গল্পঃব্লাক ক্যাফেটেরিয়া ☕ পর্ব ১১ | লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

 


 

গল্পঃব্লাক ক্যাফেটেরিয়া ☕ পর্ব ১১
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ 

বছর ১৮ আগের ঘটনা,
রাস্তার পাশে জীর্ণ-শীর্ণ এক বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পায় এরিক। হাত পায়ে তাজা ক্ষত।
অর্ধ-উলংগ, ছেড়া ফাড়া সামান্য কাপড় জড়ানো মহিলাটি পাগলের বেশে রাস্তার ধারে পড়ে ছিলো মৃত্যুর অপেক্ষায়। এরিক কাজ শেষে বাসায় আসছিলো সে পথ দিয়েই। মহিলাটির অসহায়ত্ব, চোখ ও মুখের অদ্ভুত মায়া আকৃষ্ট করে তাকে।
এরিক কি মনে করে যেন তার লোকজনদের আদেশ দেয়, মহিলাটিকে নিজ বাসায় নিয়ে আসতে। প্রথমদিকে এরিক ভেবেছিলো চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার আগ পর্যন্ত তাকে বাসাতেই রাখবে।
কিন্তু মাত্র দু দিন না পেরোতেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান তিনি।
এরিক পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, তার নাম মেরী।
পেশায় একজন নান, উপাধি,সিস্টার।
সবাই তাকে সিস্টার মেরী বলেই জানেন।
তার বাসা কোথায় এবং এখানে এসেই বা কিভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় পরে ছিল সেটা জানতে চান এরিক।
সিস্টার মেরী জানান তিনি কিছুই মনে করতে পারছেন না।
যেহেতু এরিক ও খ্রিস্টান এবং তার একটি ছোট উপাসনালয় ছিলো, সিস্টার মেরি এরিকের বাসাতে থেকেই সেই উপাসনালয়ের দেখাশোনা করার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চায়।
এরিক তাকে আর না করে না।
তবে সিস্টার মেরীর ভিতরে হুট করেই দেখা দেয় এক অবাক ক্ষমতা, এরিকের বিভিন্ন কাজে নামার আগে, বিপদের আগাম সংকেতগুল দিয়ে দিতে থাকে সে।
তার কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য হওয়ায় আস্তে আস্তে এরিকের বিশ্বাস অর্জন করে নিতে সক্ষম হয় মেরী।
.
.
.

ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত বেশ বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে বসবাস করত ‘কানান’ জাতি।
এরা দেবতা স্বরূপ একটি পাখির পূজা করতো, যার নাম ফিনিক্স। অন্যান্য ক্ষমতা থাকার পর ও যে জিনিসটি ফিনিক্সকে সবথেকে বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে সেটা হলো, এ পাখিটির কখনো মৃত্যু হয়না।
কানান জাতিদের এই দেবতারূপ পাখির বসবাস ছিল ভূমধ্যসাগরের এক নির্জন দ্বীপে।
অসাধারণ সব ক্ষমতা এবং অমরত্ব থাকার জন্য অনেক কালো জাদুকররাই ফিনিক্স কে আক্রমণ করত, সবার ধারণা ছিলো এই পাখির রক্ত পাণ করলেই অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। কিন্তু ফিনিক্স নিজেও কম শক্তশালী ছিল না। তাকে ঘায়েল করাই ছিল অনেকের জন্য কল্পনার বাইরে।
তবে এই কাল্পনিক কাজটি সত্যি ই করে ফেলেছিলেন মেরি।
তিনি ছোট থেকেই অনেক বেশি শক্তিশালী জাদুবিদ্যার চর্চা করে আসছিলেন। জন্মগত ভাবেই তার এক পা ছোট ছিল। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হত তাকে। আশপাশের সবাই যখন এটা নিয়ে হাসাহাসি করতো, তখন সে মনে মনে খুব কষ্ট পেত এবং ভাবতো, এদের থেকেও এই পৃথিবীকে তিনি আরো বেশি সুন্দর ভাবে উপভোগ করবেন। আর একটা মেয়ে তখন ই পৃথিবীর সবকিছু খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে, যখন সে যুবতী থাকে।মেরীর কাছে তার যৌবন ধরে রাখার একটামাত্র ই উপায় ছিল-
ফিনিক্স।
মেরী নিজ ইচ্ছায় ১৪ বছর বয়স থেকেই ফিনিক্সকে বশ করার জন্য জাদুবিদ্যার প্রাক্টিস করতে থাকেন এবং ৩২ বছর বয়সে তার কিছু সহকর্মী নিয়ে দীর্ঘ দুমাস যাত্রার পরে উপস্থিত হন ফিনিক্স এর আবাস্থলে।
দ্বীপটার চারদিকটাতেই কেমন ভৌতিক পরিবেশ ফুটে বিরাজমান ছিল,যেখানে সেখানে পরে থাকা মানুষের হাত পায়ের কংকাল এবং মাথার খুলি বার বার ই জানান দিয়ে যাচ্ছিল পূর্বের ভয়ানক পরিণতির চিহ্ন।
তবে এবার মেরী ছিল অনেক ধূর্ত এবং কুশলী। মেরী এবং ওর কিছু সহকর্মীরা মিলে ম্যাজিকাল স্পেল পড়তে পড়তে এগিয়ে যায় ফিনিক্স এর আবাসস্থলে।

এক পর্যায়ে ওরা সবাই লিপ্ত হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। ক্ষমতাধর ফিনিক্স পাখি অনেক্ষন বীরদর্পে সবার মোকাবেলা করলেও মেরীরা বেশ কয়েকজন একসাথে থাকায় শেষমেশ ওদের সাথে আর পেরে উঠে নি। পরাজিত হয়ে বন্দী হয় মেরীদের হাতে।
আকৃতিতে বিশাল এক পাখিকে জাদুর সাহায্যে সবুজ রঙের ধোঁয়ায় পরিণত করে একটি সীসার বোতলে বন্দী করে ফেলা হয়।
কিন্তু ঝামেলা তখন ই হয়, যখম মেরী ফিনিক্সের ধোয়াভর্তি বোতল শুধুমাত্র নিজের বলে দাবী করে।এরকম স্বার্থপর আচরণে ওর সহকর্মীরাই বাঁধা দিয়ে বসে।
স্বাভাবিকভাবেই এই ফিনিক্সের দাবিদার তারা সবাই ছিল।
কিন্তু চালাকি করে বাকি সবাইকে মেরে একাই পালিয়ে আসতে চায় মেরি। তবে সেটা সে পারে নি। বাকি সব সহকর্মীরা একজোট হয়ে মেরীর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যায়। মেরীর থেকে ওরা অনেক দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সবাই একযোগে অবস্থান নেয়ায় মেরী ওদের হাতে বাজেভাবে পরাস্ত হয়৷ মেরির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয় ফিনিক্স পাখির কৌটাটি। এর বদলে মেরিকেই বোতলবন্দী করে স্পেলের সাহায্যে ছুড়ে মারা হয়, অজানা,দূরবর্তী কোন অঞ্চলে।
কিন্তু একটু পরেই সবাই এই কাজ টার জন্য ভীষনভাবে আফসোস করতে থাকে বাকি সহকর্মীরা।
কারণ মেরীর কাছ থেকে তারা যে কৌটাটি রেখে দিয়েছিল, সেটা ছিল একটি রেপ্লিকা। ফিনিক্স পাখির আসল বোতলটি মেরীর সাথেই রয়ে গেছে।
বন্দী অবস্থায় সিস্টার মেরী এসে পরেন একটা অচেনা অজানা অঞ্চলে।শক্ত পাথরের টুকরোর উপরে এসে পড়ায় বোতলটি ভেংগে মেরি বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর মত শক্তিও তখন তার গায়ে ছিল না। এ অবস্থায় মেরীকে খুঁজে পায় এরিক এবং তার বাসায় নিয়ে যায়। মেরীকে উদ্ধার করার সময়ে সবুজ রঙের ছোট একটি শীশার বোতলও উদ্ধার করে এরিকের লোকজন।
পরে এরিকের কাছে সেটা হস্তান্তর করা হয় এবং কি মনে করে যেন এরিক সেই বোতলটিকে তার নিজের বুক শেলফ এর উপরে রাখেন।
অসুস্থ মেরীকে যেদিন উদ্ধার করে এরিকের বাসায় আনা হয়, ঠিক সেদিন ই খবর পেয়ে ছুটে আসেন তালহা।
সাথে ছিল তার তিন বছরের ছেলে ফাহাদ।
তালহা মেরীকে দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সু-চিকিৎসার সকল বন্দোবস্ত করতে বলেন। এরপর এরিকের সাথে জরুরী একটা বৈঠকে বসেন আলাপ আলোচনা করার জন্য। ফাহাদ তার বাবার কোল থেকে নেমে যায়। এরিকের বাসার চারদিক পায়চারি করতে থাকে। হেঁটে হেঁটে চলে যায় বুক শেল্ফ এর কাছে।
হঠাৎ সেখানে রাখা সবুজ শীশার বোতলের উপর চোখ পরে তার।
আকর্ষনীয় ছোট্ট বোতলটা সাহস করে নামায়। বোতলের ভেতরকার অদ্ভুত সবুজ রং তাকে আকর্ষিত করে। টান দিয়ে ছিপি খুলে ফেলে ফাহাদ। সাথে সাথেই ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা, অনুমানের চেয়েও অনেক বেশি ধোয়া বের হয়ে আসে। ধোয়াগুল একত্রে জড়ো হয়ে ফাহাদের সামনে সৃষ্টি হয় প্রকান্ড এক সবুজ রঙের উজ্জ্বল পাখি। এটা দেখে ফাহাদ ভয়ে দৌড়ে অন্য রুমে মিটিং করতে থাকা তার বাবার কাছে চলে যায়।
কিন্তু একদম চুপচাপ থাকে এত বেশি ভয় পেয়েছিল সে,
সেখানে গিয়েও ফাহাদের কোন ধরণের কথা বের হচ্ছিল না মুখ দিয়ে।
মিটিং শেষে চলে যায় ফাহাদ ও তার বাবা। সেদিন সন্ধ্যায় বুক শেলফের রুমে এরিক কোন একটা কাজে প্রবেশ করে।
পায়ের নিচে শীশার বোতল পড়তেই চমকে উঠে সে। বোতলে সবুজ রং থাকার কথা থাকলেও সেটা ছিল একেবারেই খালি।
এবং তার কাঠের জানালার গ্রীল গুলো ছিলো সব ভাংগা।
.
.
.সুস্থ হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর সিস্টার মেরী খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন,
সেদিন ফাহাদ ও তার বাবা এসেছিল এরিকের বাসায়। অন্য কেউ আসে নি। এরিকের কাছ থেকে ছলাকলা করে কথা বের করে সে নিশ্চিত হয়,
ফিনিক্স কে বোতল থেকে হয়ত ফাহাদ বা তার বাবা কোন না কোন ভাবে মুক্ত করে দিয়েছে।
তার এত বছরের সাধনার ফল! এভাবে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বেশ চটে যায় মেরী। সে সিদ্ধান্ত নেয় শাস্তি হিসেবে ফাহাদ ও তার বাবাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে।
এরিক যে তালহার বিশ্বস্ত বন্ধু, সেটা ভালো ভাবেই জানতো মেরী।
মেরী তার কালো জাদু প্রয়োগের ফলে এরিককে এবং তার কিছু সহচরকে হিপনোটাইজ করে ফেলে এবং আদেশ দেয় ফাহাদ ও তার বাবা তালহাকে বন্দী করে আগুনের মাঝে ফেলে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে।
প্লান অনুযায়ী কাজ করা হয়, পাশের জংগলের ভিতরেই কাঠ খড়ের তুমুল স্তপ দিয়ে তৈরি করা হয় আগুন জ্বলানোর জায়গা।
এদিকে তালহার বাসায় চলে যায় এরিক।
কাছের মানুষ বিশ্বাসঘাতক হলে অসহায় হয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তালহার একদম সামনে এসে এরিক যখন তার হাতে থাকা ছুড়িটা পেটের ভিতরে পুরো ঢুকিয়ে দিয়ে ভিতর বাহির করছিলো,
তখন তালহার অসহায় হয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
তালহার লাশ ধরে দুজন নিয়ে যায়। পরে নিক্ষেপ করা হয় দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের মাঝে। ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ফাহাদকেও। কিন্তু ফাহাদকে নিক্ষেপের ঠিক পরপর ই কোথা থেকে যেন উড়ে এসে পড়ে একটা সবুজ লম্বা লম্বা পালকযুক্ত দানবাকৃতির পাখি। ফাহাদের পিঠে খামচি দিয়ে ধরে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় কোথাও...
.
.
.
ঘটনাটি জানতে পারে সিস্টার মেরি। সে বুঝে এই কাজটি কে করেছে। মনে মনে ভয় ও পায় সে। ফিনিক্স নিজেই এখন আহত। তাও ফাহাদকে বাঁচিয়ে দিল?পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর হয়ত তার উপরে প্রতিশোধ ও নিতে পারে।
মেরী তখন এক প্রকার ভয় পেয়েই তার কালো জাদুবিদ্যার ব্যবহার করে,
এরিকের স্ত্রীর গর্ভে থাকা হেলেনের কাছে তার প্রায় সবটুকু ক্ষমতা গচ্ছিত রাখে।
হেলেন জন্মগ্রহণ করার পরে যখন বড়, সুন্দর এবং রূপবতী হবে তখন হেলেনের দেহ নিজের করে নেয়ার দুষ্টু বুদ্ধি আঁটতে থাকদ সিস্টার মেরী।
হেলেন মূলতো তার গায়ের মিষ্টি গন্ধ এবং অসাধারণ রূপ লাভ করে সিস্টার মেরীর কারসাজিতেই। তবে একটা সমস্যা ছিল এবং গুরুতর সমস্যা।
সেটা হলো হেলেন যদি কারো সাথে যৌন মিলনে আবদ্ধ হয়, তবে হেলেনের কাছে গচ্ছিত রাখা সিস্টার মেরীর ক্ষমতাগুলো নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করবে।
এজন্যই সে এরিক কে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ,
হেলেনকে ছোট থেকে গড়ে তুলেন এক অসাধারণ যোদ্ধা হিসেবে। সামনে সামনে এরিক সব কিছু করলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিলো সিস্টার মেরী ই।
.
.
.
.
ওহমা প্রথমদিন হেলেনকে দেখেই চিনে ফেলতে সক্ষম হয়,
এবং সে খুব ভাল করেই জানতো, কারো সাথে যৌন মিলনে আবদ্ধ হলেই হেলেনের ভিতরকার খারাপ শক্তিগুলো নষ্ট হতে শুরু করবে।এজন্য ই প্রথমদিন দেখার পরে হেলেনের উপরে ওহমা তার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ।
কোন ছেলের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা এবং অল্পতেই তার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পরা সবকিছুই ছিল ওহমার কারসাজি। তবে সিস্টার মেরীর কালোজাদুর প্রভাব ও থেকে গিয়েছিলো হেলেনের ভিতরে, এজন্যই একবার রোমান অন্ধ হয়, আবার অন্যবার হয়না।
ট্রি হাউজের ডায়েরিটা অনেক অদ্ভুত। এ ডায়েরির পাতায় কোন কাগজ নেই। বরং রয়েছে পাতলা কতগুলো আয়না। আর সেই আয়নায় এ সকল ঘটনা নিজের চোখের সামনেই দেখতে ও জানতে পারছিলো হেলেন।

চলবে..
.
.

Post a Comment

Previous Post Next Post