আন্তরিকতা দিয়ে লেখা একটি বাস্তব লেখা।লিখেছেন-Arshiya Arshi

একুশ শতকের স্টাইলিশ,স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম ছেলেটিকে আমি চাইনা,আমার এমন কাউকে চাইনা যার অসাধারণ বাকভঙ্গিতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রবে সামনের লোকগুলি,এমন কাউকে চাইনা যার পেছনে হাজারটা মেয়ের লাইন পড়ে আছে,যে নিজেও হাজারটা মেয়ের পিছনে পড়ে আছে।
আমারতো এমন কাউকেই চাই যার দিকে কোন মেয়েই হয়তো ফিরে তাকায়নি কখনো,এমন কাউকে চাই এলোমেলো চুলে,ঢিলে-ঢালা,অগোছালো পোশাকে নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে ঘুরে বেড়ায় যে।
আমি এমন কাউকে চাইনা যে সবসময় খুব হাসি,ঠাট্টা আর রসিকতা করবে,কথায় কথায় মন ভালো করে দেবে আমার। বরং এমন কাউকে চাই যে সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকবে। হঠাৎ হঠাৎ কখনো হেসে উঠবে। আমি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখার মতো করে চেয়ে থাকব তার দিকে। অপলক চোখে দেখব তাকে,পলক পড়বে না।
এমন কাউকে চাই যে দিনে একবার করে "ভালোবাসি" বলবে না আমাকে। হয়তো সারাজীবনে কখনোই বলবে না। আমি ভুল করলেই সে রেগে যাবে,খুব বকবে আমাকে। তার রেগে যাওয়া চেহারাটাই ভালো লাগবে আমার।
আমার এমন কাউকে চাই যে সাজগোজ,দামী দামী অলংকার আর শাড়ীতে দেখতে চাইবে না আমায়,আমি যেমন তেমন আমাকেই ভালো লাগবে তার।
এমন কাউকে চাইনা যার অনেক টাকা থাকবে,খুব ভালো বেতনের জব থাকবে,বিশাল বাড়ি থাকবে। বরং এমন কাউকে চাই যে খুব মধ্যবিত্ত পরিবারের শান্ত আর ভদ্র একটি ছেলে হবে। যার খুব সাধারণ চালিয়ে নিয়ে যাবার মতো একটি জব থাকবে। যার নিজের কোন বাড়ি থাকবে না হয়তো,তিন কামরার ছোট্ট একটা ঘরে ভাড়া থাকবো আমরা।
এমন কাউকে চাইনা যে প্রতি সপ্তাহে শপিং এ নিয়ে যাবে আমাকে,দামী কোন গিফ্ট,শাড়ী,অলংকার এসব কিছুই চাইনা আমার। বরং এমন কাউকে চাই যে প্রায় ভোরে মাঝে মাঝেই পাঁচ মিনিট হাত ধরে আমার পাশে হাঁটতে পছন্দ করবে। আমি রোজ রোজ গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করব এই ক্ষণটির জন্য।
আমারতো এমন কাউকে চাই যে তার পুরো অবসর বই পড়ে কাটাবে। তার বইগুলোই হবে আমার একমাত্র শত্রু। আমি মাঝে মাঝেই তার বই পড়ার সময় হলেই চশমাটা লুকিয়ে ফেলব। চশমা না পেয়ে সে খুব রাগী রাগী চোখে তাকাবে আমার দিকে। আমি তখন মিটিমিটি হাসব।
যেকোন উপলক্ষেই সে আমায় বিভিন্ন বই গিফ্ট করবে,আমি তখন খুব রেগে যাব। গিফ্টের মধ্যে কিছুকিছু আমার পছন্দের বইও থাকবে। হঠাৎ হঠাৎ আমিও তার খুব পছন্দের কোন বই গিফ্ট করে বসব তাকে। সে তখন আনন্দ আর আশ্চর্যভাব মিশিয়ে খুব অদ্ভুত চোখে তাকাবে আমার দিকে,আমি তখন তার চেহারাটা দেখে হেসে কুটিকুটি হব।
আমি সারাদিনে বকবক করতে করতে তার কান ঝাঁলাপালা করে দিব। সারাজীবনে যত কথা মনের মধ্যে চেপে রেখেছি সব শোনাবো তাকে। সে খুব মনযোগী শ্রোতার মতো শুনবে সব,কিন্তু এমন ভাব করবে যেন খুব রেগে যাচ্ছে।
তার জন্মদিনে আমি অনেক খুৃঁজে খুঁজে তার পছন্দের ব্র্যান্ডেরই একটা সাদা রঙের শার্ট কিনে দেব তাকে। সে শার্টটা দেখে বলবে, "সাদা রঙ আমার একদমই পছন্দ না"। খুব মন খারাপের হবে তখন।
আমার যখন খুব মন খারাপ থাকবে সারাদিনে কোন কথা বলব না,একদমই বিরক্ত করব না তাকে। সে সব বুঝেও নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে তার কাজ করে যাবে। হঠাৎ আমাকে ডেকে বলবে, "এক কাপ চা দাওতো"। আমি খুব রেগে যাব তখন,রাগ নিয়েই চা বানাব। সে তখনও নির্লিপ্তই থাকবে। পরদিন সকালে দেখব আমার দেয়া সাদা শার্টটা পরেই অফিসের জন্য বের হচ্ছে সে।
কখনো বৃষ্টির রাতে কিংবা খুব ঠান্ডার মধ্যে ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে বা ঠান্ডায় কাঁপতে ইচ্ছে করবে তখন আমি কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করব তার আশেপাশে,কিন্তু কিছুই বলব না। একটু পর একাই গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব অথবা ঠান্ডায় বসে থাকব। কিছুক্ষণ পর সে দেখে খুব রেগে যাবে,অনেক বকা দিবে আমাকে। যখন জ্বর আসবে,জ্বরের মধ্যেই খুব কঠিন কঠিন কথা শোনাবে। আমার তখন খুব খারাপ লাগবে,কান্নার মতো পাবে। কিন্তু আমি কান্না চেপে তার দিকে তাকিয়ে হাসবো। হকচকিয়ে যাবে সে। তখন তাকে দেখতে খুব ভালো লাগবে আমার।
আমার এমন একজনকেই চাই যে মন ভালোর নয়,মন খারাপের সঙ্গী হবে আমার।
আমি জানি এমন কাউকে আমি কখনোই পাব না। হয়তো আমার জন্য এমন কাউকে সৃষ্টি করাই হয়নি। কিন্তু আমি তাও চাই এমন কেউ একজন থাকুক,আমার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে হলেও থাকুক। খুব চাই!

Post a Comment

Previous Post Next Post