গল্পঃ গৃহযুদ্ধ লেখকঃ Hasibul Islam Fahad পর্বঃ ৭

 


গল্পঃ গৃহযুদ্ধ

লেখকঃ Hasibul Islam Fahad

পর্বঃ ৭

মণিকা ভাবির  আলমারি থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলাম গ্রীন-লাইফ হাসপাতালে।  
ডিউ টাকা পরিশোধ করলাম। মনে মনে একটা কথা ভাবলাম, মানুষের টাকা পয়সা যতই থাকুক, পাশে যদি সাহায্য করার মত লোক না থাকে, একাকিত্ব যদি একটা মানুষকে ঘিরে রাখে তবে সে জীবনের কাছে পুরোদমে অসহায় হয়ে পরে। বেশি কিছু হয়ত ওনার জন্য করতে পারছিনা, অথচ আমরা না থাকলে উনি মারাও যেতে পারতেন। ওনার বেডের পাশে রাখা একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। উনি আমার উপস্থিতি হয়ত টের পেয়েছেন। ভাংগা ভাংগা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, আমার বারান্দার গাছগুলো কি ঠিক আছে?
জবাব দিলাম। জ্বী। এরপর উনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। পাশ থেকে উঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবে? ডাক্তার জানালো হাসপাতালে তাকে থাকতে হবে আরো প্রায় দশ দিন। ওখানের ইনচার্জ কে বলে আসলাম  ওনার সেবা শুশ্রুশায় যেন কোন  প্রকার সমস্যা না হয়৷ দরকার হলে একজন নার্স রেখে দিন ওনাকে ২৪ ঘন্টা দেখাশোনা করার জন্য৷ টাকা-পয়সা  নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। পরিশোধ হয়ে যাবে। 
ওনারা মণিকা ভাবিকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানালো। 
হাসপাতাল থেকে বের হলাম। চারপাশের মানুষগুলোকে অসহ্য লাগছে। আমার একটু একাকিত্ব দরকার। আর এ জনবহুল শহরের মাঝেও একাকিত্ব এনে দেয়ার জন্য একটা সিগারেট যথোপযোগী ভূমিকা পালন করে। 
এবার সব চিন্তাগুলোকে একপাশে বাদ দিয়ে একটু সিরিয়াস হয়ে সুপ্তিকে নিয়ে চিন্তা করা যাক,
সুপ্তি কেনো বাসায় ফিরলো না? 
আমার উপর রাগ করে? নাকি অন্য কোন কারণে? আমার উপর রাগ করে ও বাসা ছাড়েনি। তাহলে  রাগ দেখিয়ে আগেই চলে যেত। মণিকা ভাবিকে হাসপাতালে দিয়ে উধাও হয়ে যেত না। সুপ্তি আবার বাসায় ফিরে এসেছিলো তাহলে ও ঠিক আছে। তবে আবার চলে গেলো কেনো! 
যে লোকটা আমার বাসায় এসেছিলো ডেন্টিস্ট পরিচয়ে,  তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। আমার হিসেব অনুযায়ী ঐ লোকটা এখন বাসায় নেই। বাসায় আছে তার ওয়াইফ। 
হাঁটতে হাঁটতেই ঠিকানা অনুযায়ী চলে গেলাম লোকটার বাড়ি। 
কলিংবেল চাপ দেয়ার বেশ কিছুক্ষন পরে এসে দরজা খুললেন এক ভদ্র মহিলা। ওনাকে বললাম, আমি ইব্রাহীম সাহেব( ওনার স্বামী) এর  কলিগ। উনি কি বাড়িতে আছেন? 
ভদ্র মহিলা জানালেন বাড়িতে নেই তিনি। 
বললাম যে তার জন্য অপেক্ষা করি? 
উনি জানালেন, তিনি চাকরী করেন। ডিউটি টাইম সকাল ৯ টা থেকে বিকেল পাঁচটা৷ 
- বুঝলাম, স্ত্রী হিসেবে আপনি অতটাও আদর্শ নন।  আপনার হাজবেন্ড এর চাকরী চলে গেছে দু'দিন হলো।সেটা আপনি বুঝতে পারেন নি। আদর্শ স্ত্রীরা স্বামীর সবকিছু সহজেই ধরে ফেলতে পারে।  
- কি বলছেন আপনি!! ওর চাকরী চলে গেছে?
ওনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। 
উনি আমার আচরণে একটু বিব্রত হলেন। মুখ থেকে আস্তে আস্তে ধোয়া ছেড়ে ওনাকে বললাম, আপনার মাঝে কি কোন অপূর্ণতা আছে?
উনি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন৷ 
ওনাকে আবারো বললাম,
আমার স্ত্রী গত একদিন নিঁখোজ ছিলো৷ ওকে অনেক খুঁজেছি, রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি, থানায় মামলাও করেছি, পুলিশরাও আমার স্ত্রীকে খুঁজছে। গতকাল
 আপনার হাজবেন্ডও আমার বাসায় গিয়েছিলো।  সেও কোন একটা কারণে আমার স্ত্রীকেই খুঁজছে। 
- কেনো?
-কেনোর উত্তরটা পরে দিচ্ছি, আগে আমার কথা শেষ হোক।
আপনার হাজবেন্ড আমার বাসায় গিয়েছিলো ডেন্টিস্ট সেজে। অবশ্য তার কথাবার্তা শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো এক্কটু৷
পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম উনি আসলে সুপ্তির কোন ডেন্টিস্ট না। বরং সুপ্তির একজন কলিগ। 
শুধু এটাই না। আরো অনেক তথ্যই জেনেছি, সুপ্তিকে উনি অফিসে প্রায়শ ই উত্তক্ত করতো। মাঝে মাঝে চিঠি দিত। এ বিষয়টি আমার স্ত্রী একদম ই পছন্দ করতো না। 
গত পরশু একই কাজ আবারো রিপিট করায়, অফিসের সবার সামনেই আপনার হাজবেন্ড কে চড় মেরে বসে সুপ্তি। এ নিয়ে ভালোই জল ঘোলা হয়। বিষয়টি পরে কতৃপক্ষের নজরে গেলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে আপনার হাজবেন্ডকে চাকুরী থেকে বহিস্কৃত করে দেন তারা।
ভদ্র মহিলা আমার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন না। তার চোখে মুখে উৎকন্ঠা। এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, হাজবেন্ড এর প্রতি তার ভালোবাসা অনেক। 
উনি আমার সামনেই ওনার হাজবেন্ড কে কল দিলেন। 
ফোন রিসিভ হলো। 
- হ্যালো! তুমি কোথায়?
- বোকার মত প্রশ্ন করো না। আমি এ সময়ে কোথায় ই বা থাকি? 
- সত্যি করে বলো তো তুমি কোথায়!
- কাজ করার সময় বিরক্ত করো না। আমি অফিসে বসা। কাজ করছি,বাই।"
 বলে ফোনটা কেটে দিলো ইব্রাহীম।
মহিলা আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, 
জানেন? 
আমার স্ত্রীকে আমি দু'দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিনা। ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কতটা কষ্ট লাগে বলতে পারেন?
উনি আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। 
পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিলাম  ইব্রাহীম সাহেবকে। 
ফোন রিসিভ হলো। 
ফোন লাউড স্পিকারে রেখে 
সালাম দিলাম। 
উনি সালাম এর উত্তর দিলেন। 
বললাম,
- ডেন্টিস্ট, মি. ইব্রাহীম সাহেব, আমি সুপ্তির হাজবেন্ড,  রোহান মাহমুদ। 
ওপাশ থেকে তখন পিন পতন নিরবতা।
- আপনি নিশ্চয়ই এখন দুপুরের কড়া রোদে কোন রাস্তায় নিরুদ্দেশ ঘোরাঘুরি করছেন। এদিকে  ভাবী ইলিশ মাছ দিয়ে লাউ শাকের ঝোল রান্না করেছেন। 
যে গরম পড়েছে, রোদে না পুড়ে বরং  বাসায় চলে আসুন। একসাথে দুটো ডাল-ভাত খাই। 
- আপনি আমার বাসায় গিয়েছেন? 
- জ্বী। আপনি আমার বাসায় ঢু মেরে গেছেন, আমি আপনার বাসায় না আসলে সেটা কেমন দেখাতো! 
অবশ্য আমাকে এজন্য একটু কষ্ট করতে হয়েছে, আমাকে আপনার সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর নিতে হয়েছে।
এরপরই আপনার বাসায় চলে আসলাম। ভাবির সাথে কিছুক্ষন গল্প-সল্প করলাম। 
আমি আছি এখানেই আপনি চলে আসুন দ্রুত। 
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো। 
মিনিট দশেক অপেক্ষা করতেই চলে আসলেন ইব্রাহীম সাহেব। 
কিন্ত এই দশ মিনিট আমি শান্তিতে থাকতে পারিনি৷ ওনার বাসায় যে লাউশাক আর ইলিশ মাছের ঝোল রান্না হচ্ছে এটা আমি কিভাবে বুঝলাম সেটা জানার জন্য অনেক প্রশ্ন করছিলেন। আমি উত্তরে শুধু রহস্যময় একটা হাসি দিয়েছি৷
.
.
.
বিমর্ষ হয়ে আমার সামনে বসে আছেন ইব্রাহীম সাহেব। 
ওনার ওয়াইফ ফুঁপিয়ে কান্না করছেন। আমি ধীরে সুস্থে সিগারেট শেষ করলাম। 
" ইব্রাহীম সাহেব?"
ডাকতেই উনি ফ্লোরের দিকে তাকানো অবস্থা থেকে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন। 
" আপনি আমার বাসায় মিথ্যে পরিচয় নিয়ে কেনো গিয়েছিলেন? সত্যিটাই বলুন।"
- আমি সুপ্তির কাছে গেছিলাম। সরি বলার জন্য। চাকরি হারানোর পরে যখন আমি বসের হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন,  সুপ্তির কাছে সরি বলতে, যদি সুপ্তি বসকে আমার ব্যপারে সুপারিশ করে তবেই কেবল আমি পুনরায় চাকরিতে জয়েন করতে পারব। এরপর আমি সুপ্তির সাথে অনেক বার যোগাযোগ এর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। এরপর বাধ্য হয়েই আপনাদের বাসায় যাই। যদি আমি সেদিন বলতাম আমি ওর কলিগ, আপনি জিজ্ঞেস করতেন কেন এসেছি ওর কাছে? আপনাকে সত্য কথাটা কিভাবে বলতাম! 
তাই বানিয়ে কিছু একটা বলে দিয়েছি৷ 
আমাকে মাফ করবেন এজন্য৷ 
- সুপ্তিকে আপনি উত্যক্ত করতেন কেনো?
ওনার বউয়ের সামনে প্রশ্নটা করায় উনি বাজে একটা সিচুয়েশনে পড়লেন।
কোন উত্তর দিলেন না।
আবারো বললাম, আপনি ভরা অফিসে একজন মেয়েকে উত্তক্ত করেছেন, আড়ালে সুযোগ পেলে তো রেপ করতেন!
কথাটা বলার সাথে সাথেই ওনার স্ত্রী পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন। 
বললেন, শাট আপ মিস্টার রোহান,  আপনি আমার হাজবেন্ড কে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন না। 
- আমি যা ইচ্ছা তাই কোথায় বললাম! উনি যা করেছেন সেটাই বললাম। 
- উনি কি করেছেন? আপনার স্ত্রীকে উত্তক্ত করেছেন? সেটা আমার জন্য। আমি দায়ী৷
আমি অন্য একটা বিবাহিত ছেলের সাথে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করেছিলাম। ও সেটা দেখে রাগ হয়ে,  আমার উপর জিদ দেখিয়ে আপনার স্ত্রীকে হয়ত কিছু একটা বলেছে। আমাকে দেখাতে চেয়েছে সে-ও চাইলে প্রেম ট্রেম করে ফেলতে পারে যে কোন সময়ে। 
আমি সেজন্য সরি। আপনার পায়ে ধরে মাফ চাইবো এখন? 
ইব্রাহীম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, 
শিখুন,  ভালোবাসা কি জিনিস তা আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে শিখুন। নিজের চরিত্রে দাগ লাগিয়ে হলেও সে আপনার সম্মান রক্ষা করতে চেয়েছে। তার সামনে আপনাকে কটু কথা বলেছি, আপনার থেকেও এতে সে বেশি কষ্ট পেয়েছে। নিজে মিথ্যা একটা গল্প বানিয়ে,নিজেকে আমার কাছে ছোট করে হলেও আপনাকে মহৎ প্রমাণ করতে চাইছে। 
আর আপনি কি করছেন! বাসায় এমন একটা স্বর্গ রেখে বাইরের মানুষের দিকে নজর দিচ্ছেন। নিজে ভেবে দেখুন কতবড় ভুল আপনি করেছেন। 
ভদ্র-মহিলার বলা মিথ্যা আমি ধরতে পেরেছি এজন্য হয়ত আমাদের মাঝ থেকে উঠে উনি লজ্জায়,বাসার ভেতরে চলে গেছেন।
স্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইব্রাহীম সাহেব এসে আমার হাত ধরে বসে পড়লেন। বললেন, এমন ভুল উনি আর কোনদিন করবেন না। কারো সাথেই করবেন না। আমি যাতে সুপ্তিকে বলি ওনাকে চাকরিতে পূনর্বহালের জন্য সুপারিশ করতে। নইলে না খেয়ে রাস্তায় নামতে হবে। 
ওনার চোখেমুখে তাকিয়ে বোঝা গেলো এবার আর কোন মিথ্যা ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে না। ভেবেছিলাম সুপ্তির গায়েব হওয়ার পেছনে ইব্রাহীম সাহেবের হাত আছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হল। সুপ্তি গায়েব হলে ইব্রাহীম সাহেবেরই লস। 
ওনাকে বললাম,  দোয়া করবেন সুপ্তির জন্য।
উনি কি বুঝলো, কি বুঝলোনা তা জানিনা কিন্তু মাথা নাড়িয়ে বললো,
হ্যাঁ, হ্যাঁ অনেক দোয়া করবো। অনেক দোয়া করবো। 
ওনার বাসা ছেড়ে চলে আসলাম। 
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হিসেব মিলালাম।
সুপ্তি অফিসে ওর কলিগ ইব্রাহীম সাহেবকে থাপ্পড় মেরেছে, এ নিয়ে গন্ডোগোল হয়েছে। তাহলে সেদিন রাতে ও এ বিষয়টি নিয়েই কোন নালিশ এসেছিলো কিনা,  আমাকে জিজ্ঞেস করেছে। 
সুপ্তির প্রতি আমার অন্য একটা সন্দেহ জন্ম হয়েছিলো৷ একটা অবিশ্বাস জন্ম হয়েছিলো এখন নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে। 
ভালোবাসার মাঝে অবিশ্বাসের জায়গাটা আমি ই তৈরি করেছি। আমিও সুপ্তিকে নিজের মতই ভেবেছি হয়ত। আমার কেবলই মনে হতে লাগলো মণিকা ভাবীর সাথে আমার হুট করেই এত বেশি ক্লজ হওয়াটা উচিৎ হয়নি। 
অনুশোচনায় রাস্তার মাঝেই নিজের গালে নিজে একটা চড় মারলাম।
কিছুক্ষন পরে মোবাইলে রিং হলো, 
রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
" ভাইজান, সি.এন. জি ওয়ালাকে খুঁজে পেয়েছি"
 সুপ্তি পুনরায় বাসায় আসার পরে আবার যখন চলে গেলো, তখন 
বাসার সামনে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরায় ওর সি এন জির পেছনে থাকা নম্বরপ্লেটের ছবি স্পষ্ট ভাবেই রেকর্ড হয়ে ছিলো। ফুটেজ থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করে আমি লোক লাগিয়ে দেই সি.এন.জি ওয়ালাকে খুঁজে বের করার জন্য।  
ও কোথায় নেমেছে কি করেছে সেটা জানাটা আর আমার জন্য বেশি কঠিন হয়ে উঠবে না। 
.
.
.
.
.
একটা রেস্তোরার মুখোমুখি সিটে বসে আছি আমি এবং রেশমি রফিক।  
মেয়েটার  নাম যখন ছিলো শুধু রেশমি তখন ওকে একবার দেখেছিলাম। সুপ্তির স্কুল জীবনের বান্ধবী। 
 রফিক নামের এক লোকের সাথে বিয়ে হওয়ার পর এখন তার নাম হয়ে গেছে রেশমি রফিক। বিয়ের পর জামাইয়ের পদবী কেনো মেয়েরা চুরি করে নেয়, 
 তা কিন্তু জটিল চিন্তার বিষয়৷  যাক এটা নিয়ে পরে বিস্তর চিন্তাভাবনা করা যাবে আগে আমার জানতে হবে রেশমি রফিকের বাসায় আমার স্ত্রী কেনো লুকিয়ে আছে! 
রেশমি কিভাবে আমাকে মূল কারণটা বলবে, সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না। 
এদিকে আমিও বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম।আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ও পালটা প্রশ্ন করলো, আমি কিভাবে জানতে পারলাম যে সুপ্তি এখানে আছে? 
ছোট করে উত্তর দিলাম,  সি এন জি ওয়ালাকে ধরেছি,সে আপনাদের বিল্ডিং  দেখিয়ে দিয়েছে।  বাকি সাহায্যটুকু করেছে আপনার বাসার দাঁড়োয়ান। 
এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। 
রেশমি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
সুপ্তি পৃথিবী থেকে ওর সুপ্তি পরিচয়টাই মুছে দিতে চাইছে। 
ও কাউকে নিজের মুখ দেখাতে চাচ্ছে না। দুবার সুইসাইড এটেম্পট ও করেছিলো। কিন্তু আমার জন্য পারেনি। 
- কিন্তু এসব কেন?
কারণ ওর পৃথিবী ছিলেন আপনি।ওর মতে এখন  আপনার সামনে যাওয়ার বা দাঁড়ানোর মত মুখ ওর নেই। এজন্য ওর কাছে এ পুরো পৃথিবী ই মূল্যহীন।  
- আমি আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝছিনা। 
- সুপ্তি সেদিন রাতে মণিকা ভাবীকে হাসপাতালে এডমিট করিয়েছিলো। 
- হুম। তো?
- ফেরার পথে কিছু বখাটে ছেলেরা ওকে তুলে নিয়ে ঘন্টাখানেক ধরে ধর্ষণ করে৷ 
রেশমির কাছ থেকে শোনা কথাটা,  আমার জন্য কোন সাধারণ কথা ছিলো না। মনে হলো ওর গলার কন্ঠস্বর একটা বুলেট হয়ে আমার এক কানের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্ক ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে অপর পাশের কান থেকে বের হয়ে গেলো। 
রেশমি বলতে থাকলো,
এটা জানার পরে আপনি ওকে আর মেনে নিবেন না,ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করবেন এসব ভেবেই ও আর আপনার কাছে ফেরত যায়নি। আহত অবস্থায় কোনরকম আমার বাসা পর্যন্ত এসেছে।ওকে আমি একজন মেয়ে নার্স এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ও একটু মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। দু'বার ছাদ থেকে লাফ দিতে চেয়েছিলো.....
রেশমি ওর মত করে অনেক কথা বলে যাচ্ছে। আমি চেয়ারে বসে আছি। কথাগুলো শুনছি।কিন্ত হাত পা নাড়ানোর শক্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে আমি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। আস্তে আস্তে আমার চিন্তা করার শক্তিও হারিয়ে যাচ্ছে।..... 
চলবে...

Post a Comment

Previous Post Next Post