গল্পঃ এ উইজার্ড , লেখক :হাসিবুল ইসলাম। ফাহাদ পর্ব ৫

গল্পঃ এ উইজার্ড
লেখক :হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
পর্ব ৫

রাতুলের প্রবোধ নিয়ে তার শালিকা,
উমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।রাতুলের শালীর নাম ছিল সুবাতা।ছোট করে সবাই তাকে সুবা ডাকে।
পারিবারিক ভাবেই ছোট খাট করে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও পরিবারের একজন ব্যক্তি সে বিয়েতে অনুপস্থিত ছিল।ফাহাদ, বিয়ের দিন সে বাসাতেই ছিল না। সেদিন ই সে জীবনে প্রথমবারের মত স্থানীয় একটা বার এ গিয়ে প্রচুর ড্রীংকস করে। সেদিন রাতে ঘরেও ফেরা হয় নি তার। মাতাল হয়ে রাস্তায় বক বক করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরে রাস্তার পাশেই। শেষ রাতের দিকে
ফাহাদের ঘুম ভাংগে এক পাগলের মত লোকের ডাকে, চোখমেলে ফাহাদ দেখতে পায় লোকটি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে,তার নিচের পাটির কয়েকটি দাঁত নেই। ভালো ও মর্জিত জামাকাপড় পরে ফাহাদকে রাস্তায় শুয়ে থাকতে দেখে পাগল ব্যাক্তিটি উৎসাহ বসত ই খোঁচাখুঁচি করে ফাহাদের ঘুম ভাংগিয়ে দেয়। বাকি রাত আর ঘুমায় না ফাহাদ।
ঘন্টাখানেক পর ই সকাল হয়।টলতে টলতে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় সে।
.
.
.
সুবাতা ভাবতেও পারে নি,বিয়ের অনুষ্ঠানটা তার এত ভালো লাগবে। বিয়েটা প্রতিটা মেয়ের জীবনেই অনেক বড় একটা স্বপ্ন থাকলেও সুবা কখনোই ভাবে নি সে ও কোনদিন বিয়ে করতে পারে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েটি নিজের অসাধারণ রূপলাবন্যকে কাজে লাগিয়েছে অর্থ উপার্জনের জন্য। এ ব্যাপারে দালালের মত কাজ করেছে রাতুল। কয়েকদিন পর আয়েশা সবকিছু জানতে পারলেও মোটা অংকের নিত্য নতুন টাকা বাসায় আসতে থাকায় তেমন প্রতিবাদ করে নি,সেও। সে নিজেও ছোট বেলায় বড় হয়েছে খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। টাকার কষ্ট কি জিনিস তা খুব ভালো করেই বুঝে আয়েশা।টাকা যে উপায়েই আসুক না কেন, তা আয়েশার মত মেয়েকে খুশি করার জন্য যথেষ্ট। বয়স ১৬ হওয়ায় প্রথমদিকে সুবার ডিমান্ড ছিল আকাশচুম্বী। সুবা নিজে টাকা কামানোর পাশাপাশি পরপুরুষের সান্নিধ্য খুব ভালো ই ইনজয় করত তখন ই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এভাবেই কাটিয়ে দিবে বাকি জীবন,বেশ সুখে ই তো আছে সে।
এভাবে পাঁচ বছর যেতে না যেতেই উমরের সাথে বিয়ের জন্য চাপ দেয় তার দুলাভাই, হাজার পুরুষের ছোঁয়া পাওয়া একজন নারী এক পুরুষে কিভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট রাখবে তা ভেবে প্রথমেই না করে দেয় সুবা। কিন্তু রাতুল নগদ টাকার লোভ দেখিয়ে ম্যানেজ করে নেয় সুবাকে। সে এটা বোঝায়, ফাহাদের গলায় যে লকেটটি আছে সেটার মূল্য ৫০-৬০ লাখ পাউন্ড তো হবেই। আর লকেটটা একবার হাতে পেয়ে গেলে উমরের সাথে ডিভোর্স ঘটানোটা তো তেমন কোন ব্যাপার-ই না।
সব প্লান আগে থেকে ঠিকঠাক করে, দ্বিধাবোধের সাথেই বিয়েটা করে ফেলে সুবা। উমর ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি রাতুলের এসব নোংরা কুকর্মের ব্যাপারে।কিন্তু বিয়ের করার পর পর ই কেমন যেন লাগতে থাকে তার,একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে সুবার ভিতরে। নারীত্বের অনুভূতি, মাতৃত্বের অনুভূতি।
উমর নিজেও তিং মাং কে প্রচন্ড ভালবাসত। কিন্ত বাস্তবতা একটু বেশি ই কঠিন। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে সারাদিন বাইরে কাজ করলে বাসায় কাউকে একজনের খুবই দরকার হয়। ফাহাদের কথাটাও মাথায় রেখে সে সুবাকে বিবাহ করে। সুবা অবশ্য তিং মাং এর চেয়ে অত্যন্ত বেশি সুন্দরী ও সুশ্রী ছিল। কিন্তু ফাহাদ মন থেকে কিছুতেই সুবাতাকে মেনে নিতে পারছিলো না মা হিসেবে। এজন্য কোন কারণ ছাড়াই সে সুবাতার সাথে খারাপ ব্যাবহার করা শুরু করে।ঘটনাটা উমরের চোখ এড়ায় না।
ফাহাদকে এজন্য একদিন ভীষন বকাবকি করে উমর। মা হারিয়ে ফেলা একজন কিশোরের কষ্টটাকে সেদিন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সে।
কিছুক্ষন পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাঝরাতে ফাহাদকে শান্তনা দিতে তার রুমে প্রবেশ করে উমর। কিন্তু রুমে ঢুকে ফাহাদকে খুঁজে পায় না আর। বুঝতে পারে ছেলে রাগ করে ঘর ছেড়েছে।
সে নিজেও অনেক জেদী।এই জেদের কারণেই বাংলাদেশ থেকে মিশরে পাড়ি জমিয়েছিল উমর। কিন্তু উমরের ধারণাও ছিল না ফাহাদ চলে গিয়েছে সারাজীবনের জন্য।
কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও ফাহাদ যখন বাড়িতে ফিরে না তখন উমর ভেংগে পরে প্রচুর। ছেলেটা কোথায় গিয়েছে কেমন আছে জানতে ইচ্ছে করলেও নিরুপায় অসহায় পিতা হয়ে মাথা নুইয়ে বসে থাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ থাকেনা তার।
.
.
.
ফাহাদের বাবা যতটুকু না কষ্ট পায় তার চেয়ে বেশি আশাহত হয় রাতুল। তবে রাতুল এত সহজে কোন কিছু ছেড়ে দিবার পাত্র নয়।
একদিন সন্ধ্যায় সুবাকে ডেকে রাতুল বলে, কোন কিছুই তো হলো না প্লান অনুযায়ী!! এবার ডিভোর্স টা নিয়ে নে।
সুবা: বিয়ে যখন করেই ফেলেছি, আমি আর ডিভোর্স নেব না
.
রাতুল: তোমার মাথা ঠিক আছে? এমন একটা বুড়োর সাথে সারাজীবন কাটাবে?
.
সুবা: বুড়ো বলছো! বিছানায় ও তোমার চেয়ে অনেক ভালো পারফর্মার। সর্বোপরি সব মেয়েই চায় তার নিজের একটা সংসার হোক। নিজের একটা মানুষ হোক। জীবনে আমি অনেক ভুল করেছি। শুধরে নিয়ে চেঞ্জ হয়ে যাব। উমর আমার হাজবেন্ড। আমি ওর সাথেই চিরদিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বলতে পার, কাঁচা হাতে আস্তে আস্তে নিজের সংসার গুছিয়ে নিচ্ছি।
সুবার কথা শুনে
কিছুটা অপমানিত বোধ করে রাতুল। রাতুল নিজে আয়েশার অনুপস্থিতি তে সুবার সাথে অনেক রাত বিছানায় কাটিয়েছে। এছাড়াও সুবা প্রতিদিন যে পরিমান পাউন্ড আয় করত তার একটা বড় অংশ রাতুল নিজে রেখে দিত।
সুবা হঠাৎ বেঁকে বসায় তিন দিক দিয়েই ক্ষতি হলো রাতুলের,
সুবার কথা বেশ কনফিডেনসিয়াল। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে আর কখনোই রাতুল সুবাকে ভোগ করার সুযোগ তো পাবেই না বরং সুবা ওর নিজের ব্যাবসাটাও ছেড়ে দিবে।
আর লকেট তো পাওয়াই গেলো না।
রাগে কটমট করতে করতে সেদিন উমরের বাসা থেকে বের হয়ে যায় রাতুল। মনে মনে ভাবে এর একটা বিহিত করতেই হবে। যত দ্রুত সম্ভব।
.
.
.
.
.
নিকোলাস, ইবনী ও পিটার মারা যাওয়ার পর শহরে ব্যাংগের ছাতার মত বেড়ে ওঠা ছোট বড় দলগুলো আস্তে আস্তে নিজেদের উদ্যম হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ইবনী না থাকায় ড্রাগস আসা বন্ধ হয়ে যায়।ড্রাগস সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে হাজার হাজার ড্রাগস সেলারদের পেটে লাথি পরে।নিজেদের উদ্যম হারিয়ে এখন অনেকেই চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মত অপরাধে জড়াতে শুরু করে। শহরবাসী একসময় অতিষ্ঠ হয়ে যায়। পুলিশ ও ওর সুষ্ঠু কোন সুরাহা দিতে না পেরে ইনকাউন্টার অর্ডারের জন্য আবেদন করে। আবারও একবার ইনকাউন্টারের অর্ডার আসে। সেবার প্রায় সাতশ আটান্ন জন নিহত এবং আরো কয়েকহাজার গ্যাংস্টার আহত হয়। নিকোলাসের অধিনে থাকাকালীন অবস্থায় এতজন মানুষ কখনোই নিহত হয় নি। ইনকাউন্টারে সর্বোচ্চ ৭- ৮ জন মারা যেত। নিকোলসের হাত অনেক উপর পর্যন্ত ছিল। ইনকাউন্টারের অর্ডার আসলেই আগে থেকে সবাইকে সতর্ক করে দিত সে। টাকাপয়সার সুনির্দিষ্ট উৎস থাকায় তখন ছিনতাই কিংবা ব্যাংক ডাকাতি হত না বললেই চলে।শুধুমাত্র ড্রাগস সেল করেই রাতারাতি বড়লোক হয়ে যেতে পারত সবাই।ওরা যেন নিকোলাস কে হারিয়ে ওদের অফিস,শেল্টার এবং চাকরী দুই -ই হারিয়ে ফেলেছিল। তাই আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছিল ছিনতাই, শপিং মল ও ব্যাংক ডাকাতি কে। ওদের অবর্তমানে যখন কালো জগতে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা, ঠিক তখনই আসল চাল চালিয়ে দেয় পুলিশ। ইন্সট্যান্টলি ব্রাশফায়ার করে পা দিয়ে পিঁপড়া পিষে মারার মত কয়েকশোজন কে ওপারের পথ দেখিয়ে দেয় তারা। পরদিন আরো কয়েক হাজার বাড়িঘরে ট্রেইন্ড কুকুর ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় হাজার পাঁচেক আনলাইসেন্সড আর্মস এবং বেশ কিছু পরিমান ড্রাগস।
হঠাৎ করেই পুরো শহরটা প্রশাসনের করায়ত্তে এসে যায়।
এরকম একটা পতনের পেছনে একজনমাত্র ব্যক্তি দায়ী। আর সে হচ্ছে ফাহাদ। তবে সে সঠিক সময়েই গা ঢাকা দিতে পেরেছিল। বড় বড় অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার পর ও ফাহাদের নামে পুলিশের কাছে সামান্য একটা মারামারির রিপোর্ট ও ছিল না তখন।
.
.
.
তবে আস্তে আস্তে শহর জুড়ে তখন জমতে থাক্স অন্য এক খেলা।
অনেক নাম করা বিজনেসম্যান দের ড্রাগস এবং এবং আর্মস সেলিং এর ঘটনা ফাঁস হতে থাকে। মিশর পুলিশ যাদের আটক করেছিল তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক ভেতরের তথ্য বের করে আনে। নিকোলাস থাকাকালীন অবস্থায় অপরাধ জগৎ অনেকটাই উন্মুক্ত ছিল। সবাই তেমন গোপনীয়তা রক্ষা না করেই প্রায় প্রকাশ্যে অবৈধ ব্যাবসায় জড়িয়ে পরত।
এসকল উদাসীনতার কারণেই মাত্র কয়েকদিনের ভিতর শহরের বড় বড় ভদ্র বিজনেসম্যানদের মুখোশ উন্মুক্ত হয়ে যায়।অবৈধ টাকায় গড়া খাবারের হোটেল, রেস্ট হাউস এবং শপিং মল গুল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। ঠিক তখনই বিজনেসম্যানরা নিজেদের গা বাঁচাতে সন্ধান করতে থাকে ভাড়াটে খুনীদের।
নিজের অপকর্মের একমাত্র সাক্ষীদেরকে কিছু টাকার বিনিময়ে পরপারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের মান সম্মান জীবন ও সম্পত্তি যদি নিরাপদ রাখা যায় তবে সেটাই ভালো।ব্ল্যাকমানির উপর ভর করে যে বিজনেসম্যানরা বড় হয়েছে তারা ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ভাড়াটে খুনীদেরকে খুঁজতে থাকে।কারো দরকার ছিল নিজের পার্টনারকে খুন করা, কারো দরকার ছিল যার সাথে ড্রাগস বা আর্মস এর ডিল করেছে তাকে খুন করা। খবরটা একসময় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড এ ছড়িয়ে যায়। তখন
গা ঢাকা দিয়ে যে কয়েকজন গ্যাংস্টারের সদস্যরা সবার অগোচরে লুকিয়ে ছিলো তারা এসাসিনের কাজ করতে শুরু করে।
পুরো শহরের ভিতরে স্নাইপার বা রিভালবার ভালো চালায় এমন ব্যাক্তি ছিলো শুধুমাত্র একজন ই।
তবে তার সাথে যোগাযোগ করা চাট্টিখানি কথা নয়।
সবাই তাকে চিনলেও সে কোথায় আছে কিংবা কিভাবে আছে তা কেউ ই জানত না।
এটা ঘিরে আবার শুরু হয় ছোট ছোট ব্যাবসা। অনেকেই দালালীর কাজে লেগে যায়,
নামকরা সব প্রফেশনাল খুনীদের সাথে কন্ট্রাক্ট করিয়ে দিবে তারা। কিন্তু বিনিময়ে তাদেরকেও দিতে হবে মোটা অংকের টাকা। এভাবেই অপরাধ জগতের ভিন্ন একটা প্লাটফর্ম গড়ে উঠতে শুরু করে।
এতদিন সবাই দলে দলে ড্রাগস সেল ও পরিবহনের কাজ করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যেতে পারত।
কিন্ত বর্তমানে কেউ বড় অংকের টাকার অফারে দু চারটা খুন করে দিতে পারলেই সারাজীবন পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারবে।
প্রথম প্রথম ১০ লাখ পাউন্ড ছিল টার্গেট করে একটা সাধারণ খুনের সর্বনিম্ন রেট।
কিন্তু দিনে দিনে প্রফেশনাল খুনীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ১০ লাখ পাউন্ড নেমে আসে ৫ লাখে।
টাকা দিয়ে অপছন্দের কাউকে খুন করিয়ে ফেলা হঠাৎ ই যেন একটা ট্রেন্ডে পরিনত হয়। প্রেমিকা বিশ্বাস ভংগ করেছে? ৫ লাখ পাউন্ড দিলাম। খুন করে দাও, ব্যাস কাজ শেষ।
যাকে খুব পছন্দ করি, তার পিছনে নিজের বন্ধুই ঘুরছে!! ব্যাপার না!! মাত্র ৫ লাখ খরচ করলেই সমস্যা সমাধান, চিরতরে।ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ!! এটাও ব্যাপার না।
অফিসের বর্তমান বস মারা গেলেই আপনি নতুন বস হবেন!! খুব ভাল কথা, মাত্র ৫ লাখ খোয়ালেই কিন্তু আপনি প্রোমোশন পেতে পারেন। মানুষ সহজ সমাধানের একটা নতুন পথ আবিষ্কার করে ফেলে।
একটা বড় সরো ডিজাস্টারের পর ফাইনালি আবার যেন একটা হাসির রেখা ফুটে অপরাধ জগতে ডুবে থাকা ক্রিমিনাল দের মুখে।
মানুষ সহজ সমাধানের একটা নতুন পথ আবিষ্কার করে ফেলে।
একটা বড় সরো ডিজাস্টারের পর ফাইনালি আবার যেন একটা হাসির রেখা ফুটে অপরাধ জগতে ডুবে থাকা ক্রিমিনাল দের মুখে।
চারদিকের যখন এই হাল তখন ফাহাদের হাতে করার মত কোন কাজ ই ছিল না বলতে গেলে। নিজের জমানো টাকা খরচ করে সে চলতে লাগল। কিন্তু হিসেব কষে দেখল এতে সর্বোচ্চ আড়াই মাস আরামসে কেটে যাবে। কিন্তু তারপর!! তারপর কি আবার হোটেল বয় হিসেবে কাজ করা লাগবে!!
কায়রোতে আসার প্রথমদিকের দিনগুলির কথা মনে পরে ফাহাদের। হাড়ভাংগা সেই খাটুনীর কথা মনে হলেও যেন হাত পায়ের গিড্ডু তে ব্যাথা শুরু হয়।
নাহ, ওসব শক্ত কাজ তাকে দিয়ে পোষাবে না। তাই একবার মনে মনে ভেবে ফেলে তাহলে টাকা নিয়ে মানুষ খুন করার ব্যাপারটা কেমন হবে!!
তবে বলা যতটা সহজ করাটা মোটেই সহজ নয়।
এখন একটা স্নাইপার কিনতে হলে তাকে বেশ কয়েকহাজার পাউন্ড খসাতে হবে, যা তার কাছে নেই।
ফাহাদ নিজে নিজে বলতে থাকে,এজাজিন হলে হতে হবে আইভানহোর মত।এ শহরের সবাই আইভানহোকে এক নামে চিনে। তার চেয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ স্নাইপার চালক আর কাউকেই পাওয়া যাবে না।আইভানহোর কাছে টাকা এবং টার্গেটের ছবি হাতে যাওয়ার পর থেকে সে মাত্র তিনদিন সময় নেয়। তিনদিনের মাঝে, টার্গেট যে ই হোক না কেন তার মাথাটা কদবেলের মত ঠাস করে ফুটে যায়।কোথা থেকে এসে কে মেরে চলে গিয়েছে তা কেউ ই টের পায়না। যারা স্নাইপার দিয়ে মার্ডার করে তাদের পজিশনিং সেন্স থাকতে হয় অতুলনীয়, কয়েকদিন ধরে ভিক্টিমকে অবজারভেশনে রাখতে হয়। কোথায় যায়, কি করে, ডেইলী রুটিনের মত সব নথিবদ্ধ করতে হয়। তারপর এমন একটা জায়গা বাছতে হয়, যেখান থেকে গুলি করলে মৃত্যু নিশ্চিত এবং গুলি কোন দিক থেকে এসেছে তা মানুষ হুট করে বুঝে ফেলতে পারবে না।আইভানহোর কিছু কিছু মার্ডারের ঘটনা বেশ প্রচলিত, একবার জোড়া খুনের অর্ডার আসে। হাজবেন্ড ওয়াইফ দুজনকেই খুন করতে হবে। আইভানহো ওদের দুজনকেই খুন করে এক গুলিতে। রাতে যখন দম্পতিরা আদিম খেলায় মত্ত ছিল, তখন জানালার কাঁচ ভেদ করে একটা বুলেট তাদের দুজনকেই এঁফোড় ওফোঁড় করে রেখে যায়। একটা অন্ধকার রুমের ভিতরে থাকা দুজন মানুষকে এক বুলেটে মারতে হলে যতটা অবজারভেশন করা এবং সে সাথে বিচক্ষন হওয়া প্রয়োজন, ঠিক ততটাই ছিলো আইভানহো।
বাঘ যেমন শিকারের উপর গোপনে লক্ষ্য রাখে, আইভানহো ও ঠিক তাই। তার শিকারকে খুব ভালো অবজারভেশনে রাখে,শিকারের প্রতিটা স্টেপ সে রোবটের মত মাথায় ক্যালকুলেট করে রাখে।তারপর শুধু অপেক্ষা,শুধুমাত্র একটি
সুযোগ পেলে সে ঐ একটা সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে ফেলে। আর এজন্যই তার ডিমান্ডটা অ বর্তমানে সবথেকে বেশি।
১২ লাখ পাউন্ড থেকে সে এক পাউন্ডও কম নিয়ে কাজ করতে রাজী হয়না।৩০ টার মত খুন করে সে রাতারাতি কোটিপতি বনে গিয়েছে।
সব কিছু চিন্তাভাবনা করে ফাহাদ নিজেও একটা সিদ্ধান্তে আসে।
সে ও এই কাজ শুরু করবে। তবে আইভানহোর মত তার আত্মপরিচয় প্রকাশ করবে না। কারণ আইভানহো চাইলেও তার ছদ্মবেশ থেকে বের হয়ে সাধারণ ভাবে হেঁটে গিয়ে এক কাপ চা ও খেতে পারবেনা।
ফাহাদ বিচক্ষন হওয়ায় সে পদ্ধতিটা ঘুরিয়ে দেয় শুধু, ঠিক করে ছদ্মবেশে খুন করবে এবং ছদ্মবেশের বাইরে স্বাভাবিক ভাবেই সবার সাথে মিশবে।,বসবাস করবে।
আন্ডারগ্রাউন্ড প্লাটফর্ম এ ফাহাদের চেনাজানা অনেকে থাকলেও সে চায় না তার পরিচয় দিয়ে সে কাজ নিক। অপরদিকে তার নিজের কোন বিশ্বস্ত দালাল ও নেই। তবে কিভাবে কন্ট্রাক্ট পাবে সে!!
নানান চিন্তা-ভাবনায় পেঁচিয়ে পরে তার মাথা।
অবশ্য ফাহাদের নিজের ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের এসব বে-আইনী কাজ করতে খারাপ লাগে খুব।
তবে নিজে সৎ থেকে কি আদৌ লাভ আছে!! হোটেল বয়ের কাজ করার সময় ফাহাদ খুব কর্মনিষ্ঠ পরিশ্রমী এবং সৎ থাকার পরেও চুরি করার মিথ্যে অপবাদে একবার ভয়ানক মার খেয়েছিল । সেদিন ই ছিলো সেই হোটেল বয় হিসেবে তার শেষ কাজ।
প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড ব্যাগ এ ঢুকিয়ে রাতেই হোটেল থেকে ভেগে গিয়েছিল সে।পরে আর কখনো ই ফেরৎ যায় নি সেখানে।
ফাহাদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় কয়েক লাখ টাকা কামিয়ে ই অপরাধ জগৎকে চির বিদায় জানাবে সে। ছোট্ট একটা বাসা কিনে ব্যাংকের পার্মানেন্ট সেভিংস এর ইন্টারেস্ট দিয়ে শান্তিতে বসবাস শুরু করবে। একটা বিয়ে করে নিলেও মন্দ হয় না। প্রেম করে একটা বিয়ে করবে। তারপর তার ছেলে মেয়ে হবে ছোট ছোট , তবে তার ওয়াইফ মারা গেলে সে আর দ্বিতীয় বিয়ে করবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে মনে হেসে ফেলে ফাহাদ। তার মনে অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করতে থাকে। ঠিক এই মুহূর্তে সে চাচ্ছে এ অন্ধকার জগতে আর পা না দিতে।এমন যদি হতো!! রাস্তায় সে কয়েকলাখ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছে, তবে সে অবশ্যই সাধারণ মানুষদের একজন হয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারত।
কিন্তু বাস্তবটা একটু বেশি ই কঠিন। যারা আজ টাকার পাহাড় বানিয়েছে তারা সবাই কোন না কোন ভাবে ক্রাইম জগতের সাথে যুক্ত। তাদের পকেট থেকে কিছু টাকা খসিয়ে নিজের পকেটে পুরতে হলে নিজেকে একটু খারাপ হতেই হবে। তবে কিভাবে শুরু করা যায় তা নিয়ে একটা দ্বিধা কাজ করে ফাহাদের মাঝে। নিকোলাসের বডি গার্ড হিসেবে কাজ করার সময় যে Ruger LCR গান টা নিজের কাছে ছিল সেটা অনেক আগেই নর্দমায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল । কোন রিস্ক নিয়ে সে চলতে চায় নি, পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে বাকি জীবন জেলের অন্ধকারে কাটিয়ে দেয়ার কোন মানে হয়না।
তসেদিন Ruger LCR টা ফেলে দেয়া টা যে একটা ভুল ছিল তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। মানুষ মারার জন্য ব্যাবহার করা হয় এমন জিনিসের ভিতর শুধুমাত্র একটা চায়নিজ ছুড়িই আছে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই তার মনে হয়!! আরে!! নিকোলাস এবং ইবনীকে মারতে তো আমার কোন ওয়েপন ই দরকার হয়নি। মনে মনে হঠাৎ ই খুশি হয়ে যায় সে।
.
.
.
.
বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাবসা ভাল যাচ্ছে না আইভানহোর।
মানুষ আস্তে আস্তে সতর্ক হতে শুরু করেছে। নিজের আশেপাশের কারো সাথে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব সৃষ্টি হলে তার নামে আগে থেকেই জিডি করে রাখছে সবাই।
অনেকে আবার নিজের বিশ্বস্ত ও একান্ত কাছের মানুষের নামেও জিডি করে রাখছে।
স্বামী, স্ত্রীর নামে, স্ত্রী স্বামীর নামে, বাবা নিজের ছেলের নামে এমনকি নিজ শ্বাশুড়ির নামেও অনেকে জিডি করে রেখেছে।কায়রো পুলিশরা মানুষের ভিতরে এই অবিশ্বাসের খেলা দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। এক বা একাধিক ব্যাক্তির নামে মোটিভ অফ মার্ডার সহ জিডি করে রাখায় ই বাঁধলো বিপত্তি। অনেকের ই গুড়ে বালি পরলো।এখন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে খুন করা হলে তো কোন বেনিফিট পাওয়া যায় ই না, বরং খুন হওয়া লোকটি যাদের নামে জিডি করে গিয়েছিল তাদের পরতে হয় মহা বিপদে।
হঠাৎ করেই আবার খুন করানোর ট্রেন্ড টা কমে আসে। তবুও প্রতিশোধ মূলক কিছু মার্ডারের জন্য টাকা খসাত মানুষ। তবে তা ছিল প্রফেশনাল এসাসিন দের জন্য হাতেগোনা কয়েকটা কাজ।
.
.
.
এদিকে উমর এবং সুবাতার সুখের সংসার কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না রাতুলের।
রাতুল ঠিক করে তার নিজের এবং সুবাতার কিছু নগ্ন ছবি উমরকে পাঠাবে। উমর এটা দেখে কিছুতেই হয়ত মেনে নিতে পারবে না। যার ফলে সুবাতাকে ডিভোর্স দিবে। ওদের সুখের সংসারে ভাংগন ধরবে। তবে এতে যে বন্ধুত্ব টাও নষ্ট হয়ে যাবে!! যাক, উমরের মত লোক কে দিয়ে রাতুল কোন দিনও কোন উপকার পায় নি, আর পাবেও না। উমরের সংসার ভাংলে বরং রাতুলের লাভ হবে। সুবাতাকে সে বুঝিয়ে আবার আগের মত ইউস করতে পারবে।তবে উমরের হাতে ছবি গুলো পাঠাবে কি করে তা ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে যায় রাতুল। ঊমরের মত একটা ব্যাকডেটেড মানুষ স্মার্টফোন ও তো ইউস করে না।সব ভাবনা চিন্তা ঊমরের অফিসে ব্যাবহৃত কম্পিউটারের ই মেইল এড্রেস কে বেছে নেয় সে।
.
.
কায়রোর একটা বড় শহরে প্রাসাদসম ক্লাবহাউসে বসে স্বানন্দে গান শুনছে ফাহাদ। সামনেই স্ট্রিপার মেয়েগুলি নাচছে। আজ ওর অন্যতম আনন্দের দিন। জীবনের স্মরণীয় মুহুর্তগুলির একটি। এই ক্লাব হাউসের দরজা দিয়ে ঢুকে বা দিকে গেলেই একটা আলাদা ছোট রুম। ঐ রুমে কেউ নাচ, গান, মদ্যপান কিংবা মেয়ে নিয়ে মাস্তি করতে যায় না। ওখানে থাকে কিছু দালাল। যারা ডেথ ব্রোকার নামে পরিচিত। সে দালালদের কাতারে আজ একটা নতুন লোক এসে দাঁড়ায়, লোকটার জামার উপরে সাদা এপ্রোন পরা, মুখ অপারেশনের সময় ডাক্তাররা যেমন মুখোশ দিয়ে ঢেকে রাখেন তেমনি ভাবেই ঢাকা, হাতে সাদা গ্লাভস, চোখের উপর দিয়ে চুল নেমে এসে পরেছে নাক পর্যন্ত। হাতে ফাস্ট এইড কিট।
এসেই চুপচাপ বসে পরে একটা চেয়ারে।
যে কেউ দেখলেই তাকে ডাক্তার বলে ভুল করে ফেলতে পারে।
লেখক :হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
পর্ব ৬

Post a Comment

Previous Post Next Post