রম্য গল্পঃ চালাক লেখকঃ হানিফ ওয়াহিদ । বাংলা ছোট গল্প


গল্পঃ চালাক
লেখকঃ হানিফ ওয়াহিদ

ফেসবুকে অতি ক্ষমতাবান লোকের সাথে আমি বন্ধুত্ব করতে পছন্দ করি না। একবার ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল, একসেপ্ট করি নাই। তাকে আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য মনে করি নাই! 

এখন মনে হচ্ছে একসেপ্ট না করে ভুল করেছি।  পাগলা ট্রাম্প এই মাথা নিয়েই নোবেল জয়  করে ফেলছে, আর আমি শালা সারা জীবনে নোবেল তো নোবেল, একটা কদবেলও জয় করতে পারবো কিনা সন্দেহ! 

ট্রাম্প প্রমাণ করে দিল,জীবনে কাউকে অবহেলা করতে নাই!! 

 গত সপ্তাহে বিল গেটস আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল, আমি আর ভুল করলাম না,একসেপ্ট করে ফেললাম।ফ্রেন্ডলিস্টে দুই একজন সেলিব্রিটি থাকা ভালো।  বলা তো যায় না, কখন আবার বিল গেটসও নোবেল পুরষ্কার পেয়ে যায়! ফ্রেন্ড লিস্টে একজন নোবেলজয়ী জ্ঞানী বন্ধু থাকলে মন্দ হয় না,চুরি চামারী করে ধরা পড়লে বুদ্ধি দিয়ে  রক্ষা করতে পারবে। 

দুইদিন আগে   আমার বড় ভাবীর সিজারিয়ান বাচ্চা হয়েছে,আমি হাসপাতালে গেছি বাচ্চা দেখতে। বিল গেটস মেসেঞ্জারে কল দিয়ে বসলেন। তাকে পাত্তা দেওয়ার মতো কিছু নাই, কেননা  সে এখনো নোবেল পুরষ্কার পায় নাই। 

  বিল গেটস বললেন, হ্যালো,হ্যালো। হানিফ ওয়াহিদ ভাই 

  আমি বললাম, বিজি আছি। পরে কল দেন।

  কেন? কী হয়েছে আপনার? 

  আমার কিছু হয় নাই।হাসপাতালে আছি। ভাতিজাকে দেখতে এসেছি? 

  বিল গেটস উদ্বিগ্ন গলায়, কী হয়েছে আপনার ভাতিজার? দেন দেখি ভাতিজার সাথে কথা টথা বলি!

  ভাতিজা কথা বলতে পারে না।

  কেন? কথা বলতে পারে না কেন? কী সমস্যা? 

  ভাতিজা কথা বলতে পারে না, কারণ  সে গতকাল জন্মগ্রহণ করেছে! 

  ও মাই গড! আপনি তো ভাই ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন! একটা জরুরি দরকারে আপনাকে কল করেছি ভাই! 

  কী দরকার? 

  আমার কিছু টাকার দরকার ছিল। এক সপ্তাহের জন্য কিছু টাকা হাওলাত দেওয়া যায়? আমার নতুন  গার্লফ্রেন্ডের জন্য একটা লেটেস্ট লিপস্টিক কিনতে হবে। কিনে দিতে না পারলে ব্রেকআপ হয়ে যাবে!  আমার আগের গার্লফ্রেন্ডকেও ফুচকা খাওয়াতে পারি নাই বলে ব্রেকআপ হয়ে গেছে!! 

লে হালুয়া!  বিল গেটস আমার কাছে টাকা হাওলাত চায়! এমন ফকিন্নি মার্কা বিল গেটস আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে?  হাউ ফানি, জরিনার নানী!!

আমি বললাম, বিল গেটস ভাই রে! জীবনে বহু মানুষকে আমি টাকা ধার দিয়েছি, কেউ ফেরত দেয় নাই। টাকা ধার দিয়ে বহুত বাঁশ খেয়েছি। এতো বাঁশ খেয়েছি যে আমি এখন বড়োসড়ো একটা বাঁশ বাগানের মালিক!! 

এই এক সমস্যা। আজকাল মেয়েরা হুটহাট যখন তখন  ব্রেকআপ করে দেয়! 

ছেলেদের সব কিছুতেই দোষ।ফেসবুকে এতো বেশি থাক কেন,ব্রেকআপ! মেয়েদের ছবিতে লাইক দিলা কেন, ব্রেকআপ!   অন্য মেয়ের দিকে তাকাইলা কেন, ব্রেকআপ!  আমার সাথে দেখা করতে দেরি করলা কেন, ব্রেকআপ!! 

আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম, তার প্রেমিকার সাথে তার ব্রেকআপ হয়েছে, কারন তাকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার পর তার বাথরুমে যাওয়ার দরকার হয়েছিল। বাথরুমে কেন সে একটু বেশি  সময় ব্যয় করলো এই অপরাধে ব্রেকআপ!! 

সেই বন্ধু পণ করেছে, প্রয়োজনে পাবলিক প্লেসে হাগা মুতা করে দেবে, তবুও আর কখনো গার্লফ্রেন্ডকে দাঁড় করিয়ে  রেখে বাথরুমে যাবে না!! 

আজকাল নাকি ব্রেকআপ হলে মেয়েরা তার বয়ফ্রেন্ডেকে খুন টুনও করে ফেলে! একবার একটা ছেলে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে গহীন জঙ্গলে বেড়াতে গেছে।  কিছুক্ষণ পরই খবর এলো, ছেলেটা   মারা গেছে। লোকজন ছুটে গেল, পুলিশ এলো।  

পুলিশ মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো,আপনার বয়ফ্রেন্ড মারা গেছে কীভাবে? 

মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,বিষ খেয়ে!

বিষ খেয়ে মারা গেছে, ভালো কথা। শরীরে আঘাতের চিন্হ কেন? 

মেয়েটা নির্বিকার ভাবেই বললো, বিষ খেতে চাচ্ছিল না,তাই,,,,

স্কুল জীবনে একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম। প্রতিদিন মেয়েটাকে আইসক্রিম ফুচকা খাওয়াতাম।  ক্লাসে চকলেট কিনে নিয়ে যেতাম।

 একদিন মেয়েটা বললো, আমার বান্ধবী লিমার জন্য  ওর প্রেমিক হাত কেটেছে।  তুমি আমার জন্য  কী করেছো?

 আমি মাথা চুলকে ভাবলাম, আরে তাই তো! আমি কী করেছি?

ছোটবেলায়  মুসলমানি করার সময় যখন কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না,দাদী বলেছিলেন, করে ফেল দাদু ভাই, না হলে বিয়ে করতে পারবে না!

আমি মেয়েটাকে বললাম, আমি তোমার জন্য মুসলমানি করেছি!!

ফলাফল, ব্রেকআপ! 

কলেজ জীবনে রিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম। বেশি দিন সম্পর্ক টিকেনি।কারন হচ্ছে সিগারেট! 

সিগারেট খায় এমন ছেলেদেরকেই রিয়া পছন্দ করতো। রিয়ার ধারণা একমাত্র পুতুপুতু টাইপ পোলাপানই সিগারেট খায় না। সিগারেট না খেলে ছেলেদের স্মার্টনেস আসে না। আর স্মার্ট ছেলে ছাড়া প্রেম জমে না!!

সিগারেট না খাওয়ার অপরাধে রিয়ার সাথে  আমার ব্রেকআপ হয়ে গেল!! 

আমার নব্বই বছর বয়সী দাদাকে দেখেছি সিগারেট খেতে। একদিন দাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা দাদা, সিগারেট খাওয়া  ক্ষতিকর, এটা জেনেও সিগারেট খাও কেন?

দাদা,কাশতে কাশতে বললেন, সিগারেট খাওয়া ক্ষতিকর কিনা জানিনা, কারন যারা আমাকে সিগারেট খাওয়া ক্ষতিকর বলে নিষেধ করেছিল এবং নিজেরাও খায়নি,তাঁরা কেউ আর এখন বেঁচে নেই! সিগারেট  ছাড়া বাচবো না রে দাদু,এটা আমার জন্য মহা ঔষধ!! 

রিয়া আমাকে ছেড়ে যাওয়ায় আমি খুশিই হয়েছিলাম। আমি গবেষনা করে দেখেছি,প্রতিটি খারাপ রোগের পিছনেই রিয়ার নাম জড়িয়ে আছে। 

গনোরিয়া, পায়রিয়া, ডিপথেরিয়া, ডায়রিয়া,ম্যালেরিয়া আরও কত ভয়ংকর ভয়ংকর নাম! রিয়ার সাথে সম্পর্ক রেখে এ-সব ভয়ংকর রোগের ভাগিদার হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নাই। রিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখা মানে এইসব রোগ ডেকে আনা!

 আমি কি এতোটাই বোকা যে খাল কেটে হাঙর আনবো!!

 চারদিকে এতোসব কান্ড কারখানা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জীবনে প্রেমও করবো না, বিয়েও করবো না। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও বিয়ে করতে দেবো না! 

 একটু চালাক না হলে টেকা বড়ো দায়!!

ট্যাগ-

বাংলা রম্য গল্প

বাংলা কৌতুক

বাংলা হাসির গল্প

ছোট গল্প বাংলা

Post a Comment

Previous Post Next Post