গল্পঃ সত্য প্রকাশ। লেখকঃ বিবেকানন্দ দাস। একটি শিক্ষামূলক গল্প ।

গল্পঃ সত্য প্রকাশ।
লেখকঃ বিবেকানন্দ দাস।

 ভাইয়ার মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা চুরি হয়েছে,ভাবি বলেছেন

 'তিনি দেখেছেন আমি টাকা চুরি করছি' কথাটা শোনামাত্রই ভাইয়া আমার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছেন,আমি বললাম

-- আমি চুরি করিনি,ভাবি মিথ্যে বলছেন।

একথা শুনে ভাইয়া আমার গালে আরেকটা চড় মেরে দিলেন।আমি আর কিছু বললাম না, নিজের মায়ের পেঠের ভাই যখন আমাকে বিশ্বাস করছে না,আমি আর কি বা করবো!সেদিন রাগ করে যেই মেসে আসছি আর সাত মাসের মধ্যে বাসায় যাইনি।মনে মনে ভাবতাম যার মা-বাবা নেই,সে খুব একা।

হঠাৎ একদিন মেসে তোলপাড় শুরু,সাগরের পরীক্ষার ফি'র ২৫০০৳ খুঁজে পাচ্ছে না সে,মেসের বড় ভাইয়ের অনুমতিতে সবার রুমে খোঁজ করা হবে।আমি নির্দোশ সুতরাং আমিও রাজি। কিন্তু কে জানতো আমাকেই চোর বানানোর ফাঁদ পাতা রয়েছে।

টাকাটা পাওয়া যায় আমার বিছানার তোষকের নিচে,সবাই মিলে আমাকে অবজ্ঞা,অপমান সূচক কথাবার্তা বলতে লাগলো।

আমার মতো চুরের সাথে মেসে থাকবে না তাঁরা, আমাকে মেস থেকে তাড়িয়ে দিবে।শেষে মেসের বড়ভাই বললেন

--আরে সে  হয়তো মজা করেছে,এমনিতেই হয়তো দিয়ে দিতো, সবার এমন কথাবার্তা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছে হয়তো।

আরো কিছু কথা বলে সবাইকে শান্ত করলেন তিনি,সে যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

দুদিন পর সকালে সোহান আমার রুমে এসে আকুতি-মিনতি করে বলতেছে

--আমারে বাঁচান ভাই,আজ পরীক্ষার ফি দেয়ার শেষ তারিখ,বাড়ি থেকে যে ২৫০০৳ পাঠাইছিলো,সেখান থেকে ৫০০৳ খরচ করে ফেলেছি,কেউ টাকা ধার দিচ্ছে না ভাই,একমাত্র আপনিই আমাকে এ বিপদ থেকে বাঁচাতে পারেন।

আমার কাছে টাকা ছিল,সুতরাং দিয়ে দিলাম।

সেদিন ভার্সিটিতে যাইনি আমি,শরীরটা কেমন জানি অসুস্থ লাগছিল।দূপুরের সময়  আমি বাদে কেউ মেসে নাই, সবাই কলেজে।

হঠাৎ দেখি সোহান চলে এসেছে,আমার সামনে এসে কাঁপতেছে।চোখ দিয়ে জল পড়ছে,আমি বললাম 

--কি রে,পরীক্ষার ফি জমা দেস নাই?

--দিছি ভাই।

--তাহলে কান্না করছিস কেন?

সোহান ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার পাঁয়ে,কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।

--সেদিন যখন আমার আব্বা মেসে আসেন,তখন আপনি ওনাকে বলে দিয়েছিলেন আমি সিগারেট খাই,সে জন্য ওনি আমাকে সবার সামনে চড় মেরেছিলেন,এর প্রতিশোধ নিতে আপনাকে অপমান করতে সাগরের পরীক্ষার ফি'র টাকাটা আপনার রুমে রেখে দিয়েছিলাম,আর আজ আপনিই আমার বিপদে সাহায্য করলেন আমায়।আমাকে ক্ষমা করে দেন ভাই,ভুল করে ফেলেছি।

আমি সোহানকে বুকে টেনে নিলাম,বললাম

--ভুল বুঝতে পারছস এটাই অনেক।

তারপর হঠাৎ একদিন ভাইয়ার ফোন,ভাবির ডেলিভারি হয়েছে,আমার একটা ভাতিজা হয়েছে,কিন্তু ভাবির রক্ত লাগবে,কোনো রকমেই ম্যানেজ করতে পারছেন না।আমি একনিমিষেই যেন সবকিছু ভুলে গেলাম বললাম।

--চিন্তা কিসের ভাইয়া,আমি তো আছি,আমার রক্তের গ্রুপ আর ভাবির রক্তের গ্রুপ একই।তোমরা  কোন হাসপাতালে আছো বলো,আমি আসছি।

--ইবনে সিনা হাসপাতালে তুই জলদি আয়।

ফোন কেঁটে আধ ঘন্টার মধ্যেই ইবনে সিনায় গেলাম,রক্ত দিলাম।

ভাবি আমাকে ওনার কাছে ডাকলেন,আমি গেলাম ওনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন

--ঐদিন তুই টাকা চুরি করিস নি ভাই,আমিই সরিয়ে ছিলাম,তোর ভাই অতিরুক্ত রেগে গিয়েছিলেন সে কারনে আমি ভয়ে তোর কথা বলে দিয়েছিলাম,তোর নবজাতক ভাতিজার দিকে তাকিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই।

--কোনো সমস্যা না ভাবি,ডাক্তার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিলেই আমরা সবাই একসাথে বাড়ি যাবো।

ভাবি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন

--এতোদিন পূর্বে করা পাপের অনুশোচনা থেকে মুক্তি পেলাম রে ভাই।


ট্যাগ-

বাংলা ছোট গল্প

বিবেকানন্দ দাসের ছোট গল্প

বিবেকানন্দ দাসের মজার গল্প 

বাংলা শিক্ষামূলক গল্প


1 Comments

  1. Best 777 Casino Hotel & Spa in Marrakech, MI - MapyRO
    Find the BEST 777 동해 출장샵 CASINO HOTEL & 광명 출장샵 SPA in Marrakech, MI. See reviews, photos & cheap rates for 777 경상남도 출장샵 Casino Hotel 안동 출장마사지 & Spa in Marrakech, MI. Rating: 4.1 · ‎26 votes 영천 출장안마

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post