না। কিন্তু বলা যত সহজ কাজটা করা অনেক কঠিন। একেতো ইবনী স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না, আবার জোর জবরদস্তি করেও নেয়া যাবে না। শহরের মাঝে হাজার হাজার সিসি ক্যামেরা।এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইবনীকে আউট অফ টাউন নিয়ে যাওয়া কোন ভাবেই পসিবল না। এর উপর চেকপোস্ট তো আছেই। অন্য কোন উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে ফাহাদ।
ইবনী নিজে ড্রাগস এর ব্যাবসা করলেও কখনোই বারে যেত না। ড্রাগস নেয়া থেকে ও নিজেকে বিরত রাখত। তাই ইবনীকে ঘায়েল করা খুব একটা সহজ কাজ ছিলো না।
পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে আহত গ্যাংস্টার মেম্বার্স দের চিকিৎসা করার জন্য নিকোলাস একটা হিলিং সেন্টার বানিয়েছিলো। সেখানে একজন পার্মানেন্ট আনলাইসেন্সড ডাক্তার কাজ করত। ডাক্তারের নাম ছিল পিটার। এমেরিকান হলেও সে মূলত রেড ইন্ডিয়ানদের বংশধর । চড়া দামে একজন অসুস্থ রোগীর কিডনী বিক্রি করে দেয়ায় রোগীটির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটে। এমেরিকান এফ বি আই যতক্ষনে তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে, ততক্ষনে সে দেশ থেকে পগারপার । অত:পর এমেরিকান সরকার তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়।
নিকোলাস এই পিটারকেই তার কাজে লাগায়,
হিলিং সেন্টারে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় সকল টুলস ই ছিল।
ফাহাদ পিটারের সাহায্য নেয়।
প্রমাণহীন ভাবে খুন করার পদ্ধতি ফাহাদ পিটারের কাছে জানতে চায়।
ফাহাদ ভালো ভাবেই জানত, যে ব্যাক্তি লোভে পরে কিডনী বিক্রি করে রোগীকে খুন করতে পারে, সে ব্যাক্তি টাকার ফাঁদে পা দিবেই। মোটা অংকের টাকা অফার করার সাথে সাথে ডাক্তার পিটার রাজী হয়ে গেল।
" ফার্স্ট এইড কিট" বক্স মানুষের যেমন জীবন বাঁচাতে পারে, আবার তেমন খুব সুক্ষ্মভাবে জীবন নিতেও পারে।" বলল, ডা: পিটার,
কিভাবে?? ফাহাদ বিষ্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করে,
পিটার একটা সিরিঞ্জ নেয়।খালি সিরিঞ্জে কিছুটা বাতাস ঢুকিয়ে নেয়,
এরপর ফাহাদকে সাথে নিয়ে একটা কক্ষে প্রবেশ করে পিটার।কক্ষে আছে মাত্র তিন দিন আগে অস্ত্রোপচার করে বুকের ডানপাশের গুলি অপসারণ করার পর সুস্থ হয়ে ওঠা সাত্তার নামের রোগীটি। ঘা শুকানোর অপেক্ষায় এখনো হাসপাতালেই আছে সে।
পিটার: সাত্তার, কেমন বোধ করছ আজ?
.
সাত্তার: এইতো ভালো। ডাক্তার, আপনি না থাকলে হয়ত বাঁচতাম না। এই লাইনে আসার পর আর বাড়ি যাইনি। ভেবেছি রিলিজ নেওয়ার পর বাড়ি গিয়ে বউ বাচ্চাদের সাথে দেখা করব। যখন গুলি লেগেছিল, ভেবেছিলাম মারা ই গিয়েছি, তখন আমার বাচ্চার আর বউ এর কথা মনে পরছিল খুব।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুধু আপনার আর উপরওয়ালার জন্যই আজ আমি বেঁচে আছি, ডাক্তার।
"কান্নায় চোখ ভিজে আসে সাত্তারের।"
.
পিটার: হয়েছে হয়েছে, আর প্রশংসা করতে হবেনা। একটা ইঞ্জেকশন দিতে আসলাম। তাড়াতাড়ি সেলাই শুকিয়ে যাবে। চুপচাপ শুয়ে পর ।
সাত্তার শুয়ে পরে। পিটার খালি সিরিঞ্জভর্তি বাতাস, সাত্তারের গলার শিরায় পুশ করে দেয়।
মিনিট না ঘুরতেই নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় সাত্তার, চোখটা বোজার ও সময় পায় নি সে।
কার্ডিয়াক কনজেস্টিভ এমবিলজম হয়ে মৃত্যু। এভাবে একজন মানুষকে খুব সহজেই মেরে ফেলা সম্ভব, পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেও এরকম পূর্বপরিকল্পিত হার্ট এট্যাক এবং সাধারণ হার্ট এট্যাকের পার্থক্য ধরতে পারে না।
ফাহাদ সবকিছু মনযোগ দিয়ে দেখলেও সাত্তারের জন্য কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে তার।
তবে শেষে ডা: পিটার একটা প্রশ্ন করে ফেলে; তুমি কাকে খুন করবে এভাবে?
কাউকে খুন করতে চাইলে তো রিভালবার দিয়ে একদম ব্লাংক পয়েন্ট থেকে গুলি করেই মারতে পার,ততটুকু ক্ষমতা তো তোমার আছে!!
ফাহাদ তাৎক্ষণিক কোন উত্তর দিতে না পেরে বলে ফেলে,
প্রফেশনাল কিলার হবো। বুঝলে!! নিকোলাস মারা যাওয়ার পর তো চাকরীটাই গেল, এদিকে ইবনীও আমাকে দেখতে পারে না। সো এই পেশাটা আই থিংক খুব একটা খারাপ হবে না।
ডা: পিটার সেদিন হাসতে হাসতে বলেছিল; মেডিক্যাল সাইন্স আবিষ্কার করা হয়েছিল জীবন বাঁচাতে, আর সেই মেডিক্যাল সাইন্স ব্যাবহার করেই তুমি জীবন নিবে!! ব্যাপারটা বিপরীত হয়ে গেল না??
সেদিন ফাহাদ নিজ থেকেই বলেছিল, হু তুমি আমাকে সেক্ষেত্রে রিভার্স ডক্টর ডাকতে পারো।ডাক্তারদের বিপরীত!!
কথাটা ভালো লাগে পিটার এর। এরপর দুজনেই বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে পৈচাশিক হাসি হেসে উঠে।পাশেই পরে থাকে চোখ খোলা সাত্তার এর লাশ।বেচারার আত্মা এখনো কি ওর ছেলে বৌ এর কথা ভাবছে কিনা জানতে ইচ্ছে হয় ফাহাদের।
.
.
.
.
ইবনী তার ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিতেই নাকে মিষ্টি একটা গন্ধ পায়,এই মিষ্টি গন্ধটাকে উপেক্ষা করাই ছিল ইবনীর সবথেকে বড় ভুল।
ক্লোরোফর্ম গ্যাসের প্রভাবে ইবনী হাই কমোডে বসেই চোখ বন্ধ করে দেয়, অজ্ঞান অবস্থায়ই ইবনী হাই কমোডের উপর বসে থাকে। এমন সময় বাসায় ফাহাদ আসে। কাজের মেয়েটি দরজা খুলে দিয়ে জানায়,ইবনী ওয়াশরুমে। বেশ অনেক্ষন পার হয়ে গেলেও ইবনীকে না আসতে দেখে কাজের মেয়ে এবং ইবনীর স্ত্রী বাথরুমের দরজায় নক করে। সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় জোড়ে আঘাত করতেই সিটকানি ভেংগে দরজা খুলে যায়। ইবনীর স্ত্রী ছুটে যায় ইবনীর কাছে। জ্ঞানহীন বিবস্ত্র ইবনী হাই কমোডে পরে আছে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ফাহাদ ছুটে যায়। ইবনীর স্ত্রীকে বলে, যতটা দ্রুত সম্ভব, ডাক্তারকে ফোন দিন। আমি ওনাকে ধরে বিছানায় নিয়ে আসছি । ইবনীর স্ত্রী ফোনের দিকে ছুটে গেলে কাজের মেয়েটাকে টাওয়েল আনতে পাঠিয়ে দেয় ফাহাদ। তারপর পকেট থেকে খালি সিরিঞ্জ টা বের সে।
.
.
টাওয়ালে পেঁচিয়ে ইবনীর কাপড়চোপড় হীন শরীরটা আড়কোলে তুলে এনে বিছানায় রাখে ফাহাদ। ডাক্তার আসে খুব দ্রুতই। তবে এসে নিরাশ হয় তারা। হার্ট এট্যাকের কারণে কিছুক্ষন আগেই ইবনী এপারের মায়া ত্যাগ করেছে। খবরটা শুনে ফাহাদ তেমন অবাক হয়না। সবার উদ্দেশ্যে শুধু বলে, বড় ভালো মানুষ ছিল ইবনী।
আসোলে কয়েকদিন ধরেই ইবনীকে কড়া মার্কিং এ রেখেছিল ফাহাদ। সুযোগ বুঝে সিসি ক্যামেরার তার কাটে সে, এবং ইবনীর বাথরুমের ভেন্টিলেটরের সাথে ক্লোরোফর্ম সমৃদ্ধ একটা ডিভাইস এটাচড করে রেখে আসে। পরবর্তীতে ফাহাদের কাজ ছিল ইবনী বাথরুমে ঢুকলেই রিমোটের বাটন প্রেস করে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দেয়া।অব্যর্থ চেস্টা।
বাকি কাজটাও প্লানমাফিক হয়েছিল সেদিন। একদম শান্তিমত সরিয়ে দেয়া যাকে বলে, সেটাই করেছিল সে।
ঐ একই দিনে হাই ভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে মারা যায় ডা. পিটার। খবর শোনার পর ও ফাহাদ পিটারের লাশ দেখতে যায় নি। মনে মনেই সে পিটারকে কল্পনা করে নেয়,
নিজের স্টিলের তৈরী রোলিং চেয়ারে বসে হাতলে হাত রাখা মাত্রই সেখানে আটকে গিয়েছে পিটার,হাইভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক লাইন চেয়ারের সাথে সযত্নে সেট করা ছিল। অত:পর সেখানে আরো কয়েকমিনিট নিস্তেজ হয়ে বসে থাকার পর পিটারের নাক কান ও মুখের ভিতর থেকে গরম ধোঁয়া বের হতে শুরু করেছিল। কানের কাছে নাক নিলে নিশ্চয়ই এখন মগজপোড়া ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।নিজেকে এখন একটা বোঝা থেকে মুক্ত লাগছে ফাহাদের।তবে পুরো কাজ শেষ হয় নি। ইবনীর মোবাইলটা চুরি করতে হবে এখন।
তবে ফাহাদের মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে, তার মা তিং মাং ও তো হার্ট এট্যাক করেছিল। সেটাও স্বাভাবিক হার্ট এট্যাক ছিল তো!!
.
.
.
.
.
তিং মাং সুন্দরী হওয়ায় ফাহাদের বাবার বন্ধু ফাহাদের বাবার অনুপস্থিতিতে প্রায় ই ওদের বাসায় আসত। ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ করত না।উমরের বন্ধুর স্ত্রী। কোন অজুহাতে উমরের বন্ধু উমরের বাসায় আসতে চাইলে স্ত্রীও তার সাথে আসত। ব্যাপারটায় একটু বিরক্ত ছিল উমরের বন্ধু ও।
এমনি একদিন উমর কাজে ছিল, ফাহাদের ও স্কুল ছিল। উমরের বন্ধু ও তার বৌ হঠাৎ এসে উপস্থিত।
এক কথায় দু কথায় ভালো ই গল্প করে তারা।
হঠাৎ উমরের বন্ধুর স্ত্রী শায়লার চোখ যায় ওয়ারড্রবের উপরে রাখা চামড়ার উপর। কোন জন্তু জানোয়ারের চামড়া হবে হয়ত। শায়লা তিং মাং এর কাছে ওটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিং মাং উত্তর দেয়,
আমাদের লুসাইদের কালোজাদু বিষয়ক লেখালেখি করা ওটায়। ফাহাদের বাবা ফাহাদকে উদ্ধার করার সময় নিয়ে এসেছে, যাতে এগুল আর কেউ চর্চা না করতে পারে।
শায়লার হাজবেন্ড রাতুল একটু উৎসাহী হয়ে পরেন। ওতে কি এমন লেখা আছে তা তিং মাং এর কাছে জানতে চান।
তিং মাং যেহেতু লুসাইদের ভাষা পড়তে পারত, সে রাতুল ও শায়লা কে সব কিছু পড়ে শোনায়।
তিং মাং নিজেও অবাক হয়। আগে সে কখনো এগুলো পরে নি। তাই নিজেও জানত না।
ওখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে; " বহু বছর আগে লুসাইদের পূর্বপুরুষদের এক বলিষ্ঠ সর্দার লাল আভাযুক্ত একটা পাহাড়ের গর্ত থেকে একটা নীল দ্যোতিযুক্ত ছোট্ট লকেট বের করে আনেন। লকেট টি পাওয়া খুব একটা সহজ ছিলো না। এজন্য তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে হাজার হাজার অর্ধ সাপ অর্ধ মানুষের মত দেখতে সৈনিকদেরকে এবং মৃত মানুষদের আটকে থাকা আত্মাদেরকে।
লুসাইদের এক সময় পুরো পৃথিবী শাসন করার মত সৈন্যবাহিনী থাকলেও তারা দেশ দখলের পিছনে না ছুটে ঐ নীল লকেটের পিছনে তাদের শক্তি অপচয় করেছিল। কারণ তারা জানত, লকেটে খুবই অসাধারণ একটা শক্তি রয়েছে।
একটা মানুষ মারা গেলে, সে যদি ঐ লকেট পরিহিত অবস্থায় থাকে তবে সে কয়েকঘন্টার ভিতরেই আবার জীবিত হতে পারবে। তবে লকেট খুলে ফেলার সাথে সাথেই সে পুনরায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে।
.
.
.
( চলবে)
.
.
.
লেখক: হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post